রাতে অফিস থেকে ফেরার পর মনে হল জ্বর আসবে।সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ঠিক তাই হল জ্বরের জন্য বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না। অফিসে কল করে অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাঙলো কলিং বেল বাজার শব্দে।বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না তবুও কষ্ট করে দরজাটা গিয়ে খুললাম।
অনেকটা অবাক হয়েই নাহিদার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার অসুস্থতার কথা শুনে সে বাসায় চলে আসবে।আমাকে দেখে একটু চিন্তিত হয়েই বলল, তোমার নাকি খুব জ্বর উঠেছে।বলেই সে আমার কপালে হাত রাখল। তোমারতো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে বলতে বলতে সে আমার হাত ধরে বিছানায় শুয়ে দিল।দেখলাম প্যাকেটে করে খাবারও নিয়ে এসেছে।খাবার প্যাকেট থেকে খুলে বলল, তারাতারি খেয়ে নাও। কিন্তু আমি এতটাই অসুস্থ যে খাবারটা নিয়ে খেতে পারব না।সেটা মনে হয় নাহিদা বুঝতে পেরেছে।সে নিজে হাত দিয়ে আমার মুখের সামনে নিয়ে বলল, হা কর,আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
আমি আসলে এতটাই বিস্মিত হয়ে পড়েছিলাম যে কোন কিছু না ভেবেই খেতে শুরু করলাম। যে মেয়েটা আমাকে কখনো সহ্য করতে পারত না।বিয়ের প্রায় নয় মাস হলেও কখনো আমাকে টাচ করেনি।এমন কি দুজনের ভিতর খুব কমই কথা হত তাও আবার শুধু অফিসিয়াল কাজ নিয়ে।আজ সে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।তার ব্যবহারে মনে হচ্ছে এটা আমাদের মাঝে নিত্যদিনেরই ব্যাপার। খাওয়া শেষ হওয়ার পর দেখলাম।নাহিদা ব্যাগ থেকে ঔষধ বের করছে।আমাকে ঔষধ খাইয়ে বলল,ঘুমানোর চেস্টা করতে।আমি আর কিছু না ভেবেই ঘুমিয়ে পড়ার চেস্টা করলাম।আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি আর ভাবছি যদি স্বপ্ন হয় তাহলে এই স্বপ্ন যেন কখনো শেষ না হয়।
পড়ালেখার পাঠ সমাপ্ত করেই একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী পেয়ে গেলাম।বেতনও ভালো মানে বেশ ভালো।আমি একা বলে খরচও তেমন নেই,তাই চাকরীটা করে আনন্দেই ছিলাম।কোম্পানীর ম্যানেজার অর্থাৎ বস আফসার চৌধুরী খুব ভালো এবং দায়িত্ববান একজন মানুষ।যেকোন কাজই মনোযোগ দিয়ে করি বলে তিনি আমাকে বেশ পছন্দ করেন। খুব অল্প সময়ে অর্থাৎ দুবছরের মধ্যেই কয়েকবার প্রমোশন দিয়েছেন আমাকে।
ঝামেলাটা শুরু হল যেদিন থেকে উনার মেয়ে নাহিদা চৌধুরী অফিসে জয়েন করে। প্রথম দিনই আমার একটি কাজের জন্য উনি আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে পুরো আধঘন্টা ঝেড়ে আমাকে বের করে দিলেন।অথচ আমার কম্পিউটারে প্রবলেম দিচ্ছিল বিধায় এটা ঠিক করে কাজটা শেষ করতে লেট হয়ে গেছে।এটা উনাকে বুঝাবতো দূরের কথা আমাকে বলার সুযোগই দেয় নি। দুদিন পর আমার অফিসে যেতে একটু লেট হয়।অফিসে যাওয়ার পরই নাহিদা ম্যাডাম আমাকে তার রুমে ডাকলেন।
আমি উনার রুমে ডুকার অনুমতি চেয়ে ভিতরে গিয়ে দাড়ালাম।উনি আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, আপনার নাম রিয়াদ। জ্বী ম্যাম। আজ আসতে লেট হল কেন? জ্বী মানে পথে একটা এক্সিডেন্ট হওয়ায় আসতে লেট হয়েছে। এই কথা বলতেই উনি রেগে গেলেন। মিষ্টার রিয়াদ,আপনি আমাকে অযুহাত দিবেন না।এই ধরনের ফাল্তু অযুহাত আপনি আমাকে দেখাচ্ছেন।বাবা আপনার কত প্রশংসা করে আপনি নাকি দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেন।অথচ আমি আসার পর থেকেই দেখছি আপনি একজন দায়িত্বহীন লোক।নিজের কাজের প্রতি কোন আগ্রহই নেই আপনার।প্রথম দিনই আপনার দায়িত্বহীন কাজের পরিচয় দিয়েছিলেন।
আমারও রাগ উঠে গেল।একে তো অফিসে আসার পথে বাস এক্সিডেন্টে একটুর জন্য বেচে গেছি নয়ত এখন হাসপাতালের বেড এ পড়ে থাকতে হত। তার উপর উনার এই ব্যবহার মোটেও ভাল লাগলনা।তাই আমি একটু রেগেই বললাম, আপনি নিজেকে কি মনে করেন যে আপনাকে আমি কাজ ফাকি দেওয়ার অযুহাত দেখাব।আর প্রথম দিন কম্পিউটারে প্রবলেম হওয়ায় সেটা ঠিক করে কাজটা শেষ করতে দেরী হয়।আর আপনার বাবা এতো ভালো মানুষ আপনি উনার বিপরীত হলেন কিভাবে।
আমি বের হয়ে নিজের ডেস্কে এসে বসলাম।আসলে একটু রেগেই গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন রাগটা একটু কমে গেল তখনই মনে হল চাকরীটা বুঝি এবার গেল।কারন নাহিদা ম্যাম জয়েন করার পরই আফসার সাহেব সব দায়িত্ব উনার উপর দিয়ে নিজে অবসর নিয়ে ফেললেন।অবশ্য মাঝেমাঝে আসেন কিন্তু তাতে কি!ক্ষমতা এখন নাহিদা ম্যাম এর কাছেই চাকরী থেকে আমাকে বহিষ্কার করতেই পারে।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়েই আর কিছু হলনা।এরপর থেকেই নাহিদা ম্যাম আমার সাথে কথা কম বলত ।বলতে গেলে আমাকে দেখলেই বিরক্ত হত।শুধু যখন কোন কাজের জন্য আমার প্রয়োজন পড়ত।আমাকে ডেকে নিয়ে আমার দিকে না তাকিয়েই কাজ সম্পর্কে বুঝিয়ে দিত। আমার অবশ্য ভালোই হল। সবসময় সবাইকে অহেতুক ঝাড়ির উপর রাখার কারনে আমারও তেমন তাকে ভালো লাগত না।শুধু চাকরীর খাতিরে তাকে মেনে চলতাম। আমি ভাবতাম আমাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করে না কেন? হয়ত আফসার চৌধুরীর জন্যই।
নয় মাস আগে হঠাৎ আফসার চৌধুরী অফিসে এসে সবাইকে নাহিদা ম্যামের বিয়ের দাওয়াত দিলেন।পনের দিন পর নাহিদা ম্যামের বিয়ে।সবাই যেন উপস্থিত থাকি।সেদিন আমার সাথেও উনার ভালো-মন্দ খবর আদান-প্রদান হয়
প্রথমে ভেবেছিলাম বিয়েতে যাব না।কিন্তু আফসার সাহেবের কথা রক্ষা করতেই বিয়েতে গিয়ে হাজির হলাম।
বিয়েতে হাজির হওয়ার পর মনে হল এখানে কিছু একটা ঠিক নেই।তখনই শুনতে পারলাম।বর নাকি অন্য এক মেয়েকে ভালবাসে।তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তাই বিয়ের রাতে মানে ঐ দিনই সে তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।আফসার সাহেব কে দেখলাম প্রচন্ড রেগে গেছে।তিনি মোবাইলে পাত্রপক্ষকে খুব কড়াভাবে বকাবকি করছিলেন।আর এটাও বললেন যে আজই নাকি উনার মেয়েকে বিয়ে দিবেন। কল শেষ হওয়ার পর দেখলাম উনি ঘেমে যাচ্ছেন এবং মনে হচ্ছে খুব টেনশনে আছে।অবশ্য টেনশনে থাকবে না কেন?উনার একমাত্র মেয়ের বিয়ের দিনই বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।
আমি একবার ভাবলাম উনার কাছে যাই আবার মনে হল এই পরিস্থিতিতে উনার সামনে না যাওয়াই ভালো হবে।ঠিক তখনই দেখলাম উনি আমার দিকে তাকালেন।কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন।হঠাৎ আমার দিকেই দেখলাম আসছেন।আমার কাছে আসতেই আমি সালাম দিলাম।তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, রিয়াদ বাবা,সবইতো শুনলে।আমাকে এই বিপদ থেকে এখন তুমি পারবে উদ্ধার করতে। মানে! স্যার আমি আসলে কিছু বঝলাম না। আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে কর।এই কাজটা বাবা তুমি কর।আমি জানি তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে।আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে কর।এখন তোমার উপরই আমার সব মান-সম্মান। আমি আসলে এতটাই বিস্মিত হয়ে পড়েছিলাম যে কিছুক্ষন চুপচাপ উনার দিকেই তাকিয়েছিলাম। আমার বাবা-মা নেই,একাই।এটা উনি ভালো করেই জানতেন।তাই বিয়েতে কাউকে জানানোর প্রয়োজন হয়নি।
বাসর ঘরে ঢুকার পর দেখলাম নাহিদা বিছনায় বসে আছে।কাছে যেতেই বলে উঠল, সে আমাকে স্বামী হিসেবে মানে না।আমি যেন কখনো স্বামীর অধিকার না ফলাই।যদি কখনো চেস্টা করি আমাকে ডিভোর্স দিবে। এরকম কিছুই আশা করেছিলাম তাই কিছু না বলে বিছানায় শুতে গেলাম।তখনই আবার বলল সোফাতে গিয়ে শুতে আমার সাথে বিছানায় ঘুমাতে পারবে না।
বউকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল।এমনিতেই বিয়েটা আচমকা হয়েছে তার উপর এই মেয়েকে তো আমি কখনো ভালো চোখে দেখি নি।বাসর রাতেই বদ মেয়েটা ডিভোর্সের কথা বলে ফেলায় কিছুটা রাগই উঠেছিল।কিন্তু কি করার বউ তো।তাই কিছু না বলে সোফাতে গিয়েই শুলাম।
আমি যেহেতু একা তাই বাবা মানে আমার শ্বশুর তার বাড়িতেই আমাকে রেখে দিলেন। এভাবেই দিনগুলো যাচ্ছিল।নাহিদা আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজনই মনে করত না।আমি মাঝেমধ্যে চেস্টা করতাম কিন্তু বদ মেয়েটা আমাকে এড়িয়ে চলে যেত।কোন উত্তর দেয়ার চেস্টা করত না।কি বলব বিয়ের পরের দিনই সে অফিসে গিয়ে হাজির। আমি অবশ্য বিয়ের পর থেকে অফিসে একটু লেট করে যাওয়া শুরু করি। অফিসে যখন নাহিদা আসত সবাই দাড়িয়ে গেলেও আমি বসে বসে আমার কাজ করতাম।আমি আসলে চাইতাম নাহিদা আমাকে ডেকে নিয়ে কিছু বলুক কিন্তু সে আমাকে কিছুই বলত না।
বিয়ের একমাস পর একরাতে আমি তাকে জোর করে চুমু দেই।সে তাতে রেগে গিয়ে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলে এবং বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে।আমি ভাবতে পারি নি ও এতটা রিয়েক্ট করবে।ভেবেছিলাম হয়ত রাগ করে কিছু একটা বলবে তাই বলে এতটা।তার ঐ রনমূর্তি দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে সে আমাকে কখনো মেনে নিবে না। তাই পরের দিন সকালে আমি আমার সবকিছু নিয়েই আমার ফ্লাটে চলে আসি।বাবা অবশ্য কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু আমি না করি।
ঐদিনের পর থেকে আমি আবার সময়মত অফিসে যাওয়া শুরু করি এবং নাহিদা আসলে তাকে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা শুরু করি।আমি চাইলেই চাকরীটা ছেড়ে দিতে পারতাম কিন্তু চাকরীটা আমি ছাড়তে পারি নি।অবশ্য সেটার কারন হয়ত নাহিদা।এই অল্পকদিনে বদ মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম যদিও জানতাম না সে আমাকে কখনো ভালবাসবে কি না।
ছয় মাস পূর্বে শপিং করার জন্য মার্কেটে গিয়েছিলাম।শপিং শেষে যখন রাস্তায় আসলাম তখনই দেখি নাহিদা গাড়ি থেকে বের হচ্ছে হয়ত মার্কেট করার জন্যই।ঠিক সে সময়ই পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আমি তার কাছে ছুটে গেলাম।ড্রাইভারকেও দেখলাম গাড়ি থেকে নেমে এল।নাহিদাকে তারাতারি গাড়িতে উঠিয়ে তাকে বললাম শিঘ্রই মেডিকেলে যেতে।ড্রাইভার আমাকে আগে থেকেই চিনত।সে কিছু না বলেই মেডিকেল এর দিকে গাড়ি ঘুরাল। মেডিকেল পৌছানোর পর তাকে ইমার্জেন্সিতে ডুকানো হল।ডাক্তার বলল দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে।এক ব্যাগ অবশ্য তাদের কাছেই ছিল। আর এক ব্যাগ জোগার করতে হবে।তার রক্তের সাথে আমার রক্তের গ্রুপ মিল হয়ে যাওয়ায় আমি রক্ত দিলাম।বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম আগেই।তিনিও চলে আসলেন।
আমরা বসে বসে অপেক্ষা করা শুরু করলাম।নাহিদার উপর কিছুটা রাগই লাগছিল।বোকা মেয়ে গাড়ি থেকে নামবি ভালো কথা মার্কেটের দিক দিয়ে না নেমে রাস্তার দিকে নেমেছে। সন্ধ্যায় যখন নাহিদার জ্ঞান ফিরল।তখন কেবিনে আমি একাই ছিলাম।তাকে চোখ খুলতে দেখে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, এখন কেমন লাগছে। সে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে রইল।আমি বুঝতে পারলাম না সে আমার প্রতি এই অবস্থাতেও বিরক্ত নাকি কথা বলতে পারছে না। তখনই বাবা এবং ডাক্তার একসাথে ডুকল।আমি ঔষধ কিনার জন্য বের হয়ে গেলাম।
নাহিদার সুস্থ হতে প্রায় একমাসের উপর লেগেছে।মেডিকেল থেকে অবশ্য দুই সপ্তাহ পরই তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।সেই দুই সপ্তাহের প্রতিদিনই আমি অফিস শেষে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।কিন্তু সে আমার সাথে কথা বলত না।তাই বাসায় নেওয়ার পর থেকে তাকে আমি আর দেখতে যাইনি।আমার খুব যেতে ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু সে বিরক্ত হবে ভেবে আর যাওয়া হয় নি।বাবার কাছ থেকেই তার খোজখবর নিতাম।যে কয়দিন সে অফিসে আসে নি ততদিন আমিই অফিস পরিচালনা করেছিলাম। নাহিদা সুস্থ হওয়ার পর থেকে আবার সে অফিসে আসতে শুরু করল।তখন থেকে একটা জিনিস খেয়াল করতাম আমাকে দেখলে তার চেহারায় বিরক্তের ভাবটা থাকত না।এমনকি কোন কাজের জন্য ডাকলে কথা বলার সময় তার চেহারায় বিরক্ত ব্যাপারটা দেখতাম না। অবশ্য নরম হয়েও কথা বলত না তবে আগের মত রাগী কন্ঠে নয়।
কিছুদিন পূর্বে রাতে হঠাৎ নাহিদার কল আসল।আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি আমাকে কেন কল করল।যখন কলটা ধরলাম।নাহিদার কাঁদার আওয়াজ পেলাম। সে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, বাবা নাকি হঠাৎ স্টক করেছে।তাকে এখন মেডিকেল নিয়ে যাচ্ছে।আমাকে সেখানে যেতে বলল। সেখানে গিয়ে দেখি নাহিদা কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।বাবা কে আইসিইউতে রাখা হল।ডাক্তার বলল ভয়ের কিছু নেই।হঠাৎ হার্টের কাজে একটু ব্যাঘাত হওয়ায় এটা হয়েছে।অবশ্য প্রায় মৃত্যুর কাছ থেকেই ফিরে এসেছেন।
নাহিদা যে এতটা নরম মেয়ে এবং সে কাঁদতেও পারে সেদিনই বুঝেছিলাম।পরের তিনদিন বাবাকে মেডিকেলেই রাখা হল।আমি নিয়মিত উনাকে দেখতে যেতাম।নাহিদাও সেখানে থাকত। শেষদিন অফিস শেষে যখন বাবাকে দেখতে মেডিকেল গেলাম।কেবিনের দরজার সামনে আসতেই শুনতে পেলাম বাবা নাহিদাকে বলছে, রিয়াদ ছেলেটা অনেক ভালো।দেখ মা তুই আর ওকে কষ্ট দিস না।এতিম ছেলেটা কখনো হয়ত তেমন কারো ভালবাসা পায় নি।তোর যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিল তখন তো দেখেছিস। কি না করল তোর জন্য। তোর রক্ত দেওয়া থেকে ধরে যাবতীয় কাজ সে একাই করেছে।এখন আবার আমার জন্যও তাকে কষ্ট করতে হচ্ছে।তুই তাকে মেনে নে মা।দেখবি ও তোকে সুখে রাখবে।
নাহিদা চুপ ছিল। আমি ভিতরে না ঢুকে বাহির থেকে ঘুরে এসে একটুপর গিয়েছিলাম।সেদিন যখন বাসায় আসতে যাব তখনই নাহিদা আমাকে বলল, শুনুন। হ্যা,বলেন। কালকে তো বাবাকে বাসায় নিতে হবে।আপনার মনে আছে। হ্যা আছে।আর কিছু? হ্যা মানে।না কিছু না।আপনি সাবধানে যাবেন। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম বদ মেয়েটার মনে সম্ভবত জায়গা পেয়েছি।পরের দিন থেকেই নাহিদা আমার সাথে কথা বলার চেস্টা করত।কিন্তু আমি ইচ্ছে করে এড়িয়ে চলতাম।আসলে চাচ্ছিলাম বদ মেয়েটাকে কিছুদিন ঘুরাব।
সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙার পর বুঝতে পারলাম।অনেক সময় ধরেই ঘুমিয়েছি।দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম নাহিদা শাড়ি পড়ে কাজ করছে। বিয়ের দিন তাকে প্রথম শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেছিলাম আর আজ।তাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম।হঠাৎ শাড়িতে যখন ভালো করে চোখ পড়ল আমি আবার অবাক হলাম।শাড়িটা নাহিদার জন্য কিনেছিলাম কিন্তু তাকে দেওয়া হয় নি, আলমারিতে ছিল।বদ মেয়েটা আলমারি থেকে খুলে এটা পড়েছে, তার মানে সে অধিকার খাটানো শুরু করে দিয়েছে। ঘোর কাটল নাহিদার ডাকে।সে এসে আমাকে ছুয়ে বলল, জ্বর টা কমেছে তাহলে।দাড়াতে পারবে। আমি হুম বললাম। তাহলে এক কাজ কর ফ্রেশ হয়ে আস আমি ততক্ষনে খাবার রেডি করছি।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম নাহিদা খাবার রেডি করে রেখেছে।খাবারের আয়োজন দেখে তো আমি হতভম্ব এত খাবার কোথা থেকে এল।তাকে জিজ্ঞাস করলাম, এত খাবার কোথায় থেকে আনলে? ড্রাইবারকে দিয়ে বাজার করিয়ে এনেছি, আমিই রেঁধেছি। আমি আবার অবাক হয়ে বললাম, তুমি না রাঁধতে জান না। নাহিদা একটা লজ্জামাখা হাসি নিয়ে মাথা নিচু করে বলল, মানে এইত কয়দিন হল শিখছি। এখনো খুব একটা ভালো রাধতে পারি না।
তার এই লজ্জামাখা হাসি দেখে আমি আবার অবাক হলাম।আজ শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।আজ নাহিদাকে সম্পূর্ন নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম।তার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা স্পষ্টই দেখতে পেলাম। ভেবেছিলাম তাকে কিছুদিন এড়িয়ে চলব।আমাকে এতদিন কষ্ট দেয়ার শোধ তুলব।কিন্তু বদ মেয়েটা এটা আর হতে দিল না।