গতকাল সারারাত মুভি দেখে আজকে দুপুরে ঘুম থেকে উঠলাম। ওঠে প্রথমেই ফোন হাতে নিয়ে দেখি আম্মা অনেকবার কল করেছে। ব্যাক করলাম।
– হ্যালো আম্মা,
– তর কোন খোঁজ নাই ক্যান? কোথাও গিয়েছিস?
– যাবো আবার কোথায়? তোমার ভাই আমাকে গতমাসে বলছিলো টাকা পাঠাবে, এখনো খোঁজ নাই। আমার হাতে এক টাকাও নাই। সকালে নাস্তা করিনাই এখনো।
– এখন সকাল!? চাকুরী বাকুরী কিছু কর তাহলেই তো হয়? প্রতি মাসে আমার ভাই টাকা দিবে ক্যান?
– ওহ!!! তুমিই তাহলে বাজেট বন্ধ করছো? ভালো ভালো, বিয়ের পর তো খালি হাতে চলে আসছিলা। আমার বাপ বোকা সোকা মানুষ তাই কিছু বলেনি। অন্যান্য খালাদের টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি সব দিয়ে বিয়ে দেয়া হইছে। আর এখন আমাদের কিছু দিলেই লেগে যায়। ছাড়বো না দেইখো।
– হারামজাদা তর বাপ আজ অবধি এই কথা বলার সাহস পায় নাই আর তুই!!!! তবে রে! আমার বাপ আছিলো বলে এই, আমার ভাই ছিলো বলে সেই। তা না হলে রাস্তায় থাকতি তরা। এইটা ওইটা হ্যান ত্যান ইত্যাদি।
ইচ্ছে করেই আম্মাকে প্লে করলাম। এখন একেবারে কেঁদে টেদে অবস্থা খারাপ করবে। আমি আম্মার সাথে এটাই করি, ভালো লাগে। সময় কাটে অনেক। যদিও কাল টাকা হাতে চলে আসবে। আর হা পাঠক ভাই ব্রাদার্স, দয়া করে মায়ের কাছে মামুর বদনাম করবেন না। তাহলে গেছেন বলে দিলাম। মায়েরা বাপ ভাই নিয়ে বদনাম শুনতে পছন্দ করেনা। আব্বু অসুস্থ হওয়ার পর মামা তারাই আমাদের দেখছেন। আমি পড়াশোনা শেষ করে শহরে চাকুরীর জন্য বসে আছি। একটা চিলেকোঠার রুম ভাড়া করে। ঘুমাই আর খাই আরকি। হাফ প্যান্টের পকেটে দশ টাকা আছে, সিগারেট দিয়ে চা খেতে পারবো। নিছে নামলাম। মধ্য দুপুর, সূর্য মাথার একদম বরাবর। বাহিরের আলোতে চোখ ঝিমঝিম করছে। গেলাম একটু সামনে টং দোকানে, এক কাপ চা আর একটা সিগারেটেই যেনো আজ আমি অভ্যস্ত। আগে এমনটা ছিলামনা। বাপের টাকা উড়াইয়া খেতাম। এখন খুব সেন্সেটিভ। মামার টাকায় চলাটা লজ্জার, খুব লজ্জার। আর চাকুরী এতো সোজা না, অনেক খুঁজেও কূল কিনারা পাচ্ছিনা। ওসব হবেনা আমার দ্বারা।
দোকান থেকে বের হয়ে হাঁটছি রাস্তায়। হঠাৎ হুড়মুড় করে কে যেনো আমায় জাপটে ধরে ফেলেছে। চোখ বুঁজে ফেললাম। আমার হার্টবিট কয়টা মিস করছি জানিনা। হয়তো সাময়িক হার্ট এট্যাক করেছিলাম। আমার হাইট পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি, তাই যে জাপটে ধরছে সে একদম আমার বুক অবধি, মনে হচ্ছে পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি। চুলে শ্যাম্পু করা, গায়ের পারফিউম আর শ্যাম্পুর পারফিউম মিলে মাতাল করা ঘ্রাণে বুঝলাম এটা একটা মেয়ে। এখন চোখ খুললাম, মেয়েটা বিড়বিড় করে বলতেছে তুমি এতদিন কোথায় ছিলা ফাহাদ? বলো আমাকে, বলো? বলোনা? আমি বুঝলাম এটা রং নাম্বার।
– প্লিজ ছাড়েন আমাকে, আপনি ভুল করছেন আই এম নট ফাহাদ। দাড়ান আইডি কার্ড দেখাচ্ছি। ওহ! আইডি কার্ড তো বাসায়। আপনি ছাড়েন।
– না তুমি যাবেনা, আমি ছাড়বোনা।
কী মুশকিল! গরমে ঘেমে যাচ্ছি আমি। মেয়েটা ছাড়ছেও না কেউ ওরে ছাড়াচ্ছেও না। আরেকটা মেয়ে আর মহিলা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আইসা ঐ মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়েই ওরে টানতেছে। আমি বললাম,
– আপনারা ওনার সাথে অথচ ওরে ছাড়াচ্ছেন না ক্যান? পাগল নিয়ে বাহির হন ক্যান?
– দুঃখিত ভাইয়া ও পাগল না। আসলে আমারও প্রথমে আপনাকে ফাহাদ মনে হচ্ছিলো।
– মানে কী! সবাই পাগল দেখছি। ছাড়েন আমায় যেতে দেন। কোথা থেকে যে জুটে।
এই বলে চলে আসতেছি। আবার পেছন থেকে পাগল মেয়েটা আমার হাত ধরে ফেলছে। দৌড় দিবো ভাবছিলাম সময় দেয়নি। আবার বলতেছে ফাহাদ তুমি যেয়োনা। তুমি আমার সাথে চলো। এবার সাথের মহিলাটা হাত জোড় করে কেঁদে আমাকে বলতেছেন বাবা আমরা দুঃখিত। একটা সাহায্য করেন, আমার মেয়েকে গাড়ি পর্যন্ত এনে দেন। মেয়েটা আপনাকে ফাহাদ মনে করেছে। ছেলেটা একদম আপনার মতোই দেখতে ছিলো।
গাড়ি পর্যন্ত ক্যান যেনো আসলাম। অনেক বড়লোক ফ্যামিলি বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু ওই মেয়েটা আমাকে ছাড়া গাড়িতে উঠছেই না কি অদ্ভুত। মহিলাকে বললাম আপনাদের বাসা কোথায়? উনি বললেন, কাছেই মোহাম্মদপুর। আমিও উঠলাম কারে। তিনজন গিজগিজ করে বসলাম। সামনে মহিলা। মনে ভয়ও হচ্ছে আমার। পাগল মেয়েটা আমার হাত জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আমার কাধে, বিড়বিড় করে বলতেছে এবার আর যেতে দেবোনা তোমায়। একদম নিষ্পাপ আচরন। বাসায় গেলাম। গাড়ি থেকে নামালাম। লিফটে করে দ্বিতীয় তলায় আসলাম। বিশাল বড় বাসা। সবাই ইতস্তত বোধ করতেছে, আমাকে কীভাবে বোঝাবে ব্যাপারটা। আমি বললাম আন্টি আমি বুঝতে পারছি ওনি মানুষিক ভাবে একটু সিক। আপনারা আমাকে নিয়ে ভাববেন না। ওনার রুমটা দেখান আমি ওনারে রেখে চলে যাচ্ছি। মেয়েটা আমার কাধেই আধো আধো শুয়া। ওরে কোনরকম রুমে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বললাম আমি আছি তুমি ঘুমাও বলে হাত ছাড়িয়ে আস্তে করে চলে আসলাম। আন্টি আমাকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন বুঝতেছেন না। আমি বললাম আন্টি প্লিজ আমি জাস্ট আপনাদের সাহায্য করেছি। পরে উনি নাম্বার খোঁজলেন, নাম্বারটা দিয়ে বের হয়ে আসলাম। পকেটে আর টাকা নাই। হেটে যাচ্ছি আর ভাবছি। আসলে কত বিচিত্র মানুষের জীবন। বাসায় যেতে না যেতেই আননোন নাম্বার থেকে ফোন। রিসিভ করতেই বলতেছে বাবা তুমি কোথায়? আমি গল্পের আম্মু। আমি বললাম গল্প কে আমি চিনিনা, রং নাম্বার। আরে আরে আরেকটু আগে যে বাসায় আসলা। ওহ্ সরি আন্টি বলেন।
– তুমি একটু আসো না বাবা। ও পাগলামী করতেছে ঘুম থেকে উঠে তোমায় না পেয়ে, আজ তোমাকে দেখে পাগলামীটা বেড়ে গেছে।
ঠিক আছে আন্টি আসতেছি বলে রাখলাম। মেয়েটার নাম গল্প। কি বিপদে পড়লাম বুঝতেছিনা।
তাড়াতাড়ি গোসল দিয়ে রেডি হয়ে গেলাম বাসায়। গিয়ে দেখি বাসা পুরো মাথায়। আমায় দেখেই আবার জড়িয়ে ধরে খুব শাসনের স্বরে বললো তুমি বারবার কোথায় যাও? এই কুত্তা আর যদি যাও মরে যাবো আমি। কোনরকম বুঝালাম। আমি বললাম, আসো তোমায় খাইয়ে দেই। ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে খাইয়ে দিচ্ছি আমি। সবাই হা করে দেখতেছে। আমি অনেকদিন আব্বুকে, আম্মাকে, ছোট বোনকে অসুস্থ থাকলে খাইয়ে দিয়েছি। খুব একটা আনইজি লাগছেনা কিন্তু একটা ঘোরের মধ্যে আছি এটা বলা যায়। ওরে খাইয়ে দিয়ে আমিও খেলাম পেট ভরে। রুমে এসে বসলাম, এসির বাতাসে খুব আরাম লাগছে। পেট ভরা আর শান্তির বাতাস এসব আজকাল পাইনা খুব। গল্প আমাকে ওর ফোনে ফাহাদের ফটো দেখাচ্ছে। বলছে দেখো কতদিন আগে তুলছিলাম আমরা এই পিকটা। আর তুলিনি। এইবার বড়সড় ঝটকা খেলাম। আজকে বুঝলাম পৃথিবীতে একইরকম দেখতে মানুষ আছে। কোন অমিল খোঁজে আমিই পাচ্ছিনা আর এই মেয়ে কীভাবে পাবে? ফাহাদের হিস্ট্রিটা আমি এখনো জানি না। গল্পকে ঔষধ খাইয়ে, ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে আবার ঘুম পারালাম। এবার ড্রয়িং রুমে আন্টি আঙ্কেল সবার সাথেই পরিচয় হচ্ছে। সবাই আমার প্রতি খুব অপরাধীর মতো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। ভাল্লাগছেনা। আমি আমার ঠিকানা, উদ্দেশ্য সব বললাম। আঙ্কেল আমাকে চাকুরীর আশ্বাস দিলেন এবং এই বাসায় উঠতে খুব আকুতি মিনতি করলেন। উনার মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে এই বলে।
পরেরদিন সব গুছিয়ে এই বাসায়। নতুন পরিবেশ। বাড়িতে কাউকে কিছু জানাই নি। আমার জন্য বিশাল একটা রুম। চাকুরীর নিশ্চয়তা খাবারের কোন চিন্তা নাই। এতসব একসাথে পেয়ে যাবো কল্পনাও করিনি কিন্তু যতটুকু এক্সাইটম্যান্ট হওয়ার কথা, হচ্ছিনা ক্যানো যেনো। গল্প মেয়েটা মনে হচ্ছে অর্ধেক সুস্থ আমাকে পেয়ে। এটা সেটা কত রান্নাবান্না করতেছে। কত সেবা। মেয়েটাকে এখনো ভালো করে দেখিনি। আমি চেহারার দিকে তাকাতে পারি না ক্যানো জানি। আজ অনেক কিছু দিয়ে রাতের খাবার খেলাম। গল্পকে খাইয়ে দিলাম। ওর রুমে এসে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি কখনো ওর রুমের দরজা আটকাইনা। কোন প্রকার সন্দেহের মধ্যে আমি ঢুকতে চাচ্ছিনা, যদিও সবাই অনেক বিশ্বস্ত। গল্প আমাকে বলতেছে ওর কাছে শুয়ার জন্য, আমি বললাম আমরা বিয়ে করে তারপর শুইবো একসাথে, ঠিকাছে সোনা? এখন লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পরো। গল্প ঘুমিয়ে আছে। আমি ওর ফোনটা নিলাম। ফাহাদের অনেক ছবি। যেগুলো আমার সাথে হালকা অমিল এরকম ছবিগুলো বেছে ডিলিট করে দিয়েছি। আমার ছবি অনেক ফোল্ডারে এড করলাম। ফাহাদ আর গল্পের সমস্ত মেসেঞ্জারের চ্যাটিং দেখলাম। তাদের কথাবার্তার ধরন। কোথায় কোথায় মিট, কী কী প্ল্যানিং। লাইফ লাভ এব্রিথিং বসে বসে পড়লাম। হঠাৎ গল্পের মা রুমে ঢুকলেন। মহিলাটা শুধুই আমাকে বারবার বলে তুমি খুব কষ্টে আছো তাইনা বাবা? আমি এবার বলেই দিলাম, দেখেন আন্টি আমি খাওয়া চাকুরী থাকা সবটার বেনিফিট আপনাদের কাছ থেকে পাচ্ছি তাহলে কষ্ট ক্যান হবে আন্টি? আমি ভালো আছি। আর গল্প সুস্থই তো প্র্রায়। আচ্ছা ফাহাদ কোথায়? এই কথাটা শুনার পর আন্টি আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন। তারপর বললেন, তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। ছয় বছরের সম্পর্ক ছিলো। ফাহাদের পরিবার পাশের ফ্ল্যাটেই ছিলো। গত বছর গল্প আর ফাহাদ একসাথে বাইক এক্সিডেন্ট করে বিয়ের দুদিন আগে। পরে ছেলেটা মারা যায়। ওদের পরিবারও এখান থেকে চলে যায়। তাদের একমাত্র সন্তান ছিলো ফাহাদ। আমরা গল্পকে সত্যটা জানায়নি বাবা। ও অনেকটাই আলবোলা হয়ে গেছে। অদ্ভুত আচরন করে। ও জানে ফাহাদ ওকে ছেড়ে চলে গেছে, কিন্তু বিশ্বাস করেনা।
আমার রুমে চলে আসলাম। গল্পের ফোনটা আমার হাতে। অনেক কিছুই জানলাম ওর ম্যাসেজিং, চ্যাটিং এসব হিস্ট্রি থেকে। ফাহাদের আইডিটা এখনো ইনাবল, ওর লাইফস্টাইল ইত্যাদি ইত্যাদি সব ঘাঁটলাম। মাঝরাতে একবার গল্প দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠেছিলো। এটা নাকি প্রায়ই হয়। এক্সিডেন্টের মোমেন্টাই দেখে স্বপ্নে। তারপর একটা ইনজেকশন না দিলে থামানো যায়না। কিন্তু আজ আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই শান্ত হয়ে গেলো মেয়েটা। আমি আজকাল ভুলেই গেছি আমি রবিন। আমিই যেন এখন ফাহাদ হয়ে গেছি। ফাহাদের আইডিটা থেকেই গল্পের সাথে চ্যাটিং করি। আইডিটার পাসওয়ার্ড ইমেইল গল্পের ফোনের ইনবক্সে সেভ করা ছিলো। গল্প আইডিটাতে ঢুকে নাই কখনো। সে নাকি ফাহাদকে অবিশ্বাস করতোনা তাই ঢুকেনি কোনদিন। আইডিটা অনেক মডিফাই করলাম। ফ্রেন্ড লিস্ট খালি করলাম। অন্যান্য পোস্ট ম্যাসেজিং সব ডিলিট করলাম। প্রাইভেসি স্ট্রং করলাম। নামটাও চেঞ্জ করলাম। যেনো কেউ না বুঝতে পারে মৃত্যু আইডিটা ইউজ হচ্ছে। এখন আমিই ফাহাদ। আর সত্য এটাই যে আমি গল্পকে ভালোবেসে ফেলেছি। মেয়েটার কাছাকাছি থাকতে থাকতে আমি এতটাই আপন করে ফেলেছি যে ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারিনা। এখন আমি ওরে মন ভরে দেখি। তার চোখ তার চুল তার কথা বলা তার হাসি সবটাকেই খুব বেশি ভালোবাসি আমি।
ওকে নিয়ে আগের সমস্ত জায়গায় বেড়াতে যাই। খাই, ঘুরি বিন্ধাস জীবন। আমার চাকুরী আপাতত এটাই। যখন যত টাকা লাগছে পাচ্ছি। বাড়িতেও টাকা পাঠাচ্ছি।
আজকাল রবিন বলে কেউ ডাকলে আর সাড়া দেইনা। আমি পুরোদস্তুর ফাহাদ। গল্প একটা মুহুর্তের জন্যও ফাহাদের কোন ঘাটতি পাচ্ছেনা আমার মধ্যে। জীবনটা অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে। ভাবতেছি গল্পকে বিয়ে করে ফেলবো। গল্প এখন পুরোপুরি সুস্থ। বলা যায় আগের চাইতেও অনেক হ্যাপি। একটা প্ল্যান করলাম গল্প যেখানটায় বেড়াতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছিলো সেখানটায় নিয়ে গিয়ে একবার ঘুরে আসবো। তাহলে হয়তো দুঃস্বপ্নটা মুছে যাবে। কালই গাড়ি নিয়ে বের হবো।
আমরা গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম। ওপরের প্রত্যেকটি কথা রবিনের ডায়েরীতে লিখা ছিলো। বাকিটা আমি বলতেছি। আমি গল্প। না আমাদের এই বিয়েটাও হয়নি। বিধাতার কি অদ্ভুত লীলা আমরা সেই যায়গা ঘুরে আসার পথে সেদিন আবারও এক্সিডেন্ট করি। বিপরীত দিক থেকে একটা মাইক্রো এসে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা মেরে গাড়ির ওপরে ওঠে গিয়েছিলো। আমি মাথায় একটা ঝটকা আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফেরার পর আমি গাড়ির ভেতরেই ছিলাম। আমার এখন প্রথম এক্সিডেন্টের ঘটনা মনে পরে গেলো। সেদিনের স্মৃতিশক্তি ফিরে পাই। পাশে তাকিয়ে দেখি রবিন স্টেয়ারিংএ মাথা ঠুকে শুয়ে আছে। ওরে হাত দিয়ে সোজা করতে গিয়ে লক্ষ করি গেয়ার বক্সের পাশ কেটে একটা রড বের হয়ে রবিনের বুকের ভেতর ঢুকে গেছে। আমি সেবার আর চিৎকার করার সুযোগ পাইনি। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলি। ডায়েরী থেকে জানতে পারি সেদিন আমার সাথে রবিন ছিলো। সমস্ত কিছু আবার জানতে পারি এই ডায়রীটা পড়ে, আর মায়ের কাছ থেকে। কিন্তু রবিনের কোন স্মৃতিই আর মনে পড়ছে না। আমি শুধু জানি আমি ফাহাদকেই সেদিন হারিয়ে ফেলেছি চিরতরে। সৃষ্টিকর্তা দুটো রহস্যময় গল্পের জন্ম দেয়ার জন্যই হয়তো আমাকে গল্প হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। আর কোন রহস্যময় গল্পের জন্ম হবেনা, আমি হতে দিবোনা। কথা দিলাম।