আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল অনেকদিন পর। জানালা র পর্দা সরাতে ঘরটা আলোতে ভরে গেল। সকালের আলো টা মনে দেহে আলোর পরশ বুলিয়ে দিল যুথী র। পাশে স্বামী আর মেয়ে গভীর ঘুমে অচেতন। ঘুমের মধ্যে দুজনে হাসছে। কি সপ্ন দেখছে কে জানে। তার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাবা মেয়ে দুজনের ঘুমের ধরন এক।
সকালে এই সময় টা তার দিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। যখন কাজ করত তখন ও খুব কমই সূর্যের আলো প্রকৃতি উপভোগ করার সময় পেত। এখন ও একই অবস্থা। এখানে কিছুক্ষণ গা ছাড়া দিয়ে থাকা মেয়ের স্কুল এ দেরী হওয়া হাসান এর সাথে ঝগড়া ওর কাজে দেরী হওয়া। তিন চুলা য় একটায় চায়ের পানি একটায় ডিম সিদ্ব দিয়ে আরেক চুলায় আটার পানি দিয়ে দিল। কিচেন এ কিছু বসালে স্মোক হওয়াতে জানালা পুরা খুলে রাখে। এখনো এখানে বেশ ঠান্ডা। এবার শীত টা সবাইকে ভোগাচ্ছে। ঘরে ঘরে সবার সর্দি কাশি লেগে আছে। যুথী আর মেয়ে একমাস ভুগলো। জানালা খুলতে গিয়ে চমকে লাফ দিয়ে সরে আসলো জানালা থেকে। সেই একই লোক তার বাসার সামনে কি করছে। একদৃষ্টিতে তার ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে। গত পাচ দিন ধরে স্কুল এ প্রতিদিন তার যাওয়ার পথে এই লোক টিকে দেখছে। অস্বাভাবিক ভাবে তাকে দেখে। কি যেন বলতে চায়। স্কুল থেকে তাকে অনুসরণ করে বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে দেখি। নাকি সে অতিরঞ্জিত করে সব ভাবছে? হয়তবা লোকটা এই এলাকায় থাকে। এক এলাকায় থাকলে স্বাভাবিক ভাবে তার ছেলে মেয়ে হয়তবা এক ই স্কুল এ পড়ছে।এই জন্য হয়তবা কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে গিয়েছে কয়দিন ?আবার তাকাতে লোক টি হাত নাড়ালো তার উদ্যেশ্যে। এবার সত্যি সে চমকে গেল। কিছুটা ভয় পেল। একটু পরে মেয়ে কে নিয়ে স্কুল এ যাবে .মনে তো হচ্ছে লোকটি তার উদ্যেশ্যে দাড়িয়ে আছে। স্বামী কে জানাবে নাকি ভাবছে। আজকে না হয় ঘর থেকে বের হবেনা। স্বামী না হয় মেয়ে কে পৌছে দিয়ে আসল।
নাস্তা বানানো খাওয়া চা দেওয়া হাসান এর লাঞ্চ বক্স রেডি করা মেয়ের লাঞ্চ বক্স রেডি করা পরের দুইঘন্টা নিশ্বাস বন্দ করে কাজ করতে করতে একপর্যায়ে লোকটির কথা বেমালুম ভুলে গেল সে। হাসান কে বিদায় দিয়ে মেয়ে কে ঘুম থেকে উঠালো। মেয়ে কে নাস্তা খাইয়ে রেডি করিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হতে এবার একেবারে লোকটির মুখোমুখি।
লোকটির চেহারা একেবারে উলুঝুলো উদ্ভ্রান্তের মত । দেখে মনে হয় ঘুম খাওয়া দাওয়া এসব মানবিক ব্যাপার থেকে সে বঞ্চিত। চেহারা দেখে চমকে যেতে হয়।
প্লিস প্লিস বলে কিছু বলার চেষ্টা করলো লোকটি। যুথী তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসলো।স্কুল এ যেতে যেতে সে স্বামীকে ফোন করলো। আর সে পারলনা টেনশন ধরে রাখতে।
শিগ্রী পুলিশ এ ইনফর্ম কর। অনেক দ্বিধা দ্বন্ধ এ শেষ পর্যন্ত পুলিশ এ ইনফর্ম করলো। দুপুরে স্কুল এ থেকে আসার পর পুলিশ স্টেশন থেকে অসংখ ফোন । তাড়াতাড়ি কাছের স্টেশন এ পৌছল স্বামী সহ .
সেই লোকটি বসে আছে। তাকে দেখিয়ে বলল
পুলিশ এর জিজ্ঞাসা এই কি সেই ব্যক্তি যে অনুসরণ করছে আপনাকে ?
যুথী মাথা নাড়াতে লোকটি বলল আমি আসলে ওনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে গত কয়েক দিন অনুসরণ করছি। আমি একজন ব্লাইন্ড মানুষ।
যুথী সহ পুলিশ এর লোক ও চমকে গেল অন্ধ শুনে।
আমার পরিচিত স্মৃতি জড়িত একটা জিনিস স্মেল পাওয়া তে অনুসরণ করছি।
ওনার হাতে কি কোনো ব্রেসলেট আছে ?
যুথী অবাক হয়ে দেখায়। এটা একট বহুমূল্যের সংগ্রহ। এক স্প্যানিশ মহিলা তাকে দুইবছর আগে হোটেল কাজ করার সময় চেক আউট এর সময় গিফট দিয়েছিল।
ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড ছিল। এই ব্রেসলেট ওর জন্মদিনে আমি ওকে । একটা ঘটনায় আমরা দুজনে বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। আমি এখন ও ওকে খুজছি।
তুমি কি বলতে পার ও কোথায় আছে ? কিছু লজ্জায় বেদনায় সে বিবর্ণ হয়ে যায় লোকটির কথা না শুনে তাকে ভয়ংকর লোক মনে করাতে।
ওই ভদ্র মহিলা গেস্ট এর কথা সে প্রায় ভুলে গিয়েছে। ওই হোটেল এর জব ছেড়ে এসেছে দুবছর হলো।
লোকটিকে হোটেল ম্যানেজার এর ফোন নাম্বার দিয়ে কেস টা উইথড্র করে নিয়েছে।শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিয়ে আসল।
ছয় মাস পরের ঘটনা। এক দুপুর বেলা। দরজায় নক। দরজা খুলতে দেখা গেল পোস্ট অফিস এর লোক হাতে বিশাল পার্সেল। কোথা থেকে এলো বিশাল পার্সেল ভাবছে আর খুলছে প্রেরক এনরিচ ব্ল্যাক। কিছু মূল্যবান গিফট সামগ্রী এক গিফট সপ এর দলিল যা তার প্রিয়তমা জিনিস গচ্ছিত রাখতে চায়। চিঠিতে ছোট নোট সহ –
“যদি দয়া করে প্রাপক এর হাতে জিনিস গুলি পৌছাতে পার ” কৃতজ্ঞ থাকব।
এই ভদ্র মহিলার দেখা আর পায়নি। অনন্যোপায় হয়ে হোটেল এর মিউজিউম এ রেখে দিল সংগ্রহ হিসাবে ঠিকানা সহ। যদি কখনো ভদ্র মহিলা আসে সে যেন সংগ্রহ করে নিতে পারে।
মেয়েকে পিক করতে আজকে দেরী হয়ে গেল যুঁথীর।মেয়েকে পিক করে সামান্য রাস্তা মাঝে মাঝে হেটে আসে।তাদের মুখোমুখি এক কাপলকে যেতে দেখে চমকে উঠে।স্মৃতির পাতা হাতড়ে চিনতে পারে সেই ভদ্রমহিলা তার হোটেল গেষ্টকে।মহিলা টি অন্ধ তার সঙ্গী ও দেখা যাচ্ছে অন্ধ।দুইজনের হাতে ক্রাচ চোখে গ্লাস।
যুঁথী চমকে বলে উঠে হাউ আর ইউ মিস এমিলিয়া?ইউ রিকগনাইসড মি।
ওহ ইয়েস ইয়েস হাউ আই ফরগট ইয়োর লাভিং ভয়েস।আন্তরিকভাবে কর্মরদন করল যুঁথীর সামনে।যুঁথী ভদ্রমহিলাকে সব ঘটনার বিবরন সহ তার পার্সেল এর কথা বলল যেটা হোটেলে গচ্ছিত রাখা আছে।
সেই বছরে সামারে পিকনিকে তারা গিয়েছে ব্লাফারস পার্কে।তাদের সামনে এক কাপলকে দেখে চমকে উঠেছে যেমন আনন্দে মন ভরে গিয়েছে তেমনি।এই সেই দুই অন্ধ ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা।পরস্পর পরস্পরকে খাইয়ে দিচ্ছে খুশী মুখে।দুজনের দৃষ্টি নাই কিন্তু মুখে তাদের স্বর্গীয় আনন্দ।যদিও ঠিক সে তেমন কিছু যে করেছে তাদের জন্য তা নয় তবু এই যে কোন না কোনভাবে এই দুজনের জীবনের সাথে একটা সংশ্লিষ্টতা হয়েছে তা ভাবতে ভাল লাগছিল যুঁথীর তাদের হাসিখুশী মাখা আনন্দিত মুখটা প্রানভরে দেখছিল এবং এইদুইজন যে পরস্পরের দেখা পেয়েছে তাতে আল্লাহর কাছে সে করজোরে কৃতজ্ঞতা জানায়।