যত দোষ মেয়ে ঘোষ

যত দোষ মেয়ে ঘোষ

আমি তখন অনেক ছোট । আব্বুর পোস্টিং ছিল ঢাকার বাইরে ।যথারীতি আমি থাকতাম নানুর বাড়ি । ছুটি ছাটায় বেড়াতে জেতাম বাবামায়ের কাছে । দিনগুলো কাটত আমার স্কুল ,খেলা আর গল্পের বই পড়ে । তখন আমার বেলা কাটত রাশিয়ান রুপকথা সিভকা বুরকা, বাহাদুর পিঁপড়ে, ঠাকুরমার ঝুলি ইত্যাদি পড়ে । আর এই বই গুলা পড়তে পড়তে আমিও হারিয়ে যেতাম রুপকথার রাজ্যে।

আমি তখন টু কি থ্রি তে পড়ি দ্বিতীয় সাময়িকী পরীক্ষার পর খালা মামাদের সাথে বেড়াতে গেলাম আব্বু আম্মুর কাছে । আব্বুর পোস্টিং তখন ধামরাই । ওখানকার একটা স্মৃতি আমাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় । তখন পেয়েছিলাম সাংঘাতিক ভয় আর এখন যখন বুঝতে শিখেছি তখন অদ্ভুত এক কষ্ট ,মন কেমন করা অনুভুতি কাজ করে ।

এক দুপুরে হঠাত আমাদের কোয়ার্টার এর পাশের বাসায় খুব হইচই আর কান্না শুনে সবার সাথে আমিও গেলাম দেখতে । ওই বাসার এক আঙ্কেল মারা গেছেন । উনি নাকি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন । বেচারা মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। সেখানে গিয়ে আমি এমন ভয় পেইয়েছিলাম যা কখনই ভুলতে পারব না কারন ওখানে গিয়েই আমি দেখেছিলাম ডাইনি, এক্কেবারে সত্যিকারের ডাইনি ।

আমি তো আগেই ঠাকুরমার ঝুলিতে লাল কমল আর নীল কমলের গল্পে পরেছি ডাইনি আর রাক্ষুসিরা সুন্দরী মেয়ের বেশে বনের মাঝে বসে থাকে আর রাজা যখন শিকারে যায় তখন সেই রাক্ষুসিরে বিয়ে করে নিয়ে আসে । আর তারপর সেই রাক্ষুসি এক এক করে রাজ্যের সব হাতি ঘোড়া আর মানুষকে খেয়ে ফেলে ।

তো সেই আঙ্কেলের মা যখন বিলাপ করে কাঁদছিলেন আর সুন্দরি এক আন্টিকে দেখিয়ে বলছিলেন এই কুলক্ষনি ডাইনি আমার ছেলেকে খেয়ে ফেলল রে ,আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম । আম্মুর আচল ধরে ভয়ে থর থর করে কাঁপছিলাম আর ভাবছিলাম এক্ষুনি যদি এই রাক্ষুসিটা ভয়ংকর মূর্তি ধরে আমাদের সবাইকে খেয়ে ফেলে ,কি হবে তখন ?

এরপর পার হয়েছে অনেক সময় এখন আমি বুঝি সুস্থতার আশায় তার রুগ্ন ছেলেকে বিয়ে দিয়ে কি ভয়ংকর অন্যায় টাই উনি করেছেলিনে সেই ডাইনির সাথে । আমাদের সমাজে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যে কোন কারনেই হোক মেয়েকে দোষারোপ করতে ভালবাসে । নিজের ব্যার্থ তার দায়ভার অন্যের বিশেষ করে মেয়েদের উপর চাপানোর প্রবনতা এই উপমহাদেশে ব্যাপক। পোড়ামুখির জন্মের পর পর বাপের বাবসায় ধস নামল কি মাকে খেল ইত্যাদি ইত্যাদি ।

একটা মেয়ে সমাজের যে শ্রেনিরই প্রতিনিধিত্ব করুক না কেন তার দিকে আঙ্গুল তুলতে কেউ দ্বিধা বোধ করে না। হঠাত করেই এই পুরান কথাটা মনে পড়ল বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ভারতের পরাজয়ের পর । ভারত হেরে গেছে, কাউকে না কাউকে তো হারতেই হবে । কিন্তু এতে খেলোয়াড় দের কোন দোষ নেই । যত দোষ ভিরাট কোহলীর বান্ধবির । একজন খেলোয়াড় যত ভাল আর বড় মাপের ই হোক না কেন সে তো সব দিন সমান ভাবে পারফর্মেন্স করতে পারে না, আর এই খেলাটাও তো একজনের খেলা না ।কিন্তু তাতে কি এই উপমহাদেশের সেই চিরন্তন পুরুষ তান্ত্রিক মানসিকতা থেকে তারা বের হবে ক্যামনে? তাই যত দোষ আনুশকা ঘোষ (শর্মা ) । আমি শতভাগ নিশ্চিত যদি আনুশকা খেলা দেখতে না যেত আর ভিরাট কোহলী এক রানে আউট হত তাহলেই দোষটা আনুশকার ই হত । তখন বলত ও যায়নি তাই ভিরাট এর মন উচাটন ছিল ভাল খেলতে পারল না। তাই নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যত দোষ মেয়ে ঘোষ ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত