শাল টা গায়ে মুড়িয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছিল ফারাবি। “কোথায় যাচ্ছেন? কথাটা শুনে দাড়িয়ে যায় ফারাবি। এত ভোরে অধরা উটে যাবে ভাবেনি ফারাবি। কারন অনেক পথ পাড়ি দিয়ে কাল বাড়ি থেকে ফিরে।
“তুমি এত সকালে?
“হুম আমার এইখানে ঘুম আসছিল না।
“হুম নতুন পরিবেশ নতুন জায়গা। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
“হুম। কোথাই যাচ্ছেন?
“হাঁটবো এই শীতের সকালে হাঁটতে আমার বেশ ভালো লাগে তাই আমি হাঁটতে যাচ্ছি।
“আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন? আমার না এইখানে ভালো লাগছে না দম বন্ধ হয়ে আসছে।
মেয়েটার চোখে এক অন্য রখম আকর্ষন আছে মায়া আছে। আর সেই মায়া মায়া চোখ দুটি নিয়ে ফারাবির দিকে তাকিয়ে আছে। তার ঐ মায়ার চোখের কারনে ফারাবি আর না করলো না। “হুম চলুন। অধরা আর ফারাবির বিয়ে হয়েছে আজ তিন দিন। ফারাবির বাড়িতে ভালো লাগছিল না তাই বিয়ের ২য় দিনেই চিটাগাং চলে আসে অধরাকে রেখে আসতে চাইলে মা বাবার জোড়া জোড়িতে সাথে নিয়ে আসতে হয় ফারাবিকে। “চাচা দুটা চা দিন তো। ফারাবির সাথে অধরাকে দেখে রহিম মিয়া হা করে তাকিয়ে তাকে। “কে ভাজান এডা? রহিম মিয়ার এমন প্রশ্নে ফারাবি ঠোট দুটি একটু বাঁকা করে মুচকি হাঁসে।
“চাচা আগে চা দিন। চা খেতে খেতে না হয় বলি?
“হু ভাজান।
রহিম মিয়া অতি তাড়াতাড়ি চা বানান। চা বানিয়ে অধীর আগ্রহ নিয়ে ফারাবির দিকে তাকায়।
“এই নাও ভাজান।
“দেন চাচা। চাচার হাত থেকে চা দুটো হাতে নিলো ফারাবি।
“এই নিন।
“ধন্যবাদ।
“চাচা এই আপনার বউ মা।
কথাটা শুনে রহিম মিয়া কিছুটা অবাক হয়। আর অবাক চোখ নিয়ে ফারাবিকে বলে,
“কি ভাজান বিয়া কইরা পেলছো এই চাচারে একবার কওনবার পারলা না।
“আসলে চাচা সব কিছু হুটহাট করে হয়ে যায়। কাউকে বলার সুযোগ টায় পেলাম না।
“মা কি নাম তোমার?
“জ্বি চাচা আমার নাম অধরা। অধরা চৌধরী অন্তি।
“ভারি সুন্দর নাম মা।
“ধন্যবাদ চাচা।
“আচ্ছা চাচা আজ উটি। তা না হলে শহর ঘুরাটা মাঠি হয়ে যাবে।
“হ ভাজান।
“এই নিন চাচা।
“কি করছো ভাজান। আমার দোকানে মেহমান আনছো ভালো মন্দ কিছুই তো খাওয়াতে পারলাম না একদিন বাসাই বউ মারে লইয়া আইসো ভালো মন্দ কিছু রান্না কইরা খাওয়ামো। আর এই টাকা তোমার কাছে তাক।
“কিন্তু।
“কোনো কিন্তু না ভাজান।
“আচ্ছা।
“মা একদিন সময় কইরা আমাগো বাসাই আইসো।
“জ্বি চাচা অবশ্যয় আসবো।
“আল্লাহ তোমাগো খুশি রাখুক।
“আচ্ছা চাচা আজ আসি অন্য একদিন আসবো। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ হাফিজ। আসসালামু আলাইকুম।
“হুম মা। আল্লাহ হাফেজ।
মেয়েটা মায়ার সাথে মেজিকও জানে মনে হয়। কারন একটা অচেনা অজানা একটা মানুষকে কত তাড়াতাড়ি আপন করে নিল।
“চলুন। অধরার কথায় ঘুর কাঠে ফারাবির।
“হুম।
“মানুষটা অনেক ভালো।
“হুম। যেদিন প্রথম আমি এই শহরে আসি সেদিন আমি রহিম চাচার গাড়িতে উটি। সেদিন তার সাথে অল্প একটু কথা হয়। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। কিছুদূর হাঁটার পর রাস্তায় কিছু মানুষগোল করে দাঁড়ায় আছে। কৌতূহল বসত আমিও সেদিকে এগিয়ে গেলাম। যাওয়ার পর দেখি রহিম চাচা। মাটিতে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছেন কেউ তাকে ধরছেন না। আমি ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। চাচাকে সেলাইন দেওয়া হয়। একটু পর জ্ঞান ফিরলে ডাক্তার আসেন চেক-আপ করতে। “এখন কেমন লাগছে। “জ্বি ডাক্তার সাহেব এহন ভালোই লাগতাছে। “এই বয়সে এসব কেন করছেন? আজ যদি ছেলেটা আপনাকে সময় মত হাসপাতালে না নিয়ে আসতো তাহলে আপনাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না আপনি মারাও যেতে পারতেন। আজ থেকে এসব ভারি কাজ আর করবেন না। “এসব না করলে খাওম কি ডাক্তার সাহেব। কথাটা শুনে ডাক্তার আর কিছু বললেন না। “আপনি এখন বাসায় যেতে পারেন। ডাক্তার আমাকে ডাক দেয়, “এই ছেলে ওনাকে বাসায় নিয়ে যাও। “জ্বি ডাক্তার সাহেব। সেদিন রহিম চাচাকে আমি তার বাসায় দিয়ে আসি। তার কিছুদিন পর আমি আবার রহিম চাচার বাসায় যায়। চাচির সাথেও কিছুসময় কথা বললাম কথার মাঝে জানতে পারলাম তাদের দুইটা ছেলে আছে একজন দেশের বাইরে যাওয়ার ১ বছর পর্যন্ত তাদের সাথে ছেলেটার যোগাযোগ হয়। আর কোনো খুজ পায় না ছেলেটার হঠাৎ একদিন কল করে বলে সে ঐখানে বিয়ে করে ফেলেছে। আর দ্বিতীয় ছেলে বউকে নিয়ে ঢাকা থেকে তাদের কোনো খবর নেয় না। আমি বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছিলাম রহিম চাচার জন্য আর সেই টাকা দিয়ে ওনাকে এই ছোট্ট চায়ের দোকান টা খুলে দেয়।
অধরা কিছু বলে না শুধু ফারাবির দিকে এক নজর তাকায়।
“চল অনেকটা সময় হয়ে গেছে। বাসায় যাওয়া যাক।
“হুম।
অনেকদিন যাবৎ রহিম চাচা বার বার তাগিদ দিচ্ছে ফারাবিকে। অধরাকে নিয়ে তার বাসায় যাওয়ার জন্য। কাল অফিস বন্ধ কাল যাবে রহিম চাচার বাসায়। বাসায় কলিং বেল চাপতেই অধরা দরজা টা খুলে দিল। আজ এক মাস যাবৎ এই কলিং বেল একবার থেকে দুইবার চাপতে হয় না ফারাবির। একটা সময় অফিস করে এসে দরজা খুলতেও তার অনেক বিরক্ত লাগতো। এখন সেই বিরক্তি থেকে থেকর বেচে যায়। মা বাবাকে আর একটা ধন্যবাদ দিল ফারাবি।
“কেমন আছো।
“জ্বি আলহামদুল্লিহ ভালো।
“তাহলে চল একটু শফিং এ যাব।
“কেন? আমার তো কিছু লাগবেনা।
“তুমি তৈরী হইয়ে না আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
“রেড়ি?
“হুম চলুন। রিক্সা চলছে আপন গতিতে। অধরা বার বার ফারাবির দিকে তাকাচ্ছে। তার চেহারা ফারাবি দেখছি না কিন্তু চোখ দুটি দেখছি। যে চোক দুইটা প্রশ্ন করছে কিন্তু বুঝতে পারছেনা ফারাবি। যদি চেহারাটা দেখতাে তাহলে অবশ্যয় চেহারার সাথে প্রশ্নটাও দেখতে পেতাে। আসলে প্রিয়জনদের চেহারা দেখলে অনেক কিছু বুঝা যায় তারা কি বলতে চায়। এই কয়দিনে ফারাবি অধরাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন মেয়েটার সব কিছু ফারাবির ভালো লাগে। অধরার জন্য একধরনের অস্তিরতা কাজ করে। আগে অফিস ছুটির অনেকপর বাসায় যেত। আর এখন কখন অফিস ছুটি হয় তার অপেহ্মা করে। বাবা মাকে আবার আরও একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার তার জীবনে এমন কাউকে উপহার দেএয়ার জন্য। “অধরা। ফারাবি অধরাকে ডাকলে অধরা তার দিকে তাকায়।
“হুম বলুন।
“তোমার চোখ দুটো কিছু জানতে চায় আমার কাছে যা আমি বুঝতে পারছিনা। তুমি কি আমাকে একটু সহজ করে দিবা তোমার চোখ কি বলতে চায়?
ফারাবির কথা শুনে অধরা হাসে। শব্দ না হলেও তার চোখ দুটি নড়ে।
“হুম। আমরা শফিং কেন যাচ্ছি?
“অনেক দিন যাবৎ রহিম চাচা বার বার বলছিল তার বাসায় যেতে তাই ভাবলাম কাল তো অফিস বন্ধ কাল তার বাসায় যাব। তাই তাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য আমরা শপিং যাচ্ছি।
অধরা মনে মনে ভাবতে তাকে আসলেই মানুষটা ভালো। না ভালো বললে ভুল হবে অনেক ভালো।
“অধরা তুমি কি রেডি হয়েছো নাকি আর একটু সময় লাগবে?
“না হয়ে গেছে চলুন।
এরপর তারা রহিম মিয়ার বাসায় যায়। তাদের দেখে রহিম মিয়া অনেক খুশি হয়।
“চাচা চাচি কয়?
“আছে ভিতরে আছে। বউমা আসো ভিতরে আসো।
“হুম চাচা। চাচা এটা আপনার জন্য।
অধরা নিজ হাতে রহিম মিয়ার হাতে একটা পান্জাবি আর একটা লুঙ্গি দেয়। কাল রাতে ফারাবি তাকে বলে সে যেন নিজ হাতেই তাদেরকে দেয়।
“কি দরকার ছিল মা এসবের তোমরা আইছো এটাই অনেক।
“কেন এটা যদি আপনার ছেলের বউ দিত তাহলে কি আপনি এই কথাটা বলতেন?
রহিম মিয়া কিছু বলার নায়। কেন যেন আজ মনে হচ্ছে সে তার ছেলে মেয়েকে খুজে পেয়েছে।
“কি চাচা কান্না করেন কেন। আপনার ছেলে আর বউ মার জন্য দোয়া করবেন না?
“সত্যি মা আজ আমার আর কিছুর অভাব নেয়।
“হয়ছে। চাচি কোন দিকে এটা বলেন।
“এই তো এদিকে।
“হুম আপনারা কথা বলুন আমি চাচিকে দেখে আসি।
অধরা রহিম মিয়ার স্ত্রীর কাছে চলে যায়।
“ভাজান।
“হুম চাচা বলুন।
“মায়াটা অনেক ভালো কখনো কষ্ট দিয়ো না।
“হুম চাচা। আসলেই মেয়েটা অনেক ভালো।
খাওয়া ধাওয়া করে রহিম মিয়ার বাসা থেকে বিদায় নেয় ফারাবি আর অধরা।
“অধরা।
“হুম?
“তুমি কি ক্লান্ত?
“না কেন?
“তোমাকে আর একটা জায়গায় নিয়ে যাব।
“কোথাই।
“চল।
অধরা আর ফারাবি রিক্সাতে উটে। কিছুদূর যাওয়ার পর ফারাবি রিক্সাটাকে দাঁড় করাই।
“অধরা তুমি একটু বস আমি এখনি আসছি।
“কোথাই যাচ্ছেন।
“চিন্তা করো না। আমি এখনি আসছি।
ফারাবি একটা টেইলার্স এর ভিতর থেকে কিছু বেগ নিয়ে রিক্সাতে উটে।
“মামা চল।
“কি এগুলো।
“আগে চল তারপর দেখতে পাবে।
অধরা আর কিছু বলল না। একটু পর তাদের রিক্সাটা একটা এতিমখানার সামনে দাড়াঁলে অধরা ফারাবির দিকে তাকায়।
“চল।
অধরা বাক শক্তি যেনো হারিয়ে পেলেছে। কথা বলতে পারছে না। তারা ভিতরে প্রবেশ করতেই ফারাবিকে দেখে সব বাচ্চা দূরে তার দিকে এগিয়ে আসে।”কেমন আছো সবাই?
“ভালো তুমি কেমন আছো ভাইয়া?
“ভাল।
“ভাইয়া।
“হুম?
“এটা কে?
“এটা তোমাদের ভাবি। অধরা বেগ গুলো নিয়ে এদিকে আসো।
অধরা কিছু বলতে পারছে না। শুধু অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে আছে।
“বাচ্চারা যাও এক এক করে সবাই ওনার সাথে পরিচয় হও।
সবাই এক এক করে অধরা সাথে পরিচয় হয়।
“জানো অধরা এদের কেউ নেয়। সময় দেওয়ার কেউ নেয়। তাই আমি যখনি সময় পায় তাদের কাছে চলে আসি।পেকেট গুলো বের কর। আর এক এক করে সবাইকে দাও।
অধরা পেকেট গুলো বের করে সবাইকে একটা একটা করে দেয়।
“ফারাবি।
“হুম?
“ধন্যবাদ।
ফারাবি একটু মুচকি হেসে বাচ্চাদের সাথে খেলতে চলে যায়। আর অধরা দেখতে তাকে মানুষটাকে। আসলেই মানুষটা অনেক ভালো।