বিবর্ণ

বিবর্ণ

হাড় কাপানো শীতে নিধান বাহিরে দাঁড়িয়ে।পরনে সাদা গেঞ্জি এবং লুঙ্গি।পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস শরীর শিউরে দিচ্ছে।

অসহ্য রকমে আবহাওয়ায় টিকে থাকতে না পেরে নিধান আরো একবার চেচিয়ে বললো,’এমন আর হবে না।প্লিজ দরজা খুলো। ওপাশে কোন সাড়াশব্দ নেই।খুব সম্ভবত উর্মি ঘুমিয়ে গেছে। এভাবে থাকা যাচ্ছেনা। নিধান পকেট থেকে ফোন বের করে সিয়ামের নম্বরে ডায়াল করলো। দু’বার কল হওয়ার পরেই রিসিভ। হ্যা মামা বল। তোর ভাবী বাসা থেকে বের করে দিছে। বলিস কি!কেন?

শার্টে নাকি লিপস্টিকের দাগ পাইছে।সন্দেহ করতেছে আমি অন্য মেয়ের সাথে ডেট করছি। খুবই বাজে ব্যপার।তাই বলে তদন্ত না করে সোজা বাহিরে? ওরে তো তুই চিনিস।ঝামেলা করতে কোন ফাঁক পেলে হয়। টেনশন নিস না মামা।আমার ফ্লাটে চলে আয়।স্নেহা বাপের বাড়ি গেছে।ফ্লাট পুরো খালি।রাতভর পার্টি হবে। সিগারেট আছে?

এক প্যাকেট আছে।আসার সময় আর এক প্যাকেট নিয়ে আসিস। ঠিক আছে।আসতেছি ওয়েট। ফোন কেটে নিধান হাফ ছাড়লো।ঠিক তখন দরজা খোলার শব্দ।মুহূর্তে খুলেও গেলো। অগ্নি দৃষ্টিতে উর্মি দাঁড়িয়ে। হাতে বিছানা ঝাড়ার ঝাড়ু। তু..তু..তুমি! শালা,কোন মেয়ের সাথে কথা বলতেছিলি?

মেয়ে নাতো,ছেলে। আমি বুঝিনা না।তোরে হাড়ে হাড়ে চেনা আছে। সত্যি জানু,প্রমিস। চোপ,একদম চোপ।ধরলাম মেয়ে না।কিন্তু সিগারেট?তুই বললি “সিগারেট” এর কথা। ওইটা তো মজা করতে ও মজা?রুমে আয় তুই।তোরে মজা বুঝাচ্ছি। তুই তুকারি করছো কেন?

ওরে বাবা।স্বামী আমার দেখি পুরাই সাধু।ভুল হয়ে গেছে।ক্ষমা করেন মহাশয়।আপনি রুমে এসে আমায় একটু উদ্ধার করেন। রুমে গেলে মারবা। বাহ্!আপনি তো খুব ভালো ভবিষ্যত বাণী করতে পারেন।এক কাজ করেন,বাজার একটা দোকান দেন।সিগারেটের বিনীময় সবার ভবিষ্যত বলে দিবেন। আমি সিগারেট খাই না। ও আচ্ছা আচ্ছা।আবারো সরি।সাধুরা তো সিগারেট খায় না গাঞ্জা খায়। যা তা বলতেছো কেন? কি বলবো তাহলে?মেয়েদের সাথে ফস্টি নস্টির কথা? শার্টে তোমারই লিপস্টিক লেগে ছিলো।অফিসে যাবার সময় পাপ্পি দেওয়ার কথা মনে নাই? না নাই।আপনি দয়া করে ভেতরে আসেন এখন। তুমি  তুই আসবি নাকি আমি দরজা লক করবো। আসতেছি।

(২) ঝাড়ুর প্রতিটা আঘাতে নিধান লাফিয়ে উঠছে।ব্যাথা লাগলেও খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না।এমন মাইরের সাথে সে বাসর রাত থেকে পরিচিত।ভাগ্যক্রমে আচমকা লাফাতে গিয়ে নিধান খাট থেকে পড়ে গেলো।মাথা গিয়ে লাগলো টেবিলের কোণে। সাথে সাথে রক্ত বের হয়ে ফ্লোর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। উর্মি হতভম্ব। পাথর ন্যায় দাঁড়িয়ে।অপর দিকে জলজ্যান্ত দেহ নিস্তব্ধ ফ্লোরে ছটফট করছে। উর্মি। ক..ক..কি? দাঁড়িয়ে না থেকে কিছু করো। তোমার কিছু হবে না। বলে উর্মি ফোন হাতে সিয়ামের নাম্বারে কল করলো।

পাঁচ সেকেন্ডের কথায় সে শুধু মাত্র বলতে পেরেছে,’ভাইয়া এই মুহূর্তে আমাদের ফ্লাটে এম্বুলেন্স নিয়ে আসেন।’এরপর নিজের ওপর ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেনি।মাথা ঘুরিয়ে লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে। নিধান উর্মির এমন হাল দেখে কোনভাবে উঠে দাড়ালো।তারপর কোলে তুলে রওনা হলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।দোতলা ছাব্বিশটা সিরি এখন অনেক বড় পথ মনে হচ্ছে।সেই পথ অতিক্রম করে নিচে নেমে নিধান দেখে সিয়াম এম্বুলেন্স নিয়ে হাজির। দোস্ত উর্মির যেন কিছু না হয়। ধুর পাগল।ওই তোর মাথায় রক্ত কেন? নিধান উত্তর দিতে পারেনি।সেন্স লেস হয়ে আছড়ে পড়ে মাটির বুকে।

(৩) দুটি পবিত্র দেহ দুই বিছানায় পাশাপাশি রাখা।রুমে কেউ নেই।ওপরে ফ্যান ঘুরছে।উভয়ের হাতে স্যালাইন লাগানো। অজ্ঞান দুটি দেহের মাঝে আচমকা একটি দেহ সজাগ হলো।ফিরে তাকালো পাশের দেহের প্রতি। তারপর তাকে আটকায় কে?

স্যালাইন খুলে লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে কাছে এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো,’ওই তুমি চোখ খুলো।চোখ বন্ধ কেন?চোখ খুলে আমার সাথে এই মুহূর্তে কথা বলবা।কথা না বললে আমি কিন্তু তোমায় মাইর দিবো।চোখ খুলছো না কেন?ওই কথা বল।নিধান তুমি চাও আমি কান্না করি?’ প্রতিটা কথা নিধানের কানে বাধা প্রদান করছে।এই অবস্থায় অচেতন থাকা বড় দায়। নিধান মিটমিট চোখ খুলে বললো,’কান্না করছো কেন?’

– ঘুমিয়ে থাকবা কেন?

-ঘুমিয়ে থাকলেও দোষ?

দোষ না।কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকা দোষ। আচ্ছা ঘুমাবো না। খুব কষ্ট হচ্ছে? হেসে দেখাও,কষ্ট কমে যাবে। হাসি পাচ্ছে না। জোকস বলবো? হুম। ছেলেদের কাছে সবচেয়ে বেদনা দায়ক শব্দ কী বলতো? কি? ভাইয়া ডাক। হিহিহি। মেয়েদের কাছে সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার কী বলতো?

কি?  ভাইয়া ডাক শোনার পর ছেলেদের রিএক্সন দেখা। ধ্যাত!এটা কোন জোকস হলো? আমি তো জোকস বলতে পারিনা। আচ্ছা বলতে হবে না।একটা কথা বলবো?

বলো। আই এম সরি এন্ড লাভ্ ইউ। মি টু। সুস্থ হয়ে বাসায় চলো।তোমায় আর কখনো মারবো না।অনেক অনেক আদর করে দিবো। এখন করে দাও। উমম,আগে চোখ বন্ধ করো। ওকে।

নিধান চোখ বন্ধ করে ফেললো।উর্মি এই অবস্থা বুঝে উঠতে পারছে না,ঠিক কোথা থেকে শুরু করবে। একবার জড়িয়ে ধরে।আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কখনো বা বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। নিধান চোখ বুজে শুধু পাগলীর পাগলামো অনুভব করছে। তারপরই হঠাৎ উর্মি চমকে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করলো। নিধান হতভম্ব।এটা হয়তো প্রকৃত সুখের একাংশ। এই সুখে জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব?

না সম্ভব না। তবে,স্মৃতির খাতায় লিপিবদ্ধ করে ঠিকই রাখা যায়।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত