সুনন্দ ছেলেটা দেখতে শ্যামলা। মাথায় এলোমেলো চুল।মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এমএস শেষ করল এইতো কয়েকদিন। এখনও রেজাল্ট হয় নি। মাথার ভিতর ভন ভন করে ঘুরছে চাকরির চিন্তা। কি আশ্চর্য ব্যাপার,পড়াশুনা করল গণিত নিয়ে অথচ কোন চাকরিই নেই এ পড়াশুনা দিয়ে। পড়াশুনা করল দেশের সেরা ভার্সিটি থেকে তবুও এ অবস্থা। অন্যদের তাহলে কি অবস্থা কে জানে?চাকরি পেতে হলে আরও অনেক কিছু পড়তে হবে।বাংলা,ইংরেজি,সাধারণ জ্ঞান,সাধারণ বিজ্ঞান আর গণিত।শুধু পড়লে হবে না কথাবার্তার ধরণ বদলাতে হবে।বদলাতে হবে জীবনধারা।একের পর এক মুখস্থ করতে হবে। কখনও বাংলা,কখনও ইংরেজি।কখনও বা সাধারণ জ্ঞান কখনও বা সাধারণ বিজ্ঞান।মাথাটা গোলেমালে তালেগোলে পাকিয়ে যাচ্ছে। এ কেমন ব্যবস্থা একটা ছেলেকে বিশ বছর পড়েও চাকরির জন্য এত দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।কেন তাকে হতে হবে সব বিষয়ে বিশারদ?ছেলেটা রিডিং রুম হতে বের হয়ে বারান্দায় দাড়ায়।আকাশে ঝিলমিল করছে রোদ।পাখিরা উড়ে যাচ্ছে দিকদিগন্তে।পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে একঝাক কিশোর।কি আনন্দ তাদের চোখেমুখে?ছেলেটার মন কেঁদে উঠে। এ কোন জীবনের দিকে সে যাচ্ছে,যাতে কোন আনন্দ নেই।আছে শুধু মাথাটা ভনভন করার যন্ত্রণা।রিডিং রুম হতে রুমে চলে আসে।হলের সিট এখনও ছাড়েনি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেড়া দেওয়া উচিৎ।এটা ঢাকা শহর। বাইরে থাকতে গেলে অনেক খরচ হবে।তাই চাকরিটা না হলে ছাড়া সম্ভব না।যতদিন থাকা যায় আর কি?হল থেকে বের করে দিলে কিভাবে চলবে কে জানে? রুমে এসে কম্পিউটারটা চালায়।ইউটিউবে সার্চ দেয় হট ভিডিও।কয়েকটা ভিডিও দেখেও।দেহের ভিতর এক ধরণের ক্ষুধা জেগে উঠে।
এ নতুন কোন বিষয় নয়।এ ক্ষুধা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা ঠিক মনে পড়ে না।তবে ক্লাস সেভেন বা এইটে থাকতে এইরকম সময়টা হবে সম্ভবত।টিভিতে চুম্বনের দৃশ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।বিশেষ অংশটা শক্ত হয়ে উঠে।শরীর কাপতে থাকে।বিছানার উপর শুয়ে পড়ে।আহবান করে সেই নায়িকাকে।কল্পনায় ধরা দেয় নায়িকা।নায়িকার পা হতে মাথা পর্যন্ত স্পর্শ করে গভীর কামনায়।তার বুক কাপতে থাকে।একে একে খুলে ফেলে সব।প্রথমে শাড়ি,এরপর চুম্বন একে দেয় গালে ঠোটে।একটানে ছিড়ে ফেলে ব্লাউজ আর ব্রা।এরপর খুলে ফেলে ছায়া।বের হয় তরল।থেমে যায় সব উত্তেজনা।বিদায় দেয় নায়িকাকে।বাস্তবে ফিরে আসে সুনন্দ।এ কি করল সে,মনের ভিতর অপরাধ ঘিরে ধরে।সে কি তাহলে খারাপ মানুষ হয়ে গেছে?এরপর এমন অনেক হয়েছে, খারাপও লেগেছে।তরল বের হওয়ার পর মনে হয়েছে আর না,কিছুতেই না।কিছুতেই এ কাজ করা যাবে না।কিন্তু দিনের পর দিন এভাবেই চলে যাচ্ছে।মাঝখানে কয়েকদিন অফ রাখারও চেষ্টা করেছিল।কিন্তু কোন লাভ হয় নি।বরং ঘুমের মধ্যে তরল বের হয়ে পড়ে।একসময় অসহ্য হয়ে উঠে।শরীর কাপতে থাকে উত্তেজনায়।কল্পনায় ভোগ হয় বিভিন্ন নারীর দেহ।নায়িকা থেকে শুরু করে আশেপাশের সমবয়সী সুন্দরী,খালাতবোন,ম্যাডাম,পাড়াতো ভাবী।যাদের শরীর যখন আন্দোলিত করেছে,সেদিনি আহবান জানিয়েছে কল্পনায় তাদের।এমনকি করেছে কল্পিত ধর্ষণ।সে সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।পনের বিশ তো হবেই।এমনি করেই দিন চলছে।ফ্যান্টাসিতে।বাস্তবে এসব কি কোনভাবে সম্ভব?বাস্তবে করলে হয়তো এতদিনে তাকে যাবত-জীবন জেলে থাকতে হত।এ কি রকম জীবন কাটছে তার,কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।একদিকে কল্পিত ফ্যান্টাসি আরেকদিকে বাস্তবতা।একদিকে চিরায়ত নৈতিকতা অন্যদিকে বন্য কল্পনা যা বাধ ভেঙ্গে দিচ্ছে সব নীতি নৈতিকতার।সে কি খুব বেশি খারাপ কাজ করে ফেলছে?তার চরিত্র বলে কি কিছু নেই।সে কি চরিত্রহীন?নাকি চরিত্র নামক জিনিসটা প্রথাগত ধারণার সৃষ্টি?যা মানুষকে সীমাবদ্ধ গণ্ডির ভিতর আটকিয়ে রাখে।কল্পনায় কি সব-মানুষ এরকম?নাকি শুধু সেই এমন?এক অদম্য যৌন ইচ্ছা তার মনের পরতে পরতে।এমন সময় সুনন্দের মোবাইলটা বেজে উঠে।
-হু নালন্দা।
-তুমি আজকে বের হবে?
-হব।
-কখন?
-বিকেলে।তুমি কি আমাকে ভালবাস?
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
-না এমনেই করলাম?
-তোমার কি এখনও সন্দেহ আছে?
-নেই।কিন্তু আমার আমাকে নিয়ে আছে।
-এসব কি বলছ?
-ঠিক বলছি।তুমি অন্য কোথাও বিয়ে করে নাও।
-তোমার কি হয়ছে বলবে?
-আমি তোমার যোগ্য নয়।
-সে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।
-আমি খুব খারাপ ছেলে নালন্দা।
-দেখ,এতদিন প্রেম করে বিয়ে না করার ফন্দি আটকাবে না বলছি।
-তুমি খুব ভাল মেয়ে।আমার সাথে তোমার বিয়ে হওয়া উচিৎ নয়।
-কি হয়েছে খুলে বলবা?
-তুমি ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও প্লীজ।
-এই তুমি টিএসসি আস।এক্ষুণি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
সুনন্দ টি শার্ট পড়ে বের হয়।নালন্দা মেয়েটা খুব আবেগী।কিছু হলেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।এখনও হয়তো কান্না করছে নতুবা চোখ হতে টপটপ করে জল পড়ার অপেক্ষায়।এমন একটি ভাল মেয়েকে তার জন্য কষ্ট পেতে হচ্ছে, এই জন্য তার খুব খারাপ লাগছে।বুকের ভিতর কেমন জানি চিনচিন ব্যথা করছে।মেয়েটাকে এসব কথা কিভাবে বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।এত ভাল একটা মেয়ে তার জন্য হতে পারে না।তার বিয়ে করতে হবে বাজে টাইপের মেয়ে যেও নাকি তার মত।সুনন্দ টিএসসিতে যেয়ে নালন্দার পাশে বসে।নালন্দার মুখে নেই হাসি,চোখে জল টই টই করছে।
-নালন্দা আমাকে কেমন মনে হয় তোমার?
-প্লীজ ভালভাবে কথা বল।
-নালন্দা আমি অপরাধী।আমি খুব খারাপ ছেলে।
-কেন তুমি মদ খাও,গাজা খাও?
-না।
-সিগারেট?
-না।
-চুরি ডাকাতি খুন?
-না।
নালন্দা কিছুটা রেগে বলল-তাহলে?
-এসব দিয়ে কি শুধু ভালমন্দ বিচার করা যায়?
-তাছাড়া আর কি?
-নারী।
-মানে কি?
-মেয়েদের প্রতি আমার অদম্য যৌন ইচ্ছা।
-কই আমাকে তো এমন কথা কখন বল নি?
-তোমাকে নিয়ে ওই রকম কিছু ভাবি নি।তোমাকে আমার খুব পবিত্র মনে হয়।
– যৌন ইচ্ছা সবারই থাকে।একে এত সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে?
-আমার খুব বেশি।আশেপাশের অনেক মেয়েকে নিয়েই কল্পনায়
কথা শেষ না হতেই নালন্দা বলল-কি?
-শুধু মেয়ে না,ম্যাডামও আছে।আছে আমার ছাত্রী।যাকে কোনদিন কল্পনায় আহবান করব ভাবিনি।তা আজ হয়েছে।আমার আর কিছু নেই।আমি এক আত্নসম্মানহীন আবর্জনা।
নালন্দা রাগে কাঁপছে।উঠে দাড়িয়ে চট করে গালে থাপ্পড় দিল।বলল-চরিত্রহীন।যে ছাত্রী তোমাকে নিয়ে আমার কাছে এত ভাল কথা বলল,তাকে নিয়ে সি সি। তুমি মানুষ না অন্যকিছু।
এই বলে নালন্দা তার হলের দিকে হাটা শুরু করল। উড়নায় মুখ ঢেকে মেয়েটা খুব কান্না করছে। সুনন্দের খুব খারাপ লাগছে।নালন্দা মেয়েটাকে সত্যিই খুব ভালবাসত।তার মত চরিত্রহীন ছেলের মুখে ভালবাসা কথাটা কি মানায়?