অনিবার্য

অনিবার্য

রোগা, শ্যামলা, উসকোখুসকো চুল, পরনে ফতুয়া, প্যান্ট, হাওয়াই চটি, স্টেশন চত্বরে এরকম প্রচুর দ্যাখা যায়। রতন এদের দিকে সাধারণত তেমন নজর করে না, খুচরো পাবলিক শালা। নিংড়ালে দুটো ফাটা দশ টাকার নোট, একটা তামার আংটি আর বড় জোর একটা ট্যারাবাঁকা রূপোর তাবিজ, সব মিলিয়ে পঞ্চাশ টাকাও হয় কিনা সন্দেহ। এইসব ওর পোষায় না। তবে এই লোকটার কাছে একটা ব্যাগ আছে। ব্যাগ অনেকের থাকে, কিন্তু এই চেহারার লোকের কাছে ওরকম পেটমোটা অফিস ব্যাগ! ক্ষেপী ব্যাপারটা দেখানোর পর থেকেই রতন চোখ দুটো এক্কেবারে লোকটার গায়ে সেঁটে দিয়েছিল। প্ল্যান ছিল, লোকটা ট্রেনে উঠলে পিছু পিছু উঠবে। ট্রেন ছাড়বার পর ব্যাগ ছিনিয়ে নেমে ভিড়ের মধ্যে বেপাত্তা হতে কতক্ষণ? কিন্তু দুটো ডাউন ট্রেন পরপর চলে যাবার পরও লোকটা উঠল না। তবে কি রাতের প্যাসেঞ্জারটা ধরবে?

ভিড়টা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চোখে পড়ল জগা ওপারের প্লাটফর্মে মুঙ্গেরির দোকানে বসে চায়ে চুমুক দেবার ফাঁকে ফাঁকে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে, হয়ত টের পায়নি এখনও কিছু, শুধু সন্দেহ, কিন্তু হুটপাট করতে গেলে নজরে পড়ে যাবে। ফালতু ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই, কেসটা বিগড়লে চলবে না। মন বলছে লটারি লেগেছে, একটু ধৈর্য ধরা দরকার। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘ করেছে, হাওয়াটাও গুমোট, বৃষ্টিকি নামবে? মাইকে রাতের লাস্ট ট্রেন আসতে তিন ঘণ্টা দেরী ঘোষণার কথা কানে আসে। লোকটা এতক্ষণ বেশ চুপচাপ বসেছিল স্টেশনের বেঞ্চে, বুকের কাছে ব্যাগটা ধরা, কিন্তু মাইকের খবরে ক্যামন যেন হতাশ হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যাগটাকে দুহাতে আঁকড়ে এগিয়ে গেল গেটের দিকে ।

একটু ঝামেলায় পড়ল রতন। এক্ষুনি লোকটার পিছনে যাওয়া দরকার, কিন্তু মুঙ্গেরির দোকানের ভিতরটা অন্ধকার, জগা কোথায় ঘাপটি মেরে আছে কে জানে? মুখ না ফিরিয়ে চোখের কোণা দিয়ে নজর রাখতে থাকল লোকটার দিকে। ঠিক তখনই শার্টের কোণটা ধরে কে যেন টানল। ক্ষেপী। উফফ, বাঁচোয়া। ইশারায় ওকে লোকটার পিছু নিতে বলে একলাফে নেমে পড়ল লাইনে। ক্ষেপী যখন আছে, লোকটার হদিস ঠিক পাওয়া যাবে। হাবেভাবে তো মনে হলো ট্রেন ধরা জরুরী, স্টেশনে আলবাত ফিরে আসবে। তবে কিছু করার আগে জগার হাত ছাড়ানো দরকার। দু নম্বর প্লাটফর্মে উঠে একবার এদিকে নজর ফিরিয়ে দেখে নিল, লোকটা স্টেশন থেকে বেরিয়ে পার্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আর বেশ খানিকটা পিছনে ক্ষেপী, নিজের প্রায় অচল ডান পাটা টানতে টানতে চলেছে, মুখে পাগলের বিড়বিড়, কিন্তু রতন জানে ওর কপাল ছাড়িয়ে নেমে আসা অগোছালো চুলের ফাঁকে যে ক্ষুরধার দৃষ্টি আছে, সেটা কাটিয়ে ঐ লোকটা বের হতে পারবে না।

আপাতত অপারেশন জগা। একটা ছোট্ট হিসাব নেয়াও বাকি আছে শুয়োরটার কাছ থেকে।

মুঙ্গেরির দোকানের ভিতর কি একটা শব্দ কানে আসে। দ্রুত এগোয় রতন।

(২)

পাগলিটাকে রতনের সাথে গুজগুজ করতে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়েছিল জগা। মেয়েটার মাথা খারাপ হলেও গতরখানা খাসা, মুখটাও বেশ। বেওয়ারিস মাল, কিন্তু আজ অবধি একটু যে সুখ করে নেবে সে ভাগ্য হয়নি শুধু শালা রতনাটার জন্য। সারাদিন চিপকে আছে, রাতেও শালা মাগীটাকে মন্দিরে নিজে গিয়ে রেখে আসে। জগার তলপেটটা শিরশির করে ওঠে। কবে যে একটু হাতে পাবে শালীকে! বাজারে অন্য প্রচুর চিড়িয়া আছে, দানা দিলেই সব আঠা হয়ে লেগে থাকবে, তবু এই পাগলিটাকে কাবু না করতে পারলে জগার শান্তি হয় না। কাল সুযোগ পেয়েও গেছিলো, ইসস, যদি আর একটু সাবধান হতো!

ডাউন ট্রেন আসবে, কাজের টাইম হয়ে গেছে, তবু রতন তার চিরাচরিত তিন নম্বর কামরার কাছে নেই, এটা লক্ষ্য করে এদিক ওদিক দেখতেই তো আশনাইটা চোখে পড়ল তার। পর পর দু দুটো ট্রেন চলে গেল, তবু রতন ষ্টেশনে, আবিরের কাগজের স্টলের পিছনদিকটা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, তবে কি অন্য কিছু? মুঙ্গেরির দোকানের ভিতর দিকে একটু অন্ধকারে ঢুকে গেল জগা।

হঠাৎ চমকে উঠল ও, আরে, পাগলিটা লেংচে লেংচে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। উঠে দেখতে যাবে, তাড়াহুড়োয় দোকানের ছেলেটার সাথে লাগলো এক ধাক্কা। দু চারটে গ্লাস ছিটকে গেল ট্রে থেকে। জগাও উলটে পড়ল পিছনের টেবিলের উপর। ঘুরে উঠে ছেলেটাকে একটা কষে থাপ্পড় মারতে গিয়ে থমকে গেল ও। সামনে রতন।উবু হয়ে বসে ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো তুলছে। চোখদুটো স্থির হয়ে আছে জগার মুখের উপর।

থতমত ভাবটা আটকাতে পারে না জগা- “ক্কি রে, র রতন? কি খবর?”

“খবর তো তুই বলবি, কাজে না গিয়ে দোকানের ভিতরে ঢুকে কি করছিস?” রতনের আওয়াজে কোন উষ্ণতা নেই সেটা বেশ বোঝা যায়, “বাইরে আয়, কথা আছে”, বলে, শক্ত হাতে জগার কাঁধটা ধরে টান দিল রতন।

প্লাটফর্মের শেষদিকটায় বুড়ো শিরীষ গাছটার নিচটা ঝুপ্সি অন্ধকার। রতনের ধাক্কাটা পুরোপুরি সামলাতে পারল না জগা। হুমড়ি খেয়ে পড়ল বাঁধানো রকটার উপর।

“ঠিক করে বলত কাল কি হয়েছিল?”

“কাল, মানে কাল তো কিছু হয়নি।” ঘুষিটা চোয়ালের উপর নেবার আগে কথাটা পুরো শেষও করতে পারেনি বোধ হয় জগা। টের পেল ঠোঁটের কষ বেয়ে নেমে আসা নোনতা স্বাদটা।

“ক্ষেপীর সাথে ঝামেলা করতে তোকে আগেও বারণ করেছি জগা। আমাকে বিশে সব বলেছে, কাল তুই মেয়েটার গায়ে নোংরা হাত তুলেছিলি, আজ তখন থেকে দেখছি আমাদের দিকে চেয়ে আছিস? তোর চাই কি রে শুয়ার?”

এবারে মারটা মুখে পড়বার আগেই রতনের হাতটা ধরে ফেলতে পারল জগা। রুখে উঠে বলল, “হ্যাঁ বে শালা, পাগলি মাল তো তুই একাই ভোগ করবি, তাইনা? বেশ করেছি, সুযোগ পেলে আবার করব। দেখব তুই কি করিস?”

রতন কখন যে বাঁ হাতটা চালাল, জগা টেরই পেল না। পিছনের শানটায় মাথা ঠুকে যাওয়াটাও না, বোধহয় তার আগেই ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।

স্টেশনের পিছন দিক দিয়ে পার্কের দিকে দ্রুত পা চালাল রতন।

(৩)

কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন রোহিতাশ্ব। অচেনা সময়। আবহাওয়াটাও তার অভ্যাসের পক্ষে অস্বস্তিকর। যত শীঘ্র সম্ভব সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে কর্ম সমাপন করতে হবে। পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে কিঞ্চিৎ অভ্যস্ত না হতে পারলে এ গুরুতর কার্যভার বহন করবার সময় ভুল হয়ে যাবার প্রভূত আশঙ্কা, বর্তমান অবস্থায় এরূপ কোন সম্ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। স্থান নির্দেশটা আর একবার নিশ্চিত করে নিলেন তিনি। সঠিক। অবশ্য সেই মাহেন্দ্রক্ষণের এখনো কিছু বিলম্ব আছে। অন্ধকার ঝোপঝাড়ের দিকে হারিয়ে যেতে যেতে আসন্ন কর্তব্যের রূপরেখা আর একবার নিজ মনে প্রস্তুত করতে লাগলেন তিনি, যদিও জানেন, যে সামান্য তথ্য তার কাছে রয়েছে তাতে কোনরূপ অগ্রিম পরিকল্পনা অসম্ভব, প্রকৃত সময়ে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বই একমাত্র ভরসা।

(৪)

পার্কের গেট থেকেই লোকটাকে স্পষ্ট দেখতে পেল রতন। বেঞ্চে শুয়ে আছে, ব্যাগটা মাথার পাশে রাখা। ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা জানবার জন্য ক্ষেপীকে এগিয়ে দিল ও। ক্ষেপী বেঞ্চের পিছনে গিয়ে একটুখানি থামল। তারপর ধীরে ধীরে ধরল ওর গান, রতনের খুব শোনা সেই গান, কি যে তার ভাষা, কি যে তার সুর, সব অচেনা, কিন্তু এক অদ্ভুত লয় আছে, মাঝে মাঝে নিভে যেতে যেতে তীব্র গতিতে আবার জ্বলে ওঠে থেকে থেকে। কিন্তু সেই গানের আওয়াজেও লোকটার কোন সাড়াশব্দ নেই দেখে দ্রুত অথচ নিঃশব্দে বেঞ্চের কাছে পৌঁছে গেল ও। নিমেষের মধ্যে ব্যাগটা নিয়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে এল। ঝুপসি অন্ধকারে হারিয়ে যেতে যেতে পিছনে তাকিয়ে দেখে নিল একবার। ক্ষেপী আসছে।

পার্কের দেয়ালের পিছনে যেখানে বড় বড় পাইপগুলো পড়ে আছে, সেখানে পৌঁছেই ব্যাগটা খুলে ফেলল রতন। তন্ন তন্ন করে ব্যাগটা হাঁটকানোর প্রতিটা মুহূর্তে যেন আশা আর নিরাশার দাঁড়িপাল্লায় দুলতে থাকে ওর মন। শেষ পর্যন্ত দামি কিছু না পাবার হতাশ আক্রোশে যখন ব্যাগটা মাটিতে আছড়ে ফেলল, উবু হয়ে বসে মাটি থেকে কি যেন একটা কুড়িয়ে নিল ক্ষেপী।

একটা ফটো!

(৫)

কিসের ধাক্কায় যেন ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। হুড়মুড় করে উঠে বসল সে। ছেলেটাকে ধরতে না পারলেও, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মেয়েটার চুলের গোছাটা হাতে পেয়ে গেল। তারপর মেয়েটার হাতটা প্রাণপণে চেপে ধরতে গিয়ে বোধ হয় একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো, হঠাৎই ছুরির তীক্ষ্ণ ফলাটা আলোর তলায় ঝলসে উঠতেই লক্ষ্য করল ছেলেটা ফিরে এসেছে।

“চেঁচালে পেট এক্কেবারে ফুটো করে দেব। ছাড়ুন ওর হাত”।

ছেলেটা ধাক্কা দেয় ওকে, মেয়েটার হাতটা তবু ছাড়ে না ও। দুজনেই ছিটকে পড়ে মাটিতে। মেয়েটার মাথাটা ঠুকে যায় বেঞ্চের কোণায়।

রক্ত!

রতন তুলে ধরে ক্ষেপীকে। গভীর মমতায় হাতের চেটো দিয়ে মুছিয়ে দেয় ওর কপালের রক্তের বিন্দুগুলো।

“ব্যাগ, আমার ব্যাগ নিয়েছ তোমরা!” মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থাতেই লোকটা চিৎকার করে ওঠে।

“নিয়েছিলাম, ফেরত দিয়ে গেছি। তাকিয়ে দেখুন পিছনে”। রতনের কথা শুনে এদিক ওদিক চোখ চালায় লোকটা। ব্যাগটা ফেরত রাখবার সময় আগের জায়গায় রাখতে পারেনি রতন, তাই হয়ত দেখতে পায়নি। এবার দেখে ওটার উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল লোকটা। কি ব্যাপার? বাজে কাগজপত্রে বোঝাই ব্যাগটার প্রতি এত মায়া কিসের?

“কি আছে ব্যাগে?”

“কই তেমন কিছু না তো”, একটু যেন সজাগ হয়ে উঠলো না লোকটা?

“কিছু নয় তো ঐ ব্যাগ ওরকম আঁকড়ে ধরে আছেন কেন?”

“না না, ও তোমাদের কোন কাজের নয়, আমার কিছু দরকারি কাগজ।”

ওঃ। সে তো হতেই পারে, ভাবল রতন। সে অবশ্য কাগজপত্রগুলো অত লক্ষ্য করেনি।

“কিন্তু, তোমরা ভাই এটা ফেরত দিলে কেন, ফেলে দিলেই তো পারতে!”

রতন তো ওটা পার্কের পিছনে ফেলেই দিতে যাচ্ছিল, নেহাত ক্ষেপী জোরাজুরি করল তাই ফেরত দিতে আসা। অবশ্য ঐ ফটোটা দেখে রতনের যে একটুও মায়া হয়নি বললে ভুল হবে।

“আপনার ব্যাগে একটা পুরানো ফটো দেখলাম, তাই ক্ষেপী বলল…”?

“ওঃ, তাইতো”, ব্যাগ হাঁটকে ফটোটা বের করল লোকটা। গলার আওয়াজটা একটু বুজে এল কি? “আমার মায়ের ফটো, একটাই আছে, তোমাদের যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো?”

“আমাকে না, আমি চোর চোট্টা মানুষ, এই মেয়েটাকে জানান” কথাটা শুনে ক্ষেপীর চোখেমুখে যে ভাবটা ছুঁয়ে গেল, যেটা দেখে রতনের বুকে একটা খুশি করে দেয়া চিনচিনে ব্যাথা, সেটা কে কি বলে? লজ্জা?

“হ্যাঁ, সে তো বটেই। আচ্ছা, ওর নাম কি?”

“নাম? নাম জেনে কি হবে? আপনার নাম জানি আমি? আমার নাম জানেন আপনি?”

“আমার… আমার নাম… মানে, নিবারণ” লোকটার জবাব কি একটু আটকাল কোথাও?

“আমার নাম রতন।”

“আর ও?”

“জানিনা মশাই।” নিজের অক্ষমতায় নিজেই বিরক্ত রতন।

“সেকি, তোমাদের, মানে, কিছু মনে না করলে বলি, তোমাদের দুজনকে দেখে তো বেশ পরিচিত বলে মনে হয়।”

“ক মাস আগে এই পার্কের কোণেই পড়ে ছিল এক রাতে। নিয়ে মন্দিরে রেখে আসি। ঠাকুরমশাই লোক ভাল, দুবেলা ভোগের খাবারটা দিয়ে দেন। কিন্তু কেন জানিনা, সেই রাত থেকে আমায় চিনে গেছে ক্ষেপীটা। সারাদিন আমার পিছন পিছন ঘোরে। এই আমাদের পরিচিতি স্যার। নাম জানিনা, ধাম জানিনা। শুধু জানি ও আমায় চেনে।“ একটা বিড়ি ধরায় রতন, বোধ হয় আর কিছু বলবার পথ বন্ধ করতেই ধোঁয়ায় ভরে নেয় মুখ।

কিছু না বলে, বেঞ্চে বসে পড়ে নিবারণ। রতনও পাশে বসে, আর ওর পা ঘেঁষে ঘাসের উপরেই নিজেকে এলিয়ে দেয় ক্ষেপী।

একটু জল পাওয়া গেলে ভাল হতো। ক্ষেপী ঠোঁট চাটছে। একটা জলের বোতল দেখেছিল না নিবারণের ব্যাগে? ঐ তো, বাইরেই রাখা। নিবারণের দৃষ্টি আকাশপানে। বোধ হয় ভাবছে কিছু। জলের বোতলটা ক্ষেপীর দিকে এগিয়ে দেয় রতন।

খানিকক্ষণ পর আবার গুণগুণ করে গান ধরে ক্ষেপী। সেই অদ্ভুত সুর, কথা, লয়ের গান।

মেঘ জমে উঠেছে, বৃষ্টি আসবে। ঠাণ্ডা বাতাসের এক ঝলক তিনজনের চোখেই যেন আরাম ছুঁইয়ে দেয়, আঃ, চোখ বুজে আসে ওদের। অন্ধকার ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসা রোহিতাশ্বকে তাই লক্ষ্য করে না ওরা কেউই।

(৬)

তিনটি মানুষকে একত্রিত দেখে মনে আশার সঞ্চার হয় তাঁর, যদিও চতুর্থজন অনুপস্থিত। গণনা সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করবার সময় তাঁরা পাননি, অপেক্ষা করবার উপায়ও ছিল না, ভবিষ্যৎ মহামারী থেকে বিশ্বকে রক্ষা করবার জন্য এই স্থান, এই কাল, সেই পাত্র চতুষ্টয় –কোনভাবে যে খুব প্রাসঙ্গিক, এটুকু তথ্যই উদ্ধার করতে পেরেছেন শুধু। উপস্থিত এই তিনজনকে নিয়েই দ্রুত কর্ম প্রারম্ভ করতে হবে, এই স্থির সিদ্ধান্তে আসবার পর আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি।

“নমস্কার ভদ্রমহোদয়গণ, আপনারা রোহিতাশ্বের প্রণাম গ্রহণ করুন”।

ছিটকে ওঠে রতন। এ আবার কে?

নিবারণও ঘাবড়ে গেছে খানিকটা। কিন্তু প্রতি নমস্কার জানাতে ভুল হয় না তার।

“আজ এই স্থানে আর কোন ব্যাক্তির আসবার কি নিশ্চয়তা আছে?” রোহিতাশ্বের প্রশ্ন যেন মাথায় ঢোকে না কারো। রতনের মনে শুধু সন্দেহ হয়, পুলিশ নাকি? কিন্তু পুলিশের মুখে এ কিরকম ভাষা?

“কেন বলুন তো? কে আপনি?” নিবারণ যেন রতনেরই মনের প্রশ্নটা করে ফেলে।

“আমি রোহিতাশ্ব। আজ এখানে চার জনের উপস্থিতি আবশ্যক। কিন্তু আর একজন দৃশ্যমান নয়, সেই কারণেই আপনাদের কাছে জিজ্ঞাসা করছি।”

আবশ্যক! কিসের জন্য? রতনের অস্বস্তি হতে শুরু করে।

“আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু জানবার জন্য কৌতূহল হচ্ছে”। নিবারণ বলে ওঠে।

“যথার্থ, শুধুমাত্র কৌতূহল নিবারণ নয়, আমার কার্যসিদ্ধির প্রয়োজনেও সবকিছু আপনাদের জ্ঞাতব্য হওয়া প্রয়োজন।”

এবার ক্ষেপীর হাত ধরে টান দেয় রতন। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো।

“যাবেন না রতন। আপনাকেও আমার প্রয়োজন।”

চমকে গেলেও ভাবটা প্রকাশ হতে দেয় না রতন। নাম জানাটা এমন কোন বড় ব্যাপার নয়। এইসব বলে তাকে লটকানো যাবে না। তবু ব্যাপারটা আর একটু ভাল করে জানবার জন্যই দাঁড়িয়ে গেল সে।

“ঘটনাচক্রে আমরা আজ এখানে এসে পড়েছি। নেহাত ট্রেন ক্যান্সেল হয়ে গেল তাই, নাহলে এখন আমি কোথায় আর এরা কোথায়? কিন্তু আমরা এখানে থাকব সেকথা আপনি জানলেন কি করে? আপনি কি কোন জ্যোতিষী বা ভবিষ্যতদ্রষ্টা টাইপের কিছু?” নিবারণ চেষ্টা করেও কথার মাঝের বাঁকা ভাবটা লুকাতে পারে না।

“ভবিষ্যৎদ্রষ্টা? তা বলতে পারেন। ভবিষ্যৎ আমি দেখেছি। তবে আপনাদের এখানে থাকাটা ভবিষ্যতের ঘটনা নয়, অতীত।”

“মানে? কিসব ভুলভাল বলছেন মশাই?” নিবারণ চিড়বিড়িয়ে ওঠে।

রতনের বদ্ধ ধারণা হয় এই রোহিতাশ্ব না ঘোড়ার ডিম, যাই হোক, একটা পাগল। ক্ষেপীকে টেনে বেড়িয়ে যাবে ভেবে হাত বাড়িয়ে দেখে ক্ষেপী নেই, কখন যেন রোহিতাশ্বের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সে আগন্তুকের মুখের দিকে।

কি হচ্ছে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ঝপ করে বেঞ্চে বসে পড়ে রতন। কথা বলতে শুরু করেন রোহিতাশ্ব।

শব্দগুলো গ্রাস করতে থাকে চেতনা, আচ্ছন্ন করে দৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগে শুরু হওয়া বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন গায়েই লাগে না কারো আর। স্তব্ধ হয়ে শুনতে থাকে রোহিতাশ্বের কাহিনী।

ওরা তিনজন।

(৭)

জ্ঞান ফিরে পাবার পর মিনিট কয়েক সব কিছু শূন্য লাগে জগার। চোয়ালে অসম্ভব যন্ত্রণা, নিচের ঠোঁটটাও ফুলে উঠেছে বেশ খানিকটা। মুখ হাঁ করে খুঁজতে থাকে গাছের পাতা বেয়ে পড়া জলের ফোঁটা, তেষ্টায় বুক ফেটে যাচ্ছে ওর, নাকি রাগে? অতিকষ্টে উঠে দাঁড়ায় ও। রতন আর ঐ পাগলিটাকে খুঁজে বের করতে হবে। নিকেশ করে ফেলবে দুটোকেই। বাবুর গ্যারাজে রাখা আছে যন্ত্রটা। কিন্তু মাথা এখনো ঘুরছে ওর। পৌঁছাতে পারবে? নাহ, পারতেই হবে, আজকেই হিসাব মেটাতে হবে ওকে। টলতে টলতে স্টেশন থেকে বের হয়ে যায় জগা। বৃষ্টিটা কি একটু বেড়েছে? রাস্তাঘাটও শুনশান, রাত কত হয়েছে? কতক্ষণ অজ্ঞান ছিল ও? হঠাৎই যেন শরীরে একটু জোর পায়, ঐতো রতনের বাইকটা দেখা যাচ্ছে, মালদুটো তাহলে এ চত্বরেই আছে। গ্যারাজের দিকে শরীরটা টানতে থাকে জগা। বৃষ্টির জলে এলোমেলো চারিদিক।

দেশী পিস্তলটা নিয়ে পার্কের গেটের পাশ দিয়ে ফিরবার পথে আলোর ঝল্কানিটা চোখে পড়তেই থমকে দাঁড়ায় জগা।

কি ব্যাপার?

(৮)

“এসব কি আজগুবি গল্প মশাই? বাজে কথা বলবার জায়গা পাননি?” নিবারণের চিৎকারেও ঘোর কাটে না রতনের। রোহিতাশ্ব আবারো কি বোঝাতে শুরু করে নিবারণকে, কিছুই শুনতে পায় না রতন। ওর দু চোখের সামনে এখনো ভাসছে একটু আগে দেখা সেই বিশাল ঘর, আর তাতে বোঝাই অচল, নির্বাক, মাংসপিণ্ডের দল। এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না ও যে ঐগুলো মানুষ, এই পৃথিবীর মানুষ! ভবিষ্যতের মানুষ! আর ঐ শব্দটা? ধুক পুক, ধুক পুক, হাজার হাজার শরীরের স্পন্দন একসাথে এক নিস্তব্ধ পৃথিবীতে যেন ক্রদ্ধ প্রেতের মতো মৃত্যুর দামামা বাজাচ্ছিল। ভয়, গা শিরশির করা এক ভয় কাঠ করে দিয়েছিল রতনকে। মৃত্যু, সেও যেন সুন্দর ঐ প্রাণহীন বেঁচে থাকবার থেকে।

“যাদুকর তুমি, সম্মোহন করেছ আমাদের। ম্যাজিক দেখাচ্ছ আমাদের? সস্তা ম্যাজিক?” গলার শিরা তুলে চিৎকার করে ওঠে নিবারণ।

“না নিবারণ, আমি ম্যাজিক দেখাইনি, আমি খালি ভবিষ্যতের একটা ছোট দৃশ্য উপস্থিত করেছি আপনাদের সামনে।”

“ভবিষ্যৎ? তুমি ভবিষ্যতের মানুষ? তুমি যদি ঐ সময় থেকেই এসে থাক, তাহলে তোমার শরীরে তার ছাপ নেই কেন? তুমি তো দিব্য সুস্থ সবল মানুষ। অথচ তোমার কথামতো, তুমি যা দেখালে যদি সেটা আদৌ সত্যি হয়ও, ভবিষ্যতের মানুষ তো ক্লীব, চলচ্ছক্তিহীন হবার কথা”, চিবিয়ে চিবিয়ে বলে নিবারণ।
“আমার কথা আপনি মন দিয়ে শোনেননি নিবারণ। আমি এসেছি ২০৬০ সাল থেকে। আর যে দৃশ্য আপনাদের দেখালাম তা আরও হাজার বছর পরবর্তী কথা। আবার শুনুন, বর্তমানকালে আবিষ্কৃত এক ভয়ানক ওষুধ, ঘটনাচক্রে প্রবিষ্ট হয় কোন শিশুর দেহে, জন্ম নেয় এক নতুন রোগ, জিনবাহিত হয়ে বহু প্রজন্ম পরে সে সভ্যতাকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক ক্লীবতার সামনে। সমস্ত প্রাণীজগৎ তার নিয়ম পাল্টে হয়ে যায় জড়ীভূত। যেমন আপনারা দেখলেন। এ বড় ভয়ানক রোগ, নিবারণ”, রোহিতাশ্বের কণ্ঠস্বর তীব্র হয়ে ওঠে।

“ রোগ? কিসের রোগ? একদিকে তুমি বললে আজকের এক নাম না জানা বিজ্ঞানী আবিস্কার করতে চলেছে এমন এক ওষুধ যা মানুষের ক্ষুধাবোধ ও খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা দুইই কমিয়ে দেবে, আর একদিকে তাকে বলছ রোগ। খিদের থেকে বড় রোগ কি আছে? যে ওষুধ খিদে ভুলিয়ে দেবে সে কেন অভিশাপ হবে, সে তো আশীর্বাদ।”

“আশীর্বাদ? হ্যাঁ। তাইই মনে হয়েছিল প্রাথমিক ভাবে। এমনকি আমাদের সময়েও এই আবিষ্কারের শুধু জয়গানই শোনা যায়। কারণ জিনবাহিত এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী মানব এবং অন্যান্য প্রাণীকূলে পরিপূর্ণভাবে পরিলক্ষিত হতে বহু প্রজন্মের প্রয়োজন। আমাদের কিছু প্রজন্ম পর থেকেই দ্রুত খাদ্যের চাহিদা কমে যেতে থাকবে, এবং তার সাথে কমে যাবে কর্মের মূল্য। খাদ্যের প্রয়োজনেই তো কর্মের তাগিদ আসে নিবারণ। এই পৃথিবীর অস্তিত্বের একটা নিয়ম আছে, সেই নিয়মে ক্ষুধা এক মূল জৈবিক উপাদান, জীবনচক্রের সেই মূল ধ্বসে গেলে তো এই সৃষ্টি বিনষ্ট হবে। কর্মহীন সেই পৃথিবীর সামান্য রূপ আমরা আমাদের সময়ে দেখছি। খুব কম লোকই অবশ্য উপলব্ধি করেছেন যে ঐ ওষুধের প্রভাবে বিশ্বজোড়া প্রাণীজগৎ ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে চলেছে এক তীব্র সংকটের দিকে। তার চরম রূপ আমি আপনাদের প্রত্যক্ষ করিয়েছি। সেই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় আজ সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বার করা। তার সেই আবিষ্কারের পথ বন্ধ করা।”

“হতে পারে না, জীবনের দুঃখ ভুলিয়ে দেয় যে সঞ্জীবনী সুধা, সে কখনোই বিষ হতে পারে না। আমার তো ভাবতেই মনে খুশি বাধা মানতে চাইছে না। খিদে থাকবে না, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই পোড়া পেটের তাগিদ থাকবে না। খাবারের জন্য মারামারি, কাটাকাটি থাকবে না। অপুষ্টি থাকবে না, রুগ্ন শিশু থাকবে না, দুর্বল মা থাকবে না, সন্তানের মুখে একটু ভাল খাবার দেবার দায়িত্বে ন্যুব্জ বাবা থাকবে না। কত সুন্দর হবে পৃথিবী! থাকবে শুধু গান, শুধু হাসি, শুধু আলো, শুধু আনন্দ” বলতে বলতে গলা ধরে আসে নিবারণের।

এতক্ষণে মুখ তোলে রতন। ক্ষুদ্র মানুষ সে, সুখের সন্ধানে কাতর মানুষ সে, খিদের জন্য আইন না মানা মানুষ সে। তবু তার চোখে যেন নিবারণের সেই স্বপ্নের দুনিয়া ধরা দিতে চায় না। “না নিবারণবাবু, ব্যাপারটা এত সহজ নয়, আমি জানিনা এই লোকটা কে, জানিনা সে ভবিষ্যতের মানুষ কিনা, জানিনা এ যা দেখাল তা ম্যাজিক না সিনেমা না সত্যিকারের ভবিষ্যৎ। বিশ্বাস করুন এ যখন শুরুতে বলছিল কি এক ওষুধের আবিষ্কার এই সময় কোন লোক করবে আর তার ফলে ভবিষ্যতে মানুষ খিদে ঘুম হারিয়ে জড় পদার্থে পরিণত হবে, তখন কিন্তু আমার এর কথা একটুও ভরসা হয়নি, একটুও না। কিন্তু যখন এর হাতের যন্ত্রের আলোটা ঝলসে উঠলো, আর আমরা সবাই চোখ বুজে ফেললাম, চোখ খোলবার পর দেখলাম সেই অদ্ভুত ছবি, একঘর নির্জীব কিসব, দেখতে যেন মানুষ, কিন্তু মানুষ কি ওরকম হয়, তারপর থেকে কেমন যেন লাগছে? হাজার হাজার মানুষ ওরকম ভাবে পড়ে থাকতে পারে? মানুষের চোখে ওরকম অদ্ভুত শূন্য দৃষ্টি থাকে? খালি হৃৎপিণ্ডের একঘেয়ে আওয়াজ ছাড়া পেলেন আর কোন শব্দ? খিদেহীন কিনা জানিনা, কিন্তু রূপহীন, রংহীন, শব্দহীন, প্রাণহীন সেই পৃথিবী। আমার পৃথিবী যদি এরকম হতে যায়, তাহলে তা আটকানোর একটা চেষ্টা আমরা করব না?”

“কি বলছ তুমি রতন, খিদেবোধ না থাকলে সমস্যার কি আছে? তুমি বোঝ না, তোমার এই প্রতিদিনের লড়াইটা আসলে খিদের সাথে, বোঝ না পেটের জ্বালা?” নিবারণের কথাগুলো আর্তনাদের মতো শোনায়।

“বুঝি নিবারণবাবু বুঝি। কিন্তু আপনিও বুঝুন এই খিদে আমাদের শুধু জ্বালায় না, এ যেন আমাদের চালায় ও। খাবার জোগাড় করার দরকার না থাকলে লোকে কাজ করবে কি? চাষি চাষ করবে না, গা গতরে খেটে খাওয়া লোকরা কাজ পাবে না মাঠে, দোকানদার খাবার বেচবে না। তাকিয়ে দেখুন, ঐ তো স্টেশন দেখা যাচ্ছে। কিসের দোকান বেশি দেখছেন? খাবারের। এত জনে জনে লোক যদি বেকার হয়ে যায়, তাহলে বাকি জিনিসপত্র কিনবেই বা কে, বানাবেই বা কে?” রতন বলতে বলতে যেন বেশি করে টের পায় রোহিতাশ্বের চিন্তার কথা।

“পাগল, তোমরা সব পাগল হয়ে গেছ।” হতাশা লুকাতে পারে না নিবারণ।

রোহিতাশ্ব বলে ওঠেন, “অপবিজ্ঞান কে রুখতেই হবে নিবারণ। যে আবিষ্কার নিশ্চিত অভিশাপ, তাকে আটকাতেই হবে।”

“বিজ্ঞানকে রোখা যায়? যায় না। আর বিজ্ঞানের অভিশাপ, সে নিয়ে আর কত তর্ক করব? একটা আবিষ্কার দেখাও যার কোন খারাপ দিক নেই। পারবে না। আসলে বিজ্ঞান মানুষের উন্নতির জন্যই কাজ করে, কিন্তু বিজ্ঞানকে নীতিহীন ভাবে ব্যবহার করে মানুষ, দোষটা বিজ্ঞানের নয়”, গর্জে ওঠে নিবারণ।

এত কথা ভাল লাগছে না রতনের আর। বুঝতে পারছে না, নিবারণ কেন এরকম ব্যবহার করছে। “নিবারণ বাবু, মনে করে দেখুন আপনিও ভয় পেয়েছিলেন, আপনিই চিৎকার করে উঠে বন্ধ করাণ ঐ দৃশ্যটা। আপনি কি চান যদি ওরকম হবার একটুখানিও সম্ভাবনা থাকে আর সেই সম্ভাবনা দূর করতে যদি আমাদের কোনভাবে দরকার হয়, আমরা চুপ করে বসে থাকব? না, না, আমি চেষ্টা করবই। বলুন রোহিতাশ্ব, আমাকে কি করতে হবে?”

চিন্তিত দেখায় রোহিতাশ্বকে, “কি যে করতে হবে তা আমিও ঠিক জানিনা, সময়যানের আবিস্কার আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা খুব বেশীদিন করেননি, সমস্ত গণনাও সম্পন্ন হয়নি এখনও। আমরা অল্প কিছু লোক জানতে পারি সেই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ যার দৃশ্য আপনারা দেখলেন। যদিও রাষ্ট্রনায়করা জনগণের কাছে লুকিয়ে রেখেছেন এই আবিষ্কার, আমরা নিজেদের তাগিদেই অতীতের ব্যপারে আরও কিছু অনুসন্ধান করি। জানতে পারি এই আজকের দিনে, এই সময়ে, এই স্থানে আসবে চার ব্যক্তি, যার মধ্যে কোন একজনের কাছে আছে সেই আবিষ্কারের চাবিকাঠি। আমার দায়িত্ব তাঁকে খুঁজে বার করা, তাঁকে সেই চরম পরিণতির কথা অনুধাবন করানো, এবং তারপর সেই আবিষ্কারের পথ বন্ধ করা।”

“তাহলে চলুন, সেই চার নম্বরকে খুঁজে বার করি। আয় ক্ষেপী, আসুন নিবারণবাবু।” এগিয়ে যেতে গিয়েও থমকে যায় রতন। ক্ষেপীর দিকে অনেকক্ষণ তাকায়নি সে, নিজের জগতেই আটকে ছিল। একি! ক্ষেপীর চোখমুখ এরকম লাগছে কেন?

রতন ধরবার আগেই এলিয়ে পড়ে যায় ক্ষেপী।

তবে, মাটিতে পড়তে পারে না। রোহিতাশ্বের সবল হাতদুটো ওকে ধরে ফেলে শেষ মুহূর্তে।

(৯)

মাথাটা এখনো ভোঁ ভোঁ করছে জগার। আলোর ঝলকানিটা দেখেই পার্কে ঢুকে পড়েছিল ও, চারজনকেই দেখতে পেল মুহূর্তের জন্য, রতন আর ঐ পাগলিটার সাথে দুজন অচেনা লোক। কিন্তু তার পরেই পার্ক, পার্কের বেঞ্চ, ঐ চারজন, সবকে ঢেকে কুয়াশার মতো যেন কি একটা ছেয়ে গেল। জগার চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা বড় ঘর, আর তাতে গুচ্ছ গুচ্ছ মানুষ। মানুষ? হাত পা মাথা সব মানুষের মতো, কিন্তু এত বেঢপ, বিদঘুটে মানুষ? এক আধজন নয়, হাজার হাজার জন, যেদিকে চোখ দেয় দেখে, সবাই কিরকম ল্যাদ খেয়ে পড়ে আছে। গা গুলিয়ে উঠেছিল ওর, এত লোককে একসাথে এরকম পড়ে থাকতে দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন বিশাল ঘূর্ণিঝড়ের পর পড়ে থাকা গাদা গাদা লাশ। খালি ড্যাবা ড্যাবা চোখগুলো সব এদিক ওদিক ঘুরছিল দেখে বোঝা যায় প্রাণ আছে ঐ শরীরগুলোতে। ভয়ে, ঘেন্নায় কেমন কুঁকড়ে গেছিল জগা, তারপরেই কে যেন চিৎকার করে উঠেছিল, আর ঐ দৃশ্যটাও হারিয়ে গিয়েছিল।

চিৎকারটা করেছিল ঐ অচেনা লোকটা। রতন আর পাগলিটা কেমন ভোম মেরে গেছে। চতুর্থজন ওদের কি যেন বোঝাতে লাগে। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় জগা।

ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে ওদের আলোচনা। পিস্তলটা কখন যে মুঠো খুলে পড়ে গেছে, খেয়ালই নেই জগার। সব ভুলে ও একটু আড়াল থেকে একমনে গিলতে থাকে ওদের কথাবার্তা।

(১০)

সন্তানসম্ভবা!

ক্ষেপীর জ্ঞান ফিরে এসেছে, ক্ষেপীর হাতের কব্জির কাছটা ধরে আছে রোহিতাশ্ব। রোহিতাশ্বের মুখে শব্দটা শুনে থ হয়ে যায় রতন। ক্ষেপী মা হতে চলেছে, কবে, কিভাবে?

“হ্যাঁ, রতন, এই কন্যা সন্তানসম্ভবা। আপাতত ভয়ের কিছু নেই, তবে আগামী দিনে যত্ন নেবার ব্যাবস্থা করতে হবে। বড়ই দুর্বল শরীর, অপুষ্ট শরীর।” রোহিতাশ্ব বলে ওঠেন।

রতন কিছু বলবার আগেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে নিবারণ, “কি রতন, এবার কি বলবে? কে দায়ী, কি দায়ী এই দুর্বলতা, এই অপুষ্টির পিছনে? আজ যদি না থাকত ক্ষুধাবোধ, যদি না থাকত খাদ্যের প্রয়োজন, যদি মানুষ এই গাছপালার মতো প্রকৃতি থেকে নিজেই নিজের রসদ গ্রহণ করতে পারত, তবে ক্ষতি হতো না লাভ? হতে পারে সেই অপরিচিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছে এরকমই কোন উপায়, যা মিটিয়ে দেবে বাইরের খাবারের প্রয়োজন, মানুষকে করে তুলবে স্বনির্ভর, এই গাছগুলোর মতোই।”

“বৃক্ষ? মানবজন্মর লক্ষ্য কি বৃক্ষের মতো শুধু টিকে থাকা? ইতিহাস কি বলে? খিদের তাড়নাতেই প্রাচীন মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে ভিন্ন হতে পেরেছিল, মনে করে দেখুন সেই দিনের কথা, যখন পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিবেশে খাদ্য সংগ্রহ করবার, তাকে সংরক্ষিত করবার, সুরক্ষিত করবার তাগিদে মানুষ উদ্ভাবন করে নব নব পদ্ধতি, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে বিশ্ব আর আরও পরবর্তীকালে বিশ্ব থেকে মহাবিশ্বের ধারণায় উদ্ভাসিত হয় সভ্যতা। ক্ষুধা এই সৃষ্টির চালিকাশক্তি, নিবারণ। আর শুধু শারীরিক পুষ্টিজনিত ক্ষুধা নয়, মানবসমাজের বৌদ্ধিক ক্ষুধা? তার অভাব কি প্রগতির পথে, সত্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না?”, রোহিতাশ্ব নিবারণকে বোঝানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে।

রতনের মনে হয় বুঝে বা না বুঝে একটা কথা ঠিক বলেছে নিবারণ, রোহিতাশ্বের দেখানো ঐ মানুষগুলো যেন গাছের মতোই ছিল খানিকটা, প্রাণ আছে কিন্তু স্পন্দন নেই, চেতনা আছে তবু প্রকাশ নেই। আশেপাশের ঝোপঝাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে যেন মিলটা খোঁজবার চেষ্টা করে রতন। আর তখনই নজর পড়ে ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা জগার দিকে। এক ঝটকায় জগাকে সামনে টেনে আনে ও। চমকে ওঠেন রোহিতাশ্ব।

“এই তো, এই তো সেই চতুর্থ মানুষ”, কণ্ঠস্বরে তাঁর খুশির আভাস।

জগা? জগা সেই লোক? সেই আবিষ্কারক? এ যে অসম্ভব।

“তুই এখানে কি লুকিয়ে কি দেখছিলি জগা”, হিসহিস করে ওঠে রতন।

“জানিনা রে, কিছু জানিনা। সব কেমন গুলিয়ে গেছে, কি দেখছি? কি হচ্ছে এসব রতন?”, জগার গলায় আকুতির সুর, রতন শান্ত হয় একটু।

“কি হচ্ছে মানে? কি দেখেছিস তুই?”

“তোরা যা দেখেছিস, দেখেছি। ইনি যা বলেছেন শুনেছি”, রোহিতাশ্বের দিকে ইঙ্গিত করে জগা।

“শুনেছেন? আপনি বুঝেছেন?”, রোহিতাশ্বের কথায় আশার স্পর্শ অনুভব করে রতন।

“বেশি কিছু বুঝিনি হয়ত আপনাদের মতো, লেখাপড়া বিশেষ জানিনা, শুধু এটুকু জানি পেটের তাগিদেই লোকে ডাক্তার উকিল হয়, সে তাগিদ না থাকলে সুখ আছে হয়ত, কিন্তু শেষমেশ সব আলসে তৈরি হবে। জানিনা আপনি কি ভোজবাজি দেখালেন, তবে মনে হচ্ছে আপনি ঠিক”, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে জগা।

“তবে দিন জগ্ননাথ, আমাকে দিয়ে দিন আপনার তৈরি সে বিষ, নষ্ট করে ফেলুন সে বিষ উৎপাদনের প্রক্রিয়া, বিস্মৃত হন সে উপাদান মানবশিশুর দেহে রোপণের পরিকল্পনা,” রোহিতাশ্বের কথায় এতই চমকে যায় জগা যে লক্ষ্যই করেনা তার ভাল নাম ধরে তাকে ডাকা হয়েছে, এত বছর পরে।

“আমি? না না, আমি কিছু জানিনা”, ঘাবড়ে যায় জগা খানিকটা। এরা কি তাকে বিজ্ঞানী ভাবছে? কাতর চোখে তাকায় রতনের দিকে।

“না রোহিতাশ্ব, কোথাও আপনার ভুল হচ্ছে, জগার ক্ষমতা নেই এসব করবার”, রতনের কথা মানতে পারেন না রোহিতাশ্ব, “না, রতন, এই…এই চারজনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সেই আবিষ্কারের সুত্র। এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।”

রতন চিন্তায় পড়ে। তার বা জগার পক্ষে এসব সম্ভব নয় সে জানে। ক্ষেপী খুব বেশিদিনের চেনা নয় ঠিকই, কিন্তু ওদের সম্পর্ক যেরকম, তাতে এতদিনে কি ও টের পেত না? নিবারণ নিতান্ত সাধারণ, নিরীহ লোক। তবে কি এই রোহিতাশ্ব সত্যি কোন যাদুকর বা ঠগ? শুধু শুধু ভুল বকছে? কিন্তু ঐ দৃশ্যটা এতটাই বাস্তব যে বিশ্বাস না করতে মন চাইছে না। তবে কোথায়, কোথায় সেই বৈজ্ঞানিক? বড্ড হতাশ লাগে তার। তখনই টের পায় তার হাত সজোরে আঁকড়ে ধরেছে ক্ষেপী।

মাথা ঘুরে পড়ে যাবার পর থেকে বেঞ্চের উপরেই শুয়ে ছিল ক্ষেপী। চোখ বুজে পড়েছিল চুপচাপ। কিন্তু কান যে ওর খোলা ছিল, বুদ্ধি যে কাজ করছিল, এবার টের পেল রতন।

আধা উঠে বসেছে ক্ষেপী। চোখ দুটো যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে ওর, এত জোরে ধরেছে রতনের কব্জিটা যে নখ বসে যাচ্ছে হাতে, অন্য হাতের তর্জনী দিয়ে রতনকে দেখাতে চাইছে কিছু, কি?

নিবারণের সেই ব্যাগটা!

তাইত। এটার কথা তো ভুলেই গেছিল রতন। মুহূর্তে সব পরিষ্কার হয়ে ওঠে রতনের কাছে।

যখের ধনের মতো আঁকড়ে ধরা ব্যাগ তাই কি এত মূল্যবান?

ব্যাগের ভিতর একগাদা কাগজপত্র কি ঐ গবেষণার কাগজপত্র?

নাম বলতেও আপত্তি, সে কি নিজেকে লুকিয়ে রাখবার তাগিদ?

রোহিতাশ্বের কথার ক্রমাগত প্রতিবাদ কি নিজের কাজকে বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা নয়?

সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যায় রতন।

নিবারণ।

নিবারণ সেই লোক! এক পা এক পা করে রতন এগিয়ে যায় নিবারণের দিকে।

“নিবারণবাবু!”

বুঝে গেছে নিবারণ, যে সে ধরা পড়ে গেছে। হতাশায় ঝুলে যায় মুখ। তবু কথা বলে ওঠে সে, “বারো বছর, বারো বছর একটানা গবেষণা করেছি। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ছেলে, খিদের জ্বালা আমার থেকে বেশি কে বুঝবে? সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বের করেছি একটা উপায়, জিনের কারিকুরি পাল্টে দিতে পারবে সে। আমি ভেবেছিলাম ভালো হবে, মঙ্গল হবে এই পৃথিবীর। মানুষ তার শারীরিক চাহিদা থেকে মন সরিয়ে নিতে পারবে অনায়াসেই, মন দিতে পারবে আরও অন্যদিকে। দুখি দরিদ্র মানুষকে পেটের জ্বালায় পরদিন কি করবে ভেবে বিনিদ্র রাত্রি কাটাতে হবে না। সুখি হবে মানুষ। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আজ যা দেখেছি, যা শুনেছি। আমার, আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দুঃখ দূর করবার, মারামারি, কাটাকাটির এ ধ্বংসলীলা থেকে মানুষকে বাঁচাবার, নতুন কোন বিপদ ডেকে আনতে আমি চাইনি”, মুখ ঢেকে বসে পড়ে নিবারণ। বেঞ্চের উপর। ক্ষেপীর পাশেই।

এগিয়ে আসেন রোহিতাশ্ব। “ধবংস করুন ঐ দলিল, ঐ সুত্র, নিবারণ। ভবিষ্যতের মানুষের অভিশাপের বোঝা মাথায় নেবেন না। প্রকৃতির নিয়মে তাদের প্রকৃতির মোকাবিলা করতে দিন, লড়তে দিন, হারতে দিন, শিখতে দিন, সইতে দিন। বাঁচতে দিন মানুষকে, নিবারণ, বাঁচতে দিন, অব্যক্তর মতো নয়, জড়ের মতো নয়, মানুষের মতো। দিন, নিবারণ, নষ্ট করে দিন আপনার ঐ বিষ তৈরির নিয়মকানুন লেখা কাগজপত্র।”

“না, কিছুতেই দেব না, বিজ্ঞানকে এভাবে রুখতে তোমরা পারবে না। আমার এতদিনের সাধনাকে আমি এক পাগলের প্রলাপে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে পারি না। এই পৃথিবী এমনিতেই ধ্বংস হবে, আজ নয় কাল। তার জন্য অন্য অনেক কিছু দায়ী থাকবে, আমার এ আবিষ্কার আমি নষ্ট হতে দেব না”, সবার মধ্যে দিয়ে ছুটে পালানোর শেষ চেষ্টা করে নিবারণ, কিন্তু জগা সতর্ক ছিল। এক ধাক্কায় ছিটকে পড়ে নিবারণ, হাতের ব্যাগও ছিটকে যায় মাটিতে। এগিয়ে যায় রতন। তুলে নেয় ব্যাগটা। কাগজগুলো বের করে দুহাতে ছিঁড়তে থাকে কুটিকুটি করে। ওর সাথে যোগ দেয় রোহিতাশ্ব, জগা এমনকি ক্ষেপীও।

শুধু নিবারণ পড়ে থাকে মাটিতে। ক্রমাগত বেড়ে চলা বৃষ্টি তার কান্না ধুয়ে মাটিতে মেশাতে থাকে।

যে মাটিতে কিছুক্ষণ পর ছড়িয়ে থাকে একরাশ ছেঁড়া কাগজ, বিজ্ঞানীর ছেঁড়া স্বপ্নের মতো।

“আমি যাই। আমার কাজ শেষ। ভবিষ্যতের তরফ থেকে আবার একবার ধন্যবাদ আপনাদের চার জনকে।”

ধীরে ধীরে পার্ক থেকে বেরিয়ে যান রোহিতাশ্ব।

রতন হাত ধরে ক্ষেপীর। সাবধানে ঘিরে নেয় তার পিঠ। সন্তান আসছে এই মায়ের দেহে, কার সে জানেনা। কিন্তু ক্ষেপী যে তার, তাই ক্ষেপীর সন্তানও তার। হঠাৎ মনে হলো, রোহিতাশ্ব ক্ষেপীর ভাল নামটা তো বলে গেল না। জেনে নিলে হতো, ক্ষেপীর হাতে টান দিয়ে একটু দ্রুত পা চালায় রতন, দেখা যাক যদি তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়।

নিবারণ এখনো মাটিতে শুয়ে আছে উপুড় হয়ে। জগাও একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কাগজপত্র আবার বানানো কি এতটাই কঠিন, ভাবতে থাকে ও। এই নিবারণ কাল থেকে যদি আবার শুরু করে ওর কাজ, যদি আবার বানায় সে সর্বনাশা ওষুধ? না, না এ হতে দেয়া চলবে না। ও গা ঘিনঘিনে পৃথিবী ওর চাই না।

উপুড় হয়েই পড়ে রইল নিবারণ। তফাৎটা শুধু এই যে আর কখনও সোজা হবার উপায় রাখেনি জগা। পাথরটা মাথাটা একেবারে থেঁতলে দিয়েছে। পার্কের মাটিতে এখন রক্তের স্রোত মিশতে থাকল বাকি জলকাদার সাথে।

ঠিক তখনই, পার্কের বাইরে রোহিতাশ্বের দেখা না পাওয়া রতন লক্ষ্য করল ক্ষেপীর হাতের জলের বোতলটা। নিবারণের ব্যাগের সেই বোতলটা। টেনে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল ওটা।

ক্ষেপীর রক্তের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো এক নতুন উপাদান, একটু আগেই পাকস্থলীর পথে যে প্রবিষ্ট হয়েছে তার দেহে, তিন মাসের ভ্রূণকে গ্রাস করতে তার সময় লাগবে একটুখানি।

গোটা প্রাণীজগতের কাছে এখনো কিছুটা সময় বাকি আছে তবু।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত