এ এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে দিন যাচ্ছে। বয়স ২৪। অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ।ঢাবি। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হল সপ্তাহ দুয়েক।হাতে অনেক সময়।সে সময় কিছুতেই কাটছে না।কি করব,ভেবে পাই না। অথচ পরীক্ষার আগে বারবার মনে হত,ইস একটু সময় পেলে,কত কী যে করা যেত। তার উপর এক নতুন বুঝা মাথার উপর চেপে বসেছে। চাকরি করতে হবে। চাকরি। এর কথা মনে হলেয় কেমন জানি মনের ভিতর কাটা দিয়ে উঠে।ধরাবাঁধা দশটা পাঁচটা অফিস। সেটা আবার সরকারি চাকরি হলে।আর বেসরকারি চাকরি হলে সেই যে সকালে যেতে হবে,ফিরব যে কখন,তার ঠিকঠিকানা নেই। আর ঢাকা শহরের জ্যামের যে অবস্থা,চাকরিতে ঢুকলে জীবনের যে তেরোটা বাজবে,তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আহারে আমার স্বাদের জীবন! অথচ সেই চাকরিই খুঁজছিই এখন প্রতিনিয়ত।বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে সিভি পাঠিয়ে দিয়েছি বড় ভাইদের মাধ্যমে। বিডি জবস২৪কম এ একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছি। সেখান হতেও বেশ কয়েকটা চাকরিতে এপ্লাই করেছি। এদিকে বিসিএসের পড়াশুনা শুরু করেছি।
একটা বই কিনেছি অ্যাসিরেন্স বিসিএস প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট। একের পর এক মুখস্থ করা শুরু করেছি।এই বইটা ভালভাবে পড়লে নাকি প্রিলিতে আশা করা যায় চান্স পাওয়া যাবে। কয়েকদিন আগে সোনালি ব্যাংকের প্রিলির পরীক্ষা হয়েছে।তার রেজাল্ট হল গতকাল।তাতে ৩৩০০০ হাজারের মধ্যে আমিও একজন। আমিও চাই সিনিয়র অফিসার হতে।নিবে ৫০০ মত।আমাকে প্রতিযোগিতা করে এখন আবাদত রিটেনে টিকতে হবে।অনেক দিন ধরে বাংলা রচনা,ইংরেজি রচনা পড়া হয় না।ছোটবেলার মত এখন আবার পড়তে শুরু করতে হবে-গরুর চারটা পা আছে।পড়তে হবে অনুবাদ।বাংলা টু ইংলিশ,ইংলিশ টু বাংলা।বছর-খানেক ইন্টারের এক স্টুডেন্টকে ইংরেজি পড়িয়েছিলাম।সেই পড়ানোটাই বুঝি এখন কাজে দিবে।সব কিছু তালে গোলে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।কখন বিসিএস,কখন সোনালি ব্যাংক,কখন সাবজেক্ট রিলেটেড বেসরকারি চাকরি।এর মধ্য একটা ওষুধ কোম্পানির ভাইভার জন্য ডাকছে।কয়েকদিন আগে পরীক্ষা দিয়েছিলাম।সেখানে যেতে হবে।ফর্মাল ড্রেস পড়তে হবে।সু টা অনেকদিন কালি করা হয় নি।সু টা কালি করতে হবে।শার্ট প্যান্ট আয়রন করতে হবে।বেশ কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে ভাইভায় কি ধরতে পারে,এ নিয়ে আলোচনা করেছি।একজন বলল-দেখ,এমন আনস্মার্ট হলে চলবে না।কথা বলতে হবে কনফিডেন্টলি।অ্যা ভ্যা ক্যা ক্যা করলে কিন্তু চাকরি হবে না।আর তোমার লুকটা চেঞ্জ করতে হবে।এ রকম হাবলা মার্কা লুক নিয়ে ঢুকলে এমনেতেই ঢুকার সাথে সাথেই তুমি বাতিল।আর শুন কনফিউশন থাকা যাবে না।বলতে পারে,কোম্পানিতে তিন বছর অবশ্যই চাকরি করতে হবে।অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না।তোকে কিন্তু না বলা যাবে।না বললে চাকরি ওখানেই শেষ।গুড বাই।
বাবা বলে,ওষুধ কোম্পানিতে বেতন মাত্র বিশ দিবে।তাহলে তো সরকারি চাকরি করায় ভাল।সামনে নতুন স্কেল হচ্ছে।বেতন ডাবল হয়ে যাবে।মা বলে,সোনালি ব্যাংকে হলে ঢুকে পড়বে।দাদা বলে,জীবনে ভালভাবে বেচে থাকতে হলে দরকার পাওয়ার।পাওয়ার ছাড়া জীবন ভ্যালুলেছ।টাকাতো সবাই কামাই করে।অথচ আমি পড়ে আছি ফান্দে।কি করব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।আমি কি চায়,সেই অনুযায়ী কিছু একটা কর-সেই কথা কেউ বলে না-কেউ বলে না-আমি কি হলে মনে প্রাণে সবসময় খুশি হব।এ কেমন এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি,কেউ বুঝে না,কেউ জানে না।