মনটা ভাল নেই আমার। ভাবলাম নদীর পার গিয়ে ঘুরে আসি। নদীটি আমার বাসা থেকে বেশি দুরে নয়,প্রায় মিনিট পাচ এর রাস্তা। নদীর পার আসলে আমার মন ভাল হয়ে যায়।
তাই নদীর দিকে হাটা শুরু করলাম।
কিছু দুর যেতেই দেখা হয়ে গেল বন্দুর সাথে,বন্ধুটির নাম জাকারিয়া।
কিরে কই যাস,আমি বললাম নদীর পার,
সে বললো চল আমিও যাবো।
দুজন মিলে নদীর পার আসলাম,এবং বসে কথা বলতে থাকলাম।
এই নদীটি একটু সরু,কিন্তু অনেক বড় নদী এটা।
পাসেই বড় একটা মাঠ ,এই মাঠেই আমরা খেলাধুলা করি।
জাকারিয়া আর আমার মধ্যে কথা হচ্ছিল মাছ শিকার নিয়ে। কিন্তু হটাৎ আমার পিঠে সজোড়ে একটা ঘুষির আঘাত পেলাম,আর একটা প্রশ্ন, কিরে কি করছ?
ঘুষির মাত্রা এতোটা তীব্র ছিল যে,
প্রশ্ন টা কান অব্ধি যায় নি।বুঝতে আর বাকি নেই যে,সে কে !!!
তার নাম রিফাত, ইদানীং তার এটা রুটিন হয়ে গেছে,দেখা হলে কিল ঘুষি দেওয়া।
সে আমার খুব ভাল বন্দু, আমি আর ও ছোট কাল দেখেই বন্দু।
রিফাত আবার প্রশ্ন করলো,কিরে কি করছ তোরা দুজন।তার কথার উত্তর না দিয়ে, আমি বললাম বস এখানে।
স্কুল তো অনেক দিন বন্দ, তুই বাসায় কি ভাবে সময় কাটাস??
রিফাত: ঘোমাই আর টিভি দেখি,আর কি করার আছে বল?
জাকারিয়া: চল কালকে আমরা এই নদী থেকে মাছ শিকার করি।সময়ও কাটবে মজাও হবে।
আমি বললাম ভাল আইডিয়া, আমি রাজি।
রিফাত : দুর!!! মাছ শিকার করার মধ্যে কোন মজা আছে???
আমি বললাম অনেক মজা আছে,প্লিজ না করিস না।
রিফাত: আচ্ছা ঠিক আছে,কিন্তু কি দিয়ে শিকার কবর?
জাকারিয়া : কেনো বসি দিয়ে!!
আমি বললাম কাল সকালে আমরা বসি বানাবো।
জাকারিয়া : তাহলে মাছ ধরবো কখন?
রিফাত: বিকালে মাছ ধরবো।
অামি বললাম আরে না!!!বরং মাছ ধরবো
পরশু ভোর সকালে, ঠিক ফজর নামাজ এর পরে।
আমার দায়িত্ব পরলো বসি বানানো, রিফাত এর দায়িত্ব সিপ আর জাকারিয়ার বসি,সুতা বাজার থেকে ক্রয় করা
পরদিন সকাল
ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। ভাবলাম ওরা ঘুম থেকে জাগেনেই। তাই রিফাত কে জাগানোর জন্য তার বাসার দিকে হাটাসুরু করলাম। যথাসময়ে তার বাসায় যাওয়ার পর একটু অবাকই হলাম।
দেখি রিফাত বাশ জার থেকে,ডাল কাটছে।ওকে দেখে মনে হলো ও আমার অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠছে।ও আমাকে দেখে হাসি দিল, আমিও হাসি দিয়ে বললাম কিরে,তুই
এতো সকালে উঠবি, আমি ভাবতেই পারিনি।
রিফাত: আরে আমি সমসময় ভোর সকালেই ঘুম থেকে জাগি।
হুম এটাই ভাল, ভোর সকালে ঘুম থেকে জাগলে শরীল ভাল থাকে।
আমরা দুজন মিলে ভাল দেখে, তিন টা সিপ কেটে হাটা দিলাম জাকারিয়ার উদ্দেশ্য।
আসসালামু আলাইকুম কাকি।অলাইকুম আসসলাম ,কেমন আছো তোমরা?
আলহামদুলিল্লাহ কাকি ,ভাল আছি ।
জাকারিয়া ঘুম থেকে জাগছে?
না!!!এতো বেলা হলো এখনো ঘুম থেকে
জাগেনেই!!!
আচ্ছা আমরা তাকে জাগাচ্ছি! !
রিফাত তাকে দু দুটি ঘুষি দিয়ে জাগালো।
কিরে!! এতো বেলা হইছে তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস! ! উঠ!!!
সে দুটি ঘুষি খেয়ে লাফ দিয়ে ঘুম থেখে
উঠলো।বুঝতে পারলাম সে ভালই ব্যাথা পেয়েছে,কিন্তু সে ব্যাথা বুঝতে না দিয়ে, হলুদে দাত গুলা বের করে বললো, কিরে তোরা এত সকালে?
তার বিস্রী হাসি দেখে রাগ হলো অনেক।আরো দু ঘা বসিয়ে দিয়ে বললাম, এখন
এতো সকাল? ?সকাল আটটা বাঝে!!
উঠ!!বাজারে জেতে হবে।
বাজারে জাবি কি করতে??
রিফাত বললো, আরে বসি, সুতা কিনতে হবে।
জাকারিয়া : আমি তো কাল রাতেই কিনে রাখছি।
তাই লে তো ভালই হয়েছে,তারাতারি দে।
রিফাতের বাসায় গিয়ে ভাল করে তিন টা বসুই বানালাম।
কিরে মাছ ধরবো কি দিয়ে ?
রিফাত : আরে আটা দিয়েই হয়ে জাবে।আমার বাসায় আটা আছে।আচ্ছা বিকালে দেখা হবে, কাজ তো আর নাই।জাকারিয়া আর আমি রিফাত এর বাসা থেকে বিদায় নিয়ে যে যার মতো বাসায় চলে গেলাম।
কিরে কোথায় গিয়েছিলি???
এইতো মা রিফাত এর বাসায়।
মুখ দুয়ে আস নাস্তা খাবি।
নাস্তা খাওয়ার সময়, কোথা থেকে জানি একটা কল আসলো। পাচ মিনিট কথা বলার পর মা এসে বললো,দুপুর এর পর বাসায় থেকে বের হবে না।
কেনো মা কে ফোন করেছিল?
তোর ফুফু ফোন করেছিল ।আজ দুপর এর পর আসবে,পারভেজ এর স্কুল বন্দ তো ,তাই কিছু দিন থাকবে।
কথা টা শুনার পর কতো যে খুশি হলাম বলে বুঝাতে পারব না।!!
পারভেজ অামার ফুফাতো ভাই। সে সুদু ভাই না, সে ভাল বন্দু ও বটে। সে আমার সম বয়সী বা এক বছরের ছোট হবে।
দুপুরবেলা খাওয়া পর,ঘুমাচ্ছিলাম।হঠাত হাতে একটা স্পর্শ পেলাম। চোখ দুটি আলতোভাবে মেলে দেখলাম ,পারভেজ।
তাকে ঝরিয়ে দরলাম, কিরে কেমন আছিস। আমি বললাম ভাল, তুই কেমন আছিস? ?
ভাল ছিলাম না!! কিন্তু এখন ভাল আছি।
মানে?
আরে স্কুল বন্দ তো ,বাসায় একা একা ভাল লাগেনাতাই তো তোদের বাসাই আসলাম।এখন ভাল লাখছে।
যাক তোই এসেছিস ভাল হলো।আমরা বন্দরা কাল সকালে মাছ শিকার করতে যাবো,তুই যাবি?
অবস্যই যাবো আমার অনেক শখ আমি শিকার করব।
কেনো তুই আগে কোন সময় মাছ শিকার করিস নি?
নারে…!!
হুম তুই করবি বা কি করে, তোদের শহরে তো মাছ শিকার কোন নদী নালাই নেই।
হুম,তোরা কত মজা করিস খেলাদুলা করিস,আর ওখানে না আছে খেলার মাঠ না আছে নদী নালা।আছে সুধু ইটপাথর এর দালান।
আরে বোকা সামান্য এই বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নেই।তোর যখন ইচ্ছে আমাদের বাসায় আসবি,এখানে খেলারমাঠ নদী নালা সবই আছে।
চল তোকে নিয়ে ঘুরে আসি,
কিরে দুজন কোথায় যাস..? এইতো মা একটু বাইরে যাবো।না এখন বাইরে যাওয়ার দরকার নেই,আকাশের অবস্তা ভাল না।
ভাগ্য ভাল মার কথা শুনে, বাহিরে যাইনি।দু মিনিট পর ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।এটা বৈশাখ মাস।তাই বৃষ্টি আসা স্বাভাবিক। কিন্ত একটু পর চাচা এসে যা বললো মনটা একটু খারাপই হলো। বললো আজ রাতে বা কাল কে কাল বৈশাখী ঝড় আসবে।কিন্তু আমরা প্লান করেছি কাল সকালে মাছ শিকার করব।
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শেষ হলো।কাল বৈশাখী ঝড়ের কথা শুনে মন খারাপ করে বসে রয়েছি।
ওই সুমন …সুমন……বাইরে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পারলাম।বুঝতে পারলাম রিফাত আর জাকারিয়া।রিফত বললো, কিরে তুই না নদীর পার দেখা করতে বললি? মন ভাল না …
জাকারিয়া : কেনো কি হয়েছে?
তোরা শুনছোস ?আজ রাতে বা কালকে কাল বৈশাখী ঝড় হতে পারে?কিন্তু আমরা তো কাল সকালে মাছ শিকার করব বলেছিলাম ।
জাকারিয়া : তুই দেখিস সুমন কাল বৈশাখী ঝড় হবেনা ।
তাই যেন হয়। তাই লে আমরা যাই কাল সকালে দেখা হবে।
ধারা শুন…..আমাদের বাসায় আমার ফুফাতো ভাই পারভেজ আসছে, তো সে আমাদের সাথে যেতে চায়.
রিফাত বললো ….যাবে সমস্যা কি?
আমি বললাম ,কিন্তু বসি তো তিনটা !!
জাকারিয়া:তিন বসি তো সমস্যা কি?আমরা চার জন মিলেমিশে মাছ শিকার কবর।
আচ্ছা তোরা যা…কাল ভোর সকালে দেখা হবে.
ওই রাতে কোন বৃষ্টি হইনি, বরং আকাশের অবস্তা মোটামুটি ভালই,তাই ভোর সকালে আমরা চার বন্দু চলে গেলাম নদীর পার।
সাথে আছে তিনটা বসি আর একটা মাছ রাখার জন্য ঢাকনাওয়ালা বয়াম আর মাছের খাবার। রিফাতের হাতে মাছ রাখার বয়াম ,আর আমি জাকারিয়া,পারভেজ মাছ শিকার করছিলাম,কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল একটা মাছ ও পেলাম। নদীতে মাছ আছে, কিন্তু মাছ খাবার খেয়ে খেয়ে চলে যায়, বসি আটকায় না।
অবশেষে বড় একটা পুটি মাছ ধরলো জাকারিয়া ।সে মাছটা খুব সাবধানে ছাড়িয়ে, বয়ামে রাখলো।মাছটা জীবিত রাখার জন্য বয়াম একটু পানিও দিল।
রিফাত ঢাকনা টা লাগিয়ে দিল, যেনো মাছ লাফ দিয়ে চলে না যায়।
কিন্তু আমি লক্ষ করলামজাকারিয়া মাছ ধরার পর,পারভেজ এর মুখটা কেমন যেন ফেকাসে হয়ে গেল।
কিরে কি হয়েছে?পারভেজ বললো আমি মাছ ধরব না।
আমি বললাম কেনো?
ভাল লাগে না…
কিন্তু তুই না বললি মাছ ধরা তর শখ?
হুম বলছি তো…
তো তুই কেনো মাছ ধরবি না?
কি ধরকার মাছ ধরার? ওরা ও তো প্রানী, সুধু সুধু ওদের মারা ঠিক হবে?
তার এই অদ্ভুত ধরনের কথা শুনে মেজাজ টা খারাব হয়ে গেল, আমি তাকে বললাম, কেনো তুই কি মাছ খাছ না? ?
আরে বোকা সৃষ্টিকর্তা মাছ দিয়েছে মানুষদের খাবার জন্যই।
সে আমতা আমতা করে বললো, তা ঠিক আছে কিন্তু তার পরও মাছের জন্য মায়া হয়, আচ্ছা ঠিক আছে ..আমার একট সর্ত আছে? তাই লে আমি মাছ ধরব?
আমি বললাম কি সর্ত?
আমি যে কটা মাছ ধরব,তা পরে পুনরায় নদীর মধ্যে ছেরে দেব।
তার এই অদ্ভুত ,হাস্বকর, বাজে সর্ত শুনে এতোটাই মেজাজ খারাব হলো ..ইচ্ছে করছিল তার গালে দু দুটি চড় মেরে বলতাম, তোর মাছ ধরা লাগবে না, তুই বাসায় যা।আমি আমার রাগ কে কন্ট্রোল করে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।।
তুই যে কটা মাছ ধরবি তা ছেরে দিছ।
আমরা আবার মাছ ধরা শুরু করলাম।
আমরা অনেক মজা করলাম।জাকারিয়া ধরলো 4টা মাছ, রিফাত ধরলো 3 টা মাছ আর পারভেজ ধরলো 3 মাছ,একমাত্র আমি কোন মাছ ধরতে পারিনি।তাই তারা তিন জন মাছ ধরছেতে, আমি বয়াম নিয়ে বসে আছি।
কিন্তু একি….আমরা মাছ ধরায় এতোটাই মগ্ন ছিলাম ,চারিদিকে অন্দকার হয়েগেছে খেয়ালই করি নি!!!
আকাশ এতো কালো হয়েছে যে, যা রাতেও হয়না।
হঠাৎ ঝড়হাওয়া বইতে শুরু করলো ।
মুহুর্তের মধ্যে সামান্য একটা সরু নদী সাগরের মতো উত্তাল হয়ে উঠলো।এ যেনো নদী নয়,মৃত্যুফাদ।চারদিকে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো।আমার হাত থেকে মাছের বয়াম টা পড়ে। রিফাত গলা ফাটিয়ে বললো সবাই পালা।আমরা চার জন প্রানপনে দৌড়াতে লাগলামপারভেজ দৌড়ানোর মধ্যেই আমাকে জিগ্যেস করলো মাছের বয়াম কই?
আমি বললাম, নদীর পার,।
সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে,তুই যা আমি মাছগুলা বয়াম থেকে নদীতে ছেড়ে দিয়ে আসি।
তুই কি পাগল হয়ে গেছস?চুলোয় যাক তর মাছ!!!
জানি না….কিসের মায়ারটানে সে উলটো দিকে দৌরাতে লাগলো,মাছগুলো বয়াম থেকে নদীতে ছাড়ার জন্য। তখন চারদিকে কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেছে।
আমিও তাকে আটকানোর জন্য তার পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। হটাৎ পরে গেলাম, আর মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেলাম।উঠে দাড়ানোর আর শক্তি পেলাম। বয়াম টা নদীর ঠেউয়ে একটু দুর চলে গিয়েছিলো।আপছা আলোয় দেখলাম, পারভেজ নদীতে ঝাব দিলো।
আমার আর কিছু মনে,ঞ্জান হারালাম।
এক দিন পর …..
ঞ্জান ফেরার পর জানতে পারলাম,সেই উত্তাল নদী, আমার ভাইটিকে আর ফিরিয়ে দেয় নি। সমাপ্ত …….