সাহসী সামদ্রুপ

সাহসী সামদ্রুপ

দূর হিমালয়ের কোলে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করত সামদ্রুপ নামে এক অসীম সাহসী তরুন। সারা দিনমান চমরী গাই চড়াত আর রাতে চুলার পাশে বসে বসে চাদর বুনত। গ্রামে সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করত। একবার হয়েছি কি সামদ্রুপ এর দাদীর ভীষণ অসুখ, এখন কি করা। বদ্দি যে পথ্যি আনতে বলল তা তো শহর ছাড়া পাওয়া যায় না আর শহরে যেতে সময় লাগে দুই দিন এক রাত। সে যে দূরের উপত্যাকায় শহর। সামদ্রুপ এর গাঁয়ের সবাই প্রয়োজনে দল বেধে শহরে যেত, একা একা কেউ যেত না। কারন শহরে যাওয়ার পথে ছিল পদে পদে বিপদ।

পাহাড়ি রাস্তা আর গিরি খাতের বাঁকে বাঁকে বন্য পশু, ইয়েতি ছাড়াও ছিল ভূতের ভয়। কিন্তু সামদ্রুপ তার দাদীকে ভীষণ ভালবাসত তাই সে ঝুকি নিয়েও তৈরি হল শহরে যেতে। খুব সকাল সকাল সূর্য যখন পাহাড়ের বরফ ঢাকা চূড়া গুলোকে সোনালি আভায় আলোকিত করতে শুরু করেছে তখন ই সে রওয়ানা দিল শহরের পথে। বাড়ির সবাই তাকে পই পই করে বলে দিল সাবধানে থাকতে। সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে, ফুল পাখিদের সাথে কথা বলতে বলতে আর নিজের মনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সে এসে পৌঁছাল পাহাড়ের ঢালে, রাতটুকু হাতলে কাল দুপুর দুপুর পৌঁছে যাবে শহরে। ওইদিকে সূর্য হঠাত করেই চলে গেল পাহাড়ের আড়ালে। সাহসী সামদ্রুপ তারপরও হাঁটতে লাগলো তার নিজের গন্তব্যের দিকে।

মাঝরাতে চাঁদের ঘোলা আলোয় পাহাড়ে পাইনের বনের ধারে হঠাত তার দেখা হল এক ভূতের সাথে। কে রে তুই? এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস? খ্যানখ্যানে গলায় হেঁকে উঠল ভূত। হে হে আমায় চিনলে না, আমি ওই দূর পাহাড়ের কাছে যে পুরানো ঝং আছে সেই ঝং এর ভূত। মনে মনে ভয় পেলেও মুখে তা প্রকাশ করল না সামদ্রুপ। ভূত তাকে বিশ্বাস করল, আর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আপাতত রক্ষা পেল সামদ্রুপ। ভূতের হাতে ছিল এক বিশাল বস্তা। ভূত সামদ্রুপকে বস্তাটা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে বলল। মনে মনে রাগ হলেও কিছুই করার নাই তাই সামদ্রুপ ভূতের কথা মতই কাজ করল। আশ্চর্য ব্যাপার, এত্ত বড় বস্তা অথচ বাতাসের মত হালকা, নিজের মনেই বলল সামদ্রুপ।

এরপর তারা একসাথে হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর ভূত বেশ খোশ মেজাজে গল্প শুরু করল। ইয়ে এই বস্তাটা এত্ত বর কিন্তু এক্কেবারে হালকা, মিনমিন করে বলল সামদ্রুপ। আরে বোকা হালকা তো হবেই, ওর মাঝে আছে শুধু রাজকন্যার আত্মা, আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি, খ্যানখ্যানিয়ে বলে উঠল ভূত। বলছ কি? আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করল সামদ্রুপ। হ্যাঁ রে, আর এই জন্যই তো রাজকন্যা ভীষণ অসুস্থ, হাসিমুখে উত্তর দিল ভূত। ওমা তাহলে তো রাজকন্যা আর বাঁচবে না, সভয়ে আবারও বলল সামদ্রুপ। পৃথিবীর কোন বদ্যির সাধ্য নাই এই আত্মা ছাড়া ওকে বাঁচানোর, সদম্ভে উত্তর দিল ভূত। হুম, আস্তে করে বলল সামদ্রুপ। হঠাৎ করেই দয়ালু সামদ্রুপ এর মনটা ভারী হয়ে উঠল রাজা আর রাজকন্যার জন্য। সে করল কি সুযোগ বুঝে হুট করে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল গম ক্ষেতে।

এদিকে ভূত তো রেগে অস্থির, কিন্তু বেশীক্ষণ খোঁজাখুঁজির সুযোগ পেল না। কারন দিনার আলো ফুটতে শুরু করেছে। আলো এসে ভুতের গাঁয়ে পড়ার সাথে সাথেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কালবিলম্ব না করে সামদ্রুপ দৌড় দিল রাজার প্রাসাদে। আত্মা ফিরে পেয়ে মরণাপন্ন রাজকন্যা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল। চারপাশে বয়ে গেল খুশির বন্যা। রাজা সামদ্রুপ এর কাছে সব শুনে পথ্যি যোগাড় করে পাইক পেয়াদা দিয়ে তা পাঠিয়ে দিল সামদ্রুপ এর গাঁয়ে। আর রাজকন্যার বিয়ে দিয়ে দিল সাহসী, দয়ালু আর বুদ্ধিমান সামদ্রুপ এর সাথে। সামদ্রুপ পরবর্তীতে সে রাজ্যের রাজা হয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগল। সাহস দয়া উপস্থিত, বুদ্ধি আর ভাগ্য সহায় থাকলে সব সম্ভব এই পৃথিবীতে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত