এটা একটা রুপকথা। এর সঙ্গে বাস্তবে কোনো ধর্মের কোনো মিল নেই।,,,,,,,,
বহুকাল আগের কথা।
কোন এক দেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম। সেই গ্রামে ছিলেন এক পাদ্রী। গ্রামের একমাত্র গির্জার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। গ্রামের সবার সঙ্গেই তার খুব সদ্ভাব ছিল। গ্রামের যে কারো বিপদে আপদে আর কাউকে পাওয়া না গেলেও তাঁকে পাওয়া যেতো। ভালো মানুষ হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল প্রচুর।
প্রচণ্ড শীতের এক রাত। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা পড়েছে। পাদ্রী রাতের খাওয়া সেরে ঘুমানোর আয়োজন করছেন। এমন সময় দরজায় বাইরে থেকে নক হল।
“এতো রাতে কে এলো আবার?”
তিনি দরজা খুলে দেখলেন বারোজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্য থেকে একজন পাদ্রীকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমরা অনেক দূর থেকে আসছি। দয়া করে যদি আজ রাতের জন্য একটু আশ্রয় দেন তাহলে আমাদের খুব উপকার হয়।”পাদ্রী যথেষ্ট অবাক হলেও মুখে বললেন,”অবশ্যই।আপনারা সবাই ভিতরে আসুন।”
অতিথিরা ভিতরে আসার পরে তিনি বললেন, “আপনারা সবাই বিশ্রাম নিন,আমি আপনাদের খাবারের আয়োজন করছি।”
তিনি ভিতরের ঘরে চলে এলেন। তিনি অত্যন্ত চিন্তিত। কারণ খাবারের আয়োজন করছি বললেও ঘরে অর্ধেক রুটি আর অর্ধেক বোতল মদ ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু এতো গুলো লোককে তো না খাইয়েও রাখা যায় না।
“ঠিক আছে। যা আছে তা দিয়েই কাজ চালানো যায় কিনা দেখি।”
ভাঁড়ার ঘরে যাওয়ার পরে তাঁর বিস্ময়ের সীমা রইলো না। কারণ সেখানে বারোটা বড় রুটি আর বারো বোতল উন্নতমানের মদ রাখা। তিনি খুবই অবাক হলেন। কিন্তু তখনকার জন্য ব্যাপারটা চেপে গেলেন। রুটি আর মদ দিয়ে তার অতিথিদেরকে খুব ভালমতো আপ্যায়ন করলেন। বাকি রাতটুকু এভাবেই কেটে গেল।
পরের দিন সকালে অতিথিদের বিদায় নেওয়ার সময় তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য পাদ্রী কে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি জানেন আমরা কারা?”
পাদ্রী উত্তর দিলেন, “আমি জানি না আপনারা কারা,তবে এটুকু বুঝেছি যে আপনারা সাধারণ কেউ নন।”
সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হেসে বললেন, “আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমাদের বারোজনের দলের যিনি নেতা,তিনি হলেন স্বয়ং ঈশ্বর। আমরা সবাই আপনার উপরে খুব খুশি হয়েছি। আপনি এখন ঈশ্বরের কাছে যেই বর চাইবেন,ঈশ্বর আপনাকে সেটাই মঞ্জুর করবেন। একটু পরেই সবাই আপনার কাছ থেকে বিদায় নেব, তবে তার আগে আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে আপনার বর টা চেয়ে নিন।”
পাদ্রী ঈশ্বরের কাছে গিয়ে বললেন, “হে প্রভু। আমার বসার ঘরে যে টুল আছে,ওটাতে কেউ বসলে আমি না বলা পর্যন্ত যেন সে উঠতে না পারে।”
ঈশ্বর বললেন, “তথাস্তু।”metformin tablet
বর চেয়ে ফিরে এলে সেই সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বললেন, “আপনি এটা কি বর চাইলেন?আপনি আবার ঈশ্বরের কাছে যান,আবার বর চান।”
পাদ্রী আবার ঈশ্বরের কাছে গিয়ে বললেন, “হে প্রভু।আমার বাড়ির উঠানে যে আপেল গাছ আছে,ওটাতে কেউ উঠলে আমি না বলা পর্যন্ত যেন সে নামতে না পারে।”
ঈশ্বর বললেন, “তথাস্তু।”
বর চেয়ে ফিরে এলে সেই সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বললেন, “আপনি আবার এটা কি চাইলেন? আমরা চাচ্ছি যেন আপনি,আপনার মঙ্গল হয় এরকম কোনও বর চেয়ে নেন, আপনি তা না করে কি অদ্ভুত সব বর চাচ্ছেন? আপনি আবার যান,গিয়ে ভালো কোন বর চেয়ে আনুন। আর মনে রাখবেন,প্রভু একবারে তিনটার বেশি বর কিন্তু কখনোই দেন না।”
পাদ্রী আবার ঈশ্বরের কাছে গিয়ে বললেন, “হে প্রভু।আমি যেন কখনও তাস খেলায় না হারি।”
ঈশ্বর বললেন, “তথাস্তু।”
পাদ্রীর এই বর চাওয়ায় সর্বকনিষ্ঠ সদস্য এবং অন্যান্যরা খুব বিরক্ত হলেন। সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বেরোনোর আগে বললেন, “আপনি মানুষ হিসেবে খুবই ভালো কিন্তু অনেক বোকা।নাহলে ঈশ্বরের কাছ থেকে বর পাওয়ার সুযোগ পেয়েও যে কেউ এরকম অদ্ভূত বর চাইতে পারে,আজ না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। যাই হোক,ভাল থাকবেন।”
তারপর কেটে গেল অনেক দিন।
পাদ্রীর বয়স যখন ৬৩, তখন একদিন তার দরজায় নক হল।
দরজা খুলে তিনি দেখলেন,একজন অত্যন্ত কুৎসিত মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে?”
কুৎসিত মানুষটা তাঁকে বলল, “চলুন জনাব। পৃথিবীতে থাকার সময় শেষ হয়েছে আপনার। আমি নরক থেকে এসেছি আপনাকে নিতে। আমি শয়তান।”
পাদ্রী বললেন, “নিতে এসেছেন তো ভালো কথা। এভাবে হুট করে তো আর রওনা দেওয়া যায় না। আপনি এক কাজ করুন,আমি একটু ভিতর থেকে গোছগাছ করে আসি,আপনি ততক্ষনে এই টুলটাতে বসে বিশ্রাম নিন।”
শয়তান ভাবল, “ঠিক আছে। যেতে যখন দেরি হবেই তখন একটু বিশ্রাম নিলে ক্ষতি কি?”
কিছুক্ষণ পরে পাদ্রী ভিতর থেকে বের হয়ে এলেন। তাঁর মুখে মুচকি হাসি।
শয়তান বলল, “আপনি প্রস্তুত?চলুন রওনা দেওয়া যাক।”
শয়তান টুল থেকে উঠতে গেলো। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল যে সে কোনভাবেই টুল থেকে উঠতে পারছেনা।
সে খুব রাগান্বিত গলায় পাদ্রীকে বলল, “আপনি কি করেছেন?”
পাদ্রী হাই তুলতে তুলতে শয়তানকে বললেন, “টুল টা মন্ত্রপূত। আমি না বলা পর্যন্ত ওটা থেকে আপনি উঠতে পারবেন না।”
রাগে, দুঃখে শয়তান কোন কথাই বলতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পরে সে পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি চান?”
পাদ্রী তাকে বললেন, “ আগামী ৩০০ বছর আমার ধারেকাছেও আসবেননা।”
শয়তান কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “ঠিক আছে।”
এরপরে পার হয়ে গেলো ৩০০ বছর। পাদ্রীর মনে হল ৩০০ বছর যেন দেখতে দেখতে চলে গেলো। ৩০০ বছর পার হওয়ার ঠিক পরের দিন শয়তান এসে উপস্থিত। এসেই বলল, “আপনার বাড়ির ভিতরে আমি আর ঢুকছি না।আমি বাড়ির উঠানে দাঁড়াবো,আপনি তৈরি হয়ে আসুন।”
পাদ্রী বললেন, “উঠানে দাঁড়াবেন? তাহলে এক কাজ করুন তো। আমার আপেল গাছটা থেকে বেশ কিছু আপেল পেড়ে ফেলুন। যেতে যেতে খাওয়া যাবে। চলেই যখন যাচ্ছি, কে খাবে এসব?”
শয়তান ভাবল, “ব্যাপারটা মন্দ হয় না। এবার অন্তত ঘরে টুলে বসতে হচ্ছে না। সাথে গাছের রসালো আপেলও খাওয়া যাবে।”
ভাবা মাত্র কাজ। তর তর করে আপেল গাছে উঠে আপেল পাড়া শুরু করে দিলো শয়তান।
কিছুক্ষন পরে পাদ্রী উঠানে এসে দাঁড়ালেন। এবারো তিনি মুচকি মুচকি হাসছেন।
শয়তান গাছ থেকে নামতে গেল। কিন্তু ইতিমধ্যে সে আপেল গাছের সাথে আটকিয়ে গিয়েছে।
সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ গলায় পাদ্রীকে বলল, “কি করেছেন আপনি এবার?”
পাদ্রী স্মিত হেসে বললেন, “এই আপেল গাছ টা আসলে মন্ত্রপূত। আমি না বলা পর্যন্ত আপনি গাছ থেকে নামতে পারবেন না।”
শয়তান বলল, “আপনি এবার কি চান?”
পাদ্রী বললেন, “আগামী ৩০০ বছরের মধ্যে আমি আপনার চেহারা দেখতে চাই না।”
শয়তান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “ঠিক আছে।”
৩০০ বছর চলে গেল। পাদ্রীর মনে হল ৩০০ বছর যেন দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল।এবং ঠিক ৩০০ বছর পার হওয়ার পরের দিন শয়তান এসে উপস্থিত। এসেই বলল, “আমি রাস্তায় দাঁড়াচ্ছি,আপনি তৈরি হয়ে আসুন।”
পাদ্রী প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে এলেন। রওনা দেবার ঠিক আগ মুহূর্তে পিছন ফিরে বাড়িটার দিকে তাকালেন। গত ৬০০ বছরেরও বেশি সময় তিনি এই বাড়িটাতে বসবাস করেছেন। বিদায়বেলায় এক বিষণ্ণ আবেগ তাকে গ্রাস করলো।
শয়তান তাকে বলল, “চলুন রওনা দেয়া যাক।”
যাত্রা শুরু হল। কিন্তু যাত্রা শুরু হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই পাদ্রী কেমন যেন উসখুস শুরু করলেন।
শয়তান বলল, “কি ব্যাপার?”
পাদ্রী বললেন, “পথ কি অনেক দীর্ঘ?”
শয়তান বলল, “হ্যাঁ। এ কথা জানতে চাচ্ছেন কেন?”
পাদ্রী বললেন, “পথ যেহেতু অনেক দীর্ঘ,আমরা পথের মাঝে মাঝে বিশ্রাম এবং বিশ্রামের সাথে সাথে যদি তাস খেলি তাহলে কেমন হয়?”
শয়তান বলল, “খুবই ভালো হয়। কিন্তু আমি বাজি ছাড়া তাস খেলি না এটা নিশ্চয়ই জানেন?”
পাদ্রী বললেন, “জানি। কি নিয়ে বাজি ধরতে চান?”
শয়তান উপহাসের সুরে বলল, “আমি যদি জিতি,তাহলে আপনার আত্মাটা পুরোপুরিভাবেই শুধুমাত্র আমার হয়ে যাবে।”
পাদ্রী শান্তকণ্ঠে বললেন, “আর যদি আমি জিতি?”
শয়তান বলল, “আপনি যা চাইবেন আমি তাই দেব।”
পাদ্রী বললেন, “আমি যতোবার জিতবো,প্রতিবারের জন্য ১২ টা আত্মা আপনি নরক থেকে এনে আমাকে দেবেন।”
শয়তান ব্যঙ্গভরে বলল,”আপনার যা মর্জি।”
শয়তানের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস উপচে পড়ছিলো। কারণ তাসের খেলায় শয়তানের চেয়ে দক্ষ যে আর কেউ নেই।
কিন্তু পাদ্রীর সাথে আছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ দেওয়া সেই তৃতীয় বর।
প্রথমবারের খেলায় শয়তান কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখল সে হেরে বসে আছে। শর্ত মোতাবেক শয়তান,পাদ্রীকে ১২ আত্মা দিল।
আবার খেলল,আবার হারল। আবারও ১২ টা আত্মা দিতে হল।
যতবার খেলা হয় ততবার শয়তান হারে আর সেই সাথে তার জেদ চেপে যায়। মর্ত্যলোকের একজন সাধারণ মরণশীল মানুষ তাকে কিভাবে বারবার তাসের খেলাতে হারাচ্ছে,সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না। কিন্তু ততক্ষনে ১২ টা করে আত্মা দিতে দিতে নরক খালি হবার উপক্রম।
একটা সময় আসলো যখন নরকে আর কোন আত্মা থাকলো না।
শয়তান গম্ভীরভাবে পাদ্রীকে বলল, “আপনার সাথে খেলায় হারলে আপনাকে দেওয়ার মতো আমার আর কিছুই নেই। আপনার সাথে জেতার জন্য নরক পুরো খালি করে ফেলেছি। কিন্তু তবুও আমি জিততে পারি নি।”
পাদ্রী বললেন, “আপনার সাথে আমার যাত্রার এখানেই সমাপ্তি।”
শয়তান এর কোন জবাব দিল না।
পাদ্রী এবার শত শত আত্মা নিয়ে যাত্রা করলেন স্বর্গের দিকে।
স্বর্গের গেটে পোঁছতেই পথ আটকাল স্বর্গের দ্বাররক্ষী সেইন্ট পিটার।
পিটার পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে?”
পাদ্রী নিজের পরিচয় দেওয়ার পরে পিটার বললেন, “এতোজনকে নিয়ে তো আপনি ঢুকতে পারবেন না। ঢুকতে হলে আপনাকে একা ঢুকতে হবে।”
পাদ্রী বললেন, “ঠিক আছে। আমি একাই ঢুকব,কিন্তু তার আগে আপনি ঈশ্বরকে একটা কথা জিজ্ঞেস করে আসুন।”
পিটার বললেন, “কি?”
পাদ্রী বললেন, “এক প্রচণ্ড শীতের রাতে ঈশ্বর তার ১১ জন সাথী নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমার বাড়িতে সেদিন কোন খাবার ছিল না,কিন্তু তবুও আমি তাঁদেরকে আপ্যায়নের ত্রুটি করি নি। কিন্তু আজ আমি এতো জন কে সাথে নিয়ে এসেছি বলে আমাকে একা স্বর্গে ঢুকতে হবে। তাহলে কি আমি মনে করব আমি ঈশ্বরের চেয়েও বেশি মহান?”
পিটার বললেন,”এখুনি যাচ্ছি।“
কিছুক্ষন পরে ফিরে এসে পিটার স্বর্গের দরজা খুলে দিলেন এবং গম্ভীর গলায় বললেন, “প্রভু সবাইকে ঢুকতে বলেছেন।”
এইভাবে পাদ্রী নিজের বুদ্ধির জোরে শুধু নিজেকে না,শত শত আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে গেলেন।