ঘাড়ত্যাড়া পিচ্চি

ঘাড়ত্যাড়া পিচ্চি

ঘটনাটা একটু প্যাজগি টাইপের। তখন আমি ছিলাম মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ঘাড়ত্যাড়া টাইপের ছেলে। যখন যা বায়না ধরতাম তা, আদায় না-হওয়া পর্যন্ত অভিরত কান্না চলতেই থাকতো। তবে এখন আমার চাইতেও একটা ঘাড়ত্যাড়া পিচ্চি আছে.. যে তিনদিন ধরে খেলনা পিস্তল কেনার বায়না ধরছিলো..দাম বেশী না..মাত্র দু’শ টাকা। কিন্তু দুঃখজনক..সেটা আদায় করা মুঠেই সম্ভব হলো না। তবে সেও হাল ছাড়ার পাত্র না..অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করলো..? আর সেটা নিয়েই শুরু করি গল্প।

সে টাকার উৎশ সন্ধানে নেমে পড়লো। সোজা পথে যদি টাকা না-পাওয়া যায় তাহলে তো বক্র পথে যেতেই হয়। পিচ্চিটা চিন্তা করে দেখলো..মা-বাবা যে টাকাটা তাকে দেয় সেটি আসে কোথা থেকে।

-হুম, এটাতো বড় ভাই বিদেশ থেকে পাঠায়। বড় ভাইর কাছে মা-বাবা চিঠি লিখলেই টাকা কেমতে কেমতে চলে আসে..?

-ইয়েস, এটাতো গুড আইডিয়া। খুশিতে চিৎকার করে উঠে পিচ্চিটা..কিন্তু বিধিবাম-কে যেন বিড়বিড় করে উঠে,

-সীট? ম্যান, এটা কি একটা আইডিয়া হলো.. তুমিতো এখনো অনেক পিচ্চি, তুমি কি মনে করো একটা পিচ্চির আবদার ভরা চিঠি পড়ে তোমার ভাইও পিচ্চির মত দু’শ টাকা পাঠিয়ে দেবে..? তবে চিঠি পাঠাতে পারো যদি গন্ডারের চামড়া গায়ে পরতে পারো.?

হুম,বুঝলাম। কিল ঘুষি একটাও মাটিতে পড়বে না, কিন্তু উপায় বলো…?

-মা-বাবা আরো কিছু করে, তুমিও তা করো..?

মা-বাবা..টাকা পাওয়ার জন্য..আর কি করে, এবার পিচ্চিটা ভাবনায় পড়ে যায়। কিছুক্ষণ ভাবার পর বলে,

হুম পেলাম?

কি পেলাম?

-মা-বাবাতো- মান সম্মান,ধনদৌলত,টাকা পয়সা সবই আল্লাহর কাছে চায়।

-তাহলে দেরী কিসের..তুমিও চাও..?

-কিন্তু এসবতো এক্সট্রা অডিনারী..উছিলা ছাড়া আল্লাহ মাগনা কিছু দেন না..বুঝলা..?

-তাহলে উছিলা করো।

-সেটা কিভাবে।

আহা..পিচ্চি..সহজ জিনিসটা বুঝলা না..সরাসরি আল্লাহর কাছে চিঠি লিখ..?

হুম, আইডিয়াটা মন্দ না..এটা করা যেতে পারে।

এবার আর ভাবাভাবি নাই, পিচ্চিটা সরাসরি আল্লাহর কাছেই চিঠি লিখলো,

”আল্লাহতাআলা আমি তোমার এক পিচ্চি বান্দা, আমি খেলার জন্য একটা টু-টু বোরের পিস্তল কিনতে চাই। কিন্তু দু’শ টাকার জন্য তিন দিন ধরে আন্দোলন করে ইকোয়েল টু জিরো, সুতরাং সদয় বিবেচনা পূর্বক আমাকে দু’শ টাকা পাঠালে সাধের পিস্তলটা আমার হতো”।

চিঠির উপরে প্রাপক হিসেবে লিখলো ”আল্লাহতাআলা” আর প্রেরক হিসেবে ওর নাম ঠিকানা।

ব্যাস, চিঠিটা পাশের পোস্ট বক্সে ফেলে আসলো।

ওদিকে পোন্টঅফিসের লোকরা সবগুলা চিঠি ভাগ করতে যেয়ে এই চিঠি হাতে পড়লো। তাতে প্রাপকের স্থানে আল্লাহতাআলার নাম দেখে কৌতুহলবসত্‌ সবাই একে একে জড়ো হয়ে খামটা খুলে চিঠিটা পড়তে লাগলো। তারা লেখার মান দেখে বুঝতে পারলো এটা নিশ্চয় কোন ঘাড়ত্যাড়া টাইপের পিচ্চিরই কান্ড হবে। ওরা মজা করে সবাই পাঁচ-দশ করে চাঁদা তুলে ফিরতি খামে একশ টাকা ভরে পিচ্চির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলো।

এবার পিচ্চিটা টাকা পেয়ে শুকরিয়া জানাল আল্লাহর কাছে..সেই সাথে দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে বলল, আল্লাহতাআলা তোমার কাছে দু’শ টাকা চাইছিলাম কিন্তু ঘটনাক্রমে একশ টাকা পাইছি, তবে আমি বিশ্বাস করি তুমি আমারে দু’শ টাকাই পাঠাইছিলা কিন্তু পোস্টঅফিসের লোকরা সেখান থেকে একশ টাকা মেরে দিছে, তুমি এর বিচার করো..আমিন।

পিছনে ফিরে তাকাতেই কর্কশ আওয়াজ। মায়ের চোঁখফোলা শাসানি,

-টাকাটা এলো কোথা থেকে..?

জবাব নেই পিচ্চির, শুধু মনে মনে গুঙ্গানি দিলো… দারোয়ান একটা,,?

-জানতো..বিকেলে তোমার বাবার ”দরবার হলে” বিচার বসবে, সেখানে তোমার আরো দু’ভাইয়ের কৃতকর্মের বিচার হবে। সাথে তোমারটাও, পিঠে তেল মেখে অপেক্ষা করো..?? একথা বলে মা চলে যান।

পিচ্চিটা এবার পালাবে না.. আগাম কাদঁবে.. সেটি গভীর মনে ভাবতেছে। আবার কে যেন বিড়বিড় করে উঠে,

-পালাবে কোথায়..পালানোর কোন পথ খোলা নেই..?

-হুম,

এবার নিজেকে নিজেই ইংরেজীতে কয়েকটা গালি দিলো…তারপর বিকেলে সেই টাকা দিয়ে এক বোতল খাটি শরিষার তেল কিনে এনে গায়ে মাখতে মাখতে দরবার হলে চলে এলো।

দরবার হলে ওর দু’ভাই আসতে শুরু করেছে আর গদাম লাঠি নিয়ে বিচারকের মত বসে ওদের বাবা কলসির পবিত্র পানি পান করছেন।

সারিবদ্ধ হয়ে তিন ভাই-ঝন্টু,মন্টু আর পিচ্চি, নতজানু হয়ে বসে আছে। মা এসে বললেন

-দরবার হলের কার্যক্রম শুরু হোক..?

এবার পিচ্চির বাবা শুরু করলেন বিচারপ্রক্রিয়া। প্রথমেই মন্টুকে দেখিয়ে বললেন:

-তুমিই প্রথমে বলো তোমার অপরাধটা কি..?

-আব্বাজান, আজ মেঘ না-চাইতেই ঢাকা শহরে বৃষ্টি হওয়ায় তোমার বাঙ্গালী ছাতাটা বের করেছিলাম কিন্তু ঝন্টু ঘরের বটিদাও দিয়ে কুপ মেরে এটি দু’ভাগ করে দিয়েছে। তবে ছাতাটা বিনা অনুমোতিতে বের করার জন্য আমি অনুতপ্ত,,?

-ঠিক আছে..তুমি পাশের রুম থেকে একগ্লাস কলসির পবিত্র পানি খেয়ে এসো, আশা করি পাপ মূচন হবে।

মন্টু পানি খেয়ে বসে পড়ে। এরপর ঝন্টুকে ওর বাবা বললেন:

-ঝন্টু তুমি বটিদাও দিয়ে কুপ মেরে ছাতাটা কেন দু’ভাগ করেছো..?

-আমি কুপটা দিয়ে ছিলাম মন্টুকে..কিন্তু.. ও সরে যেতেই সেটা ছাতার উপর লেগেছে..তবে ছাতাতে কুপ পড়ায় আমি ভীষন অনুতপ্ত..?

-ঠিক আছে..তুমিও পাশের রুম থেকে একগ্লাস কলসির পবিত্র পানি খেয়ে এসো, আশা করি পাপ মূচন হবে।

এবার পিচ্চিকে দেখিয়ে বললেন,

-তোমার অপরাধ কি বলো..? (পিচ্চি আমতা আমতা করে ) বলল:

-আব্বাজান, আমি একটা মারাত্তক অপরাধ করে ফেলেছি..সেটি ক্ষমার অযোগ্য..?

-কি সেই অপরাধ.?

-আব্বাজান, আমি আপনার ”পবিত্র পানির কলসির” ভিতর পেসাব করে দিছি..এর জন্য সত্যিই আমি অনুতপ্ত..?

**এরপর দরবার হলে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ আর গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ভিতরের সর্বশেষ আপডেট জানা সম্ভব হয়নি। কোন কিছু ঘটা মাত্রই তা,সাথে সাথে জানাবো, সে পর্যন্ত ভাল থাকুন-সুস্থ থাকুন..বাই বাই।

লিখেছেন – উঠান ভরা দুখ |

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত