রিনা তার ভেতর বয়ে চলা উত্তেজনার ঝড়টা যাতে মুখে মুদ্রিত হয়ে না থাকে প্রাণপনে সে সংগ্রাম করছে। আয়নায় মুখ দেখেছে কতোবার ! অবশ্য আয়নায় মুখ দেখা তার প্রিয় সখ।
সব ঠিক প্ল্যান ঠিকমতো কাজ করলে আজই সব চুকেবুকে যাবে। গত তিন বছর এদিনের স্বপ্ননিয়ে হাভাতেটার ঘর করছে রিনা।
ভাড়া বাসায় থাকার গ্লানি, বাড়িওয়ালা বাড়িওয়ালীদের দুর্ব্যবহারের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় ওকে। একটা প্লট আর মনমতো বাড়িই তার উপযুক্ত প্রতিষেধক। এ স্বপ্নপূরণের জন্যই রনিকে বিয়ে করেছে সে। যদিও রনিকে কোনভাবেই নিজের যোগ্য মনে করেনা। তার অবিরাম চাপেই রনি ধারদেনা করে আড়াইকাঠার প্লটটা কিনেছে।প্লটের সব কাগজ এখন রিনার হাতে। রিনার নামে লিখে দেবার জন্য নতুন দলিলও রেডি। মুহরির সাথে সব কথাবার্তা ফাইনাল। দরকার রনির একটা সই।
রিনা রেডি হয়ে বসে আছে। রনি এলে দু’জনে রাতে বাইরে খেতে যাবে।প্ল্যানটা করেছে যাতে রনিকে পটিয়ে মদ খাইয়ে আধমাতাল করে আনা যায়। মাতাল হলে মন নরোম পলির চেয়েও কোমল থাকে। তখন যেকোন কাজ করিয়ে নেয়া সহজ হয়ে যায়।
রাত ১১টায় যখন খেয়েদেয়ে ফিরলো, রিনা তখন বেশ আত্মবিশ্বাসী। সবকিছু প্ল্যানমাফিক চলছে। আধমাতাল বলে রনি রিনার মুখের মানচিত্র বদলটা পড়তেই পারলো না। রিনা জানে মিতুল তার বন্ধুদের নিয়ে ঘরে পজিশন নিয়ে আছে। ঠিকঠাকমতো সব শেষ করতে পারলে সে মিতুলকে ফিরে পাবে। মিতুলের চাকরি ছিলো না বলেইতো রনি-বিপর্যয়ে পড়েছিলো সে। যাক, কাল থেকে এসব অতীতকালে পরিণত হবে।
রাত দু’টায় মিতুল একা ফিরে এলো। অপেক্ষাক্লান্ত স্বপ্নসম্ভবা রিনা তার খুশি আর অভিমানমাখা মুখ মিতুলের বুকে রাখলো। মিতুল তাকে সান্তনা দিয়ে জানালো সাত দিনের আগে কোন খবর মিলবে না।
স্বপ্নাবিষ্ট রিনা খুশিতে কখন কি বলছে তার ঠিক ছিলো না। উত্তেজিত না থাকলে রিনা বুঝতো যে মিতুলের স্বপ্নে সে তড়িতাহত হয়ে আছে সেখানে কি বিবর্তনবাদ খেলা করছে। সে চমকে উঠলো রিপনের বাড়িয়ে দেয়া কলম আর নতুন আরেকটা দলিল দেখে। সেসাথে রিপনের হাতের শোভাবাড়ানো চৌকস পিস্তলের আগ্নেয়মুখ তার মুখের ভূগোল বদলে দিলো। রিনা বুঝে গেলো তাকেও রনির মতো সই করতে হবে। তার জীবনে এইমাত্র নেমে আসা অনিশ্চয়তার ছায়াটি তাকে আতঙ্কিত করে দিলো।
তবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি সাতদিন পর বুড়িগঙ্গায় দু’টি বিকৃত মৃতদেহ উদ্ধারের খবর কাগজে ছাপা হবে।