আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে। চাওয়া পাওয়া গুলো খুব ছোটখাটো। অল্পতেই খুশি হই। সবাইকে খুব সহজেই বিশ্বাস করি। হইচই আড্ডাবাজিতে হারিয়ে যেতে ভালবাসি। ক্যাম্পাসে আমার নাম মিস পকপকি… হা হা হা।
এই ক্যাম্পাসেই আমি প্রেমে পরলাম। আমার ২১ বছরের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে তাকে ভরিয়ে দিলাম। যখন সে আসতো নিজ হাতে তাকে খাওয়াতাম… নিজ হাতের রান্না… আর ভাবতাম অনেক সুখী আমি। … একদিন জানতে পারলাম সে শুধু আমারি নয়, আরো অনেকজনের হাতের রান্না খায়। আরো কয়েকজনের হাতে হাত রেখে ভালবাসার কথা বলে। ………
আমার পুরো পৃথিবী ফাঁকা হয়ে গেল। কাঁদতেও পারতাম না। বিশ্বাসই হতোনা ও একটা প্রতারক। গভীর রাতে হোস্টেলের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করতাম… কেন এমন করলে?????
অনেকগুলা মাস চলে গেল। আস্তে আস্তে ভুলতে লাগলাম সবকিছু, কিন্তু মনের গভীরে চাপা একটা ভয় ছিল… আর কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করতো না। একদিন রাতে ঘুম আসছিল না। কি মনে করে মোবাইল টা হাতে নিয়ে mig33 তে ঢুকলাম। বুয়েট রুম, মেডিকেল রুম সবগুলোতে ঢুকছি আর বের হচ্ছি।
হঠাৎ একটা নক… কথায় কথায় জানতে পারলাম ও বুয়েটে পড়ে। আমি মেডিকেলের স্টুডেন্ট শুনে ও বলল, ওর আব্বুও mmc থেকে পাস করেছেন। আর আমার নাম হুমায়রা শুনে দুষ্টামি করে বলল হুমি পাখি। এত মিষ্টি করে কেও কখনো ডাকেনি আমাকে। আর আমি ওর নাম দিলাম পচকু ভম্বুল।
এরপর চ্যাট, ফোন এ কথা… কিন্তু তখনো আমি ভাবিনি কাওকে আবার ভালবাসবো। ওকে আমি আমার সব কথা বলেছিলাম। তাই অনেক অবাক হলাম, যেদিন বুঝতে পারি ও আমাকে পছন্দ করে। ও আমাকে বলল যেইদিন আমাদের ১ম দেখা হবে, ঐদিন আমার উত্তর শুনবে। Answer না হলে আর কখনো আমার সামনে আসবেনা।
যথারীতি ময়মনশিংহ থেকে ঢাকা রওনা দিলাম একদিন। ও আমাকে রিসিভ করতে এলো। কি হাশিখুশি সরল একটা মুখ!!!!! চোখ দুটিতে শুধুই নির্মল বন্ধুত্ব, কোন নোংরামি নেই। সেইদিন খুব গুমোট আবহাওয়া ছিল… হঠাৎ বৃষ্টি নামল… বাতাসের তোড়ে আমার ছাতা উল্টো হয়ে উড়ে গেল। বৃষ্টি আর বাতাসে অস্থির হয়ে কখন যে ওর হাত ধরে দৌড়াতে শুরু করেছি নিজেও জানিনা… খেয়াল হতেই অনুভব করলাম ওর হাতে আমার হাতটা কি পরম নিশ্চিন্তেই না রেখেছি। একসময় ঢাকা ফেরার সময় হল। গাড়ি নিয়ে এসেছিল ও। ও খুব ঘেমে যায় অল্পতেই। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে দরদর করে ঘামছিল… আর আমি সারাটা পথ ওড়না দিয়ে ওর ঘাম মুছে দিয়েছি। ও আমার জন্য এক ডজন লাল চুড়ি এনেছিল… বৃষ্টিতে ভিজে চুড়ির লাল রঙ উঠে হাত মাখামাখি! তাই দেখে ওর কি লজ্জা! সেইদিন আমরা কেও কাওকে মুখে বলিনি ভালবাসি, শুধু অনুভব করেছিলাম একজন আরেকজনকে। কেন জানি মনে হচ্ছিল ওর জন্যই খোদা আমাকে পাঠিয়েছেন। আমরা দুজন দুজনকে বিশ্বাস করেছিলাম। এবং সেই বিশ্বাস আজো আছে। ঐদিন টা ছিল ১৭ই জুন। আর আজ ১৭ই জুন…… বছর ঘুরেছে… আমার জীবনের বাকি বছর গুলাতেও ওর হাত ধরে কাটাতে চাই। সাকিব… আমার রাজপুত্র…… তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি পচকু ভম্বুল…
তোমার জন্য…
তোমার হুমি পাখি…
লিখেছেন – হুমাইরা