ভাইয়ের কাছে শোনা গল্প। ও তখন মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে বি.এসসি.পড়ত।
আমরা তখন বস্তার জেলার কোন্ডাগাঁয়ে থাকতাম। কোন্ডা গাঁ আসলে ছোট শহর। তখন উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ছিল এখানে,কিন্তু কলেজ ছিল না। কলেজে পড়তে হলে হয়,জগদলপুর নতুবা রায়পুর যেতে হতো। ভাই রায়পুরের এক সাইন্স কলেজে গিয়ে ভর্তি হল।কলেজের হোস্টেলে জাগা না পাবার জন্যে কলেজ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ঘর ভাড়া নিলো।বহু দিনের পুরনো বাড়ি ছিল সেটা।ইংরেজ অমলের বাংলো টাইপের বাড়ি।বিরাট বিরাট ঘর তাতে।ঘরের মাঝখান দিয়ে লন চলে গিয়েছে আর সঙ্গে রাস্তার সামনে দিকে দেওয়াল ঘেরা বিশাল বাগান।তখন অবশ্য ফুল গাছটাছ কিছুই ছিল না বাগানে–তার বদলে ঝোপ ঝাড় জঙ্গলে ভরা ছিল।বাড়ির মালিক অন্য বাড়ি বানিয়ে তাতে বাস করত।এই পুরনো বাংলো বাড়ি ভাড়া খাটত।প্রতি বছরই আট দশজন কলেজ স্টুডেন্ট এতে থেকে পড়াশুনা করত।
যাই হোক,আশীষ,আমার ভাই গিয়ে উঠলো সেই বাংলো বাড়ির এক ঘরে।ঘিঞ্জি শহরের সামান্য বাইরে ছিল বাড়িটা।বাড়িতে তখন পাঁচজন স্টুডেন্ট থাকছে।দুজন দুজন করে দুটি ঘরে,আর ভাই একটা ঘরে একলা।দিনের বেলায় যেমন তেমন সময় কাটাতে অসুবিধা নেই।কলেজে বেশ কিছু সময় কাটাবার পর রাতে বিরাট ঘরে বড় একা একা মনে হতে লাগলো ওর!
প্রথম দিনেই পাশের ঘরের ছেলেদের সঙ্গে আশীষ আলাপ জমাতে গেলো।নন্দন নাম ছেলেটির–পলিটেকনিক কলেজে পড়ছে।ও বাইরের কোন গ্রাম থেকে পড়তে এসেছিল। আশীষ বলল,কি তুমি একাই এ ঘরে থাকো?
–না,আমার ঘরের পার্টনার আছে–ওর ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হোয়ে যায়,নন্দন বলে ছিল।
আশীষ বলল,আমি একা–এত বড় ঘরে একা থাকতে কেমন যেন লাগে!
–ভয় নেই,আমরা তো আছি,মনে হল নন্দন সাহস যোগাল।
–কত দিন ধরে আছ তোমরা?আশীষ জিগ্যেস করে।
–এই তো দু দিন হল।তবে আমার পার্টনার চার পাঁচ দিন ধরে আছে।
–অসুবিধার তো কিছু নেই,না?আশীষের প্রশ্ন ছিল।
এবার নন্দন আশীষের মুখ নিরীক্ষণ করল,বলল,কেন?
কারণ বিশেষ কিছু ছিল কি না তা তখনও আশীষ জানে না,তবু পুরনো ইংরেজ আমলের বাংলো–বিরাট বাড়ি,রাত হলে ভয় ভয় করে বই কি!ও তবু নন্দনকে খুলে কিছু বলল না।এমনি সময় নন্দনের পার্টনার ঘরে ঢুকল।ওর নাম কদম।আশীষের পরিচয় হল ওর সঙ্গে।
কদম কেমন যেন কৌতূহলী হোয়ে জিজ্ঞেস করল,কি পাশের ঘরে একলাথাকবেতুমি ?
–হ্যাঁ,আশীষের মনে হল কদম কিছু বলতে চাইছে।ও আবার জিজ্ঞেস করল,কেন,একা ঘরে কিছু অসুবিধা আছে কি?
–না,না,তেমন কিছু নয়,কদিন আমায় তো বাধ্য হয়ে একা থাকতে হয়ে ছিল,কদম ম্লান হেসে বলে উঠল। তবে রাতে একা ঘরের বাইরে না বেরনই ভালো।
–তার মানে কিছু অসুবিধা আছে?কৌতূহলী প্রশ্ন আশীষের।
–অসুবিধা থাকা বিচিত্র নয়,আমাদের কাছে এ জাগা বিদেশ বিভূঁই–এখানকার কিছুই আমরা জানি না,শুনি না,তারপর ইংরেজদের পুরনো আমলের বাড়ি–কাজেই সুবিধার চে অসুবিধা বেশী হবে এটাই তো স্বাভাবিক,একজন অভিজ্ঞ লোকের মত কদম বলে যাচ্ছিলো।
আশীষের মনে হল ভিতরের কিছু কথা যেন চেপে যাচ্ছে কদম।ঠিক আছে বলার যখন ইচ্ছে নেই–তবে মিছে কেন ঘাঁটাঘাঁটি!
আর কথা হল না। আশীষধীরে ধীরে দরজা পেড়িয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল।মদনদের ঘর আর ওর ঘরের ভেতর দিয়ে এ দরজা।এ ছাড়া সরাসরি বাইরে লনে বেরোবার দরজাও আছে।
বাইরে অন্ধকার জমাট বাঁধছিল। ঘরের ষাট পাওয়ারের আলো জ্বলছিল। তাও এত বড় ঘরের অন্ধকারকে যেন তাড়াতে পারেনি!আশীষ তাকাল বাইরের দিকে। এক,দুই,দুটো বড় বড় জানালা–পাঁচ ফুট ছ ফুটের হবে ওগুলি। ঘর কম করে পঁচিশ বাই পঁচিশ ফুট লম্বা চওড়ায় হবে!দশাসই দুটো দরজা–একটা বাইরে বের হবার জন্যে,অন্যটা ভেতরের ঘরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্যে।
আশীষ ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত প্রায় আটটা বাজে। পড়তে বসতে পারেনি এখনো। ভাবল,এখনি হোটেল থেকে খেয়ে আসলে ভালো হয়। একবার ভাবল নন্দন,মদন ওদের ডাকবে কি না। কিন্তু ওরা বোধ হয় ঘরেই রান্নার ব্যবস্থা করে নিয়েছে। এখানে রান্না ঘর অনেকটা দূরে–ঘর থেকে বের হয়ে বিরাট একটা লন মত—তার দু ধারেই ঘর। লন ধরে প্রায় পঁচিশ ফুট পার হয়ে তারপর রান্না ঘর। কমন রান্না ঘর। আর রান্না ঘর ছাড়িয়ে আরও বিশ পঁচিশ ফুট পেড়িয়ে যেতে হবে ল্যাট্রিন,বাথরুমে। বড় লন ধরে রাতে খুব কম পাওয়ারের একটা মাত্র আলো জ্বলে। তাতে অন্ধকার সামান্য দূর হয় বটে,কিন্তু তার চে আলো অন্ধকারের ছমছম ভয়ের ভাবটা মনে আরও বেশী করে জেঁকে বসে !
আশীষ বের হল বাইরে,লন পার করে নামল জঙ্গল ঝোপ ঝড়ের বাগানে। সরু একটা রাস্তা বাড়ির বাউন্ডারির শেষ সীমা,বড় রাস্তার গেট পর্যন্ত চলে গেছে। পথটা অন্ধকার।ওর মনে হল,এখানে একটা লাইটের ব্যবস্থা জরুরী। আর সবচে ভালো হয় সন্ধ্যের পর এ বাড়ি থেকে না বের হওয়া। তবে দু তিন দিন তো যেতেই হবে। রান্নার ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন এবং তা সন্ধ্যের আগেই সেরে নিলে ভাল হবে। ধীর পায়ে বাগান পেড়িয়ে মস্ত গেট পার করে রাস্তায় নাবল আশীষ।
এখানেও অন্ধকার। লাইট পোস্ট আছে। হয়তো বাল্ব ফিউজ হোয়ে গিয়ে থাকবে। ও মনে মনে ভেবে নিলো,এখানে একটা টর্চ একান্ত দরকার। এমনি রাতের অন্ধকারে সাপ খোপের ভয় ও তো থাকবে!হোটেল যেতে প্রায় পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে। ছোট খাট হোটেল। এ বাড়িতে আসার সময় দূর থেকে একবার দেখেছে ও। দেখে শুনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলেই মনে হয়েছিল।
কিছু রাস্তা এগিয়ে আলোকিত রাস্তা পেল আশীষ। ঘর ছেড়ে এই প্রথম তাকে একা কোথাও থাকতে হবে। এক রাত কোথাও কাটিয়ে আসা সে ব্যাপার আলাদা,এ তো মাসের পর মাস একা থাকার কথা!দিন কাটবে কি করে,সময় ফুরাবে কি ভাবে?আর রাতের নির্জনতা,একাকীত্ব,গা ছমছম ভয়ের পরিবেশকে কি ভাবে সে মানাবে?খুব অদ্ভুত লাগতে লাগলো ওর। মনে হল এ কোথায় সে চলে এলো–সত্যি কি ও আপন ঘর ছেড়ে এই বনবাসে,পরবাসে এসেছে?নাকি নেহাতই কোন স্বপ্ন–চোখের সামনে যা দেখছে সবই রাতের স্বপ্ন–ঘুম ভাঙলে,চোখ মেললে সে দেখবে সেই নিজের ঘর। আরামে নিদ্রা যাপনের সেই বিছানা!
হোটেলে ঢুকল আশীষ। চার পাঁচজন লোক খাচ্ছে–দুজন মনে হল খাবারের অপেক্ষায় সময় গুনছে। ও টেবিল সংলগ্ন এক চেয়ারে গিয়ে বসলো। একটা ছেলে এগিয়ে আসলো। খাবারের অর্ডার নিলো ছেলেটি। খাবার তৈরি হয়ে আসতে কিছু সময় লাগবে। হোটেলের মালিক এক কোনায় বসেছিল। হিসাব মত পয়সা গুনে রাখা তার কাজ।আশীষকে নতুন দেখে ওর কি মনে হল,প্রশ্ন করে বসলো,তুমি কি নতুন এলে এখানে?
সম্মতি জানিয়ে ঘাড় নাড়ল আশীষ।
–কোথায় উঠেছ?
–এই তো বাংলো বাড়িতে।
–আচ্ছা,ওই ইংরেজ বাংলোতে?
–নাম তো জানি না–অনেক দিনের পুরনো বাংলো বলে জানি।
–হ্যাঁ,এই এরিয়াতে একটাই তো বাংলো। মধু বাবুর ইংরেজ বাংলো।
–হবে,বলে মাথা নাড়ল আশীষ।
–অসুবিধা নেই তো কিছু?আবার প্রশ্ন হোটেল মালিকের।
আজ সকালেই এসেছি,দেখি আগে গিয়ে,আশীষ নিঃস্পৃহ ভাবে বলে উঠলো।
একটা লোক পাশের টেবিলে খাবার খাচ্ছিল,খেতে খেতে দু জনের কথাবার্তা চুপ চাপ শুনছিল। কেন জানি না খওয়া ছেড়ে ও খানিক সময় চুপ করে থেকে বলে উঠলো,সাবধান ওখানে ভয়ের ব্যাপার আছে!আচমকা এধরনের কথায় আশীষ ফিরে তাকাল লোকটির দিকে।
লোকটি আবার বলে উঠলো,সাবধান,রাতে ঘরের বাইরে বের হলে ভয়ে মরে যাবেন!
বলে কি লোকটা,এমন কথা তো ও আগে শোনে নি!ও তো এমন বলছে যে–
–দু তিনটে ছেলে ও ঘর ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে–আমি জানি। আমি রেল ফটকের ওপারে থাকি, লোকটা তার কথা না বলেই থামবে না যেন!
–রাত হল তো তুমি ঘরের এক পাও বাইরে বেরোবে না এটা আমি বলে দিলাম,লোকটি যেন আশীষকে সতর্ক করে দিলো।
–না,না,তেমন ভয়ের কিছু নেই,হোটেলবালা বলে উঠলো। চুপচাপ খাওয়া সরল আশীষ। হোটেল মালিকের হাতে পয়সা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ভয়ে গা শিউরে উঠছিল ওর। একা ঘরে থাকবে কি করে ভাবছিল। বাংলোর কাছটা বড় নির্জন। দূর থেকে টিমটিমে আলোর মাঝে ওজাগাটাকে আরও ভয়াবহ লাগছে !
গেটের দরজা ভেজানো ছিল। আস্তে করে দরজায় ধাক্কা দিলো আশীষ। রাতের স্তব্ধতায়,ক্যাঁচ, করে শব্দ হয়ে গেটের দরজা খুলে গেলো। ওর মনে হল ভূতুড়ে সমস্ত লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে বাংলো বাড়ি থেকে!তাড়াতাড়ি পা ফেলে জংলী বাগান পার হল ও। তালা খুলে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল। ভিতর থেকে খিল,ছিটকিনি দুটোই এঁটে দিলো। মাঝখানের দরজা খুলে নন্দন,কদম কি করছে দেখবে কি না ভাবল। কিন্তু রাত নটার পর ওরা মনে হল ঘুমিয়ে পড়েছে। তবু মাঝের দরজাটা ও ঠেলে দেখল,হ্যাঁ,ওদের দিক থেকে খিল বন্ধকরা। তার মানে ওরা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি!
পড়ালেখা আজের মত ডকে উঠল। সোজা বিছানা পেতে ও শুয়ে পড়ল। বড় চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে নিলো। ভাবল,ভয় পেলে মুখোও ঢেকে নেবে।
ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ খট খট শব্দে ঘুম ভঙ্গে গেলো আশীষের। রেডিয়াম ডায়ালের হাত ঘড়ি বালিশের নীচে থেকে বের করে দেখল,রাত সারে বারোটা। এমনি সময় ঘরের বাইরে থেকে মচ মচ জুতোর আওয়াজ ভেসে এলো। কি হল,কে এলো বাইরে?এত রাতে তো কারো আসার কথা নয়!তবে কি ভূতের কারসাজি!ওর ভয় লাগছিল খুব। গায়ের চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো। না, বেশ জোরে জোরে চলাফেরার আওয়াজ হচ্ছে বাইরের লন থেকে। মনে হচ্ছে কেউ বাইরের লম্বা লন ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ও আর থাকতে পারল না,ভয়ে চাদর মুড়ি দিয়েই এক লাফে খাট থেকে নেবে ভেতরের ঘরের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিতে থাকলো। সে সঙ্গে কদম,নন্দন বলে চীৎকার করে ওদের ডাকতে লাগলো। খানিক পরে ওরা দরজা খুলল। আশীষ দেখল ভয়ে ওরাও জড়সড় হয়ে আছে। তবে কদম একটু সাহসী,ও বলে উঠলো,রোজ রাতে এমনি হচ্ছে। আমাদের কেউ ভয় দেখাতে আসে মনে হয়।
নন্দন ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,আমি থাকবো না এখানে–এই ভূতের বাড়ি থেকে আমি কালই পালাব ! কান্নার সুর বের হচ্ছিল নন্দনের মুখ থেকে !
আশীষের অবস্থাও নন্দনের মতই,ওর মনে হচ্ছিল পারলে এখনি সে এ ঘর ছেড়ে পালায় !
এমনি সময় বাইরে কেউ চীৎকার করল,হল্ট,বলে। তারপর যেন লেফট রাইট করে কেউ মার্চ করতে করতে চলতে লাগলো।
বাপরে ! কি বিচিত্র ঘটনা,আশীষ কদমকে জড়িয়ে ধরে আছে। নন্দন ভয়ে আশীষকে ধরে আছে ! কেবল কদম সাহস ভরে ওদের রেখে এগিয়ে যায় বাইরের দরজার দিকে। আশীষ আর নন্দন ভয়ে চীৎকার করে কদমকে বাধা দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। ওদের শরীর যেন নিশ্চল হয়ে আছে–কদমের কাছ পর্যন্ত এগোতে পারছে না ! ওদের মুখ থেকে ভয়ের গোঁ গোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হচ্ছিল না। কদম দরজা খুলে ফেলে। ধীরে ধীরে লনের দিকে এক পা দু পা করে এগোয়। আশীষও নন্দন শুধু স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে কদমের সরে যাওয়া কালো ছায়ার দিকে।
বাইরে তেমনি ভাবে আবার চীৎকার শোনা যায়,হল্ট,বলে,জুতোর মচমচ শব্দ,বুটের আওয়াজ চলতে থাকে।
কদম আরও এগিয়ে যায়–ওকে দেখলে মনে হবে কোন নেশার ঘোরে আছে ও !ও চোখের সামনে একজন মিলিটারি লোককে দেখতে পায়, সাজপোশাকে ঠিক একজন মিলিটারি যোদ্ধার মত মনে হচ্ছে তাকে ! দাঁড়িয়ে আছে–স্ট্যাচু হয়ে ! কদম নিজের অজান্তেই তার দিকে এগিয়ে চলে। হঠাৎ একটা আওয়াজ,মচ মচ জুতোর আওয়াজ,এ কি !মিলিটারি লোকটি প্যারেড করে এগিয়ে আসছে—মনে হল কদমকে ও দেখতে পাচ্ছে না। এখনি ওর গায়ে কদমের ধাক্কা লাগবে যে ! ঠিক এমনি সময় কদম তার শরীরে বৈদ্যুতিক শিহরণের মত এক ধাক্কা খেলো। ওর মনে হল ওর শরীর ভেদ করে ওই লোকটা মার্চ করতে করতে লনের অন্যদিকে এগিয়ে চলেছে !আর কিছু মনে নেই কদমের। ওর ভয়ঙ্কর চীৎকারে আশীষ ও নন্দনচ মকে উঠেছিল। পর দিন ভোরে কদমের জ্ঞানহীন দেহ লন বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা গেলো।
হাসপাতালের বেডে থেকে দীর্ঘ চব্বিশ ঘণ্টা পরে কদমের জ্ঞান ফিরল। কিন্তু ওর মুখ ফুটে কথা বের হল না !
কদম আজও নাকি স্বাভাবিক হতে পারেনি–রাতে চমকে ওঠে–বড় বড় চোখ নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এদিক ও দিক তাকিয়ে থাকে।
আশীষ পরে জানতে পেরেছিল ওই বাংলোর ইতিহাস। এক ইংরেজ মিলিটারি অফিসার ওই বাংলোতে সপরিবার থাকতেন। ওঁর পরিবারের সবাই প্লেন ক্রাশ হয়ে মারা যায়। অতি দুঃখে মনের ভারসাম্য হারিয়ে তিনি একদিন এই বাংলোতেই আত্মহত্যা করে ছিলেন। তারপর থেকেই রাত বারোটার পর থেকে তাঁর অশরীরী আত্মা সৈনিক প্যারেড করে–মার্চ করে বাংলোর বারান্দার লন ধরে।