একটা ভুতের গল্প

একটা ভুতের গল্প

অনেকদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম । বেশ ভাল লেগেছিল।

কার লেখা জানি না । গল্পের খালি কাহিনী মনে আছে । নিজের মত করেই লিখছি….

প্রতিদিন বিকেল হলেই বাড়ী ফিরে আসে জাহিদ । বাসা বেশ খানিকটা দুর তো বটেই.. তাছাড়া তার নতুন বিয়ে করা বউ বাসায় একা থাকতে ভয় পায় । বিকেলের দিকে গ্রামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ শেষ করে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ।

নতুন চাকরি একটু কষ্ট তো করতেই হবে । এইভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে । তার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা অনেক ঘুর পথে । কয়দিন আগে একটা সর্টকাট আবিষ্কার করেছে সে । রাস্তাটা একটু নির্জন অবশ্য কিন্তু দিনের বেলায় যায় বলে ভয় লাগেনা জাহিদের ।

সেদিন কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । প্রচন্ড শীতের সময় , ছয়টা বাজতে না বাজতেই রাতের মত হয়ে গেল। বের হওয়ার সময় একবার মনে হল ঘুরপথেই যাবে নাকি!! কিন্তু পরমুহূর্তেই হেসে উড়িয়ে দিল ও । ধুর, এই শী্তের মধ্যে এত দূর ঘুরে যাব!! তাই বড় টর্চটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি সাইকেল বের করে রওনা হয়ে গেল জাহিদ ।

রাস্তাটা পাকা নয় । পাকা হবার কথাও না । এমনিতেই মানুষজন খুব কম চলাচল করে এখান দিয়ে । প্রচন্ড শীতের মধ্যে এখন তো কারো আসার প্রশ্নই আসে না ।

হঠাৎ করেই ফুশ করে শব্দ , আর সেই সাথে সাইকেল নড়বড় ।

সাইকেল খুব জোরে চলছিল ।

শব্দ শোনার পর আর বলে দিতে হল না কি হয়েছে । জাহিদ তিক্ত মনে ভাবল বাঙালী বাঘা জিনিস । কী কী প্রবাদ যে বানাইছে । যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কিনা সন্ধ্যা হয় ! টায়ারটাও এখনই পাংচার হইতে হইল ! হাত থেকে পড়ে টর্চটা নিভে গিয়েছিল । শংকিত মনে জাহিদ মাটি হাতড়ান শুরু করল । টর্চের মত কিছু একটা হাতে ঠেকল । তুলে নিয়ে সুইচ চাপতেই মনটা আবারো তিক্ততায় ভরে গেল । “চমৎকার !! আর কী চাই !!” এইটাও শেষ । সোজা হয়ে দাড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করল জাহিদ । কি করা যায় ! অনেকক্ষন ভেবে এটুকুই বুঝল যে এখানে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করতে থাকলে মাথা চিরদিনের মত ঠান্ডা হয়ে যাবে !

প্রথমে সাইকেলটাকে ঝোপের আড়ালে নিয়ে রাখলো কোনরকমে। নিজে কোনরকমে বাসায় পৈছতে পারলেও সাইকেলটা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না । সকালে নিয়ে গেলেই হবে ।

তারপর আবার রাস্তায় দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আশায় বুকটা নেচে উঠল । দূরে গাড়ির দুটো হেডলাইট এদিকেই আসছে । এই জায়গায় গাড়ি কিভাবে এল এ চিন্তা মাথায় এলেও জাহিদ তা মাথায় স্থান দিল না । জাহিদ অপেক্ষা করতে থাকল । কিন্তু গাড়িটা খুব বেশী স্লো । জাহিদ নিজেও একটু এগিয়ে গেল । গাড়িটা ওর সামনে এসেই থামল । জাহিদ খুশি মনে গাড়ির পেছনের সীটে গিয়ে উঠল । আস্তে করে গাড়ীর দরজা লাগাতেই গাড়িটা আবার চলতে শুরু করল ।

গাড়ির ভেতরটা বেশ গরম । জাহিদের মনে হল ও যেন ঠান্ডা দোযখ থেকে গরম বেহেশতে এসে পড়ল । গাড়ীর চালককে কিভাবে ধন্যবাদ দেবে বুঝতে পারছিল না জাহিদ । পেছন থেকে ও বলল-

” থ্যাংকিউ ভাই । জীবনটা বাঁচালেন ।”

চালক জবাব দিল না ।

একটু অস্বস্তিতে পড়ল জাহিদ । আবার বলল-

“রাস্তায় হঠাৎ সাইকেলের চাকা পাংচার হয়ে গেল আরকি হে হে।”

এবারো কোন জবাব নেই ।

জাহিদ বুঝতে পারছিল না এই লোক কথা বলে না কেন?

আবারো ও বলল

“এদিকে কার বাসায় যাবেন?”

এবারো কোন জবাব নেই।

এবার একটু মেজাজ খারাপ হল জাহিদের । ব্যাপার কি? যাই হোক ও চুপ করে গেল ।

কিছুক্ষণ পর ওর টনক নড়ল । কি ব্যাপার !! গাড়ী এত আস্তে আস্তে চলছে কেন ? সামনে ঝুকে জাহিদ ঐ লোককে ডেকে বলতে চাইল “ভাই গাড়ি এত আ-

মেরুদন্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল স্রোত তার কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিল । চালকের আসনে কেউ বসে নেই । সবার আগে যে সম্ভাবনাটা মাথায় এল তা আর ভাবতে চাইল না জাহিদ। গাড়ি থেকে নেমে যেতে চাইল ও । কিন্তু আতংকে ও নড়তে পারছিল না । সামনে রেল ক্রসিং । গাড়িটা খুব আস্তে আস্তে ঐ রেললাইনের উপর গিয়ে দাড়াল । হঠাৎ ট্রেনের হুইসেলের শব্দে জাহিদের মাথা পরিষ্কার হয়ে গেল । তাহলে ভুতটার তাহলে এই মতলব ! এখন ট্রেন এলে জাহিদ একদম চ্যাপ্টা হয়ে যাবে । তাড়াতাড়ি ও দরজার হাতল ধরে টান দিল । আবারো ভয়ে ও পাগল হয়ে গেল । বারবার হাতল ধরে টান দিলেও ওটা খুলছিল না । গাড়িটা আবারো নড়তে শুরু করছিল । ওদিকে ট্রেন কাছে চলে আসছিল । ভয়ে আর পরিশ্রমে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ও জীবনের আশা প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল তখনই ও খেয়াল করল দরজাটা তো লক করাও থাকতে পারে । তাড়াতাড়ি লকে হাত দিয়ে লকটা খুলে ও বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ল । মাটিতে গড়িয়ে ও কিছুটা দুরে সরে এলো । তখনই আবারো গাড়িটা চলতে শুরু করল । গাড়িটা রেললাইন পার হয়ে গেলেই ট্রেন চলে গেল । জাহিদ মাটিতে শুয়ে চোখে আতংক নিয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিল । গাড়িটা আবারো ওর সামনে এসে দাঁড়াল ।

গাড়ির পেছন থেকে হঠাৎ এক যুবক বের হয়ে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছিল । তার সারা গায়ে এই শীতের রাতেও ঘাম । জাহিদের একটু খটকা লাগল । ভুতেরাও ঘামে ?!! যুবক জাহিদকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বলল ”কী ব্যাপার, মাটিতে শুয়ে আছেন কেন ? আমার গাড়িটা যে রেললাইনের উপর হ্যাং হয়ে ছিল দেখেন নি ? ”

জাহিদ কোনরকমে ঘাড় নাড়ল ।

”আচ্ছা মানুষতো আপনি ! আরেকটু হলেই মারা যাচ্ছিলাম আর আপনি হেল্প করতে আসলেন না ? পাক্কা দুই কিলোমিটার ধরে গাড়িটাকে ঠেলছি !! আসুন আসুন , আমার সাথে ঠেলুন ।

জাহিদ বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে যুবকের সাথে গাড়ি ঠেলতে শুরু করল ।

লিখেছেন – অজানা

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত