আমি বরাবরের মতো সর্বদাই নারী অধিকার, নারী হ্যারেসমেন্ট, নারীর প্রতি অন্যায় অবিচার এসব নিয়ে লড়েছি লড়বো’ও। এটা নিয়ে কানাঘুষার শিকার’ও কম হয়নি। যাইহোক এটা মূখ্য না, আমাদের সমাজটাই এমন। আপনি যাই’ই করেন সমালোচনা হবেই। আমিও মনে করি সমালোচনা হোক, সমালোচনা না হলে আমি আলোচনায়’ই থাকবো না। এখন যে বিষয়টা নিয়ে বলবো এটা অনেকেরই একটু তেতো লাগতে পারে কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। সত্য যা বলতেই হবে। আমাদের দেশে কিছু কিছু নারীরা আগের চাইতে এখন অনেক সচেতন। সচেতন হওয়া অনেক ভালো কিন্তু এটা এইভাবে ডাইভার্ট কেন হবে? এটাকে কিভাবে নিবো আমরা? আমরা জানি ভালোর বেশিটা ভালো কিন্তু ভালোর অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালোনা। যেখানে কমন সেন্স সবচেয়ে বড় আদালত সেখানে সেন্সটা আনকমন হলে কি ঘটে দেখবেন?
আমার একটা ছোট ভাই ঢাকা কমার্স কলেজে পড়ে। নতুন ভর্তি হয়েছে, সেদিন মিরপুর থেকে দৌড়ে বাসে উঠতে না উঠতেই এক মায়ের বয়সী মহিলা ওরে এত্তো জোরে থাপ্পড় মেরে বসেছেন যে আরেকটু হলে বাস থেকে পরে যেতো। হেল্পারের জন্য বেঁচে যায়। ঘটনা ছিলো মহিলার হাতের একটা অংশ বাসের দরজার কাছে রডের ওপর রাখা ছিলো। ছোট ভাই উঠতে গিয়ে ওনার হাত ধরে ফেলছিলো ব্যাস এটাই। উনি ধরে নিয়েছেন উনাকে বাজে ভাবে টাচ করা হয়েছে। একবারো এটা ভাবেন নাই ছেলেটা তারই ছেলের বয়সী। আচ্ছা এটা বাদ দিলাম অন্তত এটা ভাবা উচিত ছিল ছেলেটা দৌড়ে বাসে উঠতে গিয়েও হয়তো এমনটা হয়েছে। আর কি ভাবতে পারতেন আমি জানিনা, আমার খুব বাজে লেগেছিলো বাসের সবাই মহিলাকে সাপোর্ট করেছেন। এটা সুন্দর কিন্তু আসল কাহিনীটা কেউ শুনতে চায়নি এটা কেমন? এই ছেলেটা যখন বাসায় এসে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলছিলো, ভাইয়া কসম আমি আন্টিকে ওভাবে ছুঁই নাই তাও উনি আমায় মারছে। কয়েকটা ছেলে মোবাইল দিয়ে ভিডিও’ও করছে। আমি কিছুই বলতে পারিনি, এখানে প্রতিবাদের কোন স্পেস নেই। এখানে ম্যান্টালিটির চরম বিপর্যয়ের দৃশ্য পরিলক্ষিত। আমি জাস্ট বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিতে পারছিলাম। আমার ভাইকে আমি চিনি ভাই।
আমার আরেকটা বড় ভাই সেদিন মৌচাকের একটা যায়গায় ফুটপাত ধরে হেঁটে অফিস যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটা লোক খুব সম্ভবত তার ওয়াইফকে ভীড় ঠেলে হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ভীড়ের মধ্যেই মহিলার হাত লাগে ভাইয়ের হাতে। বড় ভাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলছিলেন সরি আপু, মহিলাটা তখন তেড়ে এসে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। ওনার হাসব্যান্ড আইসা রীতিমত এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। লোকজন জড়ো হয়ে তামাশা দেখছিলো। উনি কোন ভাবেই বুঝাতে পারেননি যে ধাক্কাটা উনিও দেননি তাও বেশি সম্মান দেখাতে উল্টো সরি বলেছিলেন শুধু। যাইহোক, খেসারত হিসেবে মহিলার হাতের চুড়ির আঘাতে উনার হাত ফেটে যায় আর মার খাওয়াটা বোনাস ছিলো। উনি অনেকদিন পর্যন্ত অন্যমনস্ক হয়ে পরেছিলেন লজ্জায়। উনি এটা আশা করেননি কোনদিন, ওনিও ফুটফুটে একটা মেয়ের বাবা। আমি উনার হয়ে সাফাই গাচ্ছি কারণ কিছু কিছু মানুষ আপনার বিশ্বাসের শীর্ষে থাকে। যেমন আপনার বাবাকে আপনি যতটা ভালো জানেন এমনটাই আমি ওনারেও জানি।
আমার একটা ফ্রেন্ড অনেকদিন আগে একটা চলন্ত রিকশায় বসা এক মেয়ের ওড়না টেনে হাতে নিয়ে আসে। রিকশা থেকে ওর বয়ফ্রেন্ড নেমে এসে ইচ্ছেমতো থাপ্পড় মারতে থাকে। মেয়েটাও কম যায়না জুতা খুলে একদম নাকে মেরে বসে। নাক ফেটে রক্ত বের হয়ে আসতেছে। সাথে রিকশাওয়ালা কেন বাদ যাবে? ও আইসা সুযোগে দুটো দিয়ে দিয়েছে। পেছন থেকে এক দোকানদার দৌড়ে এসে যদি সত্যটা না বলতো তাহলে এটা নোংরা ইস্যু হয়েই থাকতো। ঘটনা ছিলো মেয়েটার ওড়না এতো দ্রুত রিকশায় চাকায় পেছিয়ে যাচ্ছিলো যে বলার মতো সময় ছিলো না। দেখা মাত্র টান দিয়ে হাতে এনেছিলো। বাঁচিয়েছিলো মেয়েটাকে। এটা শর্টফিল্মের কাহিনী না, নিজের চোখে দেখা।
সবই ভেবেছিলাম ভুলে এটা হতেই পারে। যে দেশে সৎ আর সততা বিলীন প্রায় এখানে একটা দুইটা ন্যায় আর ন্যায়ের কাতারে থাকে না। তারপর দেখছি এই ব্যাপারটা রেপেডলি ইনক্রিজ হচ্ছে। এখন সচেতনতার সিস্টেমের উপর শিক্ষাদান কর্মসূচি চালু করা সময়ের দাবী।
এবার আমার সাথে ঘটা কাহিনী না বললে ভাববেন এতোক্ষণ ফাউ প্যাচাল পারছি। আমি মাস খানেক আগে ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম। আমার আগের সিটে একজন মেয়ে বসেছিলেন। আমার থেকে বয়সে ভালোই বড় হবেন। জার্নির শেষ সময়ে এসে একটা হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে বাস ঢুকলো। আমি সামনের সিটে ভর করে যেই উঠতে যাবো ওনার সিট গেয়ারটা ডাউন হয়ে সিট নিচে নেমে যায়। আমার হাত একদম উনার কাঁধে গিয়ে ঠেকে। তড়িঘড়ি করে আমি উনাকে সরি বলতেছিলাম। উনি কোনরকম উঠে আমায় হাতের কাছে যা পাচ্ছেন তা দিয়েই আঘাত করতেছিলেন। আমি বলতেই পারছিলামনা যে আপু আমি জাস্ট সিটে ভর করে উঠতে চাইছিলাম। উনার গলার স্বর এতোটাই লাউড যে আমার কথা উনার এবং আশেপাশের কারো কানেই যাচ্ছিলোনা। আরেকজন বীরপুরুষ বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে উঠছিলেন সিট ভেঙেই মেয়েটার গায়ে হাত দিছে। ওরে ধরে আসেন সবাই ছিড়ে ফেলি। যাইহোক সেদিন বাসের সুপারভাইজার এসে শিওর করলেন যে এই সিটের গেয়ার ভাঙ্গা। উনি মহিলা তাই বেশি চাপ পরেনি তাই টের পাননি। সেদিন যে লজ্জাবোধ হচ্ছিলো তা আপু সমাজরা অনুভব করতে পারবেন কিনা জানিনা। আমার জাস্ট মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। আমি একদম পেছনের ভাম্পারের সিটে গিয়ে বসছিলাম আর নিজের গালে থাপ্পড় দিচ্ছিলাম।
আমি এখানে কোন পক্ষকেই দোষারোপ করবো না। আমি সবাইকে জাস্ট এটাই বলবো বিচার করার মতো বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিকর্তা দিয়ে থাকলে আগে একটু বিচার কইরেন। তারপর হাত তুইলেন। আমাদের সমাজে চোর’রা এতোটাই এক্সপার্ট যে তাদের কেউ ধরতে পারে না সহজে। একটা উদাহরণ দেই, স্কুলে থাকতে দুষ্ট ছেলেপুলের দল পেছনে বসতো। ইংরেজি ক্লাসের সময় স্যার যখন বোর্ডে বিষয় লিখতেন তখন দুষ্টরা পটাপট জানালা দিয়ে চলে যাইতো। স্যার কোনদিন টেরও পায়নি। আমার একদিন পেট ব্যাথা করতেছিলো, ভাবলাম স্যার কিছুই বলবেনা। ইংরেজি ক্লাস করবো না, চলে যাই। স্যার বোর্ডে লিখছেন আর সব পটাপট ভাগতেছিলো। যেই আমি যাবো, জানালা পর্যন্ত যেতেই স্যার আমায় দেখে ফেলেছেন। সেদিন যে মাইর খাইছিলাম সেই মাইর আজকালকার পোলাপানের উপর পরলে আন্দোলন করে স্যারকে বরখাস্ত করা হইতো।
আমি আপুদেরকে, নারীদেরকে এটাই বলবো;- যার উদ্দেশ্য খারাপ তাকে আপনি চেহারা দেখেই বুঝবেন। আর দ্বিতীয়ত আপনি এরকম কিছু ফিল করলে একটু সুযোগ দিয়ে কনফার্ম হয়ে তারপর ধরে তক্তা বানিয়ে ফেইলেন কিন্তু সবাইকে এক কাতারে ফেলে পিটাইয়েন না বইন। এখানে প্রমাণ করার মতো কিছুই থাকে না। আপনার উপরই সম্পূর্ণ বিচার ব্যবস্থা। তাই দয়া করে একটু ভাববেন। এক্সকিউজগুলো শুনবেন, হতেও পারে ভুলে না জেনে এমন ঘটনা ঘটে। আমি বলবোনা সবাইকে ভালো ভাবতে শুরু করেন। জাস্ট একটু টেকনিক্যালি জাজ করে নিবেন। ভালো খারাপ আলাদা করতে বেশি কিছু লাগেনা, চেহারা আর চোখ দেখেই বুঝা যায়। আর কিছু কিছু ভাইরা যারা ফোন বের করে ভিডিও করে ফেলেন। তাদেরকে আমার লাল সালাম। কিচ্ছু বলার নেই। দেইখেন কোনদিন আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কোন ভিডিও অন্যায়ভাবে ভাইরাল না হয়ে যায়। প্রকৃতি কিন্তু সেইম সিস্টেমে যার যার পাওনা বুঝিয়ে দেয়।