বিকেলের এই কাশবন

বিকেলের এই কাশবন

১.বিকেলের এই কাশবন টা তার খুব প্রিয় সময় কাটানোর জন্য। নিরিবিলি সাদা স্থান টি তে প্রতিদিন কিছু টা সময় তার কাটানো চাই। এই সময় টায় ভুলে যায় সব কিছু তার আপন পর দুনিয়াদারী ,বন্ধু ,বান্ধবী,এমনকি মা বাবা ,ভাই বোন। সম্পর্ক ,মানুষ যতটা তার ভিতর ভরাট করতে পারে তার চেয়ে বেশী ভরাট করে দেয় এই নিবিড়, প্রাকৃতিক বনভূমি। এ তার একান্ত ভালবাসার স্থান .প্রতিদিন বিকাল কাজ শেষে একাই এই জায়গায় চলে আসে সে। এমন কি প্রিয়তি কে বলেনা কখন ও আসার জন্য। এই সময় বন্ধ রাখে তার ফোন। প্রিয়তি র ফোন দেখলে সে কেটে দেয়। কিছু টা নিজের আত্মা , বিবেক হৃদয় এর মুখোমুখি হয়। নিজের মনে আসা সব প্রশ্নের জবাব দেয় সে নিজেকে। প্রতিদিন ই একবার নিজেকে শুদ্ধ করে নেয় ভিতর আত্মার সম্মুখীন হয়ে নতজানু হয়ে সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে।

নাম তার মাসুদ নীল। আপন জনের নীল।যদিও প্রিয়তি তাকে ডাকে মাসুদ বলে। নীলের চেয়ে মাসুদ ডাকে বেশী আপন মনে হয়। কাজ করে এক প্রাইভেট কোম্পানী তে। তেমন কোন আহামরি কাজ ও না। কিছু একটা কাজে ইনভলভ থাকার জন্য করা। যদিও তার আর প্রিয়তি র একযুগ কাজ না করলে কোন অসুবিধা নেই। বাবা র অনেক ব্যান্ক ব্যালেন্স ,বিশেষ করে প্রিয়তি বাবা মার একমাত্র মেয়ে। প্রচুর টাকা পয়সা তার নামে যা সে খরচ করতে পছন্দ করে। মাসুদের দৃষ্টিতে তা এক ধরনের অপচয়।

আকাশ টার রং আজ অনেক বেশী নীল মনে হচ্ছে। হাতের উপর মাথা ফেলে শুয়ে পড়ে কাশ ক্ষেতে। শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে সে প্রিয়তির ফোন উপেক্ষা করে।

২.একগাদা কাপড়ের উপর বসে আছে প্রিয়তি। রকমারি সালোয়ার কামিজ ,হরেক রকম শাড়ি ,কোন টাই তার আজ পছন্দ হচ্ছেনা। প্রতি টি কাপড় সে শখ করে মাসুদ সহ কিনেছে। এখন আর ভাল লাগছেনা। মাসুদ টা পাশে না থাকলে তার মন টা এমন ই দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কোন ও কিছু তে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা একা একা। এত পরনির্ভরশীল কেন যে হলো সে ভেবে পায়না। বার বার মাসুদ কে ফোন করছে। কি করছে ও ?

তার কান্না পেতে লাগলো।

বাবা এসে ঢুকল সেই সময়ে।

কি হয়েছে আমার মামনির ? ওকে উন্মনা দেখে জিজ্ঞাসা করে।

কিরে নীল কোথায়? ওর উত্তর না পেয়ে আবার ও জিজ্ঞাসা করে বাবা।

আমি জানিনা একটু চড়া গলায় বলে। বাবা বুঝলেন কিছু একটা হয়েছে যার কারনে মেয়ের মন সুবিধা জনক অবস্থায় নেই।

হই হই করে সব বান্ধবী রা ঢুকলো সেই সময়। সবাই একযোগে হামলে পড়ল বিছানায় রাখা ড্রেস গুলোর উপর।

ওহ এত সুন্দর ড্রেস এটা আমি পড়ব। আরেকজন আরেকটা নিয়ে পড়তে চলে গেল।

একজন তাকে ধাক্কা মারলো ” কিরে তোর কি হয়েছে ? এত মরা মরা ভাব কেন ? আজ স্বপ্না র গায়ে হলুদ ভুলে গেলি নাকি ? সবাই কিন্তু স্বপ্নার বাসায় থাকব। আমি মাকে বলে বেরিয়েছি টিনা নামে এক বান্ধবী বলে উঠে।

তোরা যা আমি আজ কোথাও যাবনা।

সব ড্রেস মাটিতে ছুড়ে ফেলে কাদতে শুরু করল সে এবার।

বাবা মা আকূল হয়ে ভাবছে কি হল হাসিখুশী মেয়েটার।

৩ লাপ দিয়ে উঠে বসল নীল।কিছু একটা কামড় দিয়েছে পায়ে।ইশরে রাত হয়ে গিয়েছে দেখি।টর্চ জ্বালিয়ে দেখল অনেকবার প্রিয়তীর ফোন আর ও অনেক বন্ধুদের ফোন।কি এক আলসেমীতে পেয়ে বসেছে তাকে।ইচ্ছে হচ্ছে আবার শুয়ে পড়ে এই জায়গায়।বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।কেন যে ঘর বাড়ী মানুষ কিছুই ভাল লাগেনা তার।এক উদাসীন বৈরাগী মন তার ভিতরটাকে যুক্তিহীন ভাবে এলোমেলো করে ফেলে কিছুক্ষনে।

সংসার,ঘরবাড়ী,পরিবার,প্রিয়তি কোন কিছুতে যেন তার দরকার নেই।

এই কাশবন টা তার ঘরের মত ই হয়ে গিয়েছে যেন।

বিকাল পেরিয়ে সন্ধা এখন রাত দশটা।ফোনটা বেজে উঠল আবার।প্রিয়তী।হতাশ হয়ে ফোন ধরল।ওপাশ থেকে প্রিয়তীর ফূফিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে বিবেকের দংশনে লাপ দিয়ে উঠে দাড়াল।

তুমি এমন কেন? প্রিয়তি ফুফিয়ে কেদেই চলছে ক্র্মাগত।

আসছি এখনই আমায় মাপ কর।

মুক্তি নাই এই শাসরুদ্ধকর ভালবাসা এই বন্ধন থেকে।

সমাপ্ত।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত