আমার পাগলী প্রেমিকা”
-এই তুমি ঐ চশমাওয়ালী মেয়েটার দিকে তাকালে কেন.! (মাহিয়া)
-আচ্ছা আমি কোন দিকে তাকাবো, তুমি বলে দাও। তুমি যেদিকে তাকাতে বলবা, আমি সেদিকেই তাকাবো। (আমি)
-তুমি শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে থাকবা..!
-আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলে মানুষেরা সব কি ভাববে..!
-মানুষের ভাবনা দিয়ে তুমি কি করবা! ঐ মানুষগুলো কি তোমাকে কখনও জড়িয়ে ধরে বলবে “তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি”..?
-এই কথাটা তুমি পাগলী ছাড়া আর কে বলবে..?
-তাহলে এবার চুপ থাকো। আমাকে নামিয়ে দাও।
আমি রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে বললাম। মাহিয়া বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেল..।
এতক্ষন আমি আর মাহিয়া একই রিক্সায় ছিলাম। দুজনে একসাথে ভার্সিটি থেকে আসলাম। একই ভার্সিটিতে পড়ি আমরা। আমি মাহিয়ার দুই ইয়ার সিনয়র। ক্লাস শেষ করে প্রতিদিন মাহিয়াকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যাই। আজও মাহিয়াকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম। আমি থাকি ছাত্রাবাসে।
আমি গ্রামের সহজ সরল ছেলে। আমি ছোট বেলা থেকেই সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে পছন্দ করি। এসএসসি ও এইসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়াতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চাঞ্চ পাই।
মাহিয়া শহরের এক বড়লোকের মেয়ে। আমার প্রতি মাহিয়ার দুর্বলতার প্রধান কারন ছিল নাকি আমার সরলতা। মাহিয়াই প্রথমে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু আমি রাজি ছিলামনা। মাহিয়া আমাকে সত্যি সত্যি মন থেকে ভালবাসতো। এটা আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম, যখন আমি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে পড়েছিলাম। আমাকে দেখার মত কেউ ছিলোনা। আমি ইচ্ছে করেই মা বাবাকে জানাইনি, তারা টেনশন করবে বলে। এই মাহিয়াই খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলো আমার দেখাশুনা করতে! টানা এক সপ্তাহ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ও আমার দেখাশুনা করেছিলো। সেই থেকে আমি মাহিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে যাই।
মাহিয়া একটা পাগলী! একদিন আমার গায়ে একটা হলুদ কালারের শার্ট দেখে রেগে গিয়ে বললো..
-তোমাকে আমি সেদিন বলছিনা.! এই শার্ট গায়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে আসবানা..!
-সরি..! হাতে সময় ছিলোনা তো, তাড়াহুড়ো করে এসেছি, হাতের কাছে পেয়েছি তাই…
-কোনো সরি ঠরি শুনবোনা আমি। চলো আমার সাথে..!
-কোথায়..?
-আগে চলো..! এত প্রশ্ন করোনা তো..!
-আচ্ছা চলো..
মাহিয়া আমাকে মার্কেটে নিয়ে যায়, এবং মাহিয়ার প্রিয় কালার নীল রঙের একটা শার্ট কিনে দেয়। এবং আমাকে বলে…
-যাও ট্রায়াল রুম থেকে চেঞ্জ করে নতুন শার্টটা গায়ে দাও।
-এখনি গায়ে দিতে হবে? কালকে গায়ে দেই!
-তুমি আমার একটা কথাও শুনোনা! কালকে গায়ে দিলে এত তড়াহুড়ো করে আমার শার্টটা কিনার কি দরকার ছিলো..! (একটু রেগে গিয়ে)
-ওহ্ তাইতো.! আচ্ছা এখনই গায়ে দিচ্ছি, ম্যাডাম..!
নতুন শার্টটি সম্ভবত আমাকে দারুন মানিয়েছে। তাই মাহিয়া বার বার আমার দিকেই তাকাচ্ছে..!
মাহিয়া একটা রিক্সা ডাকলো। তারপর দুজনে রিক্সায় চড়ে বসলাম। আমি বললাম..
-আমরা এখন ক্যাম্পাসে না গিয়ে কোথায় যাচ্ছি..?
-আজ আর ক্যাম্পাসে যেতে হবেনা। তোমাকে নিয়ে বিকেল পর্যন্ত রিক্সায় ঘুরবো..!
-সত্যি..!
-হম, তার আগে চলো কিছু খেয়ে নিই। খুব ক্ষুধা লেগেছে।
-আচ্ছা চলো..
আমরা একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম। এবং খাবারের ওর্ডার দিলাম। ঠিক তখন একটা কান্ড ঘটে গেল! আমাদের সামনের টেবিলে বসা ছিল দুটো মেয়ে। মেয়ে দুটো আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে। এটা আবার মাহিয়া দেখে ফেললো। মাহিয়া রেগে মেগে মেয়ে দুটোর কাছে গিয়ে মেয়ে দুটিকে বললো..
-আপনাদের সমস্যা কি..?
একটি মেয়ে বললো..
-মানে..!
-আপনারা ওর দিকে (আমাকে দেখিয়ে) তাকিয়ে এভাবে হাসাহাসি করছেন কেন.? হোয়াট হ্যাপেন..?
-তাতে আপনার কি সমস্যা..?
-আমার সমস্যা কি মানে! ও আমার হাজব্যান্ড, সমস্যাটা তো আমারই হওয়ার কথা..!
অবস্থা বেগতিক দেখে আমি দ্রুত মাহিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে টেনে এনে চেয়ারে বসালাম। মাহিয়া রাগে লাল হয়ে গেছে। আমি ভাবলাম এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ। তা না হলে পাগলীটা চুলোচুলি বাধাতে পারে! আমি বললাম.. “চলো আমরা অন্য কোনো রেষ্টুরেন্টে যাই।”
মাহিয়া উঠে দড়ালো এবং কোনো কথা না বলে বের হয়ে গেল! সাথে আমিও।
আমরা অন্য একটা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খাইলাম। তারপর একটা রিক্সায় উঠলাম। যদিও ঘটনাটায় মাহিয়ার মনটা খারাব, কিন্তু বিষয়টা আমার খুব ভাল লেগেছে। কারন, ও সবার সামনে বলেছে আমি ওর হাজবেন্ড।
হঠাৎ মাহিয়া রিক্সাওয়ালাকে ধানমন্ডির দিকে যেতে বললো। অর্থাৎ মাহিয়ার বাসার দিকে। আমি বললাম..
-এখনই কেন বাসায় যাবে! আমরা না বিকেল পর্যন্ত রিক্সায় ঘুরবো.!
-ভাল লাগছেনা! মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে ..
-আরে বাদ দাও। একদম ভুলে যাওতো ওসব!
আমি রিক্সাওয়ালাকে বললাম.. “এই মামা, ক্যাম্পাসের দিকে চলো। ”
রিক্সা ক্যাম্পাসের দিকে ঘুরালো। মাহিয়া কোনো কথা বললোনা।
আমি লক্ষ্য করলাম মাহিয়ার দুচোখ অশ্রুতে ভরে গেছে! কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আমাকে বললো..
-আচ্ছা, আমি খুব খারাব মেয়ে তাইনা..?
-কেন..?
-এইযে আমি কথায় কথায় তোমার সাথে ঝগড়া করি, রাগ করি, তোমাকে শাসন করি, পাগলামী করি…
-পাগলী কোথাকার! তোমার শাসন, রাগ, ঝগড়া, তোমার পাগলামী, এসব নিয়ে আমি ভীষন এনজয় করি। কারন, তোমার এসবের মাঝে আমি সত্যিকারের ভালবাসাটা খুঁজে পাই।
মাহিয়ার ওর কাঁন্নাভেজা মুখখানা আমার বুকের উপর রাখলো..! তারপর বললো..
-তোমাকে ভালবেসে আমি ভুল করিনি। তুমি ছাড়া কেউ আমাকে বুঝবেনা! আই লাভ ইউ.. রিয়েলি লাভ ইউ…
-আই লাভ ইউ ঠু.. পাগলী..!
আসলেই পাগলীটাকে আমি অনেক বেশি ভালবাসি।
(সমাপ্ত)