মা আমার জন্য মেয়ে দেখছেন। কোন মেয়ে ই পছন্দ হয়না। ইন্টারমিডিয়েট পড়া মামাতো বোন বলল,এই ছাগল তুই কি ঐশ্বরিয়া বিয়ে করতে চাস?নিজেকে কি মনে করিস,শাহরুখ খান? মনে মনে বলি, আমি তোকে বিয়ে করতে চাই। মুখে কিছু বলতে সাহস পাইনা, পাছে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে।তাছাড়া জানি, মা কখনও মত দিবে না।
মামাতো বোনকে সাথে নিয়ে মেয়ে দেখি। মামাতো বোন ঘুরে ফিরে মেয়ে দেখায়,আমি দেখি ওকে।মেয়ে সেজেগুজে আসে,মামাতো বোন থাকে সিম্পল পোশাকে, অন্য গুলোকে ওর সামনে পেত্নীর মতো লাগে। হয়তো পাত্রীর সামনে বসে আছি, মা বলে, ভাল করে দেখ।আমি মামাতো বোনের দিকে তাকিয়ে থাকি।তার পর রিজেক্ট করে দেই।মা হাল ছেড়ে দেয়।
একদিন মামাতো বোন ছাদে ডেকে নিয়ে বললো, এই ছাগল, বলতো কেমন মেয়ে চাস?
আমি সাহস করে বললাম, তোর মতো মেয়ে।
তাহলে তুই জীবনে ও বিয়ে করতে পারবি না। তোর মতো ছাগল কে পছন্দ করবে?
অবশেষে ক্লান্ত হয়ে মা মেয়ে দেখা বন্ধ করে দিল।আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু মামাতো বোন প্রতিদিন একটা করে মেয়ের ছবি আনছে, আর আমি বাতিল করে দিচ্ছি।
আমার মতো বন্ধু রাতুলের ও একই অবস্থা। মেয়ে পছন্দ হয়না। চৌষট্টি জেলার মেয়ে দেখা হয়ে গেছে। অবশেষে তার মা বাবাও হাল ছেড়ে দিয়েছে। রাতুলের বাবা বলে দিয়েছে, ছেলে হেদিপেচি যা ধরে নিয়ে আসুক তার সাথেই বিয়ে দিয়ে দেবে।!
একদিন বন্ধু রাতুল ধরে বসলো, তার সাথে মেয়ে দেখতে যেতে হবে।ঘটক খবর দিয়েছে, অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ের খবর পাওয়া গিয়েছে। তার মা বাবা যেতে রাজি নয়।রাতুলের পছন্দ হলেই হলো।আমি কিছুতেই যেতে রাজি হলাম না, নিজের বউ পছন্দ করতে পারি না,আবার অন্যের চিন্তা! গিয়ে লাভ নেই, সে কোন মেয়ে পছন্দ করে না।আবার যে মেয়ে সে পছন্দ করে,মেয়ে পক্ষ তাকে পছন্দ করে না
রাতুল আমার হাত ধরে বললো, দোস্ত তোর ঠ্যাং দুটো ধরি, তুই রাজি হয়ে যা।এটাই শেষ, দা লাস্ট ওয়ান। এর পর আর তোকে অনুরোধ করবো না।প্রমিজ!
একদিন বিকাল বেলা রওনা হলাম। আমি আর রাতুল। পথে ঘটক এসে আমাদের সাথে যোগ দিবে।আমরা অপেক্ষা করছি, ঘটক ব্যাটা আসছে না।অনেকক্ষন পর ব্যাটা খবর পাঠালো, জরুরি কাজে আটকে গেছে, আসতে পারবে না।আমরাই যেন যাই, মেয়ের বাড়িতে বলা আছে।
দুজনে গিয়ে মেয়ের বাড়িতে হাজির হলাম। গ্রামাঞ্চল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বিদুৎ চলে গেছে। আমরা মোমবাতির আলোয় বসে আছি।রাতুল বকবক করে চলেছে, দোস্ত মেয়ে পছন্দ হবে তো! ছেলে মেয়ে, বয়স্করা উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদেরকে দেখে যাচ্ছে।
মেয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত। মোমবাতির আলোয় অসাধারন লাগছে। পছন্দ করার মতোই মেয়ে। চেহারা বেশ মিস্টি। কোন সাজগোজ করে নি, তারপরও অপরুপ লাগছে। রাতুল বারবার আমার হাতে চিমটি কাটছে, বুঝাতে চাইছে, মেয়ে তার পছন্দ হয়েছে। আমি কোন কথা বললাম না,রাতুল টুকটাক প্রশ্ন করে গেল।
ফেরার পথে পরলাম বিপদে।যাওয়ার সময় একটা ভাংগা সাঁকো পরেছিল,মেরামতের কাজ চলছে। আমরা নৌকায় করে এপার এসেছি। নৌকা বন্ধ হয়ে গেছে।এখন উপায়? অনেক ডাকাডাকি করলাম, কাজ হলোনা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমরা নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
আমি রাতুল কে বকাবকি করছি, ব্যাটা পাত্তাই দিচ্ছে না।তার মনে রং লেগেছে।খালি বলছে, দোস্ত মেয়ে আমাকে পছন্দ করবে তো! আহা দোস্ত, এমন মেয়ে বিয়ে করতে পারলে জীবন সার্থক! দোস্ত তোকে কালই চাইনিজ খাওয়াবো। ব্লকবাস্টারে মুভি দেখাবো। কালই চল।আমি ভাবছি এ যাত্রায় কীভাবে উদ্ধার পাবো। আমি বললাম, শালা বকবক না করে আগে বল ওপারে যাব কি করে?
অনেকক্ষন ভেবে রাতুল বললো, কাপড় খোল।
আমি বললাম, কি খুলবো?
কাপড় খুলতে বলছি, শালা,,,
তুই আমাকে নেংটো হতে বলছিস নাকি?
এছাড়া উপায় নাই, অন্ধকারে কেউ দেখবে না।সাঁতার জানিস তো শালা, নাকি ভুলে গেছিস?
কি আর করা! রাতুলের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে কাপড় খুলে পানিতে নেমে পরলাম। আমি আগে সাঁতরে ওপারে উঠলাম। রাস্তায় উঠে শরীরের পানি ঝেড়ে কাপড় পরতে যাব,অন্ধকারে একটা আওয়াজ পেলাম, লা হাওলা ওয়ালা কু আতা,,,,তারপর ধপাস!
আমি যখন সাঁতরে ওপারে গেলাম, রাস্তার অন্য পাশে একজন বুড়ো মতোন লোক বরশি দিয়ে মাছ ধরছিল।আমি রাস্তায় উপরে উঠে পানি ঝারছি,এমন সময় লোকটা সামান্য আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ইয়া বড় একটা নেংটা ভূত তার সামনে। কিছুক্ষন পর আরেকটা নেংটা ভূত তার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে সাথে সাথে অজ্ঞান!
কোন রকমে লোকটাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে,জ্ঞান ফেরার আগেই আমরা পালিয়ে এলাম।বাড়ির লোকজন বারবার আামাদের কে ধন্যবাদ দিতে লাগলো।
দু,দিন পরে খবর এলো তাদের ছেলে পছন্দ হয়েছে, মেয়ে পক্ষ ছেলের বাড়ি দেখতে আসবে।হাড়কিপ্টা রাতুল জোর করে আমাকে মুভি দেখাতে নিয়ে গেল।সাথে চাইনিজ ও খাওয়ালো!বারবার বললো, দোস্ত আর কি খাবি বল!
মেয়ে পক্ষ এসেছে। বিশাল খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়েছে। খাবার শেষে রাতুল তাদের সামনে হাজির হলো। মেয়ে পক্ষ একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে! ব্যাপার কি?
তারা যে ছেলে দেখতে এসেছে, সে তো রাতুল নয়।তারা আমাকে দেখতে এসেছে। তারা মনে করেছে পাত্র আমি! তারা মন খারাপ করে চলে গেল।
রাতুল আমাকে এই মারে তো সেই মারে! শালা কোন দুঃখে তোকে নিয়ে গেলাম মেয়ে দেখতে! তুই সব নষ্টের গোড়া! তুই বন্ধু নামের কলংক!
রাতুলের বদৌলতে আমাদের বাসায় খবর পৌঁছাতে সময় লাগল না,আমি মেয়ে পছন্দ করে এসেছি এবং মেয়ে পক্ষ আমাকে পছন্দ করেছে! আমার মা নব যৌবন পেলেন। তিনি তোড়জোড় শুরু করে দিলেন মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য!
রাতে শুয়ে টিভি দেখছি, মামাতো বোন এসে হাজির। চোখগুলো ফোলা!
কি রে গাধা কি করছিস,? শুনলাম মেয়ে পছন্দ করেছিস?ভাল, বেশ ভাল।
আমি জবাব দিলাম না।
আচ্ছা, আত্নহত্যা করলে মানুষ দোজখে যায়,কথাটা কি সত্যি?
আমি বললাম, কি জানি, আমি তো কখনও আত্মহত্যা করিনি, কীভাবে বলবো?
তা অবশ্য ঠিক। বলেই চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর আবার এলো, হাতে একটা ছুড়ি। আমার পাশে বসলো, বলতো এই ছুড়ি দিয়ে কি করা যায়?
আমি নিরীহ গলায় বললাম, তরকারি কাটা যায়,ফলমূল কাটা যায় আবার মাংস ও কাটা যায়।
গরু জবাই দেওয়া যায় না?
তুই হঠাৎ কাটাকাটি নিয়ে পরলি কেন?
একজন কে কাটবো?
আমি অবাক গলায় বললাম, কাকে কাটবি তুই?
সে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল,তারপর কান্নাঝরা কন্ঠে বললো, তোকে কাটবো,তোকে!
আমি কিছু বলতে গেলাম।
সে ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল।