হায় রে রানী!

হায় রে রানী!

এক দেশে এক রাজা বাস করত। রাজা খুব সম্পদশালী ছিল। একদিন রাজা আর রানী রাজসভায় বসে ছিলেন। এমন সময় রাজার এক জেলে এলো। রাজা ওই জেলেকে খুব ভালোবাসতেন। কারন যখন ইচ্ছা রাজা ঐ জেলের কাছে মাছ খেতে পারতেন। তো সেদিন রাজার আদেশে সেই জেলে একটা বড় বোয়াল মাছ এনেছিল। বোয়ালটার ওজন প্রায় দশ-বার কেজি হবে। এই বেয়ালটা রাজাকে দেওয়ার জন্য জেলে মাছটা নিয়ে রাজসভায় এসেছিলেন। রাজা তো মহা খুশি। মাছ পেয়ে রাজা জেলেকে পাঁচশ টাকা বখশিশ দিলেন। এদিকে রানীর তা সহ্য হলো না । সামান্য একটা মাছের জন্য মহারাজ এই জেলেকে পাঁচশ টাকা দেবেন। তাই রানী তা সহ্য করতে না পেরে রাজার কানে ফিসফিসিয়ে বলল:

রানী–মহারাজ, সামান্য একটা মাছের জন্য আপনি একটা ভিখারী জেলেকে পাঁচশ টাকা দিলেন। এত টাকা দেয়া কিন্তু আপনার ঠিক হয়নি।

রাজ্য চালায় রাজা। কিন্তু রাজাকে চালায় কে? রানী। তাই রাজার রানীর কথা রানীর কথা না শুনে কি আর উপায় আছে? শেষমেশ রানীর কথায় শুনলেন তিনি। বললেন…

রাজা–তা আমি এখন কি করব?
রানী– কেন? মাছটা ফিরিয়ে দিন।
রাজা– কেন? আমার সাধের মাছ আমি এখন ফিরিয়ে দিব। না, না। যাক পাঁচশ টাকা। আমি এই মাছ ফিরিয়ে দিতে পারব না। এই জেলে আমার যখন ইচ্ছা মাছ এনে দেয়।

এই বলে রাজা চুপ করে থাকলেন। কিন্তু রানী টাকা ফিরিয়ে নিবেই। তাই সে একটা ফন্দি আটল। রাজাকে বলল..

রানী– মহারাজ, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। আপনি জেলেকে ডাকেন। আর বলবেন, এটা কোন মাছ? জেলে যদি বলে, এটা পুরুষ মাছ। তাহলে আপনি বলবেন যে আমি তো পুরুষ মাছ খায় না। আর যদি বলে, মহিলা মাছ। তাহলে আপনি বলবেন, আমি তো মহিলা মাছ খায় না। তারপর জেলে আর কিছুই বলতে পারবে না। আপনি তাকে তার মাছ ফেরত দেবেন। বিনিময়ে আপনি ওর কাছে দ্বি-গুন টাকা জরিমানা চাইবেন।

রাজা আর না করতে পারলেন না। তিনি বললেন, “ঠিক আছে। তাই হবে।”

জেলে চলে যাচ্ছিল। এই মুহুর্তে রাজা জেলেকে ডাকলেন..

রাজা– জেলে, ও জেলে এদিকে শোন।

জেলে রাজার কাছে গিয়ে বলল..

জেলে– জ্বি মহারাজ….
রাজা– তোমার এই মাছটা কি পুরুষ নাকি মহিলা?

জেলে খুব চালাক ছিল। সে রাজার মতলব বুঝতে পারল। সে বলল..

জেলে– মহারাজ, এই মাছটা পুরুষও না মহিলাও না। মাছটা হিজড়া।

রাজা তো আস্ত ভেবাচেকায় পরলেন। এখন তো জেলে কিছু পুরুষ-মহিলা কিছুই বলল না। রানীর বুদ্ধি ধরে এই দশা। তিনি মনে মনে বললেন.. না জেলেটার বুদ্ধি আছে বইকি। তাই তিনি জেলেকে আরও পাঁচশ টাকা উপহার দিলেন।

রানী আর ভয়ে মহারাজকে কিছু বলল না। চুপ করে বসে রইল সুযোগের অপেক্ষায়।

জেলে তার টাকা গুনতে গুনতে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় একটা টাকা গুনতে গুনতে মাটিতে পড়ে গেল। জেলে তৎক্ষনাৎ টাকাটা মাটি থেকে তুলে চুমু খেল।

রানী এই দেখে রাজাকে বললেন…

রানী– দেখলেন মহারাজ। এই সামান্য গরীর জেলের কত বড় সাহস। আপনার দেওয়া টাকা জেলে কেমন ফেলতে ফেলতে যাচ্ছে। আপনার জন্য জেলে একেবারে মাথায় চড়ে বসেছে।

রাজা– ঠিকই তো। জেলের এতো বড় স্পর্ধা। আমার সামনে দাড়িয়ে। সে আমার টাকা ফেলতে ফেলতে যাচ্ছে।

জেলে তখনো রাজসভা থেকে বের হয় নি। রাজা আবার জেলেকে ডেকে বললেন…

রাজা– তোমার এতো বড় সাহস। তুমি আমার টাকা ফেলতে ফেলতে যাচ্ছো। এক্ষুনি আমি তোমাকে শুলে চড়াবো।

জেলে ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল…

জেলে– মহারাজ। আমি আপনার টাকা গুনছিলাম। তো হঠাত আপনার একটা টাকা আমার হাত থেকে পরে গেল। আমি সাথে সাথে তা তুলে আপনার টাকায় আপনার ছবিতে চুমু খেয়েছি। আমি আপনার ছবিকে, আপনার টাকাকে সম্মান করেছি। এর পরেও আপনি কি আমায়…

রাজা চিন্তা করে দেখলেন, ঠিকই তো। টাকায় তো আমার ছবি আছে। আর জেলে তো আমার ছবিতে চূমু খেয়েছে, সম্মান করেছে।

তাই রাজা জেলের উপর খুশি হয়ে আরো পাঁচশ টাকা দিলেন। জেলে মনের আনন্দে বাড়ি চলে গেল। জেলে যাবার পর, রাজা বললেন, হায় রে রানী!! তোমার বুদ্ধি ধরে পাঁচশ টাকা বাঁচাতে গিয়ে আমার পনেরশ টাকা গেল।

(এই গল্পটির কাহিনী সম্পুর্ন কাল্পনিক।)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত