সকালে চেঁচামেচির শব্দ শুনে ঘুম ভাঙলো। কি যে হলো আজ এতো শব্দ হচ্ছে কেন। মা..মা..মা বলে একটা ডাক দিলাম।
মা:কিরে বাবা কি হয়েছে সাতসকালে এমন ডাকা ডাকি করছিস কেনো?
আমি:কিহ। এই সকাল বেলায় এতো শব্দ হচ্ছে কেন? বাসায় কি কেউ এসেছে?
মা:হ্যা, অনেক মানুষ এসেছে।আজকে বিয়ে।
আমি:কার বিয়ে??
মা:পরে বলব।(আর কথা বলতে না দিয়ে চলে গেল)
বিছানা ছেডে উঠলাম।পরে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। নাস্তা শেষে কলেজে চলে গেলাম।কলেজে যাওয়ার পথে মনে মনে ভাবলাম কার বিয়ে। যাক আমার তার চিন্তা করে লাভ নেই। বিয়ে হলে তো সুবিধাই বিয়ে তে কতো মেয়ে আসবে। কলেজ শেষে বন্ধুদের সাথে বসে আছি। আমার বন্ধুরা র্যাগিং করতে ভালোবাসে জুনিয়র মেয়েদের সাথে এসব করে। আমি অবশ্য তা করি না কিন্তু তাদের সাথে বসে উপভোগ করি। আজ ও তার নিস্তার নেই। আমি আজও তাদের সাথে বসে আছি। ঠিক তখন একটি মেয়ে আমাদের সামনে দিয়ে গেলো।আছিফ তাকে ডাক দিলো। অহ হ্যা আছিফ হলো আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড এবং গ্রুপ লিডার।
মেয়েটি আমাদের কাছে আসলো। মেয়েটি নিল রঙের একটি ড্রেস পড়ে ছিল। সম্পুর্ণ মাথে হিজাব ধারা ঢাকা ছিলো।মেয়েটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো মেয়েটির চোখ দুটি একদম টানা টানা চোখ।আমি তার চোখের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাদের কাছে এসে বলল,”জি ভাইয়া”
আসিফ:তুমার নাম কি?
মেয়ে:তিশা
আসিফ:কোন ইয়ার?
মেয়ে:ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
আসিফ:অহ আচ্ছা চলে যাও।
আজকে বুঝলাম না আসিফের কি হলো এভাবে ছেড়ে দিল। আমি ত রিতিমতো অবাক। যাইহোক আমি বাসায় চলে এলাম। বাসায় অনেক মানুষ এসেছে। সবাই বিয়ের জন্য বাড়ি সাজাতে লাগল। এদকে আমি মা আর বোন কে খুজে পেলাম না। অনেককেই জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু সবাই এড়িয়ে চলল। আমার অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা মারার অভ্যাস তাই আজকে বাসায় মা আর বোন না থাকায় আমি সন্ধার পর পর বাইরে চলে গেলাম। ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় একটা বেজে গেলো। আমি ড্রাগ এডিক্টেড ছিলাম সেদিম বাসায় কেউ বাসায় না থাকায় অনেক বেশি এলকোহল খেয়েছিলাম। বাসার কলিং বেলে চাপ দিতেই বোন দরজা খুলল।
বোন:কিরে কোথায় ছিলি?
আমি:ওও ওওই একটু (ঠিক করে কথা বলতে পারছিলাম না)
বোন:কি ওই একটু কি তুই কি আজ এলকোহল খেয়েছিস। (সে আমার পাসে এসে আমার মুখ থেকে গন্ধ নিলো)
তার পর ঠাসঠাস ঠাসঠাস আমাকে বেশ কয়েকটা থাপ্পড় মারলো। তার পর আমায় জড়িয়ে ধরলো। (সেদিন আমি বুঝলাম বোন আমায় কত টুকু ভালোবাসে) আমি রাতে খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে দশটার সময় ঘুম ভাঙল। আমি দেখলাম আমার রুম সাজানো হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তার জন্য গেলাম।ঘরের পরিবেশ খুব ঠান্ডা তার মানে বোন রাতে মা কে বলে নি।
নাস্তা শেষে আমি কলেজের জন্য রেডি হতে যাব মা বললেন আজকে কলেজে যাওয়ার দরকার নেই। মা আমাকে একটি লিস্ট দিলেন এবং বললেন বাজার থেকে খরচ গুলো নিয়ে আসতে। আমি যথারীতি মার কথা মতো বাজারে চলে গেলাম। বাজার শেষে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক তখন দেখলাম তিশা সেখানে আমি রিক্সা পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমি তাকে বললাম সে চলে যাক। অনেক জোরাজোরির পর সে রিক্সায় উঠলো এবং আমাকে ও বলল আমিও উঠে যেতে। আসে পাসে আর রিক্সা না থাকায় আমিও রিক্সায় উঠে গেলাম।রিক্সায় উঠার পর আমি একপাশে একদম চেপে চুপ করে বসে আছি। হট্যাত সে বলল :আপনাকে যেমন ভেবেছিলাম আপনি তেমন নন।
আমি:কেমন ভেবেছিলেন???
তিশা:অইদিনের ভাইয়াদের বেয়াপারে আমার কিছু ফ্রেন্ড বলেছিল আমি ভেবেছিলাম আপনি ও…
আমি:না আসলে আমি তাদের সাথে চলি তাই সবাই ভাবে আমি ও তাদের মতো।
তিশা:তাইলে আপনি তাদের সাথে চলেন কেন??(একটু জোরে)
আমি:না আমার ভালো লাগে তাই।
তিশা:সরি আমার এভাবে বলে ঠিক হয় নি।
আমি:না সমস্যা নেই।
এই যে মামা থামান থামান।আমি এসে গেছি। (আজ প্রথম বার মনে হলো যে সময় এতো তাড়াতাড়ি চলে কেন)
সে ভাড়া দিতে চাইলো কিন্তু আমি ভাড়া দিতে দিলাম না। যাওয়ার সময় সে আমাকে বাই বলে চলে গেলো।আমি তার চলে যাওয়া দেখতেই থাকলাম।
বাসায় আসার পর মা আমার রুমে আসলো। এসে বলল, বাবা তোর বাবার অবস্তা ভালো যাচ্ছে না আর এই জন্য তোকে না জানিয়ে আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি। আমি ২২০ভোল্টেজ এর শক খেলাম মনে হলো। আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে। মা আমার হাত তার মাথায় নিয়ে বলল তুই যদি বিয়ে না করিস তাইলে আমার মরা মুখ দেখবি।আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে করবো বলে দিলাম। ২টা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে একটা ঘুম দিলাম। মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে। সন্ধ্যা ৮টায় আমার ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম বন্ধুদের কাছে। আজ কিছুই ভালো লাগছে না তাই একটু তাড়াতাড়ি বাসার দিকে পাড়ি দিলাম।পথে হট্যাত মোবাইল টা বেজে উঠলো। ফোন ধরতেই পরিচিত একটা কন্ঠে সালামের আওয়াজ শুনতে পেলাম।
আমি:হ্যালো কে?
তিশা:আমি তিশা।
আমি:অহ হ্যা কেমন আছো?
তিশা:ভালো আপনি।
আমি:ভালো। তুমি আমার নাম্বার কি করে পেলে???
তিশা:আসিফ ভাইয়ার কাছ থেকে নিয়েছি।
আমি:অহ।
তিশা:শুনেন এই সোমবার আমার বিয়ে। আমি মেয়ে মানুষ তাই বাসায় আসতে পারলাম না তাই ফোনেই দাওয়াত দিয়ে দিলাম।
আমি:নাহ সমস্যা নেই।আমি আসতে চেষ্টা করবো।
তিশা :চেষ্টা করলে হবে না আপনাকে আসতেই হবে।
আমি :ঠিক আছে।Bye
তিশা:Bye.
এর পর বাসায় চলে গেলাম। আজ কেনো যেন তিশার সাথে কথা বলে অনেক প্রশান্তি পেলাম। বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। অহ সরি আমার পরিচয় ই তো দেওয়া হলো না। আমি তৌহিদ । অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। সকালে মা কে জিজ্ঞেস করলাম।
আমি :মা আমার বিয়ে কোনদিন।
মা:সোমবার। এই নে তোর বিয়ের কার্ড।
আমি কার্ডটা ছুড়ে ফেলে দিলাম। বিকেলে তিশাকে ফোন দিয়ে আমি বিয়েতে আসতে পারবো না বলে ফোন কেটে দিলাম। আজ আমার বিয়ে হলো।তিশা অনেক বার আমাকে ফোন করেছে কিন্তু আমি ফোন ধরি নি। আমার অজান্তে কনেকে না দেখেই আমার বিয়ে হয়ে গেলো। সান্ধার পর আজও বাহিরে চলে গেলাম। আজকে বাসায় ১০ টায় ফিরে এলাম। এসে খেয়ে দেয়ে রুমে গিয়ে দেখি কেউ একজন বিছানায় বসে আছে। অনিচ্ছা সত্তেও কাছে গিয়ে ঘুমটা সরিয়ে আমি চমকে গেলাম। একি এতো তিশা।আমি তিশা কে প্রশ্ন করলাম, “তিশা তুমি এখানে কেনো??” সে কোনো উত্তর দিলো না। আমি গিয়ে কার্ড টা হাতে নিলাম নিয়ে দেখি কার্ডে তিশার নাম লেখা। আমি তিশার পাসে গিয়ে বসলাম।
তিশা:দুর হন।আমার পাশে আসবেন না।
আমি:কেন। তুমি আমার বউ। এবং আমি তুমাকে ভালোবাসি।
তিশা:আমি কারো বউ নই। আপনি যান আপনার অই বন্ধুদের কাছে। আমার পাশে আসবেন না।
আমি:সরি।
তিশা:আগে প্রমিজ করুন আর কোনোদিন তাদের ধারে কাছেও যাবেন না।(চাপা অভিমান)
আমি:প্রমিজ। যাব না।
তিশা:একটি মিষ্টি হাসি।
আমি:যদি যাই???
তিশা:খুন করে ফেলবো।
আমি:অকে বাবা যাব না একটা শর্তে। আমাকে প্রতিদিন একটা করে পাপ্পি দিতে হবে।
তিশা:অকে।উম্মম