তখন ভরা সভা । দ্বাররক্ষীকে প্রায় ঠেলে ঠুলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ধীতিকুমার । মহারাজ সঞ্জীবনের উদ্দেশ্যে বলল – মহারাজ, আমি আপনার সন্তান । এ রাজ্যের রাজকুমার । দেশের কিছু মঙ্গলে নিয়োজিত হতে চাই ।
মহারাজ সঞ্জীবনের সাথে সাথে নিস্তব্ধ হয়ে গেল সভা । মন্ত্রী লেহনকটি কিছু আন্দাজ করেই নেমে পড়ল মাঠে – রক্ষী , একে অবিলম্বে গ্রেফতার কর ।
ধীতিকুমারকে বেঁধে ফেলা হল । কিন্তু কথার কি হবে ? বিদূষক প্রজ্ঞানক উঠে দাঁড়ালেন – মহারাজ আমাকে ক্ষমা করবেন , বালক যখন বলছে তখন সত্যতা যাচাই করা হোক ।
লেহনকটি ফুঁসে উঠেলেন – ভরা সভায় যে এত বড় কথা মহারাজের সামনে বলতে পারে তার গর্দান নেওয়া ছাড়া আর কোন বিচার হয় না ।
গুঞ্জন উঠল সভাতে । মহারাজের অনুমতি নিয়ে মহাধড়িরাম গনৎকার শুরু করল – বালক , তুমি কিভাবে এখন জানলে যে তুমি এ রাজ্যের রাজকুমার ?
– আমাকে ব্যাঙ্গোমা ব্যাঙ্গোমী বলেছে ।
– তুমি এতদিন কোথায় ছিলে ?
– এ রাজ্যের উত্তরপূর্বে আস্তাকুড়ে আমি মাথা গুঁজে ছিলাম । সারাদিন রাজ্যের আলো আঁধারি জঙ্গলে কাটিয়েছি । আর রোজরাতে পরীরাণী আমাকে লালন করেছে । কালরাতে বলেছে – এ রাজ্যের কল্যাণে প্রজার স্বার্থে রাজ্যে ফিরে যাও ।
সব শুনে মহাধড়িরাম কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিল তাই চুপ আর লেহনকটির এক কথা – বেটার গর্দান নিয়ে নাও ।
সভা মুলতুবি । কিছু সঞ্জীবন মহারাজের মনে দুশ্চিন্তা । সুয়োরাণী দুয়োরাণীকে ডাকলেন । সুয়োরাণী তার ছেলে স্নেহকুমারের হয়ে সারা রাজ্য অধিকারে গর্জে উঠল । দুয়োরাণী নিরুত্তাপ – মহারাজ , আমাকে তো কখনও কিছু বলতে দেওয়া হয় নি । বললেও কেউ শোনেনি । শুধু আপনার অত্যাচারের মলম হয়ে ব্যবহৃত হয়েছি । ধীতিকুমার আমার ছেলে । মন্ত্রী লেহনকটি সব জানে ।
এর পর অনেক প্রমাণ সাপেক্ষে ধীতিকুমার স্বীকৃতি পায় । কোন অধিকার সে নেয় নি রাজাও হয় নি । শুধু সে রাজ্যে ব্যাঙ্গোমা ব্যাঙ্গোমী আর পরীরাণীর ঠাঁই হয়েছিল । রাজ্যের আলো আঁধারিও কেটে গিয়েছিল ।