অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কনক বেশ কয়েকদিন হল অফিসে আসছে না । আসবে কি করে? কনকের বাবা’র অসুখ , সেই কারণে কনক’কে বেশ খাটতে হচ্ছে। কনকের মিষ্টিমাখা মুখ বেশ কয়েকদিন হল দেখতে পারছি না । সকালে বাসায় নাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। পাউরুটি আর জেলিতে কয়দিন চলে।মা বলে এবার বউ নিয়ে আয়। সকাল সকাল বউয়ের হাতের বানানো নাস্তা খেয়ে অফিসে যাবি!
মা তো জানেনা, এখন কি আর আগের দিন আছে । মেয়েরা শুধু কিচেনে বসে বসে সকলের খাবার বানাবে? আমি নিজে ও জানিনা আমার কপালে কি আছে? সেদিন কনক’কে বিয়ের কথা বলাতে যে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল,ওরে বাবা! আজকালের মেয়ে গুল যেন কেমন?বিয়ের আগেই বলতে শুরু করবে আমার আলাদা ঘর চাই। বাবা মায়ের সাথে থাকা চলবে না । রান্নার জন্য কাজের মেয়ে লাগবে।এছাড়া আছে দামী দামী ফার্নিচারের বায়না।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অফিসে চলে এলাম, খেয়াল করিনি। কনকের টেবিলের সামনে বেশ কয়েকজন দাড়িয়ে আছে । কনক উচ্চস্বরে কি যেন বলে যাচ্ছে। সকাল সকাল কনকের সামনে পড়তে চাইলাম না । কিন্তু বিধিবাম অফিসের সুমন্ত দা কনকের সামনে থেকে সরে গেলেন। সেই সাথে সামনের জায়গাটা খালি হয়ে গেল। আর সামনের দিকে তাকাতেই আমার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। কি আর করা মুখে হাসিভাব নিয়ে জিগ্যেস করলাম –কেমন আছ?
হুট করে টেবিল পেরিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল কনক। কিছু বুঝে উঠার আগেই বলে উঠল আজ আমায় বিয়ে করবে? আরে মেয়েটা বলছে কি? নির্ঘাত বাসায় কিছু একটা হয়েছে,মনে মনে ভাবছি আমি। অফিসের সকলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি কি বলি তা শুনতে চায় সকলে।
আর সকলে কনকের টেবিলের সামনে দাড়িয়ে থাকার কারণ হল সকলে তার বৃদ্ধ বাবার খোঁজ নিচ্ছিল। আর আমাকে দেখে কনক একেবারে পাল্টে গেল। মুখের রক্তিম আভা আরো রক্তিম হয়ে গোলাপি রঙ ধারণ করল। তখন আমার দিকে একপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কনক। আমি পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তেমন কিছুই আঁচ করতে পারলাম না । তার চাহনিতে এমন একটা কিছু ছিল আমি না বলতে পারলাম না। তাই সবার সামনে বলে উঠলাম এখানেই কাজী ডাকব নাকি বাইরে যাব।
সেটা আমি কি করে বলব,কনক বলে উঠল।“সেই কাণ্ডজ্ঞান বুঝি তোমার আজো হয়ে উঠেনি” বলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কনক।
“হ্যাঁ তা তো বটেই” বলে আমি আবার চুপ করে রইলাম।আসলে কি হয়েছে ব্যাপারটা বুঝতে চাইলাম।কিন্তু কেউ আমাকে কিছু বলল না । উল্টো সমীর দা এসে বলল-
“বিয়ের আয়োজন করব নাকি দাদা”।
ইচ্ছে হচ্ছিল ছুটে গিয়ে সমীরদা’র পাছায় কষে এক লাথি মারি। আমার জীবন মরণ সমস্যা উনি আছেন বিয়ের আয়োজন নিয়ে।কনকের দিকে তাকালাম।মুখে বিস্তৃত একটা হাসি হাসি ভাব।কনকের মুখায়াভ অনেকটা ফর্সা লাগছে।হয়তো বেশ কয়েকদিন রেস্টে ছিল তার ফল হবে হয়ত।চোখের নিচে কাজল লাগিয়েছে বোধহয় সেই সাথে ভুরু প্লাগ করিয়েছে বোধহয়।অনেকদিন আসলে কনকের দিকে এমনভাবে তাকাইনি।কনকের চাহনিতে অন্যরকম একটা কিছু খেলা করছে।এ যেন আমার চেনা কনক নয়। এই অন্য কনক যাকে আমি চিনি না কিংবা এমন চাহনির ভাষা আমার জানা নেই।
অফিসের বড় সাহেব মিজান স্যার এসে আমাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিলেন। সবাইকে এক জায়গায় জড়ো থাকতে দেখে, বাজখাই গলায় বলে উঠলেন-
‘এটা অফিস নাকি খেলার মাঠ, এত বেলা হল তোমরা এখনো গালগল্প করছ’।
এই সময় সকলে যে যার টেবিলের দিকে পা বাড়াল । আমি তখনো ঠায় দাড়িয়ে।কনক সামান্য দূরে, সেও নড়ছে না।মিজান সাহেব কনক’কে দেখে বলে উঠল-
‘তোমার বাবার কি অবস্থা,উনি ভালো আছেন তো কনক’।
কনক মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল, কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে বলল-
‘হ্যাঁ ভালো আছেন তবে এখন থেকে হাসপাতালে থাকতে হবে,এটা ডাক্তার সাফায়াতের নির্দেশ।ডাক্তার সাফায়েত একজন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট’।
‘ঠিক আছে, তুমি ইচ্ছে করলে ছুটি নিতে পার। একটা দরখাস্ত দিয়ে তুমি আরো কিছুদিনের জন্য ছুটি নাও। আমি সেটা মঞ্জুর করে দিচ্ছি। আর তোমার অবর্তমানে তোমার পেন্ডিং কাজগুলো কাঞ্চন করে দিবে’ বলে আমার দিকে তাকাল মিজান স্যার।
কনকের চেহারায় আবার অন্য রকম একটা ঝিলিক দেখতে পেলাম।এবার আমার দিকে তাকিয়ে কনক বলল-
‘পারবে তো সামাল দিতে’।
আমি কিছু না বলে আমার টেবিলের দিকে হাটতে লাগলাম।কনক আমার পিছু পিছু আসতে লাগল।
২
আমি তখন স্কুলে পড়ি। সকলের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সব দিন কি সমান যায়। সেই সময়ে একদিন পরিচয় কনকের সাথে । কনকের বাবার একটা ওষুধের দোকান ছিল। একদিন বেশ জ্বর ছিল। ওষুধের জন্য ডিসপেনসারিতে গেলাম। সেই প্রথম দেখি কনক’কে। সে তার বাবার সাথে কথা বলছিল। কনকের বাবা আমাকে দেখে বলল
– কি হয়েছে বাবা।
-চাচা শরীরে জ্বর জ্বর ,আমি বলেছিলাম।সেই সঙ্গে কনকের উপর নজর পড়ে গেল। মনে হল আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে। এত সুন্দর মুখশ্রী।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।চাচা মানে কনকের বাবা এগিয়ে এসে বললেন দেখি এদিকে আস।কিন্তু আমি এতই মুগ্ধ নয়নে দেখছিলাম যে, চাচার কথা কানেই গেল না।এরপরের ঘটনা আরো হাসির।
চাচা থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে বললেন ইনজেকশন পুশ করতে হবে, আর সেই ইনজেকশন পুশ করবে কনক।ইনজেকশনের প্রতি বরাবরই আমার অনীহা কিন্তু কনক দিবে শুনে রাজী হয়ে গেলাম। কনক আমাকে বলল
‘ভয় পাবেন না , আমি চেষ্টা করব আপনি যাতে ব্যথা না পান’।
বলে কি এইটুকুন মেয়ে। কিন্তু তার চাহনির মাঝে এমন একটা কিছু ছিল আমি না বলতে পারলাম না। ইনজেকশন বেশ দক্ষ ভাবে দিল কিন্তু বিপত্তি বাধল পরে। সুই বের করার পর আমার রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। তখন কনক বেশ ঘাবড়ে গেল। সেই সময় ওর চেহারায় কিছুক্ষণ পূর্বের হাসিটা মিলিয়ে একটা আতঙ্ক দেখতে পেলাম। চাচা অনেক চেষ্টার পর রক্ত বন্ধ করলেন। বললেন একথা যেন বাড়িতে না বলি। কনকের দিকে তাকিয়ে আমি তাই করলাম।
এরপর স্কুলে আসা যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দু’চোখের বিনিময়।একসময় স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম।কনক এর একবছর কলেজে এল। আমি যেন হাতে চাঁদ পেলাম। দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে কনক আর আমি। কি সুখের ছিল সেই সময়গুলো। কনক একেক দিন এক একটা আবদার করত। কখনো বলতে গাছে চড়তে, আমি অবলীলায় তা করতাম, কখনো বলত সাঁতার কাটতে আমি শার্ট প্যান্ট খুলে সর্ট প্যান্ট পরে লাফিয়ে পড়তাম কলেজের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে। সেই সময় কনকের মুখের ঝিলিক আর ভুবন ভুলানো হাসি দিয়েই আমি রাতের পর রাত পার করে দিতাম বিভোর হয়ে। সময় দ্রুত বয়ে যায়। একসময় আমাদের ব্যাপারটা আর গোপন থাকে না সকলে যেনে যায়। আমার বাড়ি থেকে চাপ আসে, কনকের বাড়ী থেকে ও চাপ আসে । আর দশটা প্রেম কাহিনীর মত আমাদের প্রেম পারিবারিক বাধার মুখে অসহায় হয়ে উঠে। কনকের বাবা কনকের জন্য বিয়ে ঠিক করেন। আমি আমার আম্মাকে বলি , তিনি এবং পরিবারের কেউ আমার ভালোবাসাকে পাত্তা দিল না । আমি অসহায়ের মত কনকের শ্বশুর বাড়ী যাওয়া দেখলাম।কনক আমাকে দেখে অনেক কাঁদল সেদিন তার অসহায়ত্বে ভরা চেহারা আজো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে।আমি নিজে ও চোখের জলে বুক ভাসালাম। কিন্তু অন্য আট দশটা প্রেমিকের মত পাগলামি করলাম না । আমার মন বলত আমি একদিন কনক কে পাব । কিন্তু কিভাবে তা জানতাম না।
৩
কনকের স্বামী ছিল ব্যবসায়ী। সম্ভবত এক্সপোর্ট ইম্পোরটের ব্যবসা করত। সারাক্ষণ ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকত। একদিন কনক আমাকে একটা চিঠি লিখেছিল । তা থেকেই জেনেছিলাম। কনকের একাকীত্বের কথা। আমি তখন অন্য মানুষ পড়াশুনা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম আমাকে ও অনেক পয়সা ওয়ালা হতে হবে। কনকের বেশ কিছু চিঠি পেলে ও কোন উত্তর দিলাম না। এর মাঝে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল । আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলাম । তাই অন্য দিকে মন দেবার সময় পেলাম না। আমাকে সারাক্ষণ নানা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হত। পাশ করে বেরুনোর আগেই বেশ ভালো একটা চাকুরী মিলে গেল একটা আইটি ফার্মে। একদিন বাসায় একা একা বসে আছি এমন সময় পিয়ন এলো । একটা চিঠি রেজিস্টার্ড ডাকে। খামের মুখ খুলতেই কনকের লেখা দেখে পড়তে লাগলাম।
কনকের স্বামী মারা গেছে বছর দুই হয়েছে। এখন বাবার সংসারে চলে এসেছে। এতদিন বাবার উপরেই চলেছে,তাই আমাকে কিছুই জানায়নি।এছাড়া আমি তার কোন চিঠির উত্তর দেইনি বলে ও বেশ দুঃখ প্রকাশ করল। আমি মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিলাম। পরিশেষে একটি চাকুরীর জন্য আকুতি। মনটা খারাপ হয়ে গেল চোখের সামনে অসহায় কনকের মলিন মুখের প্রতিচ্ছবি বেশে উঠল। নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হল। এরপর নানা তদবির করে কনক’কে একটি পোস্টে চাকুরী দিলাম। আবার পুরানো ব্যাপারগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। মাঝে মাঝে কনকের বাসায় যেতে লাগলাম। কনকের মুখের মেঘ সরে গিয়ে সেখানে রোদের ঝিলিক খেলা করতে লাগল। আমি আবার দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলাম। কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চেষ্টা করলাম। তাতে ও কোন লাভ হলনা। কনকের উপস্থিতি আমাকে অন্যরকম করে তুলতে লাগল। ধীরে ধীরে সম্পর্ক আগের মত হয়ে এল। কনকের অনুপস্থিতি আমাকে বেশ ভোগাত। একদিন না দেখলে মনে হত কত যুগ তাকে দেখিনি। কনক বাসা থেকে মাঝে মাঝে অনেক রকম খাবার নিয়ে আসত। একদিন কনক সরাসরি বলে বসল
‘তুমি কি আমাকে এখনো আগের মত ভালবাসা’?
আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। অন্য প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে গেলাম। কনকের চেহারা দেখে বুঝে ছিলাম সে কষ্ট পেয়েছে।
এর কিছুদিন পর কনকের বাবা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমি অনেক দৌড়াদৌড়ি করি । তাতে দুজনে আরো কাছে চলে আসি।একদিন বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল , কনকের বাবার ওষুধ নিয়ে কনকের বাসায় গিয়েছিলাম। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কনক রাতে থেকে যেতে বলে। আমি কি করব ভেবে পেলাম না। অবশেষে রাজী হলাম। সেই রাতে কনক আমার সাথে সারা রাত কাটায়। অনেক কথা বলে। একসময় আমি কনকের কাঁধে হাত রাখি…
কনক চুপ করে চোখ বুঝে নেয়। আমি আরো এগিয়ে যাই …।এরপর যা হবার তা হয়ে যায়। কনক স্বেচ্ছায় নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ করে। সেদিন কনকের চেহারায় অন্য রকম দীপ্তি দেখতে পাই। সেই দীপ্তি ছিল ভালোবাসার, সেখানে কোন অপরাধ বোধ ছিলনা।সেই রাতে কনক আমাকে বলেছে এই জীবনে তার মা হবার বড় শখ । কিন্তু বিয়ে যদি কাউকে করে তা নাকি আমাকে করবে, অন্য কাউকে নয়। আমি কনকের আবদার নিয়ে ভাবতে থাকি কিন্তু কোন মীমাংসায় যেতে পারি না।
৪
আজ সকালে অফিসে কনকের আচমকা বিয়ের প্রস্তাব আমাকে আবার চিন্তিত করে তুলল। সকাল বেলায় দেখা কনকের হাসিটুকু মুছে যাক তা আমি চাই না । কিন্তু আমি কি করব সেই চিন্তায় আবার ডুবে গেলাম।
রাতে বাসায় ফিরে দেখি মা এখনো খাবার নিয়ে বসে আছে।অনেক সাহস করে মাকে কথাটা বললাম। মা কোন উত্তর দিল না । খাবার শেষ হলে প্লেট নিয়ে চলে গেল কিচেনে। আমি কিছুক্ষণ বসে থেকে আমার রুমে চলে এলাম।
বাবার রুম থেকে উচ্চস্বরে কথা শুনতে পেলাম। বাবাকে মনে হয় মা ব্যাপারটা বলেছে। কিছুক্ষণ পর আমার রুমের দরজায় টোকা পড়ল। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখি বাবা মা দাড়িয়ে আছে। বাবা বলল
-এই মেয়ে ছাড়া অন্য কোন মেয়ে নাই।
-আমি সাফ বলে দিলাম বিয়ে করলে কনক’কেই করব।
বাবা আর কিছু না বলে চলে গেল। মা তার পিছু নিলো। এর বেশ কিছুক্ষণ মা একাকী ফিরে এল। বলল
-তোর বাবা রাজী।
এতজল গড়ানোর পর বাবা কিভাবে রাজি হল বুঝতে পারলাম না। পরদিন বাবা কনকের অসুস্থ বাবাকে দেখতে গেলেন। কনকের বাবার সাথে বিয়ের কথা সেরে এলেন। সেই খবর দিতে কনক অফিসে এসে হাজির। তার চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা। সেদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কনক’কে সাথে করে বেশ ঘুরলাম। কনক আগের চেয়ে ও বেশ সুন্দর হয়েছে। তার হাসিমাখা মুখ আমাকে আরো বেশি মুগ্ধ করতে লাগল।
এক সপ্তাহের মধ্যে কনকের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল । বাসর রাতে আমাকে কাছে পেয়ে কনকের এ উচ্ছ্বাস তা লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
কনক অফিসের চাকুরী ছেড়ে দিল । বাসায় পাকা গৃহিণী হয়ে গেল। এর মাঝে কনক একদিন আমাকে সুখবরটা দিল। কনক মা হতে চলেছে। আজকে আবার কনকের মুখে অন্য রকম হাসি দেখতে পেলাম। এটা সম্ভবত মায়ের মমতায় ঘেরা। কনক কে অভিমান করতে দেখেছি একদিন। কে যেন বলেছিল আমার সাথে নাকি অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ।
সেদিন বাসায় ফিরে দেখি চাঁদ মুখে মেঘের আধার ভর করেছে। কিছু বললে উত্তর দিচ্ছে না। সেই কটাক্ষ চাহনি আমাকে ভয় ধরিয়ে দিল। একসময় নিজেই সব বলল । আমি ব্যাপারটা খুলে বললাম। তখন কনক ব্যাপারটা বুঝতে পারল।
সদ্য কেনা হোন্ডা নিয়ে অফিসে যাই এখন। বেশ ভালো লাগে ।নিজেকে বেশ সুখি মানুষ মনে হয়। গতকাল রাতে কনকের সাথে আগত সন্তানের নাম নিয়ে বেশ কথা হয়েছে। একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। সামনের দিকে খেয়াল ছিলনা। সামনের দিক থেকে ছুটে আসা একটা মাইক্রো বাসের সাথে ধাক্কা খেলাম। এরপর কিছু মনে নেই।
এক্সপ্তাহ পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের বেডে। হাতে পায়ে প্লাস্টার করা। তখন আমার চোখ খুঁজছে সেই প্রিয় চাহনি আর সেই প্রিয় মুখকে। মাথায় হাতের স্পর্শে বুঝতে পারলাম কনক। হাত ধরে সামনে নিয়ে এলাম। কনকের চোখে জল। আমি বললাম আমার দিকে তাকাও একটু হাসো। কনক তাকালো হাসার চেষ্টা করতে লাগল। আমার কাছে পৃথিবীটা আবারো সুখের মনে হল। একজন প্রিয়া তখন ক্রন্দনরত চাহনি দিয়ে তার ভালোবাসা বলে যেতে লাগল নীরবে, তার হাত তখন আমার হাতে ধরা। নার্সের কথায় ফিরে এলাম বাস্তবে। কনক তখনো পাশে দাড়িয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে।