-আচ্ছা শুনছো
-হুম বলো
-আমাকে এক জায়গায় যেতে দিবে?
-কোথায়?
-আমার চাচাতো বোনের বাড়িতে
-হুম যেতে পারো কিন্তু যাবা কেন?
-পিঠা দিতে যাবে আমাদের বাড়ি থেকে সবাই যাবে, বিয়ের সময় তেমন অনুষ্ঠান হয়নি তাই এখন একটা অনুষ্ঠান করবে।
-তাহলে যাও, সমস্যার কি আছে!
-আমি কি বোরকা পড়ে যাব?
-বোরকা পড়তে হবে এমন কোন কথা না, তবে হিজাব করবে অবশ্যই। কেউ যেন কুনজরে তোমার দিকে না তাকায়, বুঝছো?
-হুম, আমি মা-বাবার সাথেই থাকবো সব সময়।
-কচু থাকবা, জানিতো!
-কি?
-অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলবা
-জী না।
-কচু
-ভিটামিন এ আছে
-আচ্ছা টিয়া পাখি আমি হারিয়ে গেলে কখনও তুই তখন কি করবি?
-কি আর করবো খুঁজে নিয়ে আসবো।
-না পেলে
-পাবো অবশ্যই
-তোর মাথা
-তুই কি করবি আমি হারালে?
-তুই হারাবি না কখনও তা আমি জানি।
-হুম
-কি?
-বুঝে নেও
-বুঝিয়ে দেও
-তুমি না বুঝো আমাকে কত! এটা বুঝ না!
-বুঝি তো।
-বলো তাহলে এখন
-বলবোনা
-জানলেই না বলবে!
-বলবো?
-হুম বলো
-তুমি আমাকে ছেড়ে যাবেনা কখনও, যতই ভুল আমি করিনা কেন।
-আর কিছু না?
-আর কি?
-হুম বলো
-আমাকে খুব ভালোবাসো
-আর
-তোমার খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন আমাকে
-হুম, এতক্ষণ লাগলো বলতে এটা
-আসলেই দেখতে ইচ্ছে করছে এখন আমাকে
-তুমি আসলে একটা হাঁদারাম, বুঝেও বুঝো না
-চলে আসি এখন তাহলে তোমার বাড়িতে
-আসো, আমি লাল শাড়ি পড়ে বসে আছি। নিয়ে যাও আমাকে
-তো এনে কি খাওয়াবো তোমাকে?
-হুম, তাহলে এসো না
-তখন তোমাকে ছেড়ে থাকতে পরে আরও কষ্ট হবে
-তাই বলে দেখা করবোনা, তা কি হয়!
-তাহলে আর কি করার এসে দেখে যাও
-হুম
-কি?
-আসতেছি
-পাগল হইছো তুমি!
-হ্যাঁ
-এতো রাতে আসতে হবে না
-না আসবোই, তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে এখনই
-এখন বের হলেই কি দেখতে পারবে? আমার কাছে আসতে আসতে সকাল হয়ে যাবে। আর এখন বেড় হতেও পারবে না, মা কে কি বলবে তুমি।
-আচ্ছা যাও আসবো না, আসতামও না।
-জানি তো
-তো গাধীঁর মতো বুঝালে কেন?
-আমাকে গাধীঁ বললা কেন?
-আমাকে যে হাঁদারাম বলো!
-হাঁদারামকে তো হাঁদারামই বলবো
-তাহলে আমিও গাধীঁকে গাধীঁ বলবো
-যাও আড়ি কথা বলবোনা তোমার সাথে, আড়ি আড়ি আড়ি।
এ বলেই শিরিন ফোন কেটে দিলো। শিশির এরপর দশটা ফোন দিলো কিন্তু ও ধরছেই না। অনেক মেসেজ পাঠিয়েও শিরিনের কোন রিপ্লাই পেল না।শিরিন সব সময় এরকম অল্পতেই অভিমান করে। ঐ রাত এভাবেই কেটে গেলো তাদের।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শিশির দেখলো সতেরটি মেসেজ আসছে ফোনে আর তিনটি কল। আর সবই শিরিনের ফোন থেকে আসছে। মেসেজগুলো ঠিক এমনই –
“কি হইছে বলোতো? আমি তো ঘুমিয়ে গেছিলাম! ”
“আমি দুষ্টামি করে বলছি আড়ি ”
“তুমি এমন কেন? দুষ্টামিও বুঝতে পারছোনা? ”
“এই যে কি হলো? ”
“ঐ”
“রিপ্লাই দেওনা কেন? ”
“ফোনটাও ধরে না”
“রাতে তুমি অনেক কষ্ট পাইছো তাইনা? ”
“সরি ”
“আই লাভ ইউ ”
“আমার কান্না পাচ্ছে খুব ”
“কান ধরছি আর কষ্ট দিবোনা ”
“এই কথা বলোনা একটু ”
“কি হলো? ”
“আমার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করছে ”
“কাঁদতেছি আমি ”
“খুব খারাপ লাগছে ”
” চাতক হয়ে ডাকছি তোমায় আর দিলেনা সাড়া
ভেবে দেখ ক’ফোটা জল
করলো সাথী হারা।”
মেসেজ পড়েই শিশির ফোন দিলো। শিরিন কেটে দিলো। একটু পর শিরিন নিজেই শিশিরকে ফোন দিলো।
-কাঁদছো তুমি?
-হুম
-আমি ঘুমিয়ে ছিলাম
-জানো না, সকালে আমি তোমার রিপ্লাই না পেলে অনেক কষ্ট পাই।
-ঘুমিয়ে ছিলাম, টেরও পাইনি
-শয়তান আমাকে শুধু কষ্ট দেয়।
-তাই বুঝি!
-হুম
-কি করবো এখন কষ্ট দিলাম যে?
-তুমি কষ্ট দেও, মার দেও, কাঁটো আমার কিছু হবেনা ;শুধু আমাকে কখনও ছেড়ে যেওনা। তুমি ছেড়ে গেলে বাঁচবোনা আমি।
-তোর হাত দে তো একটা, একটু ধরি
-কি করে দিবো?
-দে তো
-কল্পনা করে নেও দিলাম, নেও ধরো
-আই লাভ ইউ
-লাভ ইউ টু
-আচ্ছা তুমি কি আমার গার্লফ্রেন্ড?
-না
-তাহলে কি?
-কিছুনা
-বউ?
-হুম
-বিয়েই তো করলাম না এখনও
-এখন করি চলো
-ফোনে
-হুম, কাজী কোথায়
-কেউ লাগবে না
-বলছে তোমাকে
-হুম…আমি সজ্ঞানে শিশির আহমেদকে স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম; কবুল, কবুল, কবুল। তুমি বলো।
-কবুল, কবুল, কবুল।
-আমার মতো করে বলো
-আমি সজ্ঞানে শিরিনকে বউ হিসেবে মেনে নিলাম ;কবুল, কবুল, কবুল।
-হয়ে গেলে আমার বর
-খুশি
-হুম
-তুমি খুশি হওনি?
-হুম…এখন
-কি?
-কিছুনা
-তুমি না!
-কি?
-খুব দুষ্ট!
-কেন?
-হইছে, সব বুঝি আমি হুম
-আচ্ছা আমাদের ছেলে মেয়ের নাম কি হবে?
-তুমি বলো?
-মেয়ে হলে শাহানা রাখবো
-না, আভামনি হবে মেয়ের নাম
-ছেলের নাম কি?
-তুমিই দেও এটা
-শিহাব হলে কেমন হয়
-হুম ভালো নাম।
-তাহলে আমাদের বড় মেয়ে আভামনি আর ছোট ছেলে শিহাব।
-হুম। তুমি ওদের বাবা
-আর তুমি?
-আমি ওদের মা।
-ওদের দিকে খেয়াল রেখো সব সময়।
-আমিতো ওদের জন্যই বেঁচে আছি। না হয় তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে মরেই যেতাম।
-এ জন্যেই ওদের উপহার দিছি তোমাকে
-তোমার কোন দায়িত্ব নাই? আবার বাবা হইছে, দূরে দূরে থাকে।
-হুম নিজের পায়ে দাড়ালে তোমাদের নিয়ে আসবো।
-তোমার ছেলে পাপাম গাড়ি চায়।
-কিনে দেও
-হুম টাকা কে দিবে, তুমি?
-হুম, বাপ হইছি দিতে তো হবেই।
-তো কে দিবে। আমাকে তো চাকরি করতে দিবেনা তাই তোমাকেই দিতে হবে।
-দিবো
এভাবেই চলছে শিরিন আর শিশিরের সম্পর্ক। হয়তো দুজন দেশের দুপ্রান্তে কিন্তু তাদের অস্তিত্ব যেন একসাথে মিশে আছে। তাদের বিয়ে, সংসার, ছেলে মেয়ে সব আছে তবে কল্পনায়। অথচ তাদের কাছে সবই বাস্তব। শিরিন তো সারাদিন কাটায় আভা আর শিহাবকে নিয়ে। নিজে নিজে ওদের সাথে কথা বলে।
যদিও তাদের সম্পর্কের শুরুটা এভাবে হয়নি। সম্পর্ক হবে তা কেউ ভাবেনি। শিরিন আগে থেকেই শিশিরকে ভালোবাসে। অনেক ভাবেই শিরিন শিশিরকে ভালোবাসে তা বুঝানোর চেষ্টা করতো। শিরিন কবিতা লেখে শিশিরকে নিয়ে। মেসেজে অনেকবার আই লাভ ইউ বলতো। কিন্তু যখন শিশির জিজ্ঞেস করতো শিরিন তাকে ভালোবাসো কি হিসেবে তখন শিরিন বলতো ভাই হিসেবে। এ কথা শুনে শিশির আর এসব নিয়ে ভাবতো না। তবে তাদের সম্পর্কটা ছিলো অনেক কাছাকাছি। প্রায় সারাদিনই যোগাযোগ থাকে।
হঠাৎ একদিন কোন এক কারণে শিশির শিরিনের উপর খুব বিরক্ত হয়ে গেছিলো। শিশির শিরিনকে অনেক কথা বললো আর তখন শিরিন বললো লিমিটেশনের কথা। তখন আর কি শিশিরের মাথা আরও গরম হয়ে গেলো।
-আমার যখন তোমার উপর কোন অধিকার নেই? একটা লিমিটেশন আছে তখন আর আমার সাথে কথা বলার কি দরকার? যাও আর কথা বলবোনা তোমার সাথে।
-কি বললে! ফোনটা ধরো একটু
-না
-প্লিজ ধরো
-না বলছিনা
-প্লিজ, খুব কাঁদতেছি আমি।
-পরে বলবো
এরপর শিশির একটু শিথিল হলো। ভাবলো শিরিনকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। শিশির ফোন দিয়েছিল।
-হ্যালো
-হুম(খুব কেঁদে কেঁদে বলছিলো শিরিন)
-কাঁদছো কেন?
-তুমি বলছো কেন আর কথা বলবে না
-আমার যেখানে অধিকার নেই, সেখানে আমি থাকবোনা।
-কে বলছে অধিকার নেই? তোমার আমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
-হইছে তো। কাঁন্না থামাও
-না….পারছিনা
-এতো অধিকার দেও কেন আমাকে
-জানিনা, কিছুই বুঝো না তুমি!
-আচ্ছা সব বুঝি, তুমি কাঁন্না থামাও। আমার ক্লাস আছে এখন, রাখি
-আচ্ছা
শিরিন এরপর বসে বসে অনেক কাঁদলো। শিশির তখন মেসেজ করে ওকে বললো সে পাশে থাকবে শিরিনের। শিরিন যেন কাঁন্না থামাতে পারছেনা। ক্লাস শেষে শিরিন ফোন দিয়েছিল, কিছুক্ষণ কথা হলো। এরপর রাতে শিশির আর শিরিন চ্যাট করছিল।
-আচ্ছা এভাবে কাঁদলে কেন আজ?
-এমনি
-তোমার মনে আছে তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার পরদিন কি যেন বলছিলাম আমি আর তুমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফোন দিছিলা।
-হুম
-তোমার সাথে আমার পরিচিত হওয়াটাও তো অদ্ভুত।আমি যদি তোমার ঐ হাসির ছবির প্রোফাইল দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পাঠাতাম তাহলে আমাকে তুমি কোথায় পেতে।
-সবই আল্লাহর ইচ্ছে
-ভালোবাসো আমাকে
-হুম
-সত্যি সত্যি
-হুম, তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি বাঁচবোনা
-বউ হবে আমার?
-হুম হবো
-বলো তাহলে
-আই লাভ ইউ
-আই লাভ ইউ
-হয়ে গেলো?
-কি?
-আমার বউ
-আমার বর
-আচ্ছা ঘুমাও এখন রাত কটা বাজে দেখছো
-হুম তিনটা
-ঘুমাও এখন, গুড নাইট
-গুড নাইট
হয়তো তাদের ভালোবাসা অন্য আট দশটা মানুষের মতো না। সবার থেকে ভিন্ন। কেউ কারও হাত স্পর্শ করা দূরে থাক, সরাসরি দেখাটাও হয়নি আজও। শুধু দূর থেকে ছবিতে দেখা হয় দুজনের। তারা কেউ কাউকে প্রেমিক বা প্রেমিকা বলেনা। বর আর বউ বলে সম্মোধন করে। হয়তো আজকাল এমন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। এতো পবিত্রতা জুড়িয়ে আছে এই সম্পর্কটিতে যা সত্যিই ইতিহাস হওয়ার যোগ্যতা বহন করে। চলুক তবে তাদের ভালোবাসা। জয় হবে তাদের ভালোবাসার একদিন। আভামনি আর শিহাব সত্যিই বাস্তবে দেখতে পাবে এ পৃথিবীকে, সেই আশা করাটা তবে অনুচিৎ নয়।।