বউ এর প্যারা

বউ এর প্যারা

সুমন ভাই আপনি থাকেন। আমার আজকের সব কাজের ঝামেলা শেষ। একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। বোঝেনইতো!!!
>সে আর বলতে। বিয়ের কেবল তিন মাস বলে কথা।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
>সবই যখন বোঝেন………..(কাজ নাই খালি জ্ঞান দেয়)
>হুম্ম,আচ্ছা তুমি যাও। বাকিটা আমি দেখে নিব।
ধন্যবাদ না দিয়েই চলে আসলাম। নাহলে আবার জ্ঞান দেওয়া শুরু।
বাড়ি যাচ্ছি নাচতে নাচতে। আজকে বারিতে গিয়ে বউ কে সার্প্রাইজ দিব। অন্যরকম সারপ্রাইজ। কিছুদিন থেকে একটা প্লান করে রেখেছি। আজকে সেটার প্রতিফলন হবে। ভাবতেই মজা লাগছে।
ভাবতে ভাবতে বাইক নিয়ে চলে আসলাম আমার বাসার সামনে।

ঠক ঠক……সাথে সাথে খুলে গেলো দরজা।
>এই তুমি আজকে এত তাড়াতাড়ি এলে যে??
>……….(একটু গম্ভির গম্ভির ভাব নিলাম)
>এই কি হলো কথা বলছ না কেনো?
>না কিছু না।
>আমার চুল টেনে ধরল।(আমার চুলগুলো নাকি ওর সবথেকে প্রিয়,তাই রোমান্টিক মুড এ থাকলেই চুল টানবে)
>আহা,করছ কি?ভালো লাগছে না!!
> কেনো আমার মহারাজের কী হলো??
>বিরক্তিকর!
ওর মুখটা কালো হয়ে গেলো।মনে হয় কষ্ট পেয়েছে।মনে হয় থেরাপিটা কাজে লাগছে।
আমি রুম এ চলে আসলাম।কিছুক্ষণ পর
>রিদিতা,একটু শোন।(গম্ভীরতা এখনো আছে)
>………..
>ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।
>কী হয়েছে?
>তুমি আমার কাছে এত কিছু কি করে লুকালে??
>কী লুকিয়েছি আমি?
>এই যে, এই চিঠিটা কার?সকালে আমাদের এলাকার এক পিচ্চি ছেলে আমাকে দিয়ে বল্ল একজন ওকে এটা দিয়েছে তোমাকে দেয়ার জন্য।কিন্তু সে তোমাকে না দিয়ে আমাকে দিলো।
>কই দেখি?
চিঠি———
রিদিতা শোন আজকে ফোন করতে পারব না।আর শনিবার যে দেখা করার কথা ছিলো সেটা রবিবার করি।আর হ্যা তোমার হ্যাংলা বর থেকে লুকিয়ে থাকবে যেনো ও ঘূণাক্ষরেও টের না পায়।
ইতি……..তোমার বিএফ(এটা আসলে আমিই ওকে কাদানোর জন্য লিখেছি)

>সত্যি বলছি,আমি কারো সাথে আগেও রিলেশন করি নি আর এখন বিয়ের পর করব কেনো??
>তুমি শুধু চুপ থাকবে।তোমাকে অনেক বিশ্বাস করেছি আর না।(ধমকের সূরে)
>তুমি এমন করছ কেনো?(কেঁদে ফেলেছে)
>এমন এর কি আছে।তুমি এত বড় কাহিনী………ছিহ…….
>জোড়ে জোড়ে কাঁদছে।
>বিয়ের আগে বললেই পারতে।শুধু শুধু এমন ভালোবাসার অভিনয় কেনো করলে??
>বিশ্বাস কর…..আমি কিছুই করি নি(কাঁদতে কাঁদতে ওর হিচকি উঠেছে)
>এখন তুমি শুধু আমার সামনে থেকে যাও।আর ডিভোর্স এর কথাটা আমি আম্মু আব্বু কে বলছি।(ধমকের শুরে)
>ও কাঁদছে আর চোখ মুছছে।
(আমি তো মনে মনে ডান্স করছি।যখন ওকে বলব সব মিথ্যে ও কতাটাই না খুশি হবে)

ওয়াশরুম এ চলে গেলাম। গোসল করে বের হয়ে আসলাম।অন্যদিন সবকিছু এগিয়ে দেয়। আজকে ও নিজেকে অপরাধি ভাবছে,হয়ত ভাবছে এই অধিকারটা ও হারিয়ে ফেলবে।গোসল করার কারণে এখন শরীরটা অনেক ফুরফুরে লাগছে।কিন্তু পাগলীটা কই?মনে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছে। সারা বাড়ি খুঁজলাম কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না।আসলে বাসায় কেউ নেই।আম্মু আব্বু খালামণিদের বাসায় বেড়াতে গেছে।তাই সুযোগটা কাজে লাগালাম।কিন্তু এবার একটু টেনশন হচ্ছে।ও যে পাগলী। কি করতে কি করে ফেলে।আমার অবহেলা একটুও সহ্য করতে পারে না।

কিছুক্ষণ পর দেখি পাগলীটা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।
নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না।অনেক কাঁদিয়েছি ওকে। আর কাঁদানো যাবে না।কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।ওর কান্না আরোও দিগুন গতি লাভ করল।এবার ও শব্দ করে কাঁদছে।
>আহা…এই এতো কান্নার কি আছে?
>………………
>পাগলী বউটা দেখি তার বরের হাতের লেখাও চেনে না।
>কান্নার গতিটা মনে হয় একটু কমেছে। ও স্তব্ধ হয়ে আছে।
>আরে হ্যাঁ রে বাবা…. ওটা আমিই লিখেছি তোমাকে কাঁদাবো বলে।তোমার চোখের পানিটা মোছার অন্যরকম অনুভূতি।এখন তো দেখি বউটা আমার আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে।
আমাকে এক ঝটকা দিয়ে ও বেডরুম এ চলে গেলো।নাহ,বউটা আর কাঁদছে না।এখন অভিমান করেছে।এখন সেটাই ভাঙতে হবে।

রুম এ গিয়ে বিছানায় ওর পাশে বসলাম।—–
>আমার বউটা কি আমাকে ভালোবাসে না?
>………………
>ভালোবাসে না বুঝি….????
>………….
>তবে কিন্তু সত্যি সত্যিই ডিভোর্স দিবো।
>তুমি আমাকে এত কাঁদাও কেনো?জানো আমি কত কষ্ট পেয়েছি?মনে হচ্ছিলো আমি এবার মরেই যাব।(কাঁদতে কাঁদতে)
>সত্যিই?বাবুনিটা এত কষ্ট পেয়েছিলো?(চোখের পানিটা মুছে দিলাম)
সাথে সাথে আমাকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।
>এই আবার কি হলো.?এখন কেনো কাঁদছ?আমার শার্ট তো ভিজে যাচ্ছে।
>তোমার কি তাতে। আমি আমার বরের শার্ট ভেজাচ্ছি।
>ও তাই বুঝি?তা কে তোমার বর শুনি?
>যেই পাগলটা আমাকে শুধু কাঁদায় সেই পাগলটা।
(ওকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)

কিছুক্ষণ নিরবতা।
>এই একটা ইয়ে দাও না।
>চোখ গোল গোল করে আমার দিকে তাকালো।
>অমন করে তাকাচ্ছ কেন?ভয় লাগে না বুঝি?
>কিছু না বলে উঠে গেলো।ফিরল একগাদা কাপড় নিয়ে।
>আমি কি বললাম তুমি কি করছ?
>এই সব কাপড় এখন গুছাবে।এটা আমাকে কাঁদানোর শাস্তি।
>এ্যাঁ…….
>এ্যাঁ নয় হ্যাঁ………আমি যাচ্ছি রান্না করতে।
যাওয়ার আগে হঠাৎ একটা চুমি খেয়ে গেলো আর চুল টানা???ওটা তো বাধ্যতামূলক।আহা মনটাই ফুরফুরে হয়ে গেলো।
>এই কাল পরশু কিন্তু ছুটি….।
>তো কি হয়েছে??যে কাজ করছ কর…..বাঁদরামো করলে কিন্তু পা খুলে হাতে দিয়ে দিব।
>ওরে বাবা,,,,বউ তো আমার গুন্ডি হয়ে গেলো।
ও রান্না ঘরে হাসছে।আমি তো বেচারা মাথা চুলকাতে ব্যাস্ত।
আচ্ছা প্যারা তো।
***বউ এর এতগুলা জামা এখন গোছাই কেমনে????

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত