সারারাত একফোঁটা ঘুমাই নি । জেগে ছিলাম । আমার তীব্র ইনসমনিয়া আছে । রাতে ঘুম হয়না । অধিকাংশ রাতে ৪ টার পর একটু ঘুম ধরে । মানুষ দীর্ঘকাল একা থাকলে তার জীবনে এর একটা খারাপ প্রভাব পরে ।
আমি সাত বছর আমেরিকায় ছিলাম। দীর্ঘকাল একা কাটানোর ফলে আমার মধ্যে ঘুমহীন রাত কাটানোর রোগ প্রশমিত হয়েছে । প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হলেও এখন আর খারাপ লাগে না । জেলখানার কঠিন নিয়মও একসময় কয়েদীদের জন্য অভ্যাসে পরিনত হয় ।
আমি দীর্ঘকাল একা থাকার কারনে আমার কোলাহল অসহ্য লাগে । একা একা থাকতে ভালো লাগে । কিন্তু আমি বিয়ে বাড়িতে এসেছি । দশ বছর পর এরকম কোলাহলে এসেছি । একান্ত বাধ্য না হলে আসতাম না।
এই বাড়িতে আমি আমার জীবনের ২৪ বছর কাটিয়েছি । এই বাড়ির সবকিছু আমার চেনা । এই বাড়ির গন্ধ আমার নাকে লাগানো । সকাল হয়েছে । ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ । ফেব্রুয়ারির সকাল গুলোর মধ্যে এক ধরনের স্নিগ্ধতা থাকে । হালকা কুয়াশা একটা স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরি করে। মনে হয় একটা স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে হেটে যাচ্ছি । আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম। পুকুর পাড়ে আসতে রিমির সাথে দেখা হল । রিমি আগের চেয়ে খানিকটা ফর্সা হয়েছে, মুখের নীল শিরা গুলো দেখা যাচ্ছে । রিমিকে আগের চেয়ে মোটা লাগছে । রিমির সাথে দশ বছর পর দেখা হচ্ছে । একা জীবন কাটানো মানুষের জন্য দশ বছর অনেক সময় । আমি রিমিকে ডাক দিলাম ।
– রিমি তুই এদিকে আয় তো।
– তুমি আমাকে তুই করে বলছ কেন , মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তাদের আপনি করে বলতে হয়। তুই-তুকারি চলে না । তার উপর তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে দশ বছর পর ।
– এসব কথা রাখ, তুই কি আমার সাথে একটু হাঁটবি। তোর সাথে একটু গল্প করতে ইচ্ছে করছে । জানিস অনেকদিন কারো সাথে গল্প করি।
আমি রিমির সাথে হাঁটছি। রিমিকে আমি তুই করে বলছি , ঠিক আগে যেই রকম বলতাম । এই দশ বছরে আমি কি একটুও বদলাইনি । রিমি আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটছে । এতদিন পর আমাকে দেখে একটুও অবাক হচ্ছে না । রিমি বলল
– তানভীর ভাই , সকালটা অনেক সুন্দর না । কুয়াশার মধ্য দিয়ে হাঁটছি । ঘাসের উপর জমে রয়েছে শিশির । হালকা শীত । আমার খুব ভালো লাগছে । তোমার লাগছে না ।
– রিমি আসলে এই ভালোলাগা ব্যাপারটা আপেক্ষিক । মনে কর , রাতের বেলা তুই খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখলি । সকাল বেলা তোকে যতো ভালো পরিবেশে হাঁটানো হোক , তোর ভালো লাগবে না । আসলে একটা পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠে মানুষের মন মর্জির উপর ।
– তুমি সেই আগের মতো আছো । সবকিছুর একটা ব্যাখ্যা দিতে চাও । আচ্ছা এই কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো দেখো । লাল লাল কৃষ্ণচূড়া খুব সুন্দর লাগছে । তাই না ।
– তোকে একটা মজার কথা বলি । একটা বিয়ার আছে । যেটা খেলে তোর আর কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুলগুলোকে লাল লাগবে না । তুই বেনিআসহকলার সাত রঙের বাইরের রঙ দেখবি । ব্যাপারটা অদ্ভুত না ।
– তুমি যে ব্যাপারটা অদ্ভুত বলছ । বিষয়টা আসলে অদ্ভুত না । খুবই সাধারন অ্যালকোহল আমাদের হালুসিনেশন ঘটায় । তিন ধরনের হালুসিনেশন আছে । visual , auditory আর olfactory । কৃষ্ণচূড়ার ক্ষেত্রে visual হালুসিনেশন হয় । তাই আমরা অদ্ভুদ রঙ দেখি । এটা আসলে আমাদের মস্তিষ্কের কল্পনা , এক ধরণের বিভ্রম । olfactory হালুসিনেশন এর রোগীর গন্ধের ক্ষেত্রে বিভ্রম ঘটে ।তারা গোবরের মধ্যে হাসনাহেনা ফুলের গন্ধ পায়। আবার অনেকের নাকে সবসময় গোবরের গন্ধ লেগে থাকে।
– তুই তো পাকা ডাক্তার হয়ে গেছিস।
– তানভীর ভাই , তুমি যে ছোট্ট রিমিকে সহজে বিভ্রমে ফেলে দিতে , আমি আর সেই ছোট্ট রিমি নই ।আজ আমি অনেক বড় হয়ে গেছি । আপনি আর সহজে আমার মধ্যে বিভ্রম তৈরি করতে পারবেন না ।শুনেছি তুমি এখনো বিয়ে করনি । কারণটা কি আমাকে বলবে ।
– ভেবেছিলাম এই গল্পটা কাউকে বলব না । তবে জানিস আজকের সকালটা অনেক সুন্দর । আমার না তোকে গল্পটা বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে । তুই চুপ করে শুন আচ্ছা ।
আমি বলতে শুরু করলাম,
রিমি আমি যখন অনার্স শেষ করলাম, তুই মেডিকেলে চান্স ফেলি । আমার তৃপ্তির সাথে দেখা হয় । আমি মানুষটা সহজে কারো প্রেমে পরার মতো ছিলাম না । মেয়ে মানুষ আমার কাছে সবসময় একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হতো । শুধু একটা সম্পর্ক অথবা সময় নষ্ট । কিন্তু তৃপ্তিকে দেখার পর আমি কেমন জানি বদলে গেলাম । তৃপ্তি কে বেশিক্ষন না দেখতে পারলে আমার দমবন্ধ লাগতো । আমার মন বাসায় ঠিকতো না, বাইরে বাইরে ঘুরতাম । তিন মাস পর , তখন জুন মাস হঠাৎ করে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম , তৃপ্তিকে সব বলব । আমি এরকম অবস্থায় বেশিদিন বাঁচতে পারব না । আসলে কি জানিস এখন বুঝতে পারি,তখন পাগলের মতো আচরণ করেছি । প্রেমে পরলে সবাই পাগল হয়ে যায় তাই না, রিমি । আচ্ছা তোকে গল্পের বাকি অংশটুকু একটু পরে বলি । আগে তোকে একটা ম্যাজিক দেখাই ।
-তুমি আবার ম্যাজিক শিখলে কবে?
-জীবন মানুষকে কিছু জিনিস এমনি এমনি শিখায় । আমাকে শিখিয়েছে ম্যাজিক । যা তো ঐ বাগান থেকে একটা লাল টকটকে একটা গোলাপ নিয়ে আয় ।
রিমি রক্তের মতো লাল একটা গোলাপ নিয়ে আসলো । রিমি কপালে একটা টিপ পরেছে । ধবধবে ফর্সা রিমির মুখটাকে একটা বিশাল ক্যানভাস মনে হচ্ছে ।মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে হয়ে যাই একজন শিল্পী, আর আঁকি ভালোবাসার আলপনা । আমার হাতে রিমি গোলাপটা দিল। রক্তিম গোলাপটাতে তখনও শিশিরের ভালোবাসা লেগে আছে । আমি ম্যাজিক দেখাতে শুরু করলাম ।
– রিমি গোলাপটা অনেক লাল তাই না । আমি আমার ভালবাসায় এই গোলাপের রঙ বদলে দিব ।
আমি দুইহাত পিছনে নিয়ে সামনে আনলাম। আমার হাতের গোলাপটা হলুদ হয়ে গেল । আবার হাত পিছনে নিয়ে সামনে আনলাম । আমার হাতে তিনটি গোলাপ দেখা গেল ।লাল হলুদ কালো ।রিমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো । আমি বললাম ,
-রিমি ম্যাজিকটা সুন্দর না ।
– তুমি আমাকে মুগ্ধ করতে চেয়েছ । মুগ্ধ করার জন্য আকাশ থেকে জাদুবিদ্যা দিয়ে গোলাপ নামিয়েছ । আমি মুগ্ধ হয়েছি। ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি ।
– আসলে ব্যাপারটা মুগ্ধ হবার মতো কিছু না । কাল রাতে বিয়ে বাড়ি সাজানোর ফুল থেকে দুটা গোলাপ পকেটে রেখে দিয়েছিলাম । একটা হলুদ আর একটা কালো তোকে দেখে ম্যাজিক দেখাতে ইচ্ছে হল । আর বাকিটা হাতের কৌশল । এখন তোর মুগ্ধতা কেটে গেছে তাইনা ।
– তানভীর ভাই , বিভ্রম দেখে আমরা মুগ্ধ হই, কিন্তু আমাদের বিভ্রম ঠিকই কেটে যায় । এবার গল্পটা বলো ।
– এর পর একদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দিনে আমি তৃপ্তিকে রাস্তায় থামালাম । তৃপ্তিকে বললাম , তৃপ্তি আমি ভনিতা পছন্দ করি না। আমি তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি ।
“ তুমি যে আমাকে পছন্দ কর , ব্যাপারটা আমি জানি । মেয়েদের কপালে একটা তৃতীয় নয়ন থাকে যা দিয়ে তারা ছেলেদের ভালোবাসা বুঝতে পারে । তোমার চোখ দেখে ভালোবাসো বুঝতে পেরেছি। ভালোবাসো ভালো কথা , কিন্তু এভাবে এসেছ কেন । ফুল নিয়ে আসবা । সুন্দর করে সেজেগুজে এসে ফুল দিয়ে নাটকীয় কায়দায় প্রপোজ করবা । ২৭ তারিখ আমার জন্মদিন । আমার প্রিয় ফুল চন্দ্রমল্লিকা নিয়ে আসবা । তোমার আবেদন বিবেচনা করে দেখব । তার আগে কোন কথা বলব না, এবার আসো । “ এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে তৃপ্তি চলে গেল ।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম । এরপর গল্পটা সংক্ষিপ্ত । ২৭ তারিখ আমি চন্দ্রমল্লিকা ফুল নিয়ে তৃপ্তিদের বাসায় গেলাম । জানতে পারলাম, ওরা সপরিবারে আমেরিকায় মাইগ্রেট করেছে । প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারিনি তাই আজো বিয়ে করিনি ।
-তোমার গল্প টা করুন তানভীর ভাই কিন্তু আমার কেন জানি হাসি পাচ্ছে । তানভীর ভাই এবার আমাকে চলে যেতে হবে । আমার মেয়ে বোধহয় এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে। আমার হাজব্যান্ড এর আবার সকাল বেলা আমার হাতে চা খাওয়ার অভ্যাস আছে ।
রিমি চলে গেছে । আমি একা একা দাঁড়িয়ে আছি । কুয়াশা কেটে যাচ্ছে । রোদ উঠে যাচ্ছে । আমি আবৃত্তি করছি, সরকার আমিনের কবিতা,
হৃদয় তুমি এতো মূর্খ কেন
একটু ভুল বাতাসে বেঁকে যাও
একটু ভুল স্পর্শে কেঁদে ফেল!
সম্ভবত বোকাদের রাজা আমি
আমার আসমানী ধর্মের নাম বোকামি!
২।।
দুপুর এগারটার দিকে বাড়িতে ফিরে আসলাম । রিমির ছোট বোন প্রমির বিয়ে হচ্ছে । রিমির বাবা আতাউর খান দুই বছর আগে মারা গেছেন । বিয়ের সব কিছু সামলাচ্ছেন রিমির ছোট চাচা , জামিলুর খান । সবাই আড়ালে ঝামেলা চাচা বলে । খুব কড়া প্রকৃতির লোক ।এই বদ লোক একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ডাস্টবিনের ভিতর একটা শিশুর কান্না শুনেন । সেই শিশুকে তিনি তুলে নিয়ে আসেন । নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেন । নিজে বিয়ে করেননি । সেই ছেলেটি কে জানেন ।
আমি, হ্যাঁ আমি ই । আমি এই বাড়ির আশ্রিত সন্তান । আমি মাস্টার্স করে স্কলারশিপ পেয়ে বাইরে চলে যাই । পি এইচ ডি করে সেখানকার নাগরিকত্ব নেই ।
১২ টা বেজে গেছে । আমি বসে আছি । হঠাৎ রিমির ডাক শুনে পিছনে তাকালাম । রিমি আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গেল । তারপর আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল, কাল তুমি চলে যাবে । প্লেনে উঠে এটা খুলে দেখবে ।
আমি বললাম , আচ্ছা , কি আছে জিজ্ঞেস করলাম না ।
আমি আমার প্যান্টের পকেট থেকে একটা বক্স বের করলাম । রিমিকে দিয়ে বললাম রিমি , এটা তোর জন্য আমার ছোট্ট উপহার । ২০০৭ সালে নিউইয়র্ক থেকে কিনেছি । রিমি চলে গেল । বক্সের ভিতর কি আছে জিজ্ঞেস করল না । বক্সের ভিতর একটা হীরার নেকলেস আছে । আমি আমার দু বছরের আয়ের সবটা দিয়ে কিনেছি ।
দুপুর একটার দিকে জানা গেল বরপক্ষ হঠাৎ করে বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে । তারা এই মেয়েকে ঘরে তুলে নিবে না । জামিলুর খান বাচ্চাদের মতো কাদতে লাগলেন । এতো কড়া একজন মানুষ এভাবে কাদতে পারে আমি ভাবতে পারছি না । খান বংশের ইজ্জত চলে যাবে । বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া মেয়েকে বিয়ে করবে কে ।
আমি প্রমির কাছে গেলাম ।বললাম,
– প্রমি তুই আমাকে বিয়ে করবি । আমার বয়স ৩৫ । তোর ২০ । আমি যখন বাইরে যাই তখন তুই খুব ছোট্ট ছিলি ।১৫ বছরের বড় একটা লোককে তুই বিয়ে করবি ।
-ঠাট্টা করছেন । বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া মেয়েরা হচ্ছে ভাঙা কুলার মতো । সবাই ছাই রাখতে চায় । আপনার মতো কেউ ভালবেসে বিয়ে করতে চায় না । আপনি কি জানেন আমার বিয়ে কেন ভেঙ্গে গেছে। আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। সাতদিন পর ফিরে এসেছি ।
– প্রমি দুর্ঘটনা মানুষের জীবনের অংশ । দুর্ঘটনার উপর আমাদের কারো হাত নেই । আমাদের বেঁচে থাকতে হয় দুরঘটনাকে ভুলে ।
একবার খান বংশের সম্মান বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিলাম । আবার খান বংশের সম্মান রক্ষার্থে আটকা পরে গেলাম ।
রাত নয়টায় প্রমির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল । একটা কথা বলতে ভুলে গেছি , প্রমি দেখতে প্রায় রিমির মতো , রিমির মতো নাক , রিমির মতো চোখ , রিমির মতো ঠোঁট ………………………
৩।
আমি চলে যাচ্ছি । গিয়ে কাগজপত্র পাঠালে প্রমি যাবে । আমি প্লেনে উঠে বসেছি ।
রিমির খামটা খুললাম । ভিতরে একটা চিঠি । রিমির হাতের ঝকঝকে লেখা ।
প্রিয়তমেষূ
“তানভীর ভাই প্লেনে সাবধানে বসবেন । বেশি নড়াচড়া করলে পেটের বাচ্ছা নষ্ট হয়ে যাবে । রাগ করলেন , রসিকতা করলাম । আসলে ব্যাপার হল আপনি নিজেকে যতটা চালাক মনে করেন আপনি ততটা চালাক না । আপনি ভেবেছিলেন আপনি যে আমাকে ভালোবাসেন ব্যাপারটা আমি বুঝব না । মেয়েরা বাতাসে পুরুষের গন্ধ শুনে বুঝতে পারে কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে কিনা । আপনি আমার সামনাসামনি কখনো আমার দিকে তাকাতেন না । কিন্তু প্রত্যেক দিন সকাল বেলা পুকুর পাড়ে বসে থাকতেন যাতে আমাকে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ।আপনার যে ডাইরিতে আপনি পুরোটা জুড়ে লিখেছেন “রিমিকে ভালবাসি ” সেটা আমি পড়েছি ।আপনি আমাকে তৃপ্তির মিথ্যে গল্প শুনিয়েছেন , তা শুনে আমি মজা পেয়েছি । আপনি ভালো গল্প বলেন , তবে গল্প বলায় আপনি অনেক কাঁচা । আপনি তৃপ্তিকে জুন মাসে চন্দ্রমল্লিকা দিয়েছেন , অথচ চন্দ্রমল্লিকা জুন মাসের ফুল না । আর জুন মাসের পুরোটা জুড়ে আপনি বাসায় ছিলেন তখন আপনার পরীক্ষা ছিল । ২৭ জুন আপনার খুব জ্বর ছিল , আপনি সারাদিন বিছানায় ছিলেন । আপনি জানতেন না , আমি নিয়মিত ডাইরি লিখতাম । তানভীর ভাই আপনি আমার সাথে চু কুতকুত খেলতে ছেয়েছেন কিন্তু পারেন নি ।আপনি আশ্রিত বলে আমায় ভালোবাসার সাহস পাননি । কিন্তু ভালবাসার সামনে দাড়াতে হয় শুধু ভালোবাসা নিয়ে । আপনি নিজেও জানেন না আপনি আমার বিরাট ক্ষতি করেছেন । আপনার জন্য আমি আমার স্বামীকে ভালবাসতে পারছি না । দীর্ঘদিন এক বিছানায় শুয়ে তাকে আমার অপরিচিত মনে হয় । কারন আমি যে শুধু আপনাকে ভালবাসি । জানেন আমার স্বামী এতো ভালমানুষ তাকে আমি ভালবেসে আপন করে একবারও বুকে টেনে নিতে পারিনি ।
তবে এবার আপনাকে দেখার পর আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি । আমি আমার স্বামীকে ভালবাসব। কারন আমি চাই আমাদের সন্তান বেড়ে উঠুক আমাদের ভালবাসায়
When we two parted
In silence and tears
Half broken-hearted
To sever for years,
Gorge Gordon, lord Byron
পুরো চিঠিতে আপনাকে আপনি করে বললাম একবারও তুমি বলিনি । আর কোনদিন বলব না ।
আপনার
রিমি
মেঘের মধ্য দিয়ে প্লেনটা উড়ে যাচ্ছে । মেঘের কতটা কাছাকাছি , অথচ মেঘেদের থেকে কত পৃথক। মেঘদের ছুঁয়ে দেওয়ার কোন অধিকার নেই ।আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে । বেদনার নিকষ কালো নিষ্পাপ জল……………………………………………………….