তখন পরিবেশটা ছিল ঠিক মধ্য দুপুর। পার্কে তেমন কোন লোকজন ছিলনা বললেই চলে। রাতুল সবুজ ঘাসের উপর শোয়ে উজ্জ্বল আকাশ দেখছিল যেন সে আজই প্রথম আকাশ দেখছে। তার বিস্ময়কর চোখের দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল কোন এক গভীর অভিমান তাকে আকড়ে ধরে রেখেছে। তার চোখের কোনে একটু একটু জলের আভাস দেখে যে কারও মনে হতে পারে না জানি ছেলেটি কত দুঃখী। অনেকক্ষণ লিজার হাতটি ধরে বুকের ঠিক বাম পাশে চেপে ধরে রেখেছে রাতুল। কিছুই বলছেনা সে। কেবল উদাস নয়নে নীল আকাশটাকে দেখছে। লিজা পাশে বসে আছে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে রাতুলের চোখের দিকে। কি এক মায়া লিজাকে বারবার রাতুলের কাছে নিয়ে চলে সে আজও বুঝেনি। রাতুলের চোখের ভাষা লিজা ঠিক বুঝে যায়। আর তখন রাতুলের চোখ দেখে লিজার একটা কথাই কেবল মনে আসল যেন রাতুল লিজাকে কোথাও যেতে মানা করছে, আজ সারাদিন এভাবেই থাকতে চাইছে সে। সত্যিই অবাক লাগে আজ পর্যন্ত কেউ কাউকে কখনও বলেনি ভালোবাসে কিন্তু তাদের সম্পর্কের গভীরতা দেখলে যে কেউ বলবে তারা একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। শুধু যেন তারাই বুঝতে পারছে না তাদের এই সম্পর্কের ইতিবৃত্ত।
-হাতটা কি এবার ছাড়া যায়! কতক্ষণ ধরে আমার হাত ধরে আছ।
-না ছাড়বো না
-মানুষ কি ভাববে বলোতো? ছাড়তো হাত আমার, ব্যথা পাচ্ছি তো!
-যাও ছেড়ে দিলাম
-রাগ করলে নাকি?
-না
-আচ্ছা বলোতো আমার সাথে তুমি এরকম কর কেন?
-কি করলাম আমি তোমার সাথে?
-এই যে এ পর্যন্ত যতবার তোমার সাথে আমার দেখা হইছে ঠিক ততবার সামনে বসিয়ে রেখে উদাস হয়ে থাক, কোন কথাই বলোনা। আর পাগলামীর কথা না হয় বাদ দিলাম।
-কি আর বলবো, আমার সব কথাই তুমি বলার আগে বুঝে ফেল।
-ও সেজন্য এখন এরকম করে আকাশ দেখছ আর পাশে যে আমি বসে আছি তার দিকে কোন খেয়াল নেই!
-কে বলল! তোমার সাথেই তো কথা বলছি শোননি আমার কোন কথা?
-নাহ
-হুম মনোযোগ দেও শুনতে পারবে
-আবার শুরু করছ!
-কি?
-পাগলামী?
-তোমার জন্য
-থাক এখন আর ঢং করতে হবে না।
রাতুল আবার চুপ হয়ে আছে। আসলে তার কি হয়েছে তা সে নিজেও বুঝতেছে না। লিজাও বুঝতেছে না কি হচ্ছে। তাদের সম্পর্ক আর কয়দিন এভাবেই চলবে। রাতুলের সাথে একদিন কথা না হলে লিজাও রাতুলের মতো অস্থিরতা অনুভব করে।
চার বছর পর……
-আচ্ছা আমি কোন শাড়িটা পড়বো?
-ঐদিন যেটা কিনে দিলাম সেটা। বেশি সময় নাই কিন্তু সবাই চলে আসবে এখনই।
-বেশি সময় লাগবে না
-যাও যাও জলদি রেডি হয়ে আস।
রাতুল আর লিজা বিয়ে করেছে আজ এক বছর হলো। আজ তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। যদিও তাদের সম্পর্কটা আজ স্বামী স্ত্রীতে আবদ্ধ হয়েছে তবুও তারা একে অপরকে ভালোবাসে তা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। হয়তো তারা মনের মাঝে অসংখ্যবার একে অপরকে ভালোবাসি বলেছে। আসলে সত্যিই কাউকে ভালোবাসলে তা বলার প্রয়োজন হয়না। সত্যিকারের ভালোবাসা আসলেই সত্যি।