তান্ত্রিকের মেয়ে আমার ভালোবাসা

তান্ত্রিকের মেয়ে আমার ভালোবাসা

আমি জানি এখন আমার তৃতীয় আঙ্গুলটি কাটা হবে। কেনি আর মেনি আঙ্গুলের কাটা রক্তে ওর দু’হাত ভেসে যাচ্ছে।

কিন্তু সেনির্বিকার। একটা ধারালো চুরি হলে ভালোই হতো। কষ্টটা কম হতো।
ও আঙ্গুল কাটার জন্য যেটা ব্যবহার করছে তাকে কিছুটা কাচির মত দেখা যায়।ওটার নাম কি আমার জানা নেই।
আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি এসব বাস্তবেই হচ্ছে। ডান পা’টা খুবজোরে বুকের দিকে টেনে তুলে আবার ছাড়লাম। কিসের সাথে যেন পায়ের পাতা বাড়ি খেল।

না স্বপ্ন নয়। চোখ তুলে তাকালাম তাঁর চোখের দিকে। কি সুন্দর চোখ ছিল ওর।
ওর চোখের দিকে তাকালে আমি হারিয়ে যেতাম অজানায়। ভুলে যেতাম আমার অস্তিত্ব। ও চোখ দু’টি কেমন যেন ঘোলাটে। এই সময়ে ওর চোখ লাল হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ওর চোখ দুটোতে হালকা হলুদ কিংবা অচেনা এক কালারের আভা পড়েছে। ওর চুলগুলো ওর মুখের অর্ধেক ডেকে রেখেছে।
ওর কয়টা চুল আমার মুখের ওপর।

আমি যেন এখনো ওর চুলের মিষ্টি গন্ধটা পাচ্ছি। প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিলাম আমি মনে হয় ওর মুখ থেকে চুলের দিকে বেশি তাকিয়ে ছিলাম। নড়ে উঠল সে। আমার দিকে ঘোলাটে চোখে তাকালো আবার। আমি ওর দিক থেকে মুখ সরিয়ে আমার কাটা আঙ্গুলের দিকে তাকালাম।এখনো রক্ত ঝরছে। তবে আমি কেন কাঁদছিনা আমি নিজেও জানিনা। তবে কি আমি মরে গেছি?
মরলে ওকে কিভাবে দেখছি? নাকি সেও মরে গেছে। মনেহয় আমরা দু’জন পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও চলে এসেছি। যেখানে মানুষের কষ্ট বলে কিছু নেই।রক্ত ঝরলেও যেখানে মানুষ ব্যাথা পায়না। আর ভাবতে পারছিনা।

আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। নাকি পাগল হয়ে গেছি। আমার তৃতীয় আঙ্গুলটাতে ও কাচির মত অস্ত্রটা বসাল। আমি হাতটা নড়াতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। চিৎকার করে উঠল মেয়েটা।
শরীরের সব শক্তি দিয়ে আমার তৃতীয় আঙ্গুলে কাচির চাপ দিল। বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠলাম আমি। খুট করে একটা সুপারীকাটার মত শব্দ হল। পিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতো লাগল।

ভাবতে লাগলাম আমি। বোধহয় বাকি দুটো আঙ্গুল ও কাটবে সে।ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল মেয়েটা।এই পরিস্থিতিতে, মেয়েটার কান্না পরিস্থিতিটাকে আরো জটিল করে তুলছে। না তাকে সাহস হারালে হবেনা। বাকি দু’টো আঙ্গুল এখনো বাকি। কিন্তু কি হল মেয়েটার। ও কেন থেমে গেল?সাহস বেড়ে গেল আমার।ধমক দিয়ে বললাম কি কাটবেনা বাকি দুটো আঙ্গুল? কাটো তাড়াতাড়ি কাটো। আমাকে মুক্তি দাও। মেয়েটার লাশটাকে কবরে টেনে নামালাম। ওর শরীর থেকে তাজা রক্তের গন্ধ আমার নাকে লাগছে।খুব বেশি ভারী মনে হচ্ছে ওকে। এখনো আমার ডান হাতের কাটাআঙ্গুল থেকে রক্ত ঝরছে। কবরের উপর মাটি দেওয়ার জন্য কোদালটা খুঁজে পেলাম না। অথচ দুই ঘন্টা আগে কোদাল নিয়েইআমি এসেছিলাম। কবর খুঁটে তুলে এনছিলাম ওকে। আমার
আঙ্গুলগুলোকি সে কেটেছিল? নাকি আমি? সে কিভাবে কাটলো? সে তো মৃত?

আমি যদি কাটি তাহলে কাচিটা আসল কোথা থেকে? কিছুই মিলাতে পারলামনা। আঙ্গুলের ব্যাথাটা ক্রমেই বাড়তে থাকল। একসময় ঘেমে উঠলাম আমি। প্রচন্ড গরমে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। ঘড়ি দেখলাম। রাত সাড়ে এগারোটা। ঘুমিয়েছি সন্ধ্যা সাতটায়। কোনমতে কাপড় পড়ে রেডি হলাম। নাওকে ফেরাতেই হবে। আজ সকালে ও ফোন করেছিল। আমাকে বলেছে ওর শেষ কথা। ওর তান্ত্রিক সাধক সাত আঙ্গুলওয়ালা বাবা সাত আঙ্গুলওয়ালা ছেলে ছাড়া কারো কাছে বিয়ে দেবেনা তাকে। কি করবো আমি? ওকে পাওয়ার জন্য আমার তিনটি আঙ্গুলই কেটে ফেলব নাকি? মাথা ঠিক ছিলনা আমার।সকালে রাগ করে ওকে বলেছি আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য আমার তিনটি আঙ্গুল কেটে ফেলে দিতে পারবোনা। শুনে অনেক কাঁদল সে। রাগ করে বলল যদি তুমি তা না কর তাহলে আজি আমার মরা মুখ দেখবে।না তাকে ফেরাতেই হবে। ওকে পাওয়ার জন্য তিন আঙ্গুল কেন আমার জীবনটাও দিয়ে দিতে পারব।পাগলের মত দোড়াচ্ছি তান্ত্রিক সাধকের জঙ্গলের বাড়ির দিকে।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত