আমার ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের সংখ্যা খুব একটা বেশী নয়। কিন্তু যে কটি আছে, তাদের প্রত্যেকটার একটা করে নাম আছে আলাদা আলাদা। কয়েকখানা নাম লোকজন জানে বটে, কিন্তু বেশীরভাগের নামই আমি বাদে দ্বিতীয় ব্যক্তির অজানা। এই যেমন ধরুন গিয়ে নিকুঞ্জবিহারি, সে হলো আমার ক্যামেরা। নিকষ কালো ক্যামেরার শরীরে লেখা রয়েছে নিকন। সেই দেখেই নাম দিয়েছি নিকুঞ্জবিহারি।
আমার মোবাইল ফোনের নাম আনন্দরূপ, ঘড়ির নাম টুনটুনি , মানিব্যাগের নাম বটুকেশ্বর, কলমের নাম কালিকিঙ্কর, যে ব্যাগ নিয়ে আপিস যাই তার নাম কল্পতরু। কল্পতরু নামের সার্থকতা আমার সহকর্মীরা কিছুটা জানেন। আরো আছে দু এক খানা এমন বস্তু। যেমন ধরুন আমার সাধের কিটোস পাদুকা। তার নাম দিয়েছি হিউয়েন সাং। এই মহাজ্ঞানী পর্যটকের প্রতি কোন অসন্মান প্রদর্শন আমার উদ্দেশ্য নয় । ছোটোবেলায় ইতিহাস বইতে দেখেছি, অবিকল আমার কিটোসের মত দেখতে একজোড়া পাদুকা হিউয়েন সাং এর পায়ে। আমার অতি প্রিয় সুইস ফৌজি ছুরির নাম ঘচাং-ফু। মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপে দুটোতেই লাগানো যায় এমন একখানা ৩২ গিগাবাইটের ফ্ল্যাশড্রাইভের নাম কিম ফিলবি। এম আই সিক্সেও আছেন, আবার কেজিবি তেও আছেন। কিন্তু যদি বলেন এদের মধ্যে আমার সব থেকে প্রিয় বস্তু কোনটা , আমি এক মিনিটও না ভেবে উত্তর দেবো ফুলমতি। ফুলমতি হলো আমার অতি প্রিয় পুরোনো ফুল-ফুল ছাপের লুঙ্গি। মাঝে মাঝে সে পাল্টায় বটে, কিন্তু নাম একই থাকে।
গেল বছর আমার ভাতৃ-ভগ্নীস্থানীয় জনাচারেক ভরা গ্রীষ্মে আমার বাড়িতে পায়ের ধুলো দিয়েছিলো। তারা বাইরে আমাকে সাধারনত যেমন দেখেছে, ভেবেছে আমি তেমনই। বর্তমান পশ্চিমবাংলার শাসক দলের সমালোচনা করি বলে, আমার পোষাক-পরিচ্ছদও যে নেহাৎ “সাজানো ঘটনা”, এইটা তারা আন্দাজ করতে পারেনি। শেষে যখন ট্যাক্সি থেকে দেখতে পেল আমি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি গলির মুখে, উর্ধাঙ্গে একখানা ধুদ্ধুড়ে গেঞ্জি আর নিম্নাঙ্গে ফুলমতি, তারা যারারপরনাই বিস্মিত হলো। আমাকে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে ছবি তোলা হলো। “লুঙ্গি ম্যান” বলে সে ছবি সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়েও পড়ল হোয়াটস্অ্যাপ মারফত। যাই হোক বোনেদের তর্জনগর্জনে তখনকার মত ফুলমতি আলনার বনবাসে গেল। পাজামা গলিয়ে এলাম। বোন-জঙ্গলের রাজত্বে নিরীহ মানুষের স্বাধীনতা খর্ব হয় একথা কে না জানে? সন্ধ্যে ঢলার মুখে জমাটি আড্ডা মাটি করে “কাল আবার অফিস” দোহাই ঠেলে তেনারা বিদায় নিলেন। আড্ডা ভাঙ্গার আঘাতে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঢিকির ঢিকির পায়ে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে আলনা থেকে ফুলমতিকে নামালাম। আহা, লুঙ্গির আরাম আর কিছুতে নেই। মন খারাপে মলম লাগল কিছুটা হলেও।
লুঙ্গির পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কিছু বলা যায়। আমি অবিশ্যি প্রানে ধরে বিপক্ষে বলতে পারবোনা। লুঙ্গির তিন ফুটের ঘের আমার স্বাধীনতা। সারা দিনের কাজকম্ম, দৌড়োদৌড়ি, হাঁপাহাঁপি, বকাঝকার থেকে দিনের শেষে লুঙ্গিটি গলালেই শারীরিক স্বাচ্ছন্দ আর মানসিক মুক্তি। বাড়তি পাওনা, লুঙ্গি পরে অস্থানে-কুস্থানে চুলকু করতে বড্ড সুবিধে। মোটের ওপর ভদ্দরনোক সুলভ বস্তু নয় এটি। এই ধরুন না, আপনি গরম কালের সন্ধ্যেবেলা কাজকম্ম সেরে বাড়ি ফিরেছেন, তার পরে গায়ে দু ঘটি জল ঢেলে, চুলে টেরি কেটে, কানের গোড়ায় হালকা পাউডার (কাল ভেদে ডিও) ছড়িয়ে ধোপ দুরস্ত পাঞ্জাবি পাজামা পরে নিজের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে প্রবেশ করছেন, অথবা টুকটুকে লাল টি শার্ট আর বারমুডা পরে স্টার স্পোর্টস ফোরে আর্সেনাল-চেলসির খেলা দেখতে বসেছেন। টি শার্ট অবশ্য নীল হতেও বাধা নেই। কিন্তু কেন? আমাদের আর্সেনাল থাকতে কোন শা…. । এখানেই লুঙ্গির সার্থকতা। লুঙ্গি পরলে আপনার সামাজিক শ্রেনীসচেতনতার ষষ্টিপূজো হয়ে যায়।আবার অন্যদিকে খিস্তি টিস্তি মারলে লোকে তেমন করে ব্যাঁকা চোখে তাকায়না। এই কারনেই আমার বাড়ির মহিলারা লুঙ্গি নিয়ে মাঝে মধ্যেই ঠারে ঠোরে বুঝিয়ে দেন, বস্তুটা সুবিধের না। অনেক কাল আগে একবার মধ্যরাত্রে দুই মাতাল চেল্লামেল্লি করে সবার ঘুম ভাঙ্গিয়ে পাড়া মাথায় করছিলো। খালি গায়ে লুঙ্গিতে মালকোঁচা মেরে, হাতে একখানা কাটারি নিয়ে রাত আড়াইটের সময় তাদের তাড়া করেছিলাম। দেখলাম, মাতাল তাড়ানো, আর হাতে প্রানঘাতী অস্ত্রর চেয়েও অন্দরমহলে বেশী আপত্তির কারন হয়ে উঠলো আমার মালকোঁচা মারা লুঙ্গি। তবে কিনা আজকাল, বাড়িতে বয়সে সবচেয়ে কম যে মহিলাটির, তিনি রীতিমত প্রকাশ্যে লুঙ্গির বিপক্ষে সোচ্চার। তাঁর বাবা যেন লুঙ্গি পরে কোনো মতেই বন্ধুবান্ধবের সামনে না হাজির হয়, সে ব্যাপারে তিনি সর্বদা সচেতন।
কবে থেকে লুঙ্গি গলিয়েছি ঠিক মনে নেই। স্কুলের শেষ দিকে থাকতেই মনে হচ্ছে যতদুর। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই এই চিত্তজয়ী পোষাক আমাকে পেড়ে ফেলেছে এক্কেরে। ঢিলেঢালা বস্তু। গায়ে কামড়ে লেপ্টে যায়না। ইস্ত্রি করার ঝামেলা নেই, পরার ঝামেলাও যৎসামান্য। গলিয়ে নিন্, গিঁট মারুন, গুঁজেনিন। ৩ থেকে ৪ সেকেন্ডে লুঙ্গি পরা যায়, কেউ এই গতিতে পেন্টুল পরতে পারলে লুঙ্গি পরে বাড়ির বাইরে বেরোনো ছেড়ে দেবো কথা দিচ্ছি। লুঙ্গি শুনেই বুঝবেন আমি লোকটা তেমন উচ্চকোটির কেউকেটা গোছের নই। খোঁজ নিয়ে দেখুন, নেতাজী, রবিঠাকুর, সত্যজিত রায়, সৌমিত্র চাটুজ্যে মায় সৌরভ গাঙ্গুলীও লুঙ্গী পরেন না। উত্তমকুমার, জ্যোতিবাবুর নাম এড়িয়ে গেলাম, কারন এনাদের লুঙ্গি পরা ছবি আমি দেখেছি, তবে কিনা সে হলো বেশ বাহারের সিল্কের লুঙ্গি। আমার লুঙ্গি এনাদের চেয়ে আলাদা। সুতির ছাপা লুঙ্গি। তবুও কিভাবে কে জানে, ভুলটুল করেই হয়ত, আমাকে কর্মপলক্ষে ভারতবর্ষের সীমানা পেরতে হয়েছে। এরকমই একখানা হিমালয়প্রমান ভূলের ফলে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। বুকটুক বাজিয়ে বললুম – সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। অভিজ্ঞ লোকজন বিদঘুটে কিছু নাম বললেন, মুস্তাফা, অর্চার্ড রোড, সেন্তোসা আরো সব খোদায় মালুম কি সব। বন্ধুবান্ধব বলল “পেট ভরে কলা খাস আর দু ছড়া আনিস”। আমার বাবা অল্প কথার মানুষ। যাবার আগে পিতৃবাক্য পেলুম – “ও তল্লাটে ভালো লুঙ্গি পাওয়া যাবার কথা”। বললে আপনার পেত্যয় হবে কিনা জানিনা, কিন্তু ঘটনা বস্তুতপক্ষে এটাই। মালয়-বর্মা অঞ্চলে প্রচুর লুঙ্গির চল। অবিশ্যি আগে চলত বলাই ভালো, গাঁ-গেরামে হয়ত এখনো চলে, তবে আমি ওনাদের গাঁয়ে তেমন ঘুরিনি, তাই বলতে পারবোনা। সিঙ্গাপুরের ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাটে লুঙ্গি কিনিনি বটে, কিন্তু দেখেছি অনেক বিক্রি হতে। তবে কিনা দামের দিকে তাঁরা বেশ উচ্চকোটির। ওই দামের লুঙ্গি পরলে আমার অভ্যাসের শ্রেনীচরিত্র বদলে যেতে পারে।
লুঙ্গি নিয়ে দু একখানা বিপত্তি যে আমার হয়নি এমনটা হলফ করে বলব না। এই ধরুন না, একবার গলিতে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে, আর আমি যথারীতী লুঙ্গি পরে দাঁড়িয়ে আছি। গলির শেষ প্রান্তে একটা বড় নর্দমা, চওড়া গোছের। গলির শচীন মেরেছে তুলে ছক্কা, বল পড়ল নর্দমার ওপারে। ওয়াসিম আক্রম হেঁকে বলল “বলটা দেবে?”। আমিই সবচেয়ে কাছে ছিলুম। বলটা তুলে ফেরত দেবার জন্যে নর্দমা পেরিয়ে ওপাশে যাওয়া দরকার। লাফ মারলুম। দেখলুম আমার পা নর্দমার ওই প্রান্তে প্রায় পৌঁছে গেছে, এমন সময় ব্যাপারটা হলো। লুঙ্গির ঘেরে আটকে গেল পা। ওপার ওবধি পৌঁছলো না। তলপেটে কেমন যেন… কানের দুপাশে হুহু শব্দ। তার পরেই ঝপাং। আফ্রিদি আর দ্রাবিড় এসে টেনে তুললো। কুম্বলে, মালিক, সৌরভ সমেত বাকিরা খ্যাঁক খ্যাঁক করে দাঁত বের করে হাসল। পড়ে যাওয়ার শারীরিক ব্যাথা-যন্ত্রনা যেতে হপ্তা খানেক লেগেছিলো, মানসিক ব্যাথা এখনো আছে।
আমার বাবা চাকরির শেষের দিকে এসে একখানা স্কুটার কিনেছিলেন। আমিই চালাতাম। গাড়ি হামারা তেল তুমহারার ভিত্তিতে কেনা। মানে, স্কুটারের তেল-মোবিলের খরচা, সারাই-ঝাড়াইয়ের খরচা সব আমার। তখন ছাত্র পড়াই, হাতে কিছু পয়সাকড়ি আছে। কিন্তু বাঁচানোর চেষ্টাও আছে তার সঙ্গে। মাসে দু মাসে একবার করে স্কুটারের খোল-নলচে খুলে ধোয়ামোছা করে তেল রগড়ে আবার সব ফিট করে দিতাম নিজেই। মিস্তিরিকে দিলে ৩০০ টাকা চেয়ে বসবে। এই সব কাজ কম্ম করতে লুঙ্গির জুড়ি নেই। মালকোঁচা মেরে লুঙ্গি পরে সেই রকম এক দিন স্কুটার আবার জোড়া দিয়েছি। লাথি মেরে ইঞ্জিন চালিয়ে চড়ে বসেছি, এক পাক ঘুরে আসবো বলে। এদিকে স্টার্ট করতে গিয়ে কখন মালকোঁচা খুলে লুঙ্গি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের হয়ে গেছে খেয়াল করিনি। খেয়াল করলাম থামার সময়। ডান পা ব্রেকে রেখে, বাঁ পা বাড়িয়ে নিচে রাখতে গিয়ে দেখি পা পৌঁচচ্ছে না। আবার সেই লুঙ্গির ঘেরের গেরো। না থেমে স্পিড বাড়িয়ে আরেক চক্কর ঘুরে এলাম। আবার দেখি সেই কেলো। কিছুতেই পা যাচ্ছে না। আমাদের পাড়ার লোকজন ভারি পরোপোকারি। কয়েক পাকের পর দু চার জন শুভানুধ্যাইয়ী দেখলাম উপদেশ দিতে শুরু করেছেন। একজন বললেন মালকোঁচা মেরে নাও। হাতে স্কুটারের হ্যান্ডেল, হাত ছাড়া কিভাবে মালকোঁচা মারবো সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেন নি। আর একজন আরো দূরদর্শী, বললেন পড়ার সময় ছোট্ট করে লাফ মেরে দিও, তাতে স্কুটার ঘাড়ের ওপর পড়বে না। এনার ওপর আমার এখনো রাগ আছে। একদিন না একদিন ঠিক ল্যাং মেরে ফেলে দেবো রাস্তায়। ধোয়াপোঁছা খোলাখুলির সময় স্কুটারে বেশী তেল রাখতাম না, অযথা নষ্ট হবে বলে। স্কুটার না থামালে তেল শেষ হবে, আর আমিও পড়ে যাবো। আবার থামলেও পড়ে যাবো। এই করতে করতে আরো কয়েক চক্কর হয়ে গেল। শেষের হেনস্থার কথা আর বলছিনা। তবে তেল খতম – খেল খতম, এরকম ধরে নিন। বাঁ পায়ের আধখানা চেঁচে যাওয়া, কপালে একটা বড় আকারের আলু, ডান হাতের মচকানো কবজি, মালাইচাকির ওপরে ঢিপলি, পাঁজরায় ঘিনঘিনে যন্তন্নার সঙ্গে রাস্তায় শুয়ে শুয়ে আবিস্কার করলাম লুঙ্গিটা স্কুটারের পাদানি তে লটকে ঝুলছে। আমার থেকে ফুট চারেক দুরে।
ওই একবারই। খুলে যাবার ইতিহাস আর নেই। তবে না খোলার ইতিহাস আছে। অবিশ্যি না খোলার কারনটা ঘোর বস্তুতান্ত্রিক। খুলেই কই। সেবার কলকাতায় এলেন ফিফার প্রেসিডেন্ট, আমাদের মোহনবাগান-ইষ্টবেঙ্গল খেলা দেখবেন মাঠে বসে। এদিকে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আমি তখন সাতসমুদ্দুর তেরো নদীর পারে কোন চুলোর সান-ফ্রান্সিস্কোর উপকন্ঠে ফ্রিমন্ট বলে একটা ছোটো শহরে। সেদিন আবার পয়লা বৈশাখ। মাঝ রাতে উঠে ল্যাপটপ খুলে আপডেট দেখছি। মাঝে মধ্যে বাড়িতে ফোন। লোটারা প্রথমেই গোল করে এগিয়ে গেল। একে রাত্রি জাগরন। তার ওপর গোল হজম। সব মিলিয়ে ঝিমিয়ে গেলাম। কিন্তু গপ্প বাকি ছিলো। মোহনবাগান দু খানা গোল করে খেলাটা জিতল, আর সেই ভোর রাত্রে আমি পেগলে গেলুম। পয়লা বৈশাখের এমন ভোর আমার জীবনে খুব কম এসেছে।
সপ্তাহান্তের সাফ-সুতরোর দিন আজকে, ডাঁই করে রাখা আকাচা জামাকাপড় নিয়ে গিয়ে বেসমেন্টে ঢোকাতে হবে। গেলহপ্তায় কাচিনি। বড় গামলা ভর্তি জামাকাপড় নিয়ে বেসমেন্টে কাচতে গেলুম। সেখানে অতিকায় সব ধোয়ার যন্ত্র। যন্তর চলতে আরম্ভ করতেই খেয়াল করলুম কেলেঙ্কারি করেছি। আমার যাবতীয় প্যান্ট চলে গেছে ভেতরে। পরে বেরোবার কিছু নেই। দু পাঁচ মিনিটের দ্বীধার পর মাথায় উলের টুপি, গায়ে ছেয়ে রংয়ের জ্যাকেট, নিচে লালচে ফুলমতি আর পায়ে বাদামী স্নিকার পরে আমি ফ্রিমন্ট শহরের রাস্তায় বেরিয়ে এলাম। নেহাত বিদেশ, রাস্তায় কুকুর নেই এক গাদা। কিন্তু পুলিস তো আছে। আমেরিকায় টিনটিনের সেই ছবিটা মনে আছে? যেখানে গাঁইয়া পোষাক পরে থাকার জন্যে পুলিস টিনটিন কে জরিমানা করেছিলো? আমাকে জেলেও দিতে পারে, দৃশ্য-আতংকবাদ ছড়ানোর অপরাধে। মিনিট দশেক হেঁটে বাজারে ঢুকলুম। শুনেছিলাম আমেরিকানরা সাধারনতঃ অদ্ভুত পোষাক পরিচ্ছদ দেখলে ড্যাবা ড্যাবা চোখ করে চেয়ে দেখে না। কে বলেছিলো কে জানে? ডাহা মিথ্যে। ওই সাত-সকালে বহুজোড়া চোখের কৌতুহলি দৃষ্টির সামনে দিয়ে বাজার দোকান সারলাম। একদম শেষে দাম দিচ্ছি যখন কাউন্টারে, দেখি আমাদেরই এক দেশোয়ালি মানুষ। কিছুক্ষন দেখলেন আমার দিকে, তার পরে শুধলেন – “ইন্ডিয়ান?” আমি এক গাল হেসে ওপর নিচে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। খুচরো ফেরত নিয়ে চলে আসছি, দেখি ভদ্রলোক পাশের কাউন্টারে তাঁর দেশোয়ালি ভাইকে বলছেন – “দ্যাখলা? কুনো সেন্স নাই”।
যাই হোক, এসব ত গেল বিপত্তির কিস্যা। লুঙ্গি নিয়ে আমার ভালো অভিজ্ঞতার সংখ্যা অনেক বেশী। বাড়িতে একা আমি নই, লুঙ্গি পরেন আমার বাবাও। বাপ-ব্যাটায় গ্রীষ্মের রাতে লুঙ্গি পরে আরাম করে বসে টিভি চালিয়ে বিদেশী ফুটবল দেখি। আমার কন্যা তার দাদুর কোলে উঠে বসে, আর সেই ছোট্ট বেলা থেকে দুই পায়ের ভাঁজে থাকা লুঙ্গির ঝুলি তার ইজি চেয়ার হয়। সেই থেকে সে তার দাদুর আদরের “পুঁটলি দিদিভাই”। আমার কন্যা তার বাবাকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় বন্ধুদের কাছে যেতে দিতে নারাজ। খুব আপত্তি। কিন্তু একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। ট্রেনে করে কোথায় একটা যাচ্ছি, সে মেয়ের একা একা ট্রেনের বাঙ্কে শুতে ভয় করছে রাত্রি বেলা। আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম। শেষে আধ ঘুমন্ত চোখে বলল “তোমার লুঙ্গিটা দাও”। ভাগ্যি ভালো আমি ট্রেনে জিন্স পরে ছিলাম, কিন্তু বেরোবার আগে কেচে পাট করে ফুলমতিকে ব্যাগে ঢুকিয়েছিলাম। সেটা বার করে ওকে দিতেই গায়ে হালকা করে জড়িয়ে নিয়ে এক মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ল। পরের দিন জিজ্ঞেস করলাম, “অত তাড়াতাড়ি ঘুমোলি কি করে?”। গরম গরম ডিমের অমলেট খেতে খেতে মেয়ে উত্তর দিলো – “লুঙ্গিটা থাকলেই মনে হয়, তুমি আছো”।
যখন আমি থাকবোনা, তখনও ফুলমতি থেকে যাবে। অলমিতি বিস্তারেন।