শশুড়ের মেয়ের জামাই

শশুড়ের মেয়ের জামাই

না,আর না।কালকেই যাবো শশুড় বাড়ি।সবাই শুধু শুধু আমায় টিটকারি করে। আজ যখন অফিসে গেলাম,তখন,,,,

:-আরে দোস্ত,কি খবর?(রাকিব)

:-এইতো আছি একরকম,,,তোর খবর কি?আর এ কদিন অফিসে আসিস নাই যে?ছুটিতে ছিলি বুঝি?(একনাগাড়ে কথাগুলো বললাম আমি)

:-আমার খবর ভালো।আর ঐদিন বস থেকে একসপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলাম,,,,(রাকিব)

:-ও,,,তা কি জন্য ছুটি নিয়েছিলি,,,?(আমি)

:-আসলে অনেকদিন হয়েছে শশুড় বাড়ি যাই না।আর রিয়া(রাকিবের বউ) ও বায়না ধরছিল,ওর বাবার বাসায় যাওয়ার জন্য,,,,আর তাই আমিও ভাবলাম,যাই শশুড় বাড়ি থেকে কয়েকদিন জামাই আদর খেয়ে আসি,,,,তারপর,,,(রাকিব)
ওকে থামিয়ে আমি বললাম,

:-থাম,,আর কিছু বলা লাগবেনা,,,।তুই শালা তো থাকিস খালি শশুড় বাড়ি নিয়া,,,এক কাজ কর,তুই ওখানে ঘরজামাই থেকে যা,,,,হা হা হা(আমি)

:-রাজু,তুই কিন্তু আমায় টিটকারি মারতেছস।আরেহ,,,তুই শালা যদি শশুড়বাড়ির মজা বুঝতিশ,তাহলেতো তোকে কষ্ট করে বলতে হতো না যে,শশুড় বাড়ির মজা কেমন,,,? তুইতো শুধু কাজই চিনলি,,,,পারলে তুই তোর শশুড় বাড়ি গিয়ে আমায় দেখিয়ে দে তো,,,,, আরে,কাকে কি বলছি?তুই তো পুরো কাপুরুষ।যে শশুড় বাড়ি যেতে ভয় পায়,,,,,,হা হা হা(আমার গায়ে হিট লাগিয়ে কথাটা বললো রাকিব)

:-কি বললি…?আচ্ছা,তাহলে আমি কালই যাচ্ছি শশুড় বাড়ি,,,,,(আমি)

:-আরে যা যা,,,,,দেখা যাবে তুই কাল শশুড় বাড়িতে যাস না,,,,অফিস শশুড় বাড়ি আসিস,,,,(রাকিব) আমি আর কিছু না বলে,সোজা বসের কেবিনে গিয়ে,,,বস থেকে দশ দিনের ছুটি নিয়েনিলাম শশুরবাড়ি যাবো বলে। আর বস আমার মুখে শশুড়বাড়ির নাম শুনে কেমন হা হয়ে গেল।আর কিছু না বলে আমায় ছুটি দিয়ে দিল। আমি এখন গাড়িতে বসে ভাবতেছি,আগামীকাল যখন শশুড় বাড়ি যাবো,তখন কি হবে,,,,? আর যদি বাসায় গিয়ে শশুড় বাড়ি যাওয়া কথা বলি,,তাহলে সবার মুখটা কেমন হবে,,,?

ধুরর,,,তখন যা হবার হবে। আমি আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই,,, আমি রাজু।আজ প্রায় আটমাসের মত হবে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করতেছি।আর এর মাঝেই আব্বু আম্মু আর ছোটবোনের পাগলামিতে আমাকে বিয়ে করতে হলো। আজ তিনমাসের মতো হবে আমি বিয়ে করেছি। বিয়ের ১ম দিকে যে একবার শশুড় বাড়ি গিয়েছি এখনও পর্যন্ত আমি আর শশুড় বাড়িতে যাই নি। কেন যাই নি? সেটা আমারও জানা নাই,,,,, তবে আমার মনে হয় আমি লজ্জা আর শরমের কারণে আমার শশুড় বাড়ি যাই নি। যাইহোক বাসায় আসলাম।বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে,আব্বু আম্মুকে আমি কাল শশুড় বাড়ি যাওয়ার কথা বলতেই,,,,

:-আচ্চা,যা।(আব্বু)

:-তবে দশদিন থেকেই আসবি,,,(আম্মু) কি আশ্চার্য,,,,, আব্বু আম্মু তো আমার শশুড় বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে তো অবাকই হলো না।আর কিছু না বলেই যেতে বলল।আর আম্মু কি করে জানলো যে আমি অফিস দশদিনের ছুটি দিলো।না কি আম্মু আন্দাজ করে বলল,,? আমি আর কিছু না বলেই রুমে আসলাম।আর রুমে এসেই আমি তো অবাক,,,, এসে দেখি নিশি কাপড়-ছোপড় গুছাচ্চে। আর আমি ডুকতেই নিশি বলল,

:-কাল কখন রওয়ানা দিবে,,?(নিশি)

:-সকালেই,,,,তবে তুমি জানলে কি করে,,,?(আমি)

:-কি করে আবার,,,,সুরভিই তো বলে গেল,,কাল নাকি আমরা বাবার বাসায় যাচ্ছি,,,,,আর না গেলে থাক।(কথাটা অভিমানী গলায় বলল নিশি) মেয়েটা যেমন সুন্দর,তেমনি অভিমানিও বটে,,,,,,

:-আমি কি এমনটা বলছি,,আচ্ছা সুরভি জানলো কি করে,,,,?(নিশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমি বললাম)

:-কি করে আবার,,?তোমার দোস্ত রাকিবই বাবাকে ফোন করে বলল।আর সেটা শুনে এসে আমাকে সুরভি বলল।(নিশি) ওহহ,,,তাহলে প্যাচ এখানে। যাইহোক,আমি আর কিছু না ভেবে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আমি শুয়ে শুয়ে নিশির কথা ভাবতেছি। আপনাদের তো বলাই হয়নি যে নিশি আর সুরভি কে? আপনারা নিশ্চয় উপরের লেখাগুলো পড়ে বুঝে গেছেন।তারপরও বলছি, সুরভি হলো আমার ছোটবোন।আর নিশি হলো আমার ইয়ে,,,মানে বউ। আমি শুয়েই রইলাম।এর কিছুক্ষন পরই নিশি এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো।আর আমি কিছু না বলেই নিশিকে আমার বুকে টেনে নিলাম।নিশি কিছুই বলল না।কারণ সে জানে যে,তাকে বুকে টেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমার ঘুম আসে না। আর আমার বুকে মাথা না রাখলে নিশিরও ঘুম আসে না।

:-এইই,,,তারাতারি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়।আবার সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে,,,(নিশি)

:-তাই,,,?(আমি)

:-হুমম,,,,

:-তাহলে একটা ইয়ে দাও,,,,

:-না পারবো না,,,

:-তাহলে আমি দিই,,,,,(আমি ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার ঠোঠ জোড়ায়,আমার ঠোঠ দুটি একসাথে করে একটা গভীর চুম্বনে আকৃষ্ট হলাম)

:-এইই,,,ভালো হচ্ছে না কিন্তু।তোমাকে বলছি ঘুমিয়ে পড়তে,আর তুমি আমার সাথে দুষ্টমি করতেছ,,,,(নিশি)

:-ঘুমানোর জন্য এত তাড়া কিসের,,,?(আমি)

:-মানে,,,?কালকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে।অনেকদিন পর বাবার বাসায় যাবো।তাড়াতাড়ি রওয়ানা দিতে হবে না,,,,,,পথ ও তো কম না,,,,,

:-আচ্চা,তাহলে এদিকে আসো।জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়ি।তাহলে ঘুম বাবাজি তাড়াতাড়ি ধরা দিবে,,,,হা হা হা,,,, অতঃপর তাকে জড়িয়ে ধরে কখনযে ঘুমিয়ে পড়লাম,টেরই পেলাম না। পরদিন সকালে, চোখে মুখে পানির ফোটার পড়ার স্পর্ষে আমার ঘুম ভাংলো। হালকা করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি,নিশি আমার মাথার কাছে এসে তার ভেজা চুলগুলো ঝাড়তেছে।মনে হয় ও গোসল করে এসেছে,,, ওর চুল থেকে আসা মন মাতানো ঘ্রানটা আমি উপভোগ করতেছি,,,,,,

:-এইই,আর ঘুৃমানোর ভান করতে হবে না,,,,উঠো।(নিশি)

:-হুমম,,(আমি)

:-তারাতারি উঠো বলছি,,,,

:-তাহলে যে ঐটা লাগবে,,,,,,

:-কোনটা,,,?

:-আরে এদিকে আসো তো,,আমি দেখিয়ে দিই। ও কাছে আসার পরই,,তাকে জড়িয়ে ধরে,,,

:-উম্মাহ,,,,,,(তার ঠোঠে একটা ইয়ে দিলাম)

:-এটা কি হলো,,,?(নিশি)

:-যা হবার তাই,,,আরেকটা লাগবে নাকি,,,,?(আমি)

:-তুমি না,,,,,যাও এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো,,,, আমি আব্বুকে ফোন করে বলে দিই যে আমরা আসতেছি,,,,,(নিশি)

:-আচ্ছা যাইতেছি,,,,, আমি এই বলে ফ্রেশ হতে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি নিশি প্রায় রেডি হয়ে গেছে।আমাকে দেখে বলল,

:-তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও,,,(নিশি)

:-এত তাড়া কিসের,,,হুম।আস্তে ধীরে বাহির হবো,,,,(আমি)

:-তাড়া হবে না,,,!আজ অনেক দিন পর বাবার বাসায় যাচ্ছি।তোমাকে তো অনেকদিন বললাম নিয়ে যেতে,,তুমিতো নাওইনি।আজ তুমি নিজ থেকেই বলছ যাবে।আর যাবো যেহেতু একটু তাড়াতাড়ি যাই,,,,(নিশি) আমি আর কিছু না বলে রেডি হতে লাগলাম। আর ও ঠিকইতো বলছে।আজ অনেকদিন পর যাইতেছি যেহেতু,একটু তাড়াতাড়ি রওয়ানা দিই।

অতঃপর রেডি হয়ে,নাস্তা সেরে নিলাম।আর এ ফাকে সুরভি আমাকে আব্বু আম্মু আর নিশির সামনে ভালোমত কথা দিয়ে পঁচিয়ে নিল।যাইহোক,ছোটবোন বলে কথা। অবশেষে আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাহির হলাম শশুড় বাড়ির উর্দেশ্য। অনেক্ষন বাস জার্নি করে প্রায় দুপুরের দিকে শশুড় বাড়িতে এসে হাজির হলাম।আমার কেমন যেন লজ্জা লাগছিল।এটা মনে হয় নিশি বুঝতে পারল।তাই নিশি আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল।অতঃপর নিশি আর আমি তার আব্বু-আম্মু মানে আমার শশুড়-শাশুড়ির সাথে সালাম ও ভাব বিনিময় করে নিশির রুমে গিয়ে আমি গা এলিয়ে দিলাম।তখনই নিশি এসে বলল,

:-এই যাও ফ্রেশ হয়ে আস,,,আম্মু খেতে ডাকছে(নিশি)

:-ফ্রেশ হবো কোথায়?আমিতো কিছুই চিনি না,,,(আমি)

:-চেনা লাগবে না,,,আমার সাথে আস,,,

:-হুমম চল,,, ফ্রেশ হয়ে এসে আমি আর নিশি খাবার টেবিলে গেলাম। ওখানে গিয়েইতো আমার চোখ চড়কগাছ,,,, এতরকমের খাবার। বিশ্বাস করেন আর বা নাই করেন,কমপক্ষে পনেরো রকমের উপরে খাবারের আইটেম করল। মাছই আছে তিন ধরনের,খাসির মাংশ,গরুর মাংশ,ডিম,ভর্তা মানে আরো কত কি,,,, এত খাবার দেখে আমারর ক্ষুদা যেন আরো বেড়ে গেল।তখনই,

:-বাবা,দাড়িয়ে কেন বসে পড়,,,(শশুড়)

:-হুমম,, এই বলে আমি বসে পড়লাম। খাবার-দাবার শেষ করলাম। একজন বাঙ্গালি হিসেবে যতটুকু খাওয়া যায়,আমি মনে হয় তার চেয়ে বেশি খাইছি। আবার এটা ভাইবেন না যে,আমার লজ্জা থাকলে কেমনে এত খাবার খাইলাম। আসলে আমার যতই লজ্জা থাকুক না কেন?খাবার সামনে এলে আমি লজ্জা কি সেটা ভুলে যাই।এতে যে যা ভাবার ভাবুক,তাতে আমার কি,,,,? আবার এটা ও ভাইবেন না যে,আমি পেটুক,,,হা হা হা,,,,, এখন কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়া যাক। আমি বিছানায় শোয়া মাত্রই নিশি রুমে এসে হাজির। এসেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,

:-এইই,তুমি খাবার এতকম খাইলে যে,,,রাতে এ খাবার সবগুলোই তোমাকে খেতে হবে,,,আম্মু কত কষ্ট করে তোমার জন্য খাবার তৈরি করছে,,,,আর তুমি খাবার সবগুলো টেস্টই করলে না,,,,(আমার পাশে বসে অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো বলল নিশি)

:-আচ্ছা সে নাহয় রাতে দেখা যাবে,,,,এখন এদিকে আসোতো,,, এই কথা বলেই,আমি নিশিকে টেনে নিলাম আমার বুকে। আপনাদের তো বললামই আমি কেমন খেলাম। নিশিকে জড়িয়ে ধরে আমি শুয়ে আছি।তখনই দরজায়,

:-ঠক ঠক ঠক,,,,, নিশি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে,,,

:-আরে সিপাত,তুই এতক্ষন কোথায় ছিলি,,,,(নিশি)

:-স্কুলে আর কি,,,তোমরা আসবে জানলেতো আমি আজ স্কুলেই যেতাম না।তা আপু,দুলাভাই কই?(সিপাত,আমার একমাত্র শালা।এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে)

:-ওই তো,বিশ্রাম নিতেছে,,,,(আমাকে দেখিয়ে নিশি বললো)

:-আচ্ছা,আপু।দুলাভাই বিশ্রাম নেক।বিকালে না হয়া আলাপ করবো,,, এই বলে সিপাত চলে গেল। আর আমি এতক্ষন ধরে ওদের কথা শুনছিলাম। আমি চাইলেও ওকে ডাকতে পারতাম।কিন্তু ডাকি নাই।তখন,

:-এইই তুমি এখনও জেগে আছ,,,,?(নিশি)

:-হুমম,,তোমার জন্য,,,এখন আসোতো।(আমি) ও আসলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। বিকালে নিশির ডাকে ঘুম ভাংলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি,নিশি রেডি হচ্ছে।আমিও ভেতরে ডুকে চেয়ারে বসলাম।

:-দুলাভাই,,,তুমি কেনে চলর,,,? রুমে ডুকতে ডুকতে কথাটা বলল সিপাত।

:-এই তো শালাবাবু ভালো,,তা তোমার খবর কি?আর পড়ালেখা কেমন চলতেছে?(আমি)

:-দুলাভাই আমিও ভালো আছি।আর পড়ালেখা চলতেছে ধাক্কাধাক্কির মাধ্যমে,,,হা হা হা,,,(সিপাত)

:-তুইতো বেশ পেকে গেছিস,আমাদের সাথে ঘুরতে যাবি?(নিশি)

:-হুম,,,তোমরা আমার জন্য অপেক্ষা করো,,আমি রেডি হয়ে আসতেছি,,,,,এই বলে সিপাত চলে গেল।ঠিক তখনই আমার মোবাইলে আম্মুর ফোন। রিসিব করলে আম্মু বলল,আমরা পৌছিয়েছি কি না?আমি যেন লজ্জা না পাই,,,আরো কয়েকটি উপদেশ ও খোজখবর নিয়ে ফোন রাখল। যাইহোক,নিশি আমি আর সিপাত গ্রামটি ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসলাম।

সকল আদর আপ্পায়ন ও ভালোলাগার মাঝে এভাবে কেটে গেলো নয়দিন।আগামিকাল আমরা আমাদের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিবো। আসলে আমি এতদিন শশুড় বাড়ি না এসেই ভুল করেছি। আপনাদের বলে রাখি,শশুড়বাড়ি আসলেই মধুর হাড়ি।শশুর বাড়ির আপ্পায়ন ভুলার মতো নয়।শশুড় বাড়িতে একজন জামাইয়ের আপ্পায়ন সর্বদা সকল আপ্পায়নের উপরে থাকে। এখন আমার মন চাইতেছে শশুড়বাড়িতে আরো কিছুদিন থাকতে। কিন্তু আমাকে এখানে পড়ে থাকলেতো হবে না, আমাকেও তো কর্মস্থলে যেতে হবে নাকি?

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত