ছেলেটি বসে আছে সেই পুকুর পাড়ে ঠিক যেখানে মেয়েটির সাথে তার প্রথম পরিচয় হয়েছিল.। কত স্মৃতি বয়ে আছে এই পুকুরপাড়ে তা শুধু মাত্র ছেলেটি আর তার সৃস্টিকর্তাই জানে।আপন মনে, বুক ভরে নিকোটিন নামক সিগারেটের ধোঁয়া গুলোকে নিজের বুকের ভিতর টেনে নিচ্ছে আপন মনে।সেই সাথে তার চোখ দিয়ে অশ্রু রূপে গড়িয়ে পড়ছে এত বছরের সব জমানো স্মৃতি কথা গুলো।…..
হৃদয়ভাঙা আবেগে বুকটা ভেঙে হাজার টুকরা হয়ে যাবার কষ্ট টা সে আজ নিজে উপলব্ধি করতে পারছে। এমনটা তার অনেক বার হয়েছে।কিন্তু আজ সমস্ত কিছুর বাঁধা পেরিয়ে গেছে। কারণ আজ তার প্রিয় মানুষটার বিয়ে। হ্যাঁ, আজ সে অন্য কারও হয়ে যাবে সারাজীবনের জন্য।অবশ্য তাদের ব্রেকআপটা আজ থেকে ২ বছর আগেই হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আবেগটা আজও বিদ্যমান….
……
……ছেলেটির নাম ইফতে। আর তার সবচেয়ে পর্রিয় মানুষটার নাম ছিল শ্রাবণী।
কোনও একটা কারণে আজ থেকে ২বছর আগে তাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়।…
….
তো ইফতে বসে বসে প্যাকেটের পর প্যাকেট সিগারেট খাচ্ছে। তার বন্ধুরাও আজ তাকে কিছু বলছে না।কারণ তারা জানে যে, আজ ইফতে তাদের কোনও কথাই শুনবে না।আর আজই তো শেষ দিন। তারপর থেকে তো আর শ্রাবণীর কথা উঠবে না….
………………
সন্ধ্যা ৬ টায় শ্রাবণীর বিয়ে হয়ে যাবার কথা ছিল। এখন বাজে ৬:৩০। এতক্ষণে বিয়েটা হয়ে গেছে। ইফতে মনে মনে ভাবছে, কি” আর হবে?? যার অন্যের হয়ে যাবার কথা সে তো অন্যের হয়েই গেছে শেষপর্যন্ত। চুপ চাপ সিগারেট টানছে আর কষ্ট গুলোকে বাষ্পে পরিণত করে দিচ্ছে। তারপর ও তার কষ্ট কমছে না। তার বন্ধুরা বার বার তাকে অনেক ভাবে বোঝাচ্ছে কিন্তু কোনও রকম কোনও কাজ হচ্ছে না। নিরবে ইফতে কেঁদেই যাচ্ছে……..
………
সন্ধ্যা ৭ টা……এমন সময় ইফতে পেছেন থেকে একটা ডাক শুনতে পেলো… সেই পরিচিত গলার ডাক।যেটা সে সারাটি জীবন শুনতে চেয়েছিল……
“ইফতে”?
পেছন ফিরে ইফতে তাকালো। সে আশা করে নি এমন সময় শ্রাবণী আসবে। ইফতে উঠে দাঁড়ালো। দেখতে পেল যে শ্রাবণী আর তার মেজ বোন( মীম আপু) দাঁড়িয়ে আছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে শ্রাবণী কে বিয়ের সাঝে। ইফতে চুপ চাপ তাকিয়ে আছে, বলার কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। বুক ফেঁটে কান্না আসতে লাগলো। কিন্তু কাঁদলো না।জ্বলন্ত সিগারেটে কয়েকটা টান দিয়ে,অন্য দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে ইফতে। শ্রাবণী দেখতে পেল অনেক শুখিয়ে গেছে তার ইফতে। এমনটা হয়ে যাবে, আগে কখনো ভাবতে পারে নি।……
……..
শ্রাবণী :এমন অবস্থা করেছো কেনও নিজের?
ইফতে:খেয়াল রাখার মানুষটা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে তো এই জন্য।
শ্রাবণী :ও।সিগারেট খাওয়া শুরু করলে কবে থেকে?
ইফতে:যেদিন থেকে আমাকে আগলে রাখবার মানুষটি হারিয়ে গেছে ঠিক সেদিন থেকে।
শ্রাবণী : আচ্ছা, সে যদি আবার ফিরে আসে তখন কি ছাড়বে এইসব?
ইফতে:( চিৎকার করে বলতে চেয়েছিল, হ্যাঁ আমি সব কিছুই ছেড়ে দিব কিন্তু পারলো না । সোজা ভাবে উওর দিল)
না। আমি কখনো আর পাল্টাবো না।
শ্রাবণী : কেনও?
ইফতে: সব প্রশ্নের উওর থাকে না।আর তাছাড়া, এখন তো আর সে আমার না।আমার কোনও অধিকার ও নেই তার উপর।
শ্রাবণী:আমি যদি এখন সেই অধিকারটা দিই তখন? আমাকে নিয়ে এখন দূরে কোথাও চলে যেতে পারবে?
ইফতে: না । সেই অধিকারটা এখন আর আমার নেই। তুমি তো এখন অন্যের বউ।( হাসি মুখে)দেখো, আমার জীবনের কোনও গ্যারান্টি নেই।হাজার হলেও তো আমি ক্যান্সার এর রোগী।।
আমি চাব না তোমার জীবনটাও আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে শেষ করে দিতে।……
শ্রাবণী কান্না জড়িত ভাবে ইফতে কে এবার জড়িয়ে ধরলো।কিন্তু ইফতে তো জানে, যে সে এখন অন্য কারও । তারপর ও শ্রাবণী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিল। দু’জন কাঁদছে, তো কাঁদছে। এই কান্নার কোনও নাম নেই,কোনও শেষ নেই…….
তারপর……
আরও অনেক কথা বলার পর শেষ বারের মতো দু’জন, দু’জন কে অনেক আদেশ উপদেশ দিল।হাজার হলেও তাদের শেষ দেখা এটি। দু’জন ই জানে আর কোনও দিনও তাদের দেখা হবে না।
………..
আজ পৃথিবীর এত মায়া,এত মমতা ভূলে দু’জন অন্ধকার কবরে।
…….
সে দিন শ্রাবণী তার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে আত্মহত্যা করলো। আর ইফতে?
ও আর সেদিন বাসাই ফিরে যায় নি।ট্রেনের তলে মাথা দিয়ে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছিল…….
অনন্ত কাল ধরে বেঁচে থাকুক এমন পবিত্র ভালবাসা গুলো, চির স্মরণীয় হয়ে থাকুক সবাই অন্তরে ভালবাসার মানুষ দু’টি.
লিখেছেন- ইফতে