ধাঁন্দাবাজি

ধাঁন্দাবাজি

এক টি-শার্ট আরও কত দিন পড়ে আসবা? (মিষ্টি) বলো কী! দুই দিন আগেই বের করছি। এই এক আকাশী রংঙের টি-শার্ট আজ আট মাস ধরে দেখতেছি এহহহহহ! উনি না জেনে শুনেই সব কিছু বলে দিচ্ছে! কী জানবো,হুহ? হকার্স মার্কেট থেকে একই রংঙের তিনটি টি-শার্ট কিনছিলাম। সেটা তো বুঝাই যায়! ছিঃ কী বিশ্রী গন্ধ!! আর একটু কাছে আসবো?? ওইই সরো আমার কাছ থেকে সত্ত্যি বলছি রে! আবার মিথ্যা কথা! পরিষ্কার করতে পারো না? কে পরিষ্কার করে দিবে? একটা বিয়ে করলেই তো পারো হ, ঠিকই বলছো। ওইইই, কী বললা! আরেকবার বলো তো? বিয়া করতে হবে। তাহলে আমার কী হবে?

তুমি জাহান্নামে যাও হি হি হি কিহহহহ্ত বে রে হারামি! আট মাসের সম্পর্ক হলেও, আমি মিষ্টির সাথে প্রথম থেকেই এইভাবেই শয়তানি করতাম। যদিও, আট মাস আগে প্রোপজ করার পর থেকে শয়তানি গুলো দ্বিগুন বেড়ে গেছে। পরের দিন মিষ্টি আমায় বিকাল চারটায় দেখা করতে বলেছে। আমার তো টিউশনি শেষ করতেই সাড়ে চারটা বেজে যায়। তারপরেও, চারটায়ই টাইম নিয়েছি, কী যে তুলকালাম ঘটনা হবে কে জানে!! জান দেখো আজ না কত আগেই চলে এসেছি?

তাই???অনেক ঘেমে গেছো তুমি। এসো মুছে দেই তুমিইই বলছো এই কথা?!! হ্যাঁ,জান। কাছে এসো আমার না ভয় লাগছে! ভয়ের কী আছে?এসো না কাছে, একটু আদর করে দেই। আমার ক্যামন জানি লাগতেছে কুত্তা তোর আসার কথা ছিল কয়টায়? চার টায়। তাহলে এখন কয়টা বাজে দেখ তো? পাঁচ টা। তোর প্রাইভেট কখন শেষ হয়? সাড়ে চারটায় জান। কিহহ্! তাহলে আমাকে শুধু শুধু দাঁড় করিয়ে রাখছিস? না জান। সেটা না তো, দেখো হইছে কি বলি তোমায় থাক,,,আর বলতে হবে না কিছু আরেহ্,,,কই যাও? তুই এখন তোর অন্য গফ দের নিয়ে বসে থাক যাহ্ বাব্বাহ্! কি হল এটা? এত রাগ হলে চলে?আর রাগ করবেই না কেনো, মেয়েটাকে একা একা ১ ঘন্টা বসিয়ে রাখছিলাম। হঠাৎই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি, মিষ্টি ফোন করেছে, বুঝলাম না কি হইলো?রাগ করে চলে গিয়ে আবার ফোন দিল যে!!?ভুল করে আমার টাতে আবার চলে আসে নি তো?

হ্যাঁ, বলেন স্যার? শোন কুত্তা, আজ যদি তোর বাসায় ঢুকতে দেরি হয়, তাহলে তোর খবর আছে! তুমি রাগ করে চলে গেলা কেনো?আমি আজ সারা রাতেও বাসায় ঢুকবো না। দেখ, আমার মুখের উপর কথা বলবি না কখনও উহুহুহু….তুমি যা বলবা, আমার সবই শুনা লাগবে নাকি? হ্যাঁ, লাগবে। পারবো না। আমি কিন্তু এখনই তোর আব্বুকে ফোন দিবো?

আব্বুকে ফোন দিয়ে কী বলবা? বলবো যে, আপনার ছেলে সারারাত বাহিরে বসে সবই খায়। হিহিহিহি আব্বু সব জানেই ওকে। তুই ওইখানেই দাঁড়া,, আমি এখনই আসতেছি না না, তোমাকে আর আসতে হবে না। আমি ৯ টার মধ্যেই বাসায় ঢুকে যাবো।  ৯ টার মধ্যেই মানে?? ৮ টার মধ্যেই বাসায় ঢুকবি, আর যেন বাহিরে বের হওয়া না হয়??

ওকে জান। একটা দাও না? ফোন রাখ। ঢ়ং মিষ্টির কথা মত বাসায় চলে আসলাম। তবে, ৮ টায় না। সন্ধ্যার আগেই। বাসায় এসেই দিলাম একটা ঘুম। আমার আবার রাত ৮ টার পর বাহিরে বের হতে হবে, হি হি হি হি ঘুম থেকে উঠে ফোনটা সুন্দর মত অফ করে দিয়ে চলে আসলাম বন্ধুদের আড্ডায়। বাসা থেকে বের হতে অবশ্য একটু কষ্টই হইছিল, আব্বু দেখি বাসার মধ্যে ঘুরাঘুরি করতেছিল। পরের দিন ফোনটা অন করতেই মিষ্টির কল কাল সারারাত তোমার ফোন অফ ছিল কেনো? আর বলো না,,শরীরটা খবুই খারাপ লাগছিল, তাই আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। আহারে! আমায় একটা ফোনও করলে না জান? তোমায় বললে তো তুমি কষ্ট পেতে, তাই ফোনটাও অফ করে রাখছিলাম।  তাই?  হুম জান। হারামি, আর কত মিথ্যা বলবি আমাকে?

কবে, কখন মিথ্যা বললাম জান? কুত্তা, তোরে না পেয়ে কাল রাতেই তোর বাপরে আমি ফোন দিছিলাম। ওহ,,,,আব্বু তো ১ সপ্তাহের জন্য ব্যবসার কাজে বাহিরে। শয়তান, তুই এখন আমার সামনে থাকলে তোরে যে আমি কি করতাম! সরি। আপনি এখন যাঁর সাথে কথা বলছেন, সে এখন হিসু করা নিয়ে ব্যস্ত। তারমানে, তুমি এখন ওয়াসরুমে বসে_বসে আমার সাথে কথা বলছো?

জ্বী। মাত্র ঘুম থেকে উঠছো না?? জ্বী স্যার। দাঁড়া, তোকে আজ আমি শেষ করেই ফেলবো। টুট টুট টুট…কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। মিষ্টির সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বললে দেখা যাবে এই ভর দুপুরে আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হয়ে যাবে। এমনিতেই গত রাতে ১২ টার পর বাসায় ঢুকছি। আব্বুও বকা বকি করছে অনেক, তার মাঝে আবার মিষ্টি এসে ঝামেলা করলে, আমি শেষ! ঐ দিন বিকাল বেলা টিউশনি গুলো শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম, হঠাৎ মিষ্টির কথা মনে হয়ে গেল, মেয়েটা ওই তখন এর পর থেকে আর একবারও ফোন দেয় নি।হুর! দিবেই নি ফোন। হয়তো কোন কাজ করছে। এশার নামাজের পর মিষ্টির ফোনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। এইতো মিষ্টি ফোন করেছে,,,। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কাঁন্নার শব্দ…কী হয়েছে?কাঁন্না করছো কেনো?

কথা তো বলবা?  তুমি ঘুমাচ্ছো না?? হ্যাঁ, ঘুমাচ্ছিলাম। তোমার কি হইছে বলো না কেনো?  হঠাৎ করেই না আমার খুব পেট ব্যাথা করছে, তুমি একটু প্লিজ আমাদের বাসায় এসো। তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।  হঠাৎ করেই পেট ব্যাথা করছে কেনো? আমি মনে হয় আর বাঁচবো না, তুমি তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ…কী বলছো এইসব?চুপ করো তো। আমি এক্ষুণি আসতেছি।

ফোনটা কেটে দিয়ে, ওই অবস্থায় বাসা থেকে বের হলাম। বুকের মধ্যে ক্যামন জানি ছটফট করতেছে! কী হয়েছে ওর হঠাৎ করেই?আমি যে ওকে অনেক ভালবাসি”।ওর কিছু হয়ে গেলে আমি যে বাঁচবো না।মিষ্টির সাথে তো শয়তানি করি,শুধু মাত্র ওরে রাগানোর জন্য। কখন যে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি মাটিতে পড়ে গেছে, বুঝতেই পারি নি। মিষ্টিদের বাসায় ঢুকে দেখি,পুরো বাসা ফাঁকা।মনে হচ্ছে কেউ নাই বাসায়। বুকের ভিতর আবারও মোচড় দিয়ে উঠল। “বাসায় কাউকে না পেয়ে হয়তো, আমাকে ফোন করেছে!” কতটা যে কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। আর কিছু না ভেবে সোজা মিষ্টির রুমে ছুটে গেলাম। ও মা! সে কী! মিষ্টি তো সেজে গুজে বসে আছে! তোমার না খুব পেট ব্যাথা?

হ্যাঁ,,পেট ব্যাথাই তো। তাহলে সেজে_গুজে বসে আছো যে? ভাল হয়ে গেছে,,,,হি হি হি হি। মজা নেও আমার সাথে? এখানে মজা নেওয়ার কী আছে?আগে বলো অভিনয়টা ক্যামন হল? জঘন্য। ওইইই? ওকে। ভাল হইছে। আমি এখন চলে যাই তুই এখন এখান থেকে এক পা নড়তে পারবি না। মানে কী?  তুই তো এখন তোর বন্ধুদের সাথে গিয়ে সারারাত ধরে বসে যা ইচ্ছা তাই খাবি।

হ্যাঁ,,খেলাম,, তো?  আজ আমার এইখান থেকে কোথাও যেতে পারবি না। সারারাত আমার সাথেই থাকবি। খাইছে! কী বলছো তুমি এইসব?মাথা ঠিক আছে তো আপনার? হুহ, একদম ঠিক আছে । তোমাদের বাসার অন্য সবাই কই গেছে?  আন্টিদের বাসায় দাওয়াত খাইতে গেছে।  তুমি যাও নি কেনো? তোরে আজ উচিত শিক্ষা দিবো বলে। উহুহুহু। ফিরবে না কেউ আজ? মনে হয় না। তাহলে যে আজ আমার কী হবে আল্লাহ্ই ভাল জানে! আগে বল, আমার একটা কথাও শুনিস না কেনো?

কোন কথা শুনলাম না?? আমি যে তোকে এত করে নিষেধ করি, বেশি রাত পর্যন্ত বাহিরে ঘুরাঘুরি করবি না। তারপরেও আমার কথা শুনিস না কেনো? কই?আমি তো সারারাত ঘুমাই এখন কিন্তু সত্ত্যিই আমার হাতের পিটন খাবি। তুমি কী আমাকে মাইর দেওয়ার জন্য ডেকে আনছো? জ্বী!  হুর!কই ভাবলাম, বাসায় কেউ নাই,আজ হয়তো একটু রোমান্স হপ্পে। কী বলল্লি কুত্তা?

রোমান্স। বান্দর তোর তো শুধু এইসবই। হঠাৎ করেই মিষ্টিদের মেইন গেটে নক! খাইছে! কেউ হয়তো চলে আসছে। মনে তো হচ্ছে, ওদের বাসার সবাই চলে আসছে! আমার তো বেশ ভালই লাগছে। আমাকে ধাঁন্দাবাজি করে ডেকে আনার মজা বুঝবে নি…হিহিহিহি এখন কী হবে?(মিষ্টি) কে নক করে? আব্বু। আল্লাহ্ ক্যামনে এত সুন্দর করে মিলাই? তোমাকে এখন কী করবো?

আমি কি জানি! প্লিজ খাটের নিচে যাও অসম্ভব। তাহলে, পিছন গেইট দিয়ে চলে যাও,প্লিজ। কোথাও যেতে পারবো না আমি।এখানেই বসে থাকবো। তুমি না অনেক লক্ষী একটা ছেলে। এমন করে না আমার জান। ইশশশ! আমি লক্ষী ছেলে না আর কখনও লক্ষী ছিলামও না। জান, কেনো বুঝতেছো না, আমার রুমে এই রাতের বেলা তোমাকে দেখলে সবাই কী ভাববে?

ভাবলে আমি কী করবো,হুহহ? জান,প্লিজজজ আচ্ছা, আমি পিছন গেইট দিয়েই চলে যাবো, তবে একটা কাজ করতে হবে তোমার? কী কাজ? চুমু দিতে হবে? ওকে, ফাইন। একটা চুমুই তো?কাছে এসো দিয়ে দিতেছি জ্বী না। একটা দিয়ে হবে না। তাহলে?

একটা কপালে,একটা গালে আর একটা ঠোঁটে। অসম্ভব।  তাহলে আমিও বের হচ্ছি না। উফফফফ! কাছে আয় বান্দর,তিনটাই দিয়ে দিতেছি  হি হি হি হি।

তিনটা তিন জায়গায় নিয়ে ভদ্র ছেলের মত পকেটে হাত ঢুকিয়ে গান গাইতে গাইতে  পিছন গেইট দিয়ে বের হয়ে চলে আসলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত