ধীর পায়ে এগুচ্ছি, কারন আমার কোন কাজ নেই।
ঐযে তড়িঘড়ি করে রাস্তাঘাটে যারা হাটছে তাই বলে যে সবাই ব্যস্ত কর্মজীবী মানুষ তা নয়।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে আর যাতে এই বৃষ্টিতে শরীর না ভিজে এটাই হচ্ছে তাদের তড়িঘড়ি করে রাস্তা পার হওয়ার কারন।
-এই তুই ভিজতেছিস কেনো?
শাহানা খালা ছাতা মাথায় আমার
সামনে এসে প্রায় চেঁচিয়ে বলল কথাটা।
-কে আপনি?
আমি না চেনার ভান করলাম। খালার মুখের দিকে চেয়ে দেখি খালা প্রায় বিস্মিত হয়ে গেছেন আমার কথা শুনে।
শাহানা খালা ঘাবড়ে গেছেন, আমাকে ভালভাবে দেখছেন-
-তুই নিরব না?
-না ত, আমি উদয়।
-মশকরা না, তুই ত জানিস আমি ধুরন্ধর মশকরা পছন্দ করিনা।
-কিভাবে জানব?
-সত্যি তুই নিরব না?
-জি না আমি উদয়।
-ও আচ্ছা দাড়া এখানে একটু। আমি একটা কল করব।
-দাঁড়াতে পারবনা, আপনি চাইলে আমি অপেক্ষা করতে পারি।
খুদা লাগছে ঐ হোটেলটাতে চলেন।
-আচ্ছা আয়।
শাহানা খালাকে নিয়ে “মোবারক মিয়ার শাহী বিরিয়ানি হাউজে ” ঢুকলাম।
একপ্লেট গরম তেহারীর, আর ডুইটা কোল্ড মাঠার অর্ডার দিলাম। এই দোকানের ম্যানেজার আমাকে চেনে,
সে এগিয়ে এল আমার টেবিলে।
-হে হে, ভাইজান মেলাদিন বাদে আইলেন।
-খুব ব্যস্ত থাকি ভাই তাই আসা হয় না।
-ভাই কি অর্ডার দিসেন কিছু?
-হা,
আচ্ছা মাঠা যেন স্পেশাল হয় গেষ্ট আছে আমার। আমি উনারে আপনার দোকানের মাঠা খাওয়ানোরর জন্য নিয়া আসছি।
-চিন্তা করবেন না, নিজ হাতে নিয়া আসতাছি ভাইজান। আপনার গেষ্ট মানে আমার গেষ্ট। মোবারক মিয়া প্রায় ছুটে গেলেন রান্নাঘরের দিকে।
আমি শাহানা খালাকে খুঁজতে লাগলাম।
দোকানের বাইরে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়া মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে।
যেভাবে হাত নাড়াচ্ছেন যদি অপর প্রান্তের লোকটি দেখত তবে ভয় পেয়ে যেত।
দেখে মনে হচ্ছে হাতের ক্যারাতে করছে। আচ্ছা,
খালা এতসময় নিয়ে কার সাথে কথা বলছে?
মোবারক মিয়া ক্যাশ এর সিটে বসে আমার খাওয়া দেখছে। কেন জানি মনে হচ্ছে উনি আমার উপর নযরদারী করছে,
যাকে বলে কড়া নযরদারী।
খাওয়া শেষে খালা আসল।
-পেট ভরে খেয়েছিস?
-জি, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।
-কই থাকিস তুই?
-রাস্তাঘাটে।
-থাপ্পড় দিয়া তোমার হিমু গিড়ি ছোটাব।
ফাজিল পোলা।
আমি আশে পাশে তাকিয়ে বললাম –
-আমাকে বলছেন?
-নাহ, এইযে মোবারক মিয়া।
মোবারক মিয়া ক্যাশিয়ার ছেড়ে দৌড়ে আসল।
-জি, বলেন।
-দড়ি হবেনা আপনার কাছে?
-জি হবে ত।
-নরমাল না, লাইলনের দড়ি।
-অবশ্যই হবে। গরু বাধার জন্য কিনছিলাম ঐটা আনব?
-যাও নিয়া আসো।
আমি উনাদের কথা বার্তা শুনছি আর কোল্ড মাঠায় চুক চুক করে টান মারছি। এমন সময় কোর্ট টাই পড়া এক লোক হোটেলে ঢুকল।
বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি পড়ছে। মোবারক মিয়ার হোটেলটার চাল টিনের, দারুণ আওয়াজ হচ্ছে যা ইট সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই
করা ছাদে পাওয়া যায় না।
-নিরব বাসায়
চলো।
আমি কোর্ট টাই পড়া লোকটার দিকে তাকালাম, আমার শ্রদ্ধেয় আব্বা জান দাঁড়িয়ে আছেন।
-অনেক
ছেলেমানুষি করছো এখন বাসায় চলো।
একসপ্তাহ ধরে তোমার মা কেঁদেইই যাচ্ছে তোমার জন্য।
-কে আপনি?
আমি শাহানা খালার সাথে যেভাবে কথা বলেছিলাম সেইভাবে বাবার সাথে বলার ট্রাই করলাম। বাবা এই কথা শুনে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে।
আমি আর কিছু বললাম না। মোবারক মিয়া লাইলনের গরু বাধার দড়ি নিয়ে হাজির।
শাহানা খালা বলল-
-দুলাভাই বলছিলাম না আমাকে ও এই কথা বলছে ও।
এইযে দড়ি আনা হইছে ওরে বেধে বাসায় নিয়ে চলো।
আমাকে বাধার জন্য ড্রাইভার মকবুল ও হোটেলে এসে গেছে। মোবারক, বাবা,মকবুল তিনজন রেডি আমাকে ধরতে। বাইরে বৃষ্টির বেগ যেন আরো বেড়ে গেলে।
আমি হোটেলের জানালা দিয়ে তাকালাম, আষাঢ়ের আকাশ ভাঙা বৃষ্টি যেন দু হাত তুলে ডাকছে। মকবুল দরজার সম্মুখে ছিল, আমি তাকে বললাম –
-মকবুল, এতো বড় হইছ অথচ প্যান্টের জিপার খুলে হাটো।
মকবুল ততখনাত নিচে তাকাতেই আমি ভো দৌড় দিলাম। এক দৌড়ে মোবারক মিয়ার হোটেলের বাইরে।
দারুণ বৃষ্টি হচ্ছে ইংরেজিতে যাকে বলে cats and dogs। আষাঢ়ে র বৃষ্টির তুলনা হয় না।
অন্ধকারকরে ঝরে পড়ে বৃষ্টি কণা।
আমি ভিজে যাচ্ছি, দৌড় থামিয়ে হাটছি এখন। মা খুব কাদছে একবার দেখা করতে হবে, কিন্তু…… হিমুদের তো স্বজন প্রীতি থাকতে নেই। পার্থিব ভালবাসা হিমুদের স্পর্শ করতে পারেনা।
আমি বৃষ্টি ঝরা আকাশের দিকে বলতে লাগলাম-
ও বৃষ্টি কণা ধুয়ে দাও, মুছে দাও তোমার জলে নগরীর প্রতিটি মানুষের নীল কষ্টগুলি।