একদিন যুবক নদীতে মাছ ধরতে গেলো। কিছু মাছ ধরার পর মাছগুলো কেটে সে নাড়ি ভুঁড়ি কুকুরকে খেতে দিলো। কুকুর যখন নাড়ি ভুঁড়ি খাচ্ছিলো, আচমকা তাতে একটি ছোট পাথর পাওয়া গেলো, যা সূর্যের মতো ঝলমল করে জ্বলছিলো। যুবক পাথরটি দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। কেননা এটি ছিলো একটি জাদুর পাথর। যার সম্পর্কে লোকমুখে অনেক কথা প্রচারিত ছিলো। সে পাথর উঠিয়ে হাতে রেখে বললো হে জাদুর পাথর! আমার জন্য খাবার নিয়ে এসো। কথা শেষ করে ফিরতেই বিস্ময়ে সে থমকে গেলো। মুহূর্তের মধ্যে তার সামনে প্রায় বিশ প্রকারের এমনসব খাবার উপস্থিত হয়েছে, যা ছিলো অনন্য এবং অত্যন্ত সুস্বাদু। বালক তার তার জীবনে স্বপ্নেও কখনো এসব খাদ্য দেখেনি। সে উদর ভর্তি করে খাবার খেলো। এরপর দৌড়ে সে ঘরে ফিরে আসলো এবং জাদুর পাথর তার মাকে দেখালো। মা বেশ খুশী হলেন। সেদিন থেকে মা ছেলে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগলেন।
একদিন যুবক শহরে গেলো। সেখানে চলাকালীন আচমকা সে এক সুন্দরী রমণীকে দেখতে পেলো। খবর নিয়ে জানতে পারলো, মেয়েটি রাজকুমারী। মেয়েটিকে তার এতো ভালো লাগলো যে, তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলো। ঘরে ফিরে সে তার ইচ্ছার কথা মাকে বললো। মা সবকিছু শুনে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন বাবা! তুমি জানো মেয়েটি রাজার মেয়ে। আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু ছেলে পীড়াপীড়ি করতে লাগলো। অবশেষে মা রাজি হয়ে গেলেন। বললেন যাওয়ার জন্য তো বারবার আবদার করছো। আমি অবশ্যই যাবো। কিন্তু মনে রেখো! বাদশাহর পরিবারে সম্পর্ক করে কেউ সুখী হয়নি।
যাক, রাতের আঁধারে মা শাহী প্রাসাদের দরজায় পৌঁছে গেলেন এবং সম্মুখস্থ রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দিলেন। ভোরে যখন বাদশাহ মহল থেকে বের হলেন, দরজার সামনের পুরো রাস্তা পরিচ্ছন্ন দেখতে পেয়ে অবাক হলেন। পরদিন ভোরেও যখন বের হলেন, একই অবস্থা দেখলেন। তিনি আরো বেশি অবাক হলেন এবং দরজার সামনে পাহারাদার নিযুক্ত করলেন। তৃতীয়দিন ভোরে পাহারাদার একজন মহিলাকে ধরে বাদশাহর সামনে উপস্থিত করলো। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন বলো! তুমি প্রতিদিন রাতে আমার প্রাসাদের সামনের রাস্তা কেন ঝাড়ু দিচ্ছো? মহিলা বললেন বাদশাহ নামদার! আমি একজন নিঃস্ব বিধবা। আমার একটি মাত্র ছেলে। আমি আপনার মেয়ের সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। কিন্তু আপনার সামনে আসার সাহস হচ্ছিলো না। আর আপনার পাহারাদারও তো আসতে দিতো না। একজন দরিদ্র মহিলার এমন হাস্যকর প্রস্তাব শুনে বাদশাহ রেগে উঠলেন। জল্লাদকে নির্দেশ দিলেন মহিলাকে হত্যা করে ফেলো।
কিন্তু বাদশাহর ডানপাশে থাকা উজির বললেন বাদশাহ নামদার! বেচারি মহিলাকে হত্যা করার কি দরকার! এমন কোনো শর্ত দিয়ে দিন, যা পূর্ণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তখন সে নিজেই মহলে আসা বন্ধ করে দিবে। উজিরের প্রস্তাব বাদশাহর পছন্দ হলো। তিনি মহিলাকে বললেন যাও! নিজেরে ছেলেকে গিয়ে বলো, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে সে চল্লিশটি উট-ভর্তি স্বর্ণ যেন আমার কাছে পাঠায়। মহিলা হতাশ হয়ে ভাবলেন আমরা একেবারে নিঃস্ব। কিভাবে এতো স্বর্ণ যোগাড় করবো! এরপর মহল থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। বাড়িতে পৌঁছে বাদশাহর দেয়া শর্ত যখন ছেলেকে বললেন, তখন ছেলে বললো আম্মি! আপনি এসব নিয়ে মোটেও ভাববেন না। অতঃপর সে জাদুর পাথরকে হাতে নিয়ে কিছু একটা বললো। ভোর হতেই ৪০ উট ভর্তি স্বর্ণ মহিলার বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত। ছেলে এবার মাকে বললো আম্মু, আপনি এসব উট নিয়ে বাদশাহর কাছে যান। মা বেশ অবাক হলেন।
কিন্তু কোনো প্রশ্ন ছাড়াই স্বর্ণ ভর্তি ৪০ টি উট নিয়ে বাদশার দরবারে পৌঁছুলেন। সবকিছু দেখে বাদশাহ বেশ অবাক হলেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ আরেকটি শর্ত দিয়ে দিলেন। তিনি মহিলাকে বললেন; তুমি তোমার ছেলেকে গিয়ে বলো, সে যেন তার স্ত্রীকে রাখার জন্য নিখাদ স্বর্ণ দিয়ে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে। তারপর বিয়ের প্রস্তাব প্রেরণ করে। মা আগের চেয়ে বেশি হতাশ হলেন এবং বিমর্ষ হয়ে ঘরে ফিরে বাদশাহর নতুন শর্তের কথা ছেলেকে বললেন। ছেলে মায়ের কথা মনোযোগ সহকারে শুনে বললো আম্মু! আপনি ভাববেন না। নিখাদ স্বর্ণের মহলও প্রস্তুত হয়ে যাবে। ভোর হতেই নদীর তীরে নিখাদ স্বর্ণের একটি আলিশান প্রাসাদ নির্মিত হয়ে গেলো। এমন মহল ইতিপূর্বে কোথাও কেউ দেখেনি। মা তখন বাদশাহর কাছে গিয়ে বললেন মহামান্য বাদশাহ! মহল তৈরি হয়ে গেছে। একটু বাইরে গিয়ে দেখে আসুন। বাদশাহ তার উজিরদের সাথে বাইরে আসলেন এবং মহল দেখে চমকে উঠলেন। এবার আর বাহানা তৈরির কোনো সুযোগ তার সামনে ছিলো না। তিনি নিঃস্ব মহিলার ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন।