ভালবাসার মূল্য কত
আমি সেতো জানিনা
এজীবন তূল্য কি তার
আমি সেতো বুঝিনা।
আমি না বুঝে না শুনে
নিলাম তোমার মন
পরে বেশী দাম চেওনা।
সকাল বেলা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দারোয়ান ভাই দিলদরিয়া গলায় পা নাচাতে নাচাতে গান গাচ্ছে।
কি খবর ভাল? সাইফ জিজ্ঞাসা করে।
আজকে তার জয়েনিং ডেট। মনে হচ্ছে প্রথমদিন ই দেরী হয়ে যাবে কাজে। বিরক্তির একশেষ। কোন কাজ সুন্দরভাবে করতে পারেনা। গোছানো জিনিস টা একেবারে তার মধ্যে নেই।দৌড়ে ঘর থেকে বের হল প্রথমে ওয়ালেট ছাড়া।
ওহ নিজেকে বকতে বকতে ঘরের দিকে রওনা করেছে আবার মা ছুটে বেরিয়ে আসলেন দৌড়ে।
খোকা তোর মানিব্যাগ ফালায় গেছিস বাবা।
ওহ আমার মা পৃথিবীর সেরা মা বলে মায়ের দুইগালে টুক করে দুইটা চুমু দিয়ে ওয়ালেট টা নিয়ে লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসল।
ওয়ালেট খুলে দেখল মা এর কান্ড গোল একটা পুটলীর মত কি রেখে দিছে । আরবিতে আয়াতুল কুরসী লেখা।
মায়ের হাতে লিখে দেওয়া এই আয়াতুল কুরসী সাইফ তার পকেটে রেখে দিল।
গলির মুখে দাড়িয়ে আছে প্রায় দশমিনিট ।কোন রিক্সাওয়ালার দেখা নাই।
আজকে ট্যাক্সি নিতে হবে মনে হচ্ছে।প্রথমদিন সে কিছুতে দেরী করতে চায়না। জোরে পা চালাল মেইন রোডের উদ্দেশ্যে। মেইন রোডে এসে কিছুক্ষন দেখল যদি ট্যাক্সি পায় তবে টাকা খরচ করে ট্যাক্সিতে যাবে। কিরে ট্যাক্সি ও দেখি আজ উধাও। শেষে ট্যাম্পু একটা আসতে দেখে লাফ দিয়ে উঠল জীবনে প্রথমবারের মতন।কোর্ট প্যান্ট টাই পরা একজন বাবু সে এই টেম্পুতে। অস্বস্তিকর অবস্থা। দেখল সে একাই অস্বস্তিকর অবস্থায় শুধু না। তার মুখোমুখি বসে আছে দেখতে মোটামুটি ভাল ভদ্র চেহারার একটা মেয়ে অল্পবয়সী বিশ বাইশ হবে তাও বেশ সুন্দর সালোয়ার কামিজ পরা। মেয়েটাকে মনে হচ্ছে খুব অস্বস্তিবোধ করছে।যেন সে বুঝতে পারছেনা কোনদিকে তাকাবে।সামনে তাকাতে সাইফের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেছে দেখে সে এখন আকাশের দিকে মুখ করে আছে।
ভিতরে ভিতরে সাইফের ভীষন হাসি পেতে লাগল মেয়েটার জন্য এবং তার নিজের জন্য ও।
টেম্পু এসে বাংলা মটরের সামনে থামলে সে নেমে পড়ল।দেখল তার সহযাত্রী মেয়েটি ও নামল।মেয়েটির হাতে একটা ফাইল জাতীয় ফোল্ডারের মত দেখা যাচ্ছে।
মনে হয় চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে মনে মনে সাইফ ভাবছে।
সামনে একটা সিটি সার্ভিস এর বাস এসে থামতে সাইফ উঠে গেল তাতে।দেখা যাচ্ছে মেয়েটি তার পিছন পিছন উঠল।
সিটে বসতে ওইকোনার একজনের দিকে চোখ পড়তে দুইজনে শোরগোল করে উঠল।সায়ন মহা বদ মহা বিচ্ছু তার ভার্সিটি লাইফের প্রানের বন্ধুকে বসে থাকতে দেখল।
হই হই করে চিৎকার করে উঠল।
খবর কি?এখন ও কি সিঙ্গেল নাকি?সায়ন চিৎকার করতে থাকে ।
তোর খবর কি?সাইফ জিজ্ঞাসা করে হাসতে হাসতে।চোখ পড়ে যায় মেয়েটির দিকে।মেয়েটি হেসে তার দিকে তাকিয়েছে।
আরে মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দর।হাসিতে মেয়েটির রুপ খুলে গিয়েছে অনেক।একটু আগের দেখা মেয়েটিকে কোন এক রহস্যময় কারনে এখন বেশ সুন্দরী একটা মেয়ের মত মনে হচ্ছে।
কারন কি?মেয়েটা কি একফাকে কোন মেকআপ করে নিয়েছে?হয়তবা এখন মেয়েটি রিল্যাক্স মুডে আছে।এইজন্য দেখতে সুন্দর মনে হচ্ছে।টেম্পুতে মেয়েটি বিষন্ন হয়েছিল।পরিবেশ টা সময় সময় বড় ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।
কিরে ব্যাপার কি?পাজিল সায়নটা পিঠে টোকা দিয়ে বলে চোখাচোখি করছ ।ব্যাপার কি?
দুর হ পাগল ।এইমাত্র দেখলাম অচেনা মেয়ে।লজ্জা পেয়ে সে বলে।
চেনা হয়ে গেলে তো হয়।নাকি তুই এখন ও শিখিসনি কিভাবে আই লাভ ইউ বলতে হয়।মজা করে সায়ন বলে।
এটা তার মজার ডায়লগ ছিল ভার্সিটি লাইফে।
সায়ন এক একটা মেয়ে চয়েস করত তার সাথে প্রেম করানোর জন্য।সাইফ সবসময় রিফিউজ করতে এই বলে আমি ঘুরব ফিরব ঠিক আছে কিন্তু আই লাভ ইউ বলতে পারবনা কাওরে।
কেনরে এই ইজি ডায়লগটা দিতে পারবিনা ?
নারে আমি সত্যি জানিনা কিভাবে আই লাভ ইউ বলতে হয়।শুধু আমার মাকে আই লাভ ইউ বলি।
মনে হয়না কোন মেয়েকে বলতে পারব।আনইজি লাগবেরে বলছিল হেসে ।
সত্যিকার ভালবাসা যখন মনে আসবে তখনই বলতে পারবি বুদ্ধু।সায়ন ও মজা করে বলে।
দুইবন্ধু সারা বাসে চেচামেচি করে কথা বলে সবার মাথা ধরিয়ে দিচ্ছিল।
দুই একজন বয়স্ক লোক ভংর্সনার চোখে পিছনে তাদের দিকে তাকাতে হুশ হল।
মতিঝিল ইষ্টার্ণ ব্যাংকের কাছাকাছি আসতে তারা দুইবন্ধু নামল বাস থেকে।দুইজন দুইজনকে বিদায় জানাল।
সাইফ জয়েন করবে আজকে ইষ্টার্ণ ব্যাংকে জুনিয়ার অফিসার হিসাবে।
গেইট দিয়ে ঢুকতে দেখে সেই একই মেয়ে তার সঙ্গে ঢুকল।রিসেশনে এসে কি জিজ্ঞাসা করল তারপর কোনার এক সোফায় গিয়ে বসল।
সকালে আরেকবার পানি খেতে এসে দেখে মেয়েটি এখনও একই জায়গায় ঠায় মেয়েটি বসে আছে।তাকে দেখে বিব্রত হয়ে নড়েচড়ে বসল।সাইফ একবার ভাবছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে কিনা?কার জন্য অপেক্ষা করছে।পরে মনে হল থাক অনেক মেয়েরা আবার হ্যাংলা মনে করে এইধরনর ছেলেকে।ভাববে হয়ত উপকারের অজুহাতে আলাপ জমাতে চাচ্ছে।তাই কথা না বলে ডেস্কে এসে বসেছে আবার।এরপরে সে কাজে ডুবে গেল যথারীতি এবং মেয়েটির কথা ভূলে গেল।
লাঞ্চ টাইমে এসে দেখে সঙ্গে এখন মেয়েটা আগের জায়গায় বসে।তাকে এখন অনেকটা ক্লান্ত বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে।এবার সাইফ এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল
আপনি কি কারও জন্য অপেক্ষা করছেন?
মেয়েটি প্রথমে চমকে উঠল পরে জবাব দিল ধীরস্থির শান্তভাবে
শামসুল আবেদীন অ্যাডমিন ম্যানেজারের সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট।
পাশে এক পিয়নকে দেখে বলে ম্যানেজারের রুমে নিয়ে যেতে।শুনল যা আজ ওনার না আসার সম্ভাবনা। যদি আসেও বিকালের দিকে আসবেন।
মেয়েটিকে দেখে সাইফের বেশ মায়া হতে লাগল।এখন তাকে সকালের মত সুন্দরও মনেও হচ্ছেনা।ক্লান্ত বিপর্যস্ত তা এখন দেখে বলা যায়।
চলুন কিছু খেয়ে নিবেন আগে।অগত্যা সাইফকে বলতে হল।তারপরে না হয় আবার অপেক্ষা করবেন বলল সাইফ বোঝানোর স্বরে।
মেয়েটি বোধ হয় খুবই সরল তা বোঝা গেল পরের কথায়।
আসলে আমার হাতে কোন টাকা নাই।আপনি অফার করছেন আমি অফার করতে পারছিনা।ভাইয়া ভাবীর সাথে ঝগড়া করে ঘর থেকে বের হয়েছি আজকে।একটা জব হয়ে গেলে ওয়ার্কিংগার্লসদের হোষ্টেলে উঠে যেতাম।ভাইয়ের বাসায় উঠতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।
সাইফ হেসে ফেলল মেয়েটির ছেলেমানুষী অভিমানের কথায়।
জোর করে উঠিয়ে নিয়ে নিচের একটা ছোট রেষ্টোরেন্ট এল ।দেখা যাক কি পাওয়া যায়।
সারা রেষ্টোরেন্টে আর কোন মেয়ে নাই।সবাই খাওয়া ফেলে মেয়েটিকে দেখতে লাগল।মেয়েটি তাতে আরও কুন্ঠিত হয়ে পড়ল।
তবে খেতে খেতে আধাঘন্টায় দুইজনের অনেক কথা হল।দুজনের সম্পর্কে জানাও হল।মেয়েটির নাম রিনি।ভাই চাটার্ড অ্যাকাউনটেন্ট ভাবী ব্যাংকার।তাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবেনা বলে ঝগড়া করে বের হয়েছে বাসা থেকে।মা বাবা মারা গেছেন অনেক আগে।
সেদিন বিকালেও ম্যানেজার আসলেননা।রিনির ইন্টারভিউ হলনা জব হলোনা।তবে আরেকটা ইন্টারভিউ হয়েছে জীবনের প্রয়োজনে।সাইফ পছন্দ করে ফেলল মেয়েটিকে ভাবী বধু হিসাবে মাত্র একদিনের পরিচয়ে তাও আবার সিনেমার ঘটনার মত।চিন্তা করছে আজকে কি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিবে?মেয়েটা ছ্যাবলা ভাববেনা তো আবার?তার অবস্থা এখন এমন হয়েছে মনে হচ্ছে একদিনও মেয়েটিকে ছাড়া থাকা সম্ভব না।
দুইজনে একসঙ্গে বাসে উঠল।কি একটা কথা দুইজন বলতে নিয়েছে একইসঙ্গে।দুইজন হেসে ফেলল একসঙ্গে।
সাইফ ভাবছে বিয়ের প্রস্তাব দিব।তার আগে তো বলতে হবে
“আই ফল ইন লাভ উইথ ইউ তাও একদিনে।সত্যি দিনশেষে মনে হল এই মেয়েটিকে ছাড়া তার জীবন চলবেনা।
বলতে হবে আই লাভ ইউ।কিভাবে?সাহস নিয়ে তাকাল রিনির দিকে।
ওইমেয়ের নাম দিব কি
ভাবি শুধু তাই
ও তার মনের সাথে মন বেধেছি
তাইতো এ গান গাই।(গুনগুন করে গান গাইতে থাকে সাইফ)
পরিশিষ্ট:তিনবছর পরের ঘটনা।সাইফ রিনি দুইজনে এসেছে এক রেষ্টোরেন্টে খেতে।সাইফের কোলে তার একবছরের শিশুপুত্র।স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে গভীর আবেগে
“আই লাভ ইউ।এখন আর তার অস্বস্তি হয়না মোটেই।
সমাপ্ত।