-আমাকে ডিভোর্স দেও।
-কেন?
-আমি বলছি তাই।
-না দিবোনা
-দেও
-বললাম না দিবোনা।
-দিতে বলছি তোমাকে।
-না
-কেন?
-তুমি দেও তাহলে, আমার এতো ইচ্ছে নেই
-না, তুমি দিবে
-আমি দিলে মোহরানার টাকা তোমাকে দিতে হবে
-ও এই কথা
-হুম
-এক টাকা দেন মোহরে বিয়ে করছে, তাই দিতে চাওনা।
-এখন তো এক টাকার নোট নাই, আর পয়সাও তেমন পাওয়া যায় না।
-তাই তুমি ডিভোর্স দিবেনা
-হুমম
-তাহলে তো কখনোই ডিভোর্স দিতে পারবেনা
-হ্যাঁ, এই জন্যই এক টাকা দেন মোহরে বিয়ে করছি
-শখ কতো
-কিসের শখ?
-বউ রাখার
-হুম
দুজনের অট্টহাসিতে পার্কের একোন ওকোন ফেটে পড়লো।
তিথি আর তন্ময়ের সম্পর্ক আজ প্রায় দুই বছর হলো। নিজেদের মধ্যে দুষ্টুমি করে মিথ্যা মিথ্যা বিয়ে করা, নিজেদের বাবু হয়েছে এমনভাবে অভিনয় করা তাদের সম্পর্কের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। তবে এই অভিনয়কে তারা কখনও অভিনয় ভাবেনি, সব সময় সত্যি সত্যিই ভাবে সবকিছু। আর এই অভিনয়ের মাঝেই কখনো কখনো ঝগড়া, রাগ, অভিমান চলতে থাকে। আর এসবই কখনো কখনো মহা ঝামেলার সৃষ্টি করতো তাদের জীবনে। তবুও তাদের দুজনের প্রচন্ড ভালবাসার ফলাফল সরূপ তাদের সম্পর্ক কখনো ভেঙে যায়নি এক মুহুর্তের জন্যও।
-দেখ তুমি যে কোন সময় আমাকে ফোন দিবেনা, আমার সমস্যা হতে পারে
-কি সমস্যা?
-যখন বাসায় থাকি তখন বাথরুম বা মোবাইলের কাছে না থাকলে তুমি ফোন দিলে অন্য কেউ ধরবে। আর এরপর একটা ঝামেলা হবে। ফোন দেওয়ার আগে জিজ্ঞেস করবে মেসেজ দিয়ে দিবে কিনা। কতো করে বলি তোমাকে হঠাৎ হঠাৎ ফোন দিবেনা।
-ও
-কি?
-কিছুনা
-পেটে কথা না জমিয়ে বের করো কিছু।
-তোমার যখন সমস্যা হচ্ছে আমার জন্য তখন আর ফোন দিতে হবেনা যাও। রাখলাম আর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবোনা।
তিথি প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে ফোন রেখে দিলো। তন্ময়ের কথাই আর শুনলোনা। এরপর তন্ময় মেসেজ করলো।
-জান্টুস এতো রাগ করো কেন?
-মেসেজ করবোনা আর ফোনও দিবোনা
-কেন বাবু?
-এই আমাকে বাবু বলবেনা
-তাহলে টিয়া বলি
-না
-ময়না
-না
-যাদু
-না, কিছু বলতে হবেনা
-কিছুনা এতো রাগ করো কেন?
-আবার ভেঙ্গাও কেন তুমি?
-তুমিই তো বললে কিছুনা বলতে
-ধ্যাৎ, ফোনটাই বন্ধ করে দিবো এখন
-ধ্যাৎ ফোনটা বন্ধ করোনা
-দেখো, রাগাবেনা কিন্তু
-ওকে ওকে বউ
-আমি কারও বউ না
-তাহলে গার্লফ্রেন্ড
-না
-তাহলে বউফ্রেন্ড
বউফ্রেন্ড শুনে তিথি হেসে উঠলো। কিন্তু তন্ময় তা জানেনা, মেসেজের মাধ্যমে কথা হচ্ছিল তাই।
এরপর কয়দিন কেটে গেলো। এমন রাগ-অভিমান, খুনসুটির মধ্য দিয়ে। ইতিমধ্যেই তাদের দেখা করার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
কিছু একটা বিষয় নিয়ে তন্ময় খুব রেগে গেছে। তন্ময়ের একটা সমস্যা ছিলো, তিথিকে কখনও আদর দিয়ে বুঝাতে পারে না। সব সময় রাগ দেখিয়ে, ধমক দিয়ে বুঝায়। আর তিথি তখন খুব ভয় পেয়ে জড়সড় হয়ে বসে থাকে। তন্ময়ের কোন কথার প্রতিবাদ করেনা।
-আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি? তুমি এমন ধরনের ভাবনা কেন ভাবতে যাবে? তুমি কি করে ভাবলে তোমাকে বিয়ে করলে আমি বাপ, মা, ভাই, বোন ছেড়ে তোমার সাথে অন্য বাসায় থাকবো?
-আমি তা বুঝাতে চাইনি?
-কি বাল বুঝাতে চাইছো? এখন তো কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে তাইনা? তুমি কি মনে করছো তোমার সাথে প্রেম করি দেখে কি আমি শুধু তোমার হয়ে গেছি? কক্ষনো না। আমাকে সারাজীবন পালবে বাপ, মা আর ফল পাবে তুমি, এমনটা কি করে ভাবলে। আমি আমার বাপ, মা ফেলে বউ পাগলা হতে পারবোনা। আমি অন্য ছেলেদের মতো বউয়ের আচল ধরে ঘুরবোনা। বুঝলে?
-হ্যাঁ
-পেটে কথা রেখোনা। যা উল্টাপাল্টা চিন্তা আছে সব বলো। আজই সব বমি করে বের করে দেও। এরপর এমন আলাদা ভাবনার গল্প আমার সামনে বলতে এলেই বুঝবে মজা।
-হুম
– তুমি আমার কথা ছাড়া একচুল পরিমাণও নড়তে পারবেনা। আমি যা বলি তাই করবে, এমনকি তুমি যদি দেশের প্রধানমন্ত্রীও হও তাও।
-আচ্ছা
-চুপ হয়ে আছো কেন? আমার মেজাজ কিন্তু আরও গরম হচ্ছে
-আমি কি করবো? তুমি যা বলছো তাইতো মেনে নিচ্ছি।
-কেন তোমার কোন মতামত নাই?
-না।
তিথির চোখ দিয়ে পানি অবিরাম ঝরছে। তন্ময় প্রথমে এতোটা খেয়াল করেনি। যখন দেখলো তিথি কাঁদতেছে তখন একটু ঠান্ডা হলো।
অনেকক্ষণ ধরেই দুজন চুপচাপ বসে আছে। কারও মুখেই কোন কথা নেই।
-আমি গেলাম তাহলে
-কোথায়?
-বাসায়
-ও
-দেখো আমি তোমাকে কি বুঝাতে চাইছি তুমি কি সব বুঝছো?
-হ্যাঁ
-আমি তোমাকে অন্য আট-দশটা মেয়ের মতো ভাবিনা। তোমাকে আমি খুব ভালো ভাবি। মনটাকে ঠিক করো।
-ঠিক আছে
-আমি চাই তুমি বাংলাদেশের জন্য একজন আদর্শ বউ হও। অন্য মেয়েদের কথা কানে নিবেনা। আমি যা বলি তা সঠিক বলি।
-জানি
-তুমি আমার মনের মতো হয়ে উঠবে, প্রমিজ করো
-হুম করলাম
তন্ময় তিথির চোখের পানি মুছে দিতেই তিথি তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
-আমি তোমার থেকে বয়সে ছোট। অনেক কিছু কম বুঝতে পারি। আমাকে বুঝিয়ে বললেই পারো। প্রতিদিন এতো বকা খেতে ভাল লাগেনা। তুমি আমাকে একটুও ভালবাসোনা, শুধু বকা দেও।
-শুধু আদর দিলেই ভালবাসা হয়না, শাসন খুব জরুরি
-বলছে তোমাকে
-হুম
তন্ময় তিথিকে নিয়ে রিকশায় উঠলো। তিথিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে আসলো।
রাতে তিথি তন্ময়কে ফোন দিলো।
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
-কি কথা?
-চুপ হয়ে শুনবে
-আমি এইচএসসি পরীক্ষার পর বেঁচে থাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এতো অসুখে আর বাঁচতে ইচ্ছে করছিলোনা। কিন্তু তখনই তোমার আবির্ভাব হলো। আমি প্রথম থেকেই তোমাকে খুব ভালবাসি। কখনো বলতাম না। তোমার জন্যই নিজের মনটাকে ঠিক করলাম, ঠিকমতো ওষুধ খাওয়া শুরু করলাম, পড়াশোনায় মন দিলাম। তোমার জন্য আমি নিজেকে এতোটা বদলে নিলাম, আর তুমি আমি একটু ভুল করলেই শুধু বকা দেও। আমি আর ঠিকমতো থাকবোনা। সত্যি সত্যি মরে যাবো।
তিথি কান্নাকাটি শুরু করলো।
-আহা কেঁদোনা তো
-আজ কতদিন হলো আমাকে আদর করেই ডাক দেওনা। পাখি, টিয়া, ময়না, কলিজা বলে ডাকোনা।
-আচ্ছা বাবু এখন আবার ঠিক হয়ে যাও। কেঁদোনা আর
-আমি মুখে তোমার কথা শুনবোনা বললেও যখন তখন তুমি যা বলো তাই করি।
-ওরে আমার টিয়া, ময়না, পাখি
-থাক আর আদর দেখাতে হবেনা, তুমি যাও খেয়ে নেও
-তুমিও খাও।
তিথি আর তন্ময়ের সম্পর্কটাই এমন। এতোসব ঝামেলা হওয়ার পরও একদম আগের মতো ঠিক হতে এক সেকেন্ড সময়ও লাগেনা। হয়তো এর নামই ভালবাসা।
তিথির উপর তন্ময়ের অধিকার বউয়ের মতোই কিন্তু পারিবারিক ভাবে মিলিত হয়নি এখনও তাই একে অপরের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দ্বারা এখনও আবদ্ধ হয়ে আছে। যে বন্ধুত্বকে কেবল বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে অনুধাবন করলে ভুল হবে। তাই তন্ময়ের সাথে তিথির সম্পর্ককে “বউফ্রেন্ড” বলেই প্রচলন করা যায়।