তোর জন্য লেখা

তোর জন্য লেখা

যেদিন তোর সাথে প্রথম দেখা হয়…কেন জানি ভালো লাগেনি! মুডি টাইপ একটা মেয়ে মনে হচ্ছিল! কথা বলতি ঠিক ই…কিন্তু,একটা কথা ও প্রয়োজনের বেশি না।রাগ হতো খুব! ভার্সিটি লেভেলে এসেও একটা মেয়ে এমন হবে কেন?…কোন ও ফর্মালিটির বালাই নাই! সবার উপরই কেমন একটা আজব ধরণের অধিকারবোধ!কেউ কিছু উল্টাপাল্টা করলে সাথে সাথে ঝাড়ি…কোন ও স্যরির ধার ধারেনা…অথচ পরক্ষণেই তার মন ভালো করতে উঠে পড়ে লাগা!……সময় গেল…আস্তে আস্তে অনেকটা চিনলাম তোকে…বুঝলাম…তুই এমনই…কারো প্রতি তোর কেয়ারটা সরাসরি দেখাতে তোর যত অনীহা …তোর সাথে একই গ্রুপে পড়ি…তাই,ঘনিষ্ঠতা হতে সময় লাগলোনা…একসাথে গ্রুপ-স্টাডি…আড্ডাবাজি…মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া…এভাবেই দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম তোর প্রতি…তুই বুঝতি কী না কে জ়ানে!হয়তো বুঝেও না বোঝার ভাণ করতি!তোর সামনে ভালোবাসা নিয়ে কিছু বলতে গেলেই ভীষণ বুদ্ধিমতীর মত প্রসঙ্গ পাল্টে দিতি……।

তুই কখনোই বলিসনি…আমাকে ভালোবাসিস…তবু আশ্চর্য একটা অধিকারবোধ নিয়ে আমার অনেক কিছুর খেয়াল রাখতি…শাসন করতি…মায়াও করতি বোধহয়!পড়াশোনা বল…বা ফ্যামিলির কোনও সমস্যা বল…তুই আমার সব সমস্যাতেই আমার পাশে…

শুধু ভালোবাসার প্রসঙ্গ তুললেই ‘কবি নীরব’!তোকে ইম্প্রেস করার জন্য এত ছেলের এতো চেষ্টা……তোর শুধু কোন ও দিকেই খেয়াল নাই!

ভাবলাম,মেয়েরা এমনিতেই একটু লাজুক টাইপ হয়…তাই,মুখ ফুটে বলছিস না হয়তো।সিদ্ধান্ত নিলাম,আমিই বলবো…

যেই ভাবা সেই কাজ!পরদিন লাস্টক্লাসে এক্সাম ছিল একটা।এক্সাম শেষে বের হয়েই ড্রামাটিক স্টাইলে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করলাম।

আমাকে অবাক করে দিয়ে তুই মুখটা শ্রাবণের আকাশের মত কালো করে ফেললি।একটা কথাও না বলে চলে গেলি চুপচাপ।পাগলের মততোর ফোনে ট্রাই করতে থাকলাম…অপারেটর খুব শান্ত ভঙ্গিতে বারবার মোবাইল সংযোগ দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে থাকলো।দুদিন ভার্সিটিতেও এলিনা তুই।দুশ্চিন্তায় আমার মনে হচ্ছিল মরে যাই!তোর বাসায় যেতেও ভয় লাগছিল…পাছে তোকে দেখলে আবার ইমোশনাল হয়ে পড়ি!

৩য় দিন ভার্সিটিতে তোর সাথে দেখা হওয়া মাত্রই একগাদা প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলাম…”কি হয়েছে তোর?কোথায় ছিলি?ফোন বন্ধ ছিল কেন?” তুই শুধু ম্লান একটু হেসে বললি…”আমার এসব নিয়ে কথা বলতে এখন একদমই ভাল লাগছে না।জ্বালাস না প্লিজ।” দমে গেলাম ভীষণ।

তুই বদলে যেতে শুরু করলি…আমার পৃথিবীটার মত!যে তুই আমার সাথে সারাদিন অনর্গল কথা বলতি আমার সাথে…সেই তুই আমাকেই এড়িয়ে চলতে শুরু করলি সবখানে…বন্ধুদের আড্ডা বল…আর আইসক্রিম পার্লার…সব আছে…আগের মতই…শুধু আমরা বাদে…

ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছিলাম। …একসময় আর সহ্য করতে না পেরে তোকে একটা টেক্সট মেসেজ দিলাম…”আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমার কাছ থেকে দূরে সরানোর অধিকার দেইনি তোকে আমি!”

এর কদিন পর…আমার জন্মদিন ছিল…সারাদিন একসাথে ক্লাস করলাম…অথচ তুই উইশ করলি না!প্রচন্ড রকম খারাপ লাগছিল…ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যাব এমন সময় তুই পেছন থেকে ডাক দিলি…দেখি তোর হাতে অনেকগুলো কাঠ গোলাপ!আমার প্রিয় ফুল!কাছে যেতেই ফুল গুলো হাতে দিয়ে বললি,”শুভ জন্মদিন,দোস্ত!” ওদিন অনেকক্ষণ ছিলি আমার সাথে…একসময় আমি জিজ্ঞেস না করতেই বললি…”আমাকে মাফ করিস দোস্ত।আমি জানি,তুই আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসিস…যে ভালোবাসার মূল্য দেবার ক্ষমতা আমার নেই…কারণ আমি অন্য কাউকে অনেক বেশি ভালোবাসি।তার ভালোবাসার সাথে আমি বিশ্বাস-ঘাতকতা করতে পারবনা।কোন ও কিছুর বিনিময়েই না।” ঈর্ষা থেকেহোক,আর যেকারণেই হোক…আমি একটা কথা না জিজ্ঞেস করে পারলাম না…”যাকে এত ভালোবাসিস…সে কী সত্যিই তোর এত ভালোবাসার যোগ্য?সে কি তোকে এত ভালোবাসে?” তুই অন্যদিকে তাকিয়ে রইলি…বলতে হতোনা…আমি জানতাম,তোর চোখে সেই জল,যা মুছে দেবার ক্ষমতা বা অধিকার,কোনোটাই নেই আমার!

তুই না করেছিলি,তাই ওই বিষয়ে আর কিছু কখনো জিজ্ঞেস করিনি তোকে…কিন্তু,তোর চোখ দেখলেই বুঝি…তুই ভালো

নেই।…ইস্পাত কঠিন তোর মধ্যে আমি ভীষণ দূর্বল তোকে খূঁজ়ে পাই…তোর নিস্তব্ধতায় আমি ভাঙ্গনের শব্দ শুনতে পাই…তোর কৃত্রিম হাসির পেছনে তোর অশ্রু দেখি!বন্ধু তো!নিজের জন্য এখন আর ভাবি না…কারণ,তোর ভালোবাসা পাবার ইচ্ছে ছিল,করুণা না!তোর জন্য খারাপ লাগে না…খারাপ লাগে ওই দূর্ভাগার জন্য…যে জানে না…তার কে ছিল?কী ছিল!তুই ভালো থাকবি…তোকে ভালো থাকতেই হবে..আমার জন্য……আমাদের জন্য……তোকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখা এত মানুষের ভালোবাসার জন্য!

লিখেছেন – অনন্ত শুভ্র |

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত