সকালে জাগার পর যে বাথরুমে যাওয়া বা ফ্রেশ হওয়ার একটা ব্যাপার আছে,তৃণার আজকাল আর মনেই থাকে না।ঘুম ভেঙেই হাতড়ে হাতড়ে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়।অপেরা মিনি তে ঢুকেই ফেসবুকে ঢুঁ মারে।নোটিফিকেশন চেক করে,আসলে দীপ্তর কোন কমেন্ট,পোস্ট আছে কিনা তাই চেক করে।গত ২মাস ধরে ত তৃণার পৃথিবীতে দীপ্ত ছাড়া কেউ নেই।মা তো সারাক্ষণই ঝাড়ছেন,”১মাস পর পরীক্ষা,মেয়ের কোন হুঁশ আছে?দিন নেই,রাত
নেই।হাতে ফোন আছেই।কি নিয়ে মেতে থাকিস বলতো?”জবাব দেবে কি?মগ্ন হয়ে দীপ্তর কমেন্ট পড়ছে তৃণা।
তখন নভেম্বর মাস।সবে টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে তৃণার।পরীক্ষা ছাড়া এম্নিতেও খুব একটা পড়েনা ও।আর নতুন FB আইডি খুলেছে কদিন হলো।কিসের পড়াশোনা,কিসের কি।নাওয়া,খাওয়া ভুলেছে মেয়েটা।কদিন পর দিপ্তই পাঠায় রিকয়েস্টটা।এক মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের লিস্ট থেকে।একসেপ্ট করে তৃণা।প্রোফাইল পিক দেখেই তৃণার প্রেমে পড়ে দীপ্ত।প্রোপোজ করে।যথারীতি রিফিউজড ও হয়।এসব নিয়ে এখন ভাবতে চায়না
তৃণা।তারপর থেকে টানা ৩টা মাস ক্রমাগত পিছে লেগে থেকে তৃণার মুখ থেকে yes আদায় করেছে দীপ্ত।তৃণা অবশ্য এখনো দেখেনি দিপ্তকে।ওর কোন পিক নেই যে প্রোফাইলে।তৃণার অনেক অনুরোধের পর মাত্র কদিন ফোনে কথা বলেছে।চ্যাটেই কথা হয় ওদের।তাই ফোনটা সারাক্ষণই হাতে রাখতে হয়।এইচ এস সির মাত্র এক মাস বাকি।পড়তে পারছে কই তৃণা!কেবলই দিপ্তকে দেখতে ইচ্ছে করে।একটা মানুষকে এত ভালবাসে,অথচ চোখের
দেখাটাও দেখলনা আজ পর্যন্ত!আর দীপ্তের কথায় রোজই নিজের পিক আপলোড করে যাচ্ছে।কেমন একটা জেদ চাপে।দীপ্ত বারবার বলে,বলেছি না তোমার পরীক্ষার পর দেখা করব!অনেক চাপাচাপি আর কান্নার পর রাজি হয় দীপ্ত।
সেদিন ১৮ই মার্চ।পরীক্ষার মাত্র ১২ দিন বাকি।কথামতো ভোর ৬ টায় মাকে ফাঁকি দিয়ে স্যারের বাসার কথা বলে বেরিয়েছে তৃণা।সাজগোজ দেখে মা সন্দেহের চোখে তাকালেও কিছু বলেন নি।বারবার ঘড়ি দেখছে তৃণা।৬টা ৪১ বাজে।বিরক্ত হয়ে দীপ্তর নাম্বারটা ডায়াল করে ও।বারবার রিং হলেও ফোনটা রিসিভ করলনা দীপ্ত।হঠাৎ কেঁপে ওঠে তৃণা।তবে কি আসবেনা দিপ্ত!২টা মেসেজ পাঠিয়েও জবাব পায়না।৯টা বেজে
গেছে।এতক্ষনে বুঝে গেছে তৃণা।আসবেনা দীপ্ত।
বুকটা ভেঙে আসে ওর।তবু শক্ত হওয়ার চেষ্টা করে একটা রিকসা ডেকে বাসার দিকে রওনা দেয় ও।বাসায় ঢুকেই নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা লক করে কান্নায় ভেঙে পড়ে তৃণা।এ কি হয়ে গেল!মেসেজ টোনে ঘোর কাটে ওর।দিপ্তর মেসেজ,”এত বোকা কেন তুমি?বুঝতেই পারলেনা তোমার সাথে খেলছিলাম আমি?এত টাইম আছে প্রেম করার?আর তোমার পিক গুলার জন্য থ্যাংকস।ফটোশপে এডিট করে যা বানাব না!!গুডবাই।“
সেই মুহূর্তে একটা কথাই ভাবতে পারল তৃণা।ঘুমের ওষুধগুলো চাই ওর।
পরীক্ষাটা দেয়া হয়নি তৃণার।দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাটিয়ে বেঁচে ফিরেছে।
কিন্তু আসলে কি বেঁচে আছে তৃণা?
দিপ্তরা কি বাঁচতে দেয় তৃণাদের?
লিখেছেন – ফারজানা তাবাসসুম শীলা |