খুব একটা মিশুক নই আমি। একা থাকতেই ভালোবাসি। একা একাই ঘুরে বেড়াই টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরি, আজিজ মার্কেটে। পুরোপুরি একা নই আসলে। আমার ভেতরে একটা পরির বাস। নীল বা ফুলপরি নয়। পরিটা মেঘপরি। মেঘের মতো শ্বেতশুভ্র বলে তার এই নাম দিয়েছি আমি। মেঘের সঙ্গে আরও একটা মিল আছে আমার পরির। আমি যেমন কখনো মেঘ ছুঁতে পারিনি, তেমনি আমার পরিকেও কল্পনা থেকে বাস্তবে আনতে পারিনি। কেমন করে পারব! সব পরিই তো মেঘপরি হয় না। তাই কল্পনায়ই মেঘপরি আমায় ভালোবাসে, শাসন করে, ঘুম না এলে ঘুমপাড়ানির গান শোনায়।
২.
সেদিন ছিল ১৯ আষাঢ়। সকাল থেকেই আকাশজোড়া মেঘ। তখনো জানি না, কী কারণে আমার মেঘপরি সেদিন নিশ্চুপ। মন খারাপ করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে টিএসসিতে দাঁড়াই বাসের অপেক্ষায়। আকাশের মেঘ থেকে সবে চোখ নামিয়েছি। এমন সময় হঠাৎ করেই আমার মেঘপরি বাস্তবে নেমে এল। রোকেয়া হল থেকে বেরিয়ে পরি ফুটপাত ধরে হাঁটছে। এদিকে বাস এসে গেছে। হুড়মুড়িয়ে উঠছে সবাই। আমি কাঠের পুতুল হয়ে মেঘপরিকে দেখছি। জানি না, কখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার পেছনে হাঁটতে শুরু করেছি। হঠাৎ কী ভেবে পেছনে ফেরে পরি। আমায় দেখে কপাল কুঁচকে ওঠে তার। সংবিৎ ফেরে আমার। এ কী করছি আমি! কিন্তু, আমায় অবাক করে দিয়ে হেসে ওঠে পরি। ‘আপনি তনু ভাইয়া না! আমি বর্ষা। ফেসবুকে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আছি। ওখানে আপনার ছবি দেখেছিলাম।’ হঠাৎ সপ্রতিভ হই, ‘তাই তো তোমায় পরিচিত লাগছিল।’
বর্ষাকে জানানো হয় না যে ফেসবুকে নয়, আমার বুকেই ওর সঙ্গে পরিচয় আমার। ও তো আমার মেঘপরি, যাকে দীর্ঘদিন ধরে বুকের গভীরে লালন করছি।
৩.
বাস্তবের মেঘপরিকে পেয়ে আমি তখন আকাশে উড়ছি। আমার পরি যখন আমার হাতে হাত রাখে, আমি তখন সময় ভুলে যাই। পরির চোখে চোখ রেখে কবিতা পড়তে গিয়ে আমি ভাষা ভুলে যাই। ভুলেই যাই আমি অমিশুক, একলা পথিক। প্রকৃতি আমায় একলা দেখতেই ভালোবাসে। তাই বুঝি, পরের বর্ষা আসার আগেই আমার ‘বর্ষা’ আমার মেঘপরি সত্যিকারের মেঘ হয়ে গেল।
পরিশিষ্ট:
যখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। ক্লাস থেকে ছুটে বেরিয়ে যাই আমি। বৃষ্টিতে একা ভিজি, বন্ধুরা পাগল ভাবে আমায়। ওরা জানে না, বৃষ্টি হয়ে আমার মেঘপরি আমায় ছুঁতে আসে। ওরা জানবে না, আমায় ছেড়ে থাকা মেঘপরির কান্নাই বৃষ্টি হয়ে ঝরে। আমার অশ্রুতে ভিজে যায় মেঘ। মেঘপরির অশ্রুতে ভিজে যাই আমি। গন্তব্যহীন পথে হাঁটি আর বিড়বিড় করি ‘I love to cry in the rain, because nobody knows I am crying.’ কেউ জানে না মেঘপরি, তুমি আমার বুকের আকাশে সারাক্ষণ ভেসে বেড়াও। তোমায় বড্ড ছুঁতে ইচ্ছে করে পরি। বড্ড ইচ্ছে করে।
লিখেছেন – ফারজানা তাবাসসুম শীলা |