আজ আমার বাগদান, যদিও এটা আমার জীবনে নতুন কোনো ঘটনা নয়।এর আগেও এমন একটা দিনএসেছিলো ঠিক এমনই বেদনা নিয়ে। অজস্র বৃষ্টিঝড়া সন্ধ্যায় সেদিন আমি ঘর ছেড়েছিলাম। বাবামার সব স্বপ্ন আশা পেছনে ফেলে, রহস্যঘেরা এক সম্পর্কের হাতছানিতে ঘর ছেড়েছি্লাম আমি।
সাড়ে চারশোমাইল পাড়ি দিয়ে তারদ্বারে কড়া নেড়েছিলাম। আমার চোখের কোণে জলটুকুর ভাষা বোঝেনি সে, নাকি বুজতে চেষ্টা করেনি জানিনা….
মেঘ আর আমার বন্ধুত্বটার শুরু ফাস্টইয়ার থেকেই আর শুরু থেকেই সবার কাছেই সেটা একটা প্রশ্নবোধকচিহ্ন ছিল।আমার কাছেও সম্পর্কটার কোনো নাম ছিলোনা. আমি জানতাম আমি ওকে ভালবাসি এটাও জানতাম কখনো ওকে বলতে পারবোনা কিন্তু কিছুই কী ওবোঝেনি? লেকেরপাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চুপচাপ কেটে গেছে কতদিন, ক্লাসের বেঞ্চিতে সারাক্ষণ চিড়কূট বিনিময়, ভরা সাঝের কন্যা সুন্দর আলোতে রিক্সাতে বাড়িফেরা।জানি শুধু বন্ধুত্ব ছিলনা. কিন্তু মুখফুটে বলা হয়নি কখনো।আমি অপেক্ষা থাকি বলবে বলে…
বছর পর বছর আমি অপেক্ষা করতে পারতাম.. অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারতাম.. কিন্তু…….
বাসা থেকে ফোন এলো আমি যেন পরদিনই বাসায় চলে যাই। মেঘ বাসস্টান্ড এ আমাকে বিদায় দিতে এলো, আমি হেসে বলেছিলাম
-কীরে! আমি কী সারাজীবনের জন্য যাচ্ছি নাকি যে বিদায় দিতে আসলি? আমিতো ভাবলাম তুই এসে বলবি আমি যেন না যাই।
– তোকে শেষবারের মতো একলা দেখে যাই ফিরে আসলেতো তুই দোকলা হয়ে যাবি।
-দেখেনে সাহস করেতো বলতে পারবিনা
বাস এ উঠে আমি একবারও পিছনে ফিরে তাকাইনি,,আমি চাইনা আমার চোখের জল কাউকে দুর্বল করে দিক। তারপরও আমি ফিরে এসেছিলাম,আম্মু ওর ফোন পেয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলো আমার পছন্দের কেউ আছে কিনা।ও নির্বিকার উত্তর দিয়েছিলো, আমিতো ওর সবচে ভালোবন্ধু কেউ থাকলে আমিতো জানতামই , ওকে কিছু সময় দিন ঠিক হয়ে যাবে হটাত করেতো তাই অমনকরেছে।
বাসাতে আমার বিয়ের কথা আসলেই চুপ করে থাকতাম, একদিন সববাধ ভেঙ্গে বলে ফেললাম আমি মেঘকে বিয়ে করতে চাই…বাসার সবাইতো বাকরুদ্ধ, আব্বা বললো
তোর কী মাথা খারাপ হইছে? ওতো তোর ক্লাসমেট ওনা বয়েসে তোর ছোটো? ছি!ছি!ছি!..
তবু আমি অনড়।জানিনা কোন ভরসায় কোন মায়ায় পাহাড় সমান মনোবল আমাকে পেয়ে বসেছিলো।আম্মার হস্তক্ষেপের শেষ পর্যন্ত সুরাহা হলো, যেহেতু আমরা একই ক্লাস এ পড়ি সেহেতু বিয়ে না হলে ওদের বাসা থেকে প্রস্তাব পাঠিয়ে, আমাদের এনগেজমেন্ট সেরে রাখতেহবে।এরপরের ধাক্কার জন্য বাবা-মা একদম প্রস্তুত ছিলোনা। আমি চাপাকণ্ঠে বললাম আমিতো জানিনাও আমাকে বিয়ে করবে কিনা, বন্ধুত্বের চে বেশি কিছুও ভেবেছে কিনা তাও জানিনা।আর যায় কোথায় আব্বা বললেন সামনের মাসে তার পছন্দের ছেলে আসবে তখন এনগেজমেন্টটা সেরে রাখবে।
আমার সব কাছের বন্ধুরাও কখনো চায়নি আমি মেঘের সাথে চলাফেরা করি আমার সবচে পুরনো বন্ধুর সাথে আমার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে শুধু ওর কারণে, শেষ যেকথাটা বলেছিলো, দেখ তুই কেনো বুজতে পারছিসনা, মেঘ এর মতো একটা ছেলে কখনো তোকে বিয়ে করবেনা। শুধু সময় কাটাচ্ছে তোর সাথে, তুই কেনো অতো বোকা? আসলেই আমি বোকাইতো।ওর সব আনন্দ আর বেদনাতে পাশে থেকেছি. ওর দুইব্ছরের সম্পর্কের হঠাৎভাঙ্গন যেনো ওকে একটুও ভাঙ্গতে নাদেয় তাই কতো বিকাল পার করেছি একসাথে।কই আমার এ কষ্টতো ওর মনে দাগ কাটেনি, কখনো সে বলেনি আমার পাশে থাকবে।
অবশেষে একদিন ওকে বললাম আমাদের এই বন্ধুত্বের একটা নাম চাইআমি।সে বল্লো বন্ধুত্ব তো বন্ধুত্বই।আমি শুধু ওকে বলেছিলাম তুই ভালো থাক।তারপরে আজ পর্যন্ত আর কথা বলিনি তার সাথে।রবীন্দ্রনাথই তো বলে গেছে “ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেনো মিছে ভালোবাসা”. ভার্সিটিতে গেলেওআমার সাথে অনেক কথা বলতে চেস্ট করছে আমি বলিনি।
আম্মা একটা সুন্দর জামদানি শাড়ি দিয়ে গেলেন পড়ার জন্য, বাসায় রান্নাবান্নার ধুম চলছে। এরমধ্যে আমার ছোটোভাই এসে বল্লো মেঘ এসেছে।গেস্টরূমে মেহমান আসবে বলেই বোধহয় আমার রূমএ চলেএল।রূমএ ঢুকে বল্লো
“আরে তোকেতো পরির মতো লাগতেছে, তোর বাসায় চলে আসছি আজকে নিশ্চয়ই কথা বলবি.” আমি তবুও কোনো কথা বলিনাই।ও পকেট থেকে আমার দেয়া একটা ঘড়ির বাক্স বের করে দিয়ে বল্লো আমি গেলাম আব্বু আম্মু আসবে নাটোর থেকে, স্টেশন এ যেতে হবে।
আমি ভাবলাম আমার দেয়া গিফ্ট্ বুঝি ফেরত দিয়ে গেলো, তবু একবার খুল্লাম, খুলে ওনেক কাদলাম আমি, আমার দেয়া শুকনো পাতাতে লেখা কিছু চিড়কূট, অতদিন আমি ভাবতাম ও মনে হয় পড়েও দেখেনি।কারণ পাতাতে লিখে আমি ওকে শুধু প্রশ্নই করতাম, যার কোনো উত্তর ও কখনো দেয়নি।
একটা চিড়কূট এ লিখেছিলাম
“কখনো কী আমায় ভেবেছিলে বন্ধুর চেয়ে একটুখানি বেশি?চিড়কূট এর নীচের খালি জায়গাতে ও ছোটো করে লিখেছে “জানি তুমি আমায় এখনো চিনতে পরোনি,ভালোবেসে ডাকবে যখন,আসব তখনই”।
আরেকটা বড়ো সবুজ পাতাতে বড়ো করে লেখা
“বিয়ে করবি নাকি আমাকে? গাড়ি বাড়ি কিছুনাই কিন্তু আমার”
খুব কাদলাম এখন বলে আর কী হবে?
একটু পরেই দেখি হাসিমুখে আমার রূম এ।এইবার কথা না বলে পারলামনা
–“তুই যাস নাই?”
–“নারে আব্বু আম্মু নাকি তোদের বাসাতেই আসবে”
আমিতো অবাক -কী? কেনো?
ফাজিলটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বল্লো
–তোর বাপ-মা নাকি ভালো ছেলে পাচ্ছেনা, তাই ভাবলাম কন্যা দায়গ্রস্ত পিতাকে উদ্ধার করে একটু সওয়াব কামাই করি……….