অতীতের কথাগুলো,পুরোনো স্মৃতিগুলো, মনে মনে রাইখো, আমার তো বউ নাই বউ হইয়াই থাইকো।”(ঠাসসসস্) কোন শালারে? আ আ আব্বা আপনি? আ আপনি মানে ইয়ে আপনি এইখানে? কোন শিল্পীর গান এটা?ক্যান আব্বা,ভাল্লাগছে?হ, বাজান। বহুত ভালো লাগছে, এতো ভালো লাগছে যে আমি আপনার গান শুনে আর রুমে থাকতে পারলাম না। হিহি, এতো প্রশংসা কইরেন না আব্বা। তয় একদিন আমি বড় শিল্পী হয়ে আপনার মুখ উজ্জ্বল করবো। আ হাহা হা, তোমায় তো অস্কার দেওয়া উচিত বাবা। সাদিয়া, জুতাটা নিয়ে আয় তো মা। ও কি আব্বা? জুতা দিয়ে কি করবেন? তোমার পিঠে অস্কার ফেলমু।
আব্বা দুই দিনও হয়নাই নিষ্পাপ জুতাজোড়া সেলাই করে আনছেন। আমারে কি গন্ডার পাইছেন আব্বা? তর পিঠের চামড়া কতো মোটা আজ তাই দেখবো। আ আ আব্বা আমার কলেজে যাওয়ার সময় হইছে। আ আমি গেলাম। যাইসনা বাপ, তর জন্য উপহার আসতাছে। আ আব্বা আপনারে আম্মি ডাকছিলো। আপনার কপালে শনি আছে। বাঁচতে চাইলে জলদি যান। হাঁচা কইতাছিস বাপ? হ আব্বা, একদম হাঁচা। দেরী হইলে কিন্তু আপনারে মুরগির ডিমের মতো ভাজি করবে। আচ্ছা যা, আজকের মতো মাফ কইরা দিলাম তরে। দেখি তর আম্মায় কি কয়। (আস্তে আস্তে) আপনি যে আমারে ক্যান মাফ করছেন তাতো বুঝছি, আম্মির সামনে যে আপনি ভেজা বিলাই তা পরিবারের সবাই জানে। কিছু কইলি? না আব্বা, বলছিলাম যে জলদি যাও। হ যাচ্ছি।
এতক্ষণে বুঝতেই পারছেন আমাদের পরিবার সম্পর্কে। আমি আমির, কোন দিক দিয়ে আমির জানিনা। তবে ফাইজলামিতে যে আমি গ্রেট বান্দর এইটা সবাই জানে। নামের মর্যাদা কোনোভাবে বজায় তো রাখতেই হয় কি বলেন? আমার আল্ট্রা মডার্ন ফাইজলামির জন্য আব্বার কাছে মাঝে মাঝে ধোলাই খাই। তবে মাইর থেকে বাঁচার জন্য একটু লেফট রাইট করা লাগে। মানে আম্মির ভয় দিয়ে একটু পার পাই। কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে দেখি পরিবারের আদিম সদস্যগণ মানে আমার দাদা আর দাদি আমার চাচার বাড়ি থেকে ফিরে এসেছেন। অবশ্য ভালোই হলো, অনেকদিন পর বুড়াবুড়ির ফাইটিং দেখা যাবে। আরো ভালো হলো কারণ আমার হবু বউ নামে খ্যাত অর্শা মানে আমার চাচাতো বোনও এসেছে। অর্শা ছোটবেলা থেকেই বলে আমি আমির ভাইয়ার বউ হবো। চাচা চাচি চার পায়ে খাড়া। আর আমিও বউ বলি ওকে। সবাই মিলে টিভিতে মুভি দেখছিলাম। হ্লার মুভিও হইছে সব আজকাল। চুম্মাচুম্মি ছাড়া মুভি যেন চিনি ছাড়া চায়ের মতো, লবণ ছাড়া স্যলাইনের মতো, ল্যাজ ছাড়া বান্দরের মতো।
থুক্কু, বান্দররে টানি ক্যান আবার। এরকম একটা রোমান্টিক সিনে আম্মি আর আব্বা লজ্জায় উঠে চলে গেলেন। দাদা দাদি কেমন হা করে টিভিতে তাকিয়েই আছে। আচ্ছা ওই পোলার কি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? (দাদি) ক্যান শ্বাসকষ্ট হবে ক্যান?(দাদা) তাইলে অই মাইয়াডা পোলার মুখে হাওয়া দিচ্ছে ক্যান? ধুর বলদ বউ, এইটা হাওয়া দেওয়া না। এইটারে বলে খিস। দাদার ‘খিস’ কথাটি শুনে আমি খেক খেক করে হেসে উঠলাম। অর্শা আর সাদিয়া তো আগেই চলে গেছে। হাসির লোক পাইলাম না। অই চ্যাংড়া, তুই দাঁত কেলাস ক্যান?(দাদা) কিছুনা, আচ্ছা দাদা তোমরা কি প্রেম করে বিয়ে করছিলা নাকি পরিবারের পছন্দে? প্রেম কইরা। ক্যামনে? মানে পরিচয় ক্যামনে হলো? সে মেলা বড় কথা, অহন কওন যাইবোনা। আরে দাদা শর্টকাটে মাইরা দাও।
শোন তাইলে, আমি তখন নতুন কলেজে উঠছি। স্মার্ট বয় ছিলাম, ক্লাসের সব মেয়েরা কিরাস খাইতো তেমনি তোর দাদিও খাইলো একদিন। এরপর এহ বেডা বুড়া, উনারে দেইখা কিলাস খাবানি। আমার পিছনে তখন একলগে একশ পোলা ঘুরঘুর করতো। উস্টা মারমু কইলাম, কথার মধ্যে কথা কইবা না। আমি তুড়ি দিলে এখনো কুড়িটা বুড়ি এসে হাজির হবে। দাদার কথা শুনে হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। ভালোই চলছিল বুড়াবুড়ির ঝগড়া। এদিকে অর্শা আমার উপর প্রচন্ড ক্ষ্যাপা। কি একটা মেয়ে এঞ্জেল না ফেঞ্জেল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে হাই হ্যালো মারছিলো। আমিও একটু চ্যাটিং ফ্লাটিং করছিলাম আর এতেই অর্শার চাকা পাংচার। আব্বা অফিসে গেছে, আম্মি রান্না করছে, সাদিয়া স্কুলে। অর্শার রাগ একটু ভাঙ্গাবো কিন্তু বুড়া দাদাদাদির ঠেলায় তা আর হচ্ছেনা। যেখানেই যাই, দাদা বলে আমির আমার পানের কৌটা টা এনে দে তো, দাদি বলবে আমির আমার ওষুধগুলো দে তো। এরকম, আমির আমার চশমা দে তো, আমার তজমি দে তো, আমার পাঞ্জাবি দে তো, আমার বিড়ি দে তো চলতেই থাকতো।
থুক্কু দাদা বিড়ি চাইতোনা,কথায় কথায় বলা হয়ে গেলো আরকি। এই বুড়াবুড়িরে যে ক্যামনে একটা কাজের মধ্যে রাখমু ইয়াহ, আইডিয়া দাদি হু, জানো আজ নাকি দাদা এক বুড়ির লগে দেখা করতে যাবে। কিহ? হ,দেখলাম কিছু গোলাপ কিনলো। হাঁচা কইতাছোস? হ দাদি, দাদার ভাব কিন্তু সুবিধার না। আচ্ছা আসুক বুইড়া বেডা,দেইখা নিমু ওরে। নেক্সট একশন দাদা শোনো হুম। (ফিসফিস করে) পাশের বাসার খলিল বুড়া দাদিরে একটা লাভলেটার দিছে। কস কি? আরে হয়, দাদিও দেখছি মহাখুশি। তবে রে, আজ ওই বুড়িটারে খামু,তারপর খলিল বেডারে। যা করার জলদি করো। দাদা গেছে ইনক্রিডিবল হাল্কের বেশে,রাগে চ্যাতা কাশেম। আর ওদিকে দাদি আছে ওন্ডার ওমেন হয়ে, গেলেই ফাইট শুরু।
অই বুড়ি, তোর সাহস তো কম না। পাশের বাসার বুইড়ার লগে লাইন মারোস। মোদ্দা কথা কইবা না বইলা দিলাম। তুমি যে কোন বুড়ির লগে দেখা করতে যাবা সে খবর পাইছি আমি। ফাও কথা কইয়ো না কিন্তু। কনুই দিয়া গুতাইয়া পিঠ বাকাইয়া দিমু। তোমার ছত্রিশ পাটি নকল দাঁত আজ কিলাই ভাইঙ্গা দিমু। আমার দাঁত নকল? তোরে খাইছি আইজকা বুড়ি। বলেই সুপার ডুপার ফাইটিং শুরু। দাদি দাদার দাঁড়ি ধইরা টানে আর দাদা দাদির চুল ধইরা। সাথে বাংলা সিনেমার ঢিশুম ঢিশুম। বুড়ো হলেও একটারও গায়ের শক্তি কমেনাই বুঝা যাচ্ছে। যাই হোক এদিকে ঘরের মধ্যে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের মজা নিলে অর্শারে পটামু কখন? অর্শার রাগ ভাঙ্গাতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। তবে দাদাদাদির বক্সিং নিয়ে যা ভাবছিলাম এখন তার থেকেও বেশি সাংঘাতিক। আম্মির চিল্লানো শুনে সবাই সেখানে গেলো। আমি যাইনি কারণ আমি জানি ওখানে কি চলছে। আব্বুও চলে এসেছিলো ইতিমধ্যে।
দেখছো বুড়াবুড়ির কান্ড। এই বয়সে এভাবে মারামারি করলে তো মাজার হাড় একটাও আস্ত থাকার কথা না।(আম্মি) তা বুড়াবুড়ি একজন অন্যজনের উপর এতো ক্ষেপলো কেন?(আব্বু) তোমার গুণের সাগর পুত্র ছাড়া এটা আর কারো কাজ না। ডেকে পাঠাও তো ওরে। আইজকা দেইখা নিবো তিন হাত। আমির? হ্যাঁ আম্মি? কি করছিস এইটা তুই? কই? তোর দাদাদাদির মাঝে মারামারি বাধাইলি ক্যান? না মানে আম্মি এই বুড়া বয়সে হাড়গোড় সব ভাইঙ্গা নিচ্ছে আর তুই মজা নিচ্ছিস? ক্যান কি হইছে? গিয়ে দেখ, ক্যামনে ফ্লোরে গড়াগড়ি করতাছে আর চুল দাঁড়ি টানাটানি করছে। খেক খেক খেক। তোর আব্বা ডাকছে।
ইস, খাইছে রে। আজ মার একটাও মাটিতে পড়বেনা। জুতা আজ দশ জোড়া আমার পিঠে ছিড়বে সন্দেহ নাই। আম্মির ভয় দিয়ে লাভ নাই। কারণ আব্বাই ডেকে পাঠাতে বলছে আমারে। আম্মিরে বললাম যে আসছি তুমি যাও। তারপর যে আমি কই গেলাম কোই নাহি জানতা। বাপে লোক লাগাইছে আমার খোজ করার জন্য। উহু তাতে কি, আমার বাপ ক্যান,আমার চৌদ্দ গুষ্টি খুঁজলেও আমারে পাইতন্ন। আমি আমার সামনেও আমারে ধরা দেবোনা, শুধু কমু আমি কুতাই?