আধাবেলা প্রেম

আধাবেলা প্রেম

বনলতা ফড়িং কে অবহেলা করে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফড়িং তাকে খুঁজে ফিরে পথ থেকে পথে, দূর থেকে দূরে, দিনের পড়ন্ত রোদে কিংবা চিরন্তন অগ্নিশিখায়। শহর থেকে কিছুটা দূরে বনলতার তিন রুম আর ছোট্ট বেলকনির ঘর| কাঠের দোতলা বাড়িটা স্বর্গীয় বাবা শখ করে বানিয়েছিলেন বনলতার জন্য| এখন বনলতার বয়স ৩৫, একজন অবিবাহিত আইবুড়ো মানবী| পেশায় গোয়েন্দা অফিসার তবে ছদ্মবেশে স্কুল শিক্ষিকা। ফড়িং আদর করে তাকে লতা বলে ডাকে। লোকের কথাথেকে বনলতা অনেকটা মুক্ত| কারন বনলতা কে বৃষ্টি অনেক ভালবাসে| বনলতার যখনই ইচ্ছে হয়, বৃষ্টির কাছে প্রার্থনা করে, আর তখনি রিমঝিমিয়ে ঝড়ে পড়ে লতাসক্ত বৃষ্টিরা| প্রতিদিন সন্ধায় লতা অনেক কাঁদে, কারন সকাল থেকে ফুটে থাকা ফুলেরা চোখের সামনে মরে যায়।

সেই ভোর থেকে ফুটন্ত ফুলেরা। যারা সূর্যের দিকে তাঁকিয়ে কবিতা লিখে, সূর্যের মুখোমুখি দিক বদল করে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। যাদের বলে সূর্যমুখী ফুলের দল। লতা আজ বড়ই একা। ফড়িং অনেকদিন তাকে চিঠি লিখেনা, লিখেনা প্রেমের চিরকুট।
আজ আটই ফাগুন ১৪২২ বঙ্গাব্দ। অনেকদিন পর তাদের মধ্যে কথা হল। লতা ফোন ধরেই কেঁদে চোখ ভাসালেন। লতার মনে যন্ত্রণা দায়ক প্রেম দাউ দাউ কর জ্বলছে। যেন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা। তারপর লতা চশমাটা খুলে চোখের কোণে জমা থাকা জল মুছলেন ফড়িঙের উপহার দেয়া রুমাল দিয়ে। অতঃপর এক দীর্ঘস্বাসে দুজনের প্রণয়ের কথার জবাব মেলে। লতা অবচেতন মনে বায়না ধরে আর ফড়িং কে দেখা করতে বলে আজ। কিন্তু বেপরোয়া ফড়িং কোন মতেই সম্মুতি জ্ঞাপন করছে না। তবে আজ যেহেতো তার প্রেমিকা বায়না ধরেছে তাই লতাকে যাবে বলে আশ্বাস দেয় তার বাবার তৈরি তিন রুমের কাঠের তৈরি দুতালা বাড়িটিতে। ফড়িং ভাবে সে একজন ভাগ্যবান প্রেমিক। ফড়িং তার বনলতা কে নিয়ে কবিতা লিখে, তাদের প্রথম দেখায় লতার কাছ থেকে উপহার পাওয়া ধূসর বাদামি রঙের ডাইরির পাতায়, ভাবে লতাকে দেখেই সে এটা দিবে।

“বনলতা আমি সহস্রবার আকাশ পানে তাঁকিয়েছি
তুমি নেই বলে,
তোমার জন্য বাসর সাজায় খরগোসের দল,
ছোট ছোট বন্য খরগোস
সাদা, নীলছে আর হলুদ
তারা রোজ আমার কাছে আসতো
তোমার খুঁজে, তোমার কবিতা শুনতে, তোমার প্রেম বরফের মত শীতল,
মৃত্যুর মতই যন্ত্রনাদায়ক তোমার নিরবতা।”

সন্ধার সরল রেখা মিলিয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এ শহরের স্নিগ্ধ গাঙচিলেরা ঘরে ফেরে ঠিক সেই মুহুর্তে
ফড়িং আসে লতার কাঠের তৈরি দুতালা বাড়িটায়। দরজা খুলে লতার হাতটা দেখে ফড়িং।
সেখানে বড় করে লেখা-
“এতদিন কোথায় ছিলে?”
এবার বনলতার দিকে তাকায় ফড়িং, অনেকদিনের জমানো ইচ্ছের ভিড়ে প্রশ্ন করে ফড়িং। একি লতা এভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছে কেন!

ফড়িং কাছে গিয়ে আলতো করে গালে হাত রাখে লতার| দক্ষিণা বাতাসে লতার মাথার লম্বা চুলে ডেকে যায় ফড়িং এর মুখ। একদম বরফের মত শীতল গাল বুঝিয়ে দেয়, ভাগ্যবান প্রেমিক হয়েও ভাগ্যের পরিহাসের নির্মম শিকার ফড়িং আজ। শুধু বলল, “বনলতা এতদিন অবচেতন ছিলাম, আজ জেগেছি তোমার দুদন্ড শান্তির আশায়, তবে তুমি কেন অবচেতন হয়ে গেলে??”

ফড়িং আজ বনলতার কাছে প্রেমের আসামী তাই বনলতা কিছু না বলেই বা-ড্রয়ারে থাকা রিবালবারটা হাতে নেয়, তখন পিচাশের রাজরানী আর নরকের দেবী ক্যাথরিনের রুপ নেয় বনলতা।

আর তখন সে অভিমানে তাতক্ষনাৎ ট্রিগার টেনে বুলেট ছুড়ে ফড়িং এর বুকে। ফড়িং নিছে পরে যায়। অবশেষে প্রেমিকার বুলেটে নিজেকে বিসর্জন দেয় ফড়িং। সমাপ্ত হয় আধাবেলা প্রেমের সব লেনদেন। থাকে শুধু অন্ধকার। আর তখন চারদিক নিস্তব্ধ অন্ধকারে প্রতিধ্বনি,

“এতদিন কোথায় ছিলে?”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত