লুডু

লুডু

মৌ আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বললোঃ-
– কিভাবে?
নিজের মাথাতেই এখন কিছু ঢুকছে না। সবকিছু কেমন যেনো কালো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ভাবছি একবার পুলিশের কাছে যাবো। গিয়ে দেখিই না কী হয়।
তাছাড়া আমি যে ফারায না তা পুলিশের কাছে গেলেই প্রমাণ হয়ে যাবে। তাহলে মৌও নিশ্চিন্ত হবে। মৌকে বললামঃ-
– কালকে চলো থানায় যাবো। সেখানে গিয়ে সব খুলে বলবো। তাহলেই তো প্রমাণ হয়ে যাবে, আমি কে? 
মৌ চোখের পানি মুছতে মুছতে বললোঃ-
– একবার না বলেছি আপনাকে পুলিশ ধরবে না। কারণ আপনাকে তো মন্ত্রি-মিনিষ্টারেরাই লালনপালন করে।
মৌ মনে হয় শতভাগ ধরেই নিয়েছে যে আমিই ফারায। এই হলো আমার কপাল। মানুষ বিয়ের পরে হানিমুনে যায় আর আমার প্রমাণ করতে হবে যে আমি একজন কিলার না।
না হলো বিড়াল মারা। না হলো অন্য কিছু। এখন নিজেই মরার অবস্থা। ডায়েরীটা দেখে তো আমার নিজের কাছে এক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছে আমিই লিখেছি সব।
সম্পূর্ণ আমার হাতের লেখার মতো। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। না ঘুমুলে ঠিক হবে না বুঝতে পারছি। মৌকে রেখে খাটে হাত পা ছেড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
অনেক্ষণ হলো ঘুমিয়েছি মনে হয়। মৌকে নিয়ে বাসর রাতে লুডু খেলার কিছু মুহূর্ত চোখে ভাসছিলো। কিছু একটা তো হচ্ছে আমার সাথে। কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা আমার কোনো যমজ ভাই ছিলো না তো? ধুর কী যে বলি। একবার মাকে জিজ্ঞেস করে দেখা যাক। মায়ের রুমে গেলাম। মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
মা আমাকে দেখে কাঁদতে আরম্ভ করলো। এখন রাগই হচ্ছে। জীবনে একটা মাছিও মারতে পারলাম না আর এখন হয়ে গিয়েছি প্রফেশনাল কিলার।
মা কেঁদে কেঁদে বললোঃ-
– আর লুকিয়ে কী হবে বাবা? শিকার কর সবকিছু।
চোখ কপালে উঠলো আমার। বললামঃ-
– মানে? কী লুকাচ্ছি, কী শিকার করবো?
মা আর কিছু বলছে না। আজব কথা! মাও ধরেই নিয়েছে আমিই ফারায। কী যে করি বুঝতে পারছি না। বললামঃ-
– আমার কী কোনো যমজ ভাই ছিলো?
মা মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ছিলো না। না এবার পুলিশ নাহয় কোনো মানসিক ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। নাহলে এভাবে কদিনে চলতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো নিশ্চিত।
বলতে না বলতে মৌ একটি ফ্যামিলি এলবামের ছবি হাতে করে নিয়ে এসে হাজির। মৌয়ের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখতে পাচ্ছি। ভালো লাগছে।
কিন্তু ছবি দেখে যেনো আকাশ থেকে পরলাম! বাবা মার পাশে শুধু আমি না! আরেকটা আমি! দুজনে দুজনের কাঁধে ধরে আছি।
তাহলে কী আমার সত্যিই যমজ ভাই ছিলো? মা ছবিটি দেখে স্থীর হয়ে রয়েছে। মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছে না। আমার নিজেরও মনে হচ্ছে না যে আমার কোনো ভাই ছিলো। কিন্তু ছবিটা তো বলছে ভাই ছিলো!
মায়ের কান্নার পিছনে খুব বড় রহস্য আছে বুঝতে পারছি। কিন্তু এর থেকেও বড় রহস্য হলো যে মৌ কিছুক্ষণ আগেও মা কালির রূপ ধারন করে ছিলো সে কী না এখন লজ্জাবতী হয়ে গেলো! সব কিছুই যেনো উল্টাপাল্টা হচ্ছে।
মৌ আমাকে নিয়ে আমাদের রুমে আসলো। দুষ্টুমিষ্টি হাসি! রহস্যময় চোখ! আমার কেমন জানি লাগছে। লজ্জা মাঁখা চাহনী দিয়ে হাতদুটো ধরে বললোঃ-
– চলেন এখন লুডু খেলবো।
আমি অবাক হয়ে বললামঃ-
– তোমার কী হইছে একটু বলা যাবে? কিছুক্ষণ আগে বলছো, ডিভোর্স চাই। এখন আবার লুডু খেলতে বলছো।
– এতো কথা শুনায়েন না তো। যা বলেছি তাই করেন।
এ কীরকম আচরণ রে বাবা? নরম স্বরে বললামঃ-
– লক্ষ্মী, ফারাযের রহস্যটাই আমার মাথা সামলাতে পারছে না। আর তোমার রহস্য কিভাবে সামলাবে? বলো না কাহিনী কী?
মৌ শুধুশুধু চোখ মুছতে মুছতে বললোঃ-
– আরেকটা কথা বললে কিন্তু কান্না আরম্ভ করে দিবো হুম। 

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত