জীবনের বালুকাবেলায়

জীবনের বালুকাবেলায়

বিকাল এ এই সুনিবিড় ছায়াতলে বালুকাবেলায় সময় কাটান তার খুব প্রিয়। এ তার রোজকার রুটিন। কাজ শেষে এখানে পাথরে বসে থাকে কিছুক্ষণ। নাম তার আসিফ মহিউদ্দিন। কাজ করে বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে। আজ ও যথারীতি কাজ শেষে এসে বসেছে তার প্রিয় পাথর দিয়ে বাধান চত্তর টাতে। যতক্ষণ পারে এখানে বসে থাকে। স্ত্রীর ফোন ও এইসময় পিক করেনা। পিক করলে ও বা কি কথা বলবে। সে একই কথা একই অভিযোগ। ভাবলে অবাক হয়ে যায়। এই কি তার সেই ভার্সিটি লাইফ এর নরম মায়াবী প্রেমিকা হাতে যার থাকত বেলি ফুলের মালা উপহার হিসাবে। হাসত প্রচুর। মাত্র কয়টা বছরে প্রকৃতি কাওকে এত পরিবর্তন করতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতনা।

ধরবে না ধরবে না করে ও আজ ফোন ধরে কথা বলা শুরু করল।
ওপাশ থেকে আজ স্ত্রীর কন্ঠস্বর অনেক কোমল, মোলায়েম।

এই কোথায় তুমি ? আমি কখন থেকে সেজে অপেক্ষা করে আছি। তোমার প্রিয় শাড়ি পড়েছি।

তবু ও সে নিরুত্তর। আবার বলে উঠল স্ত্রী ওপাশ থেকে

আস আস আমি অপেক্ষা করছি বলে স্ত্রী ফোন কেটে দিল।

২ সেলিনা আজ তাড়াহুড়ায় অনেক পদ রান্না করল। কয়েক রকম মাছের প্রিপেরাশন করল ,মাছের কাবাব বানাল ,মাংসের কাবাব বানাল। অনেকদিন ধরে আসিফ এর সাথে তার ঝগড়া চলছে। তাদের অসহযোগ আন্দোলন যাকে বলে। সে যেটা বলবে আসিফ করবে বিপরীত। আসিফ কিছু বললে তার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করেনা। তার অর্থ এই নয় পরস্পরকে ভালবাসেনা। বরং আসিফ ঘর থেকে বের হওয়ার পর পর তার বুক অশান্ত হয়ে উঠে দুশ্চিন্তায়। তবে কেন এই ঝগড়াঝাটি সত্যি তার কারণ খুঁজে পাওয়া আসলে দুষ্কর।

সবাই বলে ভালবাসার উল্টা পিঠে ঘৃনা ?তাই কি। কেন দুজনের এত ব্যক্তিত্বের ক্ল্যাশ ?একেকবার ঝগড়া র পর আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়। মনে মনে প্রতিবার প্রতিজ্ঞা করে আর ঝগড়া না। আবার একই জিনিস এর পুনুরাবৃত্তি হয়।

ঘরে ঘরে সব স্বামী স্ত্রী কি এইভাবে ঝগড়া করে নাকি তাদের দুজনের বোঝাপড়া কম। দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে সেলিনার বুকের ভিতর থেকে।

৩ উঠতে যাবে আসিফ দৃষ্টি পড়ে যায় সামনে এক তরুনীর দিকে। বেশ সুন্দরী শার্প চোখ মুখ দেখতে দেখতে আরে এ যে কনিকা তার সহপাঠি , ইকনমিক্স দ্বিতীয় বর্ষ। পরে অবশ্য সে ডিপার্টমেন্ট চেঞ্জ করে অন্য সেকশন এ চলে গিয়েছিল। মেয়েটির ও এদিকে চোখ পড়ল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর দৌড়ে আসল।

ও মাই গড তুমি এখানে কিভাবে হেসে বলে উঠে সে ।

কি আশ্চর্য্য ঢাকায় থাকি এই জায়গা গুলিতে তো আসব তাইনা ? আসিফ হেসে বলে।

তা ঠিক আমি আসলে বাহিরে থাকি। অনেক কিছু ই জানিনা। প্রায় চার বছর পরে দেশে আসলাম।

আকস্মিক অপ্রত্যাশিত দেখা হয়ে যাওয়ায় দুজনে বেশ উত্ফুল্ল। দুজনে একসঙ্গে হড়বড় করে কথা বলা শুরু করল। কি কর কোথায় আছ ?ছেলেমেয়ে কয়জন ? তারপর দুজনে একসাথে হেসে ফেলল।

চল ভাল দিনে দেখা হল। আমি একজন কে খুজছিলাম যার সাথে আমার জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নিব। চল রেস্টুরেন্ট এ খাব আজ। চাইনিজ ফুড পছন্দ এখন ও। তাহলে তোমাকে খাওয়াব আজ।

তাই নাকি চল চল। আগ্রহ উত্তেজনায় চলে আসলেও স্ত্রীর কথা মনে কাটার মত ফুটে রইল। আবার মনে হল দূর ঘরে গেলে অশান্তি ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে। তার চেয়ে এই ভাল।

দুইজনে একসাথে রেস্টুরেন্ট পুরান দিনের গল্প করতে করতে সব ভুলে তাদের হতাশার কথা। একঘন্টার জায়গা তারা সময় কাটাল একসঙ্গে তিনঘন্টা। রাত দশটা বাজায় লাপ দিয়ে উঠল আসিফ।

নাহ আজ বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। বেচারী নিশ্চয় আমার জন্য না খেয়ে বসে আছে অনুশোচনায় ভাবতে থাকে সে।

৪সেলিনা খাওয়ার গোছাতে গোছাতে তার সেল টি বেজে উঠে। ওপাশ থেকে গমগমে পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে

আমি একলাখ টাকা বাজি তুই আমাকে চিনবিনা ,বলে প্রানখোলা হাসিতে মেতে উঠে।

রাকিব ভাই তার শৈশব ,কৈশোরের যৌবনে সবচেয়ে কাঙ্খিত আরাধনার যে মানুষ। কতদিন পার করেছে সে এই মানুষ টির কথা ভাবতে ভাবতে চোখের জল ফেলে।

কি আশ্চর্য্য কোথা থেকে ? দেশে আসলে কবে ? সেলিনার ভিতরে আবেগে কেপে উঠল। এখন এই আবেগ মুছে যায়নি দেখে বিস্মিত হল।

কালকে সকালে এসে পৌছেছি। বল তোর্ কি অবস্থা ? এখন ও কি আমার জন্য আগের আবেগ অবশিষ্ট আছে ? তাহলে তোকে বিয়ে করব। আমি দেশে চলে আসছিরে একেবারে। আমার একটা আশ্রয় দরকার । বড় একা হয়ে আছি । শেষের দিকে হাহাকার এর মত গলা ভেঙ্গে আসে।

বল কি ভাবী কোথায় ? উত্কন্ঠায় জিজ্ঞাসা করে সেলিনা।

তুই আসবি বাহিরে এখন? সব বলব তাহলে। তোকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে হচ্ছেরে। অনুনয়ের স্বরে বলে উঠে সে।

সেলিনা একটু ইতস্তত বোধ করে প্রথমে। পরে বলে আমার বাসায় আস।বিশ মিনিটে চলে আসল রাকিব বাসায়। অনেক কথা হল। পুরানো খুনসুটি হল দুজনে। যে খাওয়ার বেড়ে রেখেছিল আসিফ এর জন্য দেরী দেখে দুজনে খেয়ে ফেলল তাকে ফেলে।

আর ও দুই ঘন্টা একসঙ্গে পার করার পর ও আসিফ এর দেখা নেই।

কিরে তোর্ বর কি সবসময় এত রাত করে ? তোদের সব ঠিকঠাক আছে তো ? জিজ্ঞাসা করে রাকিব। দেখ অন্য কার ও হয়ে যায়নি তো ? যেমন তুই এখন আমার হয়ে গেছিস। বলে হা হা করে হাসতে লাগল।

অবশেষে বিদায় নিল রাকিব। সেলিনাকে প্রমিজ করতে হল কাল বাহিরে গিয়ে দেখা করবে।

সব খাওয়ার ঢেকে ফ্রিজ এ রেখে বিছানায় এসে রাগ করে ঘুমিয়ে পড়ল স্বামীর জন্য অপেক্ষা না করে।

আর ও আধাঘন্টা পরে আসিফ ঘরে ফিরল। সেলিনা কে জোর করে শোয়া থেকে তুলল। দুজন আবার একসাথে খেল অনেক টা ভান করে যেন তারা আসলে ক্ষুধার্ত। দুজনে নিজেদের অপরাধী মনে করে অনুশোচনায় ভুগল।

নাহ কাল আর রাকিব ভাইকে ফোন দিবনা মনে অন্যায় চিন্তা চলে আসে। সেলিনা ভাবে।

আসিফ ও ভাবে আমার বউ এর সাথে ভুল করেছি। আর ওর সাথে দেখা করব না এখন সেলিনা ই আমার জীবন।

হয়তবা নুতুন করে সেলিনা কে চিনতে তার ভালবাসা বুঝতে আল্লাহ কনিকা কে মাধ্যম হিসাবে পাঠিয়েছে। সেলিনার মনে একই ধারণা খেলা করতে লাগল। যদিও দুজন তা প্রকাশ করলনা পরস্পরের কাছে। গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরল পরস্পরকে। কিছু কিছু গোপন কথা আমাদের সবার ই থাকে যা আল্লাহ ছাড়া কাওকে বলা যায়না।

সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনায় দুজনে বুদ হল পুনরায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত