কুলখানি

কুলখানি

সকাল আটটা না বাজলে কোন দিন ঘুম থেকে উঠা হয়ে ওঠে না আমার। এটা আমার নিত্যকার বাজে অভ্যাসের একটি। এজন্য প্রায় প্রতিদিনই গিন্নির গোমড়া মুখের দু’কথা শুনতে হয় আমাকে। তবু শুনেই থাকি। কারণ, বাজে অভ্যাস হলেও সেটাতো আমারই অভ্যাস। কিন্তু আজ সকালে সাতটা বাজার আগেই গিন্নির প্রবল ধাক্কায় ধড়মড় করে জেগে উঠলাম। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘কি হয়েছে গো, কি হয়েছে ?’

কোমরে হাত দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে গিন্নি বললে, ‘কয়টা বাজে জানো ?’
আমি ঘুম জড়ানো চোখে নিতান্ত অবহেলার দৃষ্টিতে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কেন আটটা তো এখনো বাজেইনি।’

‘কার সাথে তোমার চুক্তি হয়েছে যে, আটটা না বাজলে ঘুম থেকে ওঠা যাবে না ?’ ঝনঝনে গলায় বললো গিন্নি। তারপর আমি বিছানায় আধাশোয়া অবস্থাতেই ফরফর করে মশারিটা উপরের দিকে তুলতে তুলতে ঝাঁঝালো কণ্ঠে গিন্নি আবারও বললে, ‘আটটার আগে ঘুম থেকে উঠলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে ?’
‘না, না তা কেন হবে ?’
‘তাহলে নামো বিছানা থেকে। বাইরে একটা লোক কতক্ষণ হলো দাঁড়িয়ে আছে কথা বলার জন্য।’
‘ওহ হো! তক্ষুনি ডেকে দিলেই পারতে ?’
‘অনেকক্ষণ হলো তো ডেকেই চলেছি তোমার তো হুশ হয় না। কাল থেকে যদি সকাল সকাল না ওঠো তবে বিছানায় পানি ঢেলে দিবো বলে রাখলাম।’

বলতে বলতে গিন্নি বাইরে চলে গেলো। কাল যদি সে এমন কা- করেই বসে তাহলে আমার অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাই আমি আর সে কথা না ভেবে জানালাটা খুলে অপেক্ষমান লোকটির সাথে কথা বলবো কি না ভাবতেই মনে হলো সেটা বেয়াদবি হয়ে যায়। অথবা অসম্মান করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে স্প্রিংয়ের মতো বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পরনের লুঙ্গির বাঁধনটা ঠিক করতে করতে বাড়ির গেইট খুলে দেখি, ত্রিশ কি বত্রিশ বছরের এক প্রতিবেশি যুবক দাঁড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষায়।

যুবককে আমি চিনি। আমার বাড়ি থেকে দশ-বারোটা বাড়ি পরেই তাদের বসতবাড়ি। এই যুবক গ্রামে থাকে না বলেই তার সাথে আমার মৌখিক পরিচয়। অর্থাৎ সে আমাকে চেনে, আর আমি তাকে চিনি। তবু প্রতিবেশির খাতিরেই হেসে বললাম, ‘আরে কি খবর ? আসুন, আসুন। বাড়ির ভিতরে আসুন।’
‘না না, ভিতরে যেতে হবে না। এখানেই কথা বলি।’
‘সেটা কেমন দেখায় বলুন তো ?’
তারপর খানিকটা ইতস্থত করে বললাম, ‘আচ্ছা বলুন, কি বলবেন।’
‘আপনাকে দাওয়াদ করতে এসেছি।’
‘তাই নাকি ?’
ভাবলাম একজন প্রতিবেশি দাওয়াত করতে এসেছে আর আমি তাকে বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে দাওয়াত গ্রহণ করলে নিশ্চয়ই সেটা অভদ্রতার চূড়ান্ত হয়ে যায়। একটা নি¤œতম সৌজন্যবোধ প্রদর্শন করা তো উচিৎ। তাই আমি বিনিত ভাবেই তাকে বললাম, ‘এভাবে কি দাওয়াত নেওয়া যায় ? আসুন তো, ভিতরে আসুন।’

যুবক আমার আন্তরিক আহবানে সারা দিয়ে লাজন¤্র মুখে আমার পিছু পিছু ঘরে এলেন। আমি তাকে চেয়ার পেতে বসতে দিলাম। হাঁক ছেড়ে গিন্নিকে বললাম, ‘সকাল বেলার প্রথম অতিথি এসেছে গো, নাস্তার ব্যবস্থা করো।’
আপ্যায়নের ব্যাপারে যুবক ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে তাড়াতাড়ি করে বললেন, ‘না না নাস্তা করার সময় হবে না। আরও অনেক দাওয়াত বাকি আছে। আজ দিনের মধ্যেই সব সারতে হবে।’
‘তা, কি উপলক্ষে দাওয়াত ?’
‘আগামীকাল বাদ যোহর আমার দাদার কুলখানি। আপনার স্বপরিবারে দাওয়াত। আর আপনারা অবশ্যই আসবেন।’
‘ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো।’
‘চেষ্টা না, অবশ্যই আসবেন।’

গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েকে আমি এখনও ভাল করে চিনিই না। তাই চোখের সামনে পড়লে মনে করতে পারি না এই ছেলে বা মেয়েটা কার। এর কারণ, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া আমি কারো বাড়িতে যাই না। এমন কি সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতেও বেশির ভাগ সময় যাওয়া হয়ে ওঠে না। এর পিছনে খানিকটা অনীহাও আছে। পথে-ঘাটে চলতে-ফিরতে যাদের সঙ্গে দেখা হয়, তাদের সঙ্গে ‘হায়-হ্যালো’ করেই সামাজিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করি। এই মূহুর্তে যে যুবক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাকে চিনলেও মনে করতে পারছিলাম না এই ছেলেটা কার। এর আরও একটা কারণ হলো ছেলেটা গ্রামে থাকে না। সে শহরে থেকে পড়া-লেখা করেছে এবং অনেক দিন যাবৎ শহরেই কিসে যেন চাকুরিও করছে। তাছাড়া তারা এই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা নয়। চৌদ্দ কি পনের বছর পূর্বে নদীর ওপারের এক ভাঙ্গন কবলিত গ্রাম থেকে এখানে এসে তারা বসবাস করছে। তাই তাদের সাথে আমাদের কোন আত্মীয়তাও গড়ে ওঠেনি। কুলখানির কথা বলতেই মনে পড়লো সে মকবুল মিয়ার ছেলে। মাস খানিক আগে এক ভরা সন্ধ্যায় মকবুল মিয়ার বাবা অর্থাৎ, এই যুবকের দাদার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম। এবং পরদিন সকালে তার দাফন হয়েছিল। আমিও গিয়েছিলাম। ব্যাপারটা পরিষ্কার হবার জন্য আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে আপনি কি এসেছিলেন?’

‘জ্বি জ্বি এসেছিলাম।’
‘কই আপনাকে তো দেখিনি।’
‘অনেক মানুষের ভিড় ছিল তো তাই হয়তো খেয়াল করেননি।’
‘হতে পারে।’
অতপর আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, ‘ঠিক আছে। আমি অবশ্যই আসবো।’
‘ধন্যবাদ। আসি তাহলে।’
যুবকটি যখন চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে উদ্যত হলো, তখন থেকেই আমি তার নামটি মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম। ইদানিং আমার যে কি হয়েছে, হঠাৎ হঠাৎ অতি পরিচিত মানুষের নামও ভুলে যাই। এই যুবকের নামও আমি জানতাম। হঠাৎ করেই আজ তার নাম আর মনে করতে পারছি না। অস্বস্তিকর ব্যাপার। যুবক আমার আঙ্গিনা পেরিয়ে গেইটের বাইরে চলে গেলো, আমি বোকার মতো পিছে পিছে তাকে এগিয়ে দিতে গেলাম তবু মনে এলো না তার নামটি। দেখতে দেখতে এক সময় সে আমার উঠোন পর্যন্ত পেরিয়ে গেলো আমি তার প্রস্থান পথে তাকিয়েই রইলাম। লজ্জায় তাকে জিজ্ঞেসও করতে পারছিলাম না, ‘আপনার নামটা যেন কি ?’

তবে উঠোন পেরিয়ে যখন সে রাস্তায় গিয়ে উঠলো তখন তার নামের পরিবর্তে অকারণেই তার মরহুম দাদা মহোসিন আলীর বয়সের ভারে বিপন্ন মুখখানা আমার মানসপটে ভেসে উঠলো।

বৃদ্ধ মহোসিন আলীর সঙ্গে আমার প্রায়ই বাজারের রাস্তায় দেখা হতো। তিনি মাসকলাইয়ের গুড়া তৈরি করে বাজারে বেচতেন। ছেলে আর নাতিদের আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলেও শেষ বয়সে কেন তিনি সামান্য কলাইয়ের গুড়া বিক্রির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তা আমার জানা ছিল না। বয়সের ভারে এমনিতেই প্রায় নুয়ে পড়েছিলেন, তারপরেও কলাইয়ের ডালা ঘারে চেপে ছোট ছোট পা ফেলে রোজ রোজ বাজারে যেতেন। আবার রাতে বাজার ফিরতি মানুষের ঘরে ফেরা শেষ হলে তবেই তিনি ঘরে ফিরতেন। পথে পরিচিত কত মানুষ তাকে পেরিয়ে যেতো অথচ কারো সাথে যেচে কথাও বলতেন না। একদিন হাটবারে তার সঙ্গে আমার দেখা হলো মন্দিরের দীঘিটার মোড়ে। তিনি কলাইয়ের গুড়ার ডালাটা ঘারে চেপে প্রতি দিনের মতো ধীর পদক্ষেপে হাটের দিকেই যাচ্ছিলেন। আমি তার পাশ কেটে যেতে যেতে এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘ব্যবসা কেমন চলছে দাদু ?’
আমার কথায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। তারপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসবার চেষ্টা করে বললেন, ‘এই চলছে দাদু কোন মতে। আমার আবার ব্যবসা !’

‘কেন ? মন্দ কিসে ? ভালই তো ব্যবসা করছেন।’
বৃদ্ধের এক হাতে বিড়ি জ্বলছিল। আবার হাঁটতে আরম্ভ করে বিড়িতে একটা টান মেরে বললেন, ‘হ্যাঁ ভাই আর তো কিছু পারি না।’
‘আচ্ছা দাদু, আপনার এক নাতি চাকুরি করেন শুনেছি ?’
‘হ্যাঁ করে।’
‘তাহলে এতো কষ্ট করে ব্যবসা করার কি দরকার ? আপনি তো হাঁটতেই পারেন না ?’
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মহোসিন আলী বললেন, ‘ না পারলে কি হবে দাদু, নিজের কিছু না থাকলে নাতি-পুতিও কাজে আসে না।’

বলতে বলতে মহোসিন আলীর কাঁশির ধমক উঠলো। সম্ভবত তার হাঁপানী রোগ আছে। একবার কাঁশি আরম্ভ হলে যেন আর থামতেই চায় না। কাঁশতে কাঁশতে এক পর্যায়ে তার ঘার থেকে ডালাটা পড়ে যাবার উপক্রম হলে আমি সেটা ঠিক করে দিয়ে তার সাথে সাথেই হাটের দিকে চলে গেলাম।

এরপর বৃদ্ধ মহোসিন আলীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর সপ্তাহ খানিক আগে। সেদিন তার ঘারে কলাইয়ের ডালা ছিল না। তিনি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছিলেন। সম্ভবত কাঁশির ধমক উঠেছিল। কাছে গিয়ে কিছু বলার আগেই আমাকে বললেন, ‘কোথায় যাবে দাদু ?’
‘কেন ? এই একটু সামনে।’
‘আমাকে একটু মোড় পর্যন্ত ধরে নিয়ে যাবে ?’
‘এতো কষ্ট করে মোড়ে যাওয়ার কি দরকার আপনার ? গায়ে তো ভীষন জ্বর দেখছি ?’
‘মোড়ে গিয়ে দুইটা বড়ি কিনবো দাদু, শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
‘এভাবে দুইটা একটা বড়ি কিনে খেয়ে রোগ সারবে কি ? তার চেয়ে ভাল একজন ডাক্তারকে দেখান।’
‘ভাল হবার বয়স কি আর আছে ভাই ?’
‘কে বলেছে ভাল হবার বয়স নেই ? আপনার ছেলে বা নাতিকে সঙ্গে নিয়ে শহরে গিয়ে একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ খান, নিশ্চয়ই সেরে যাবে। আপনার ছেলেদেরকে আমি কিছু বলবো কি ?’

বৃদ্ধ মহোসিন আলী আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। তার দৃষ্টি মোড়ের দিকে। আমি আমার কথার জবাব শোনার জন্য কয়েক মূহুর্ত অপেক্ষা করে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখ অসম্ভব বিবর্ণ আর কালো। সম্ভবত আমার পরামর্শমূলক কথা তার ভিতরে কোন ক্ষোভ বা দুঃখকে খানিকটা উসকে দিয়েছে। তাই তিনি আমার সহযোগিতা না নিয়েই হাঁটতে শুরু করলেন। অগত্য আমি তড়িঘড়ি করে তার বাঁ হাতের বাহুখানা ধরে এগিয়ে চললাম মোড়ের দিকে।
পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেতে প্রায় পনের মিনিট লাগলো। মোড়ের কাছাকাছি গিয়ে আমি বিনিত ভাবে বললাম, ‘এখন যেতে পারবেন তো?’

বৃদ্ধ আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে অতি কষ্টে কোমরটা সোজা করে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেন। তারপর আমার মুখের দিকে কতক্ষণ সকরুণ চোখে তাকিয়ে থেকে আবার খানিকটা সামনে ঝুঁকে মোড়ের দিকে হাঁটতে লাগলেন। আমি তার বয়সের ভারে নূয়ে পড়া প্রতিটা পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে নিজের সম্ভাব্য বৃদ্ধ বয়সের পরিণতির কথা ভাবতে ভাবতে নিজের গন্তব্যের দিকে যেতে উদ্যত হলাম।

সম্ভবত এটাই ছিল বৃদ্ধের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। এরপর হঠাৎ করেই একদিন তার মৃত্যু সংবাদ পেলাম। আর আজ পেলাম তার কুলখানির দাওয়াত।

এমনিতেই সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে আমি বিশেষ যাই না, তারপরেও কেন যেন আমার মনে হলো এই অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিৎ। পরদিন যথা সময়ে বৃদ্ধ মহোসিন আলীর কুলখানিতে আমি উপস্থিত হলাম। সমাজের আরও দশজন মানুষের সাথে সামিল হয়ে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করার জন্য। তবে স্বপরিবারে নয়, আমি একাই। গিয়ে দেখি এলাহী কা-। প্রায় দু’শ লোকের সমাগম সেখানে। উঠোনের এমাথা-ওমাথা চট বিছিয়ে লোকদের বসতে দেওয়া হয়েছে। আঙ্গিনায় সারি সারি কোর্মা-পোলাও-এর ডেকচি রাখা হয়েছে। পাশেই মকবুল মিয়া বসে আছেন গম্ভীর ভাবে। সম্ভাব্য পরিবেশনকারীরা প্রস্তুত। মরহুমের জন্য বিশেষ মোনাজাত হলেই তারা খাবার পরিবেশন শুরু করবেন। মরহুম মহোসিন আলীর তিন ছেলের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজন, দুই মেয়ের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশিদের নিয়ে বিশাল ব্যয়বহুল আয়োজন। সবার মধ্যেই বিশেষ গম্ভীরতা। কিছুক্ষণ পরেই মোনাজাত হবে বলে খাবারের জিনিস-পত্র ঠিক ঠাক করে নেওয়া হচ্ছে। এমন সময় কে একজন উঁচু গলায় ডাকলেন, ‘ও মনসুর মিয়া..!’

আমি তাকিয়ে দেখি বেশ পরিপাটি করে সাজগোজ করা আমাকে দাওয়াতকারী সেই যুবক মহোসিন আলীর নাতি বেরিয়ে এলেন। আমার তখুনি মনে পড়লো এই যুবকের নাম মনসুর মিয়া। গতকাল অনেক চেষ্টা করেও যার নাম আমি মনে করতে পারিনি। সৌজন্য দেখাবার জন্য কাছে গিয়ে বললাম, ‘কেমন আছেন ?’

মনসুর মিয়া খুব ব্যস্ত হয়ে আমার সাথে মোলাকাত করে উৎফুল্ল হয়ে বললেন, ‘ওহ! আপনি এসেছেন ? বসুন বসুন। আপনি এসেছেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। আসুন আসুন আপনাকে বসতে দিই।’
‘না না ব্যস্ত হবেন না, আমি বসছি। আয়োজন তো বেশ বড়সরই করেছেন দেখছি।’
‘নাহ! কই আর বড় হলো ?’
‘দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক টাকা খরচ করেছেন।’
‘অনেক টাকা আর কোথায়, মাত্র আশি হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’
‘আশি হাজার ?’
‘অবাক হচ্ছেন কেন ? আমার দাদুর জন্য বলেই এটা আমার কাছে ছোট মনে হচ্ছে। আরও বেশি করা উচিৎ ছিল।’
‘তা ঠিক, দাদু বলে কথা।’
‘আমার চাচারা যদি আর একটু সহযোগিতা করতো তাহলে আমি পাঁচ’শ লোককে দাওয়াত করতাম।’
‘তাই নাকি ?’
‘হ্যাঁ ! অবশ্যই।’
‘খুব ভাল, খুব ভাল ! দাদুর জন্য আপনার খুব ভালবাসা !’
‘দোয়া করবেন, দাদু যেন বেহেস্ত বাসি হোন। দয়া করে আপনি বসুন, এখুনি মোনাজাত হবে।’
আমাকে বসতে বলে ত্রস্ত ভঙ্গিতে মনসুর মিয়া আগত লোকদের মাঝে মিশে গেলেন। আমি তাদের আঙ্গিনার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, যে লোক বিনা চিকিৎসায় ইহলোক ত্যাগ করলো আজ তার জন্য এতো আয়োজন ?

এই পৃথিবীতে যার জন্ম আছে, মৃত্যু তার জন্য অবধারিত। তারপরেও আমার মনে হলো, আজ মহোসিন আলীর পরিবার-পরিজনরা যে বিশাল আয়োজন করেছে, জীবৎকালে তার চিকিৎসার্থে যদি এই আয়োজনের এক’শ ভাগের এক ভাগও তারা ব্যয় করতো, নিশ্চয়ই মহোসিন আলী আরও দু’দিন এই শস্য-শ্যামল পৃথিবীর আলো-বাতাস উপভোগ করে যেতে পারতো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত