– খুলেন। (উর্মি)
– কি খুলবো? (রাজ)
– আপনার গায়ের গেঞ্জিটা খুলেন
রাজ আশ্চর্য হয়ে বললো কেন?
– আজকে কি বার?
– শুক্রবার।
– আজকে কিসের দিন?
– ছুটির দিন।
– আজকে আমরা কি করবো?
– বাসার কাজ করবো।
– তাহলে বাসার কাজের মধ্যে কাপড়চোপড় ধুয়া কি পরে?
– অবশ্যই পরে দাড়াও এক্ষুণি খুলে দিচ্ছি।
– ও ভালো কথা কাপড় ধুয়ার পাউডার শেষ হয়ে গেছে যান দোকান থেকে নিয়ে আসেন।
– এইভাবে খালি গায়ে যাবো নাকি? গালি গায়ে নিজেকে হনুমানের মত লাগছে।
– হি হি হি,,, আচ্ছা হনুমান দাঁড়ান আমি একটা টিশার্ট বা গেঞ্জি নিয়ে আসি।
– এই তুমি হনুমান কাকে বললে?
– এই ঘরে আপনি ছাড়া কি আর কেউ আছে?
– নিজের স্বামীকে কেউ হনুমান বলে?
– আরে বাবা হনুমান তো বলছি আদর করে। বুঝেন না কেন? স্বামীকে স্ত্রী কত নামেই তো ডাকে আমি নাহয় একটু ভিন্ন নামে ডাকলাম। এই বলে রাজের বউ হাসতে হাসতে রাজের জন্য কাপড় আনতে গেলো।
– এই নেন আর শুনেন একটু তাড়াতাড়ি আসবেন। আজ অনেক কাজ আছে আপনি আসলে একসাথে শুরু করবো।
– আচ্ছা তুমি ১ মিনিট দাড়াও আমি ২ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
– মানে কি।
– হা হা হা কিছু না। এই বলে রাজ বাসা থেকে বের হল, ফিরলো একটু পর।
দুইজনে মিলে শুরু করলো বাসার যাবতীয় কাজ।
এইটা তাদের ছুটির দিনের কাজ। এই সপ্তাহে যদি বাসার কাজ করে তাহলে পরের সপ্তাহ ঘুরতে যায়। ঘুরাঘুরির মধ্যে সবচেয়ে স্পেশাল জায়গা হলো। নদীর পাড়, মনোরমা পরিবেশ, খোলা আকাশ, মৃদু বাতাস সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা জায়গা। রাজ সবকিছুতে ফার্স্টক্লাস। সবকিছু করতে পারে এই ধরেন রান্নাবান্না থেকে শুরু করে থালাবাসন মাজা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া সব। প্রথম প্রথম বউয়ের সামনে একটু লজ্জা করলেও এখন আর করে না। উর্মি রাজকে একদিন বলছিলো স্বামী স্ত্রী একসাথে সংসারের কাজ করলে লজ্জার কিছু নেই। রাজ বললো আমি আমার বউয়ের কাজে সাহায্য করি তাই অনেকে হাসাহাসি করে তাতে আমার বউয়ের উপর একটুও অভিমান নেই। কারণ বিপদের সময় হাসাহাসির লোক আসবে না আসলে আমার বউই আসবে। স্ত্রীর কাছে স্বামী শুধু স্বামীই না ভালো বন্ধুও বটে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘মিলেমিশে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’ রাজ একদিন রান্না করতে গিয়ে ডানহাত পুড়ে গেছিলো। রাজ সেদিনই বুঝেছিল তার বউ তাকে কতটা ভালোবাসে। তার পাগলী বউ হাত ভালো না হওয়া পর্যন্ত খাইয়ে দিতো। একজন স্বামীর সেবা যতটুকু করা দরকার ঠিক ততটুকুই করে উর্মি। আজও সেই পুড়ে যাওয়ার দাগটা রয়ে গেছে।
রাতে খাওয়ার সময় রাজ যখন তার বউকে বললো আমাকে তোমার হাত দিয়ে খাইয়ে দাও না।
– আজকে আবার আমার হাতে খাইতে ইচ্ছে করতেছে কেন?
– ইচ্ছে তো সবসময় করে কিন্তু সবসময় তো আর বউয়ের হাতে খাওয়া যায় না।
– আমার কাজ আছে আপনি এসব পাগলামি রেখে খান তো।
– এক কাজ করি আমার হাতটা পুড়ে ফেলি তখন ঠিকই খাইয়ে দিবা। এই কথাট বলার পর উর্মি রাজের মুখে হালকা চেপে ধরলো।
– এসব কথা দ্বিতীয় বার মুখ থেকে বের হলে আমি আপনাকে খুন করবো।
– এখন তাহলে আমাকে খাওয়ানো যায়?
– জ্বী আসেন আর হা করেন। বাচ্চা ছেলেদের মত ব্যবহার করেন কেন?। আপনার থেকে বাচ্চা ছেলে গুলাও ভালো।
রাজ খেতে খেতে বললো অনেকদিন হলো মা-বাবার সাথে দেখা করি না সেই কবে গেছিলাম মনেই পরছে না। মা-বাবার কথা মনে পড়ায় রাজের চোখের কোণায় পানি আসলো। মা-বাবা কত করে বলে যাওয়ার জন্য কিন্তু চাইলেই কি যাওয়া যায়? মানুষ তো কতকিছুই চায় কিন্তু সব কি পায়? পায় না। অনেক দূরের পাড়ি যেতে যেতেই একদিন লাগে। অফিস থেকেও এখন ছুটি দিবে না। মাস শেষ হতে আর বেশিদিন নেই তারপরও দেখি ছুটি নেওয়া যায় কি না। মা-বাবার কথা মনে পড়লে সবার মনই খারাপ হয়। না জানি মা-বাবা আমার জন্য কেমন লাগছে। পাশ থেকে উর্মি উঠে রাজকে শান্তনা দিলো।
– আচ্ছা সামনের মাস আসুক। আমার মনে হয় ভালোভাবে বুঝালে নিশ্চয় দিবে। (উর্মি)
– আমার মনে হয় ছুটি দিবে না বেশিদিন হয়নি ছুটি নিয়েছি।
– তারপরও চেষ্টা করবেন। আচ্ছা এখন চলেন ঘুমাতে যাই। দুজনেই ঘুমাতে গেলো। ফজরের আযান দিলো উর্মি ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রাজকে ডাক দিলো।
– এইযে উঠেন আর মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসেন। এইভাবে দুই তিনবার ডাকার পর রাজ ঘুম থেকে উঠলো। একদিকে রাজ ওজু করে নামাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো আর অন্যদিকে উর্মি সকালের নাস্তা ব্যবস্থা করতেছে। দুজনেরই ৮ টা থেকে অফিস শুরু।