ছোট্ট বেলায় সিনেমা দেখার কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ! সারা সপ্তাহ জুড়ে অপেক্ষায় থাকতাম শুক্রবারের ! বিটিভি-তে যে সপ্তাহে শুধু একটাই সিনেমা দেখানো হয় আর সেটা যে শুধু শুক্রবারেই! বেলা তিনটায় সিনেমা শুরু কথাটা মাথায় রেখেই যেন থাকত সারাদিনের কর্মপরিকল্পনা!
যাই হোক, যে প্রসঙ্গে সিনেমার কথা মনে পড়লো সেই প্রসঙ্গেই বরং বলি! তখনকার বেশিরভাগ সিনেমাতে যে জিনিসটা বেশি চোখে পড়তো তা হচ্ছে বিভিন্ন বংশের মধ্যকার অতীতের কোন দ্বন্দ্ব এবং সেই সূত্রপাত ধরে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও তৈরি হওয়া একটা দূরত্ব! যেমন- তালুকদার বংশের সাথে মির্জা বংশের কিংবা চৌধুরী বংশের সাথে শিকদার বংশের দ্বন্দ্ব ! এই দ্বন্দ্বের ফলে এক বংশ অপর বংশের কোন ভাল কর্মকেই ভাল চোখে দেখতে পারতো না ! তাছাড়া এক বংশের লোকেরা অপর বংশের লোকদের সবসময় যে কোন ভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করতো ! কোন এক পর্যায়ে দুই বংশ থেকে নায়ক-নায়িকার উদ্ভব হয়ে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দুই বংশের মিলনের মাধ্যমে সমাপ্তি হতো সিনেমার!
তবে আমরা যারা সিনেমা দেখতাম তারা কিন্তু বাস্তব জীবনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বংশানুক্রমিক দ্বন্দ্ব কখনোই প্রত্যাশা করতাম না! তাই বাংলা সিনেমার এই বিষয়গুলি কখনোই আমরা আদর্শ হিসেবে নিতাম না কিংবা নেই নি! কিন্তু ১৫-২০ বছর পরে এসে যা দেখছি তা যে কল্পনাকেও হার মানায়! দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলই কি করে সেই দিনকার বাংলা সিনেমাকেই আদর্শ হিসেবে বেছে নিলেন?
সম্পূর্ণ বাংলা সিনেমাটাকেই যদি তারা আদর্শ হিসেবে নিতেন তাও তো ভালোই ছিল! কিন্তু তারা তো আদর্শ হিসেবে নিয়েছেন শুধু দ্বন্দ্বের অংশটাকে! সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হচ্ছে ঐ বাংলা সিনেমায় তো দুই বংশে নায়ক-নায়িকার আবির্ভাবের মাধ্যমে একটা সময় সিনেমার চিত্রনাট্যকার বংশ দু’টির মিল দেখাতেন, কিন্তু বাস্তব জীবনের চিত্রনাট্যকার যিনি তিনি কি এই দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদৌ কোন শুভবুদ্ধির নায়ক আর নায়িকার আবির্ভাব ঘটাবেন- যাদের কল্যাণে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বসবাসকারী শান্তিকামী লোকজন একটু শান্তির আশ্রয় খুঁজে পাবে?
প্রশ্নটাই শুধু জানা আছে আমার! উত্তর তো জানা আছে শুধু ঐ চিত্রনাট্যকারের যিনি উপরে বসে লিখছেন তার মনগড়া চিত্রনাট্য!