চৌধুরী পরিবারের মেয়ে সে। তাই দেমাগ একটু বেশিই। অল্পতেই রাগ দেখিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।
আজকেও সামান্য একটা বিষয় নিয়ে রাগ করে চলে গেল। শ্বশুর মশাই ও বেশ রসিক মানুষ। সে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে
গেলে শ্বশুর মশাই কে কল দিয়ে প্রথমে ভালো মন্দের খবর জিজ্ঞেস করি। তার মেয়ের রাগ করার কারন শুনে রসিক শ্বশুর রসিকতা করে বলল “তুমি বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছো, যত সাহায্য লাগে আমি দেবো, তোমাকে যেভাবেই হোক আমার মেয়ের রাগ ভাঙ্গাতেই হবে।”
আমিও শাকিব খানের সেই বীর কন্ঠে বললাম “চৌধুরী সাহেব, আমি গরীব হতে পারি কিন্তু লোভী নই, চাইনা
আপনার সাহায্য, আমি নিজেই আপনার মেয়ের রাগ ভাঙ্গাতে পারি” তারপর আস্তে করে বললাম “শুধু একটু বুঝিয়ে
বললেই চলবে।” তারপর শ্বশুর জামাই দুজনেই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ি।
কিছুক্ষণ পর শ্বশুর ফাদারের মেয়ে কে কল দিলাম। রিসিভ করল। দুজনেই চুপ। মিনিট খানেক পর বললাম “রাগ কমেনাই?” কিছু বলল না চুপ করেই রইলো। আবারো মিনিট খানেক চুপ থাকার পর বলল “তুমি আমাকে নিতে আসবেনা?” ভাবলাম একটু রাগিয়ে দেই। বউ কে রাগানোর মজাই আলাদা।
তার উপর চৌধুরী পরিবারের মেয়ে বলে কথা। বললাম “অবশ্যই যাবো, যাবো না কেন? যাওয়ার পথে কত সুন্দরী মেয়ে
থাকবে, তাদের দুচোখ ভরে দেখবো, ভাবতেই কি যে ভালো লাগছে, আমি আসতেছি ওয়েট…. কথা শেষ হতে না
দিয়েই ফোন টা কেটে দিল। এরপর গুনে গুনে সাত বার কল দিলাম রিসিভ হলো
না। কি জানি এখন কি করছে।
রাগাতে ভালো লাগে। আবার না দেখেও থাকতে পারিনা। কি যে করি এই মেয়ে কে নিয়ে..!!
সরি লিখে দশ টা মেসেজ দিলাম।
কোন রিপ্লাই নাই। কল দিলাম আবার ধরল না।
আবার কল দিতে যাবো এমন সময় একটা মেসেজ আসলো “তোমার কষ্ট করে আসা লাগবে না” রিপ্লে দিলাম “রাগ
কমেছে তাহলে? নিজে নিজে আসতে পারবা তো?” দুই মিনিট গেল চার মিনিট গেল ত্রিশ মিনিট গেল মেসেজের আর উত্তর
এল না। এভাবে এতক্ষণ সময় ধরে বউ ছাড়া থাকা যায় না। রওনা দিলাম শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
শ্বশুর মশাই বাড়িটাও বানিয়েছেন বেশ বড় করে। রাজমহলের মত একটা বাড়ি।
উনার দুই ছেলেই আমেরিকা থাকে।
বাবার বন্ধু হওয়ার কৌটায় উনার মেয়ে কে পাই। অবশ্য বিয়ের আগে জানতাম
না,
নেহা যে আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।
শ্বশুর মশাইয়ের সাথে কথাবার্তা শেষ করে উনার মেয়ের রুমে গেলাম। একমনে বই পড়ছে। বই পড়ছে বললে ভুল হবে। বই
হাতে নিয়ে বসে বসে কি যেন ভাবছে।
আমার উপস্থিতি টের পেতেই মুখ কালো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।
আমি পাশে বসতেই উঠে চলে গেল।
আমিও পিছু পিছু গেলাম। সোজা ওর বাবার কাছে গেল। গিয়ে বলল “বাবা ওকে চলে যেতে বলো, নাহলে কিন্তু একদম ভালো হবেনা” শশুর মশাই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “এভাবে রাগ করতে নেই মা, ও কি বলে একটু শুনে দেখ” এটা শোনার পর ওর রাগ যেন আরো বেড়ে গেল। “ধুর ভাল্লাগেনা” বলে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
আমিও পিছু পিছু উঠতে লাগলাম।
বারবার সরি, আর কখনো হবেনা, এই কানে ধরছি, নাকে ধরছি, চোখে ধরছি, এইসব বলেই যাচ্ছি কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা।
ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে সে প্রকৃতি দেখতে লাগলো। আমিও পাশে গিয়ে দাড়ালাম। রাগ অল্প অল্প ভাঙ্গছে মনে হয়। আমার সরি বলার স্টাইল, বারবার কান ধরা দেখে মাঝে মাঝে মুচকি হাসি চলে আসছে তার। যদিও হাসি যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
আমি হাত টা এগিয়ে নিয়ে ওর হাতের উপর রাখার চেষ্টা করলাম। তখনি চোখ রাঙিয়ে আমার দিকে তাকালো।
হাত টা সরিয়ে নিয়ে বললাম “বিশ্বাস করো একটা মেয়ের দিকেও তাকাই নি, এই দেখো চোখে চশমা লাগিয়ে এসেছি”।
কলারের সাথে আটকানো কালো সানগ্লাস টা দেখালাম। বলল,
– সানগ্লাস দিয়ে আরো ভালো দেখা যায়।
– রাস্তায় একটা মেয়েও ছিল না দেখবো কি করে?
– তুমি জানো কিভাবে রাস্তায় মেয়ে ছিল না? তার মানে রাস্তায় মেয়ে ছিল কি না দেখার চেষ্টা করছো তাই না?
– আসলে তা না….
– আসলে কি আমি ভালো করেই জানি।
কি করি এবার? যেটা বলছি সেটাকেই ইস্যু করে রাগ করছে। ভেবেছিলাম সানগ্লাসের বাহানা দিয়ে রাগ কমাবো,
কিন্তু সেটাকেই ইস্যু করে রাগ আরো বাড়িয়ে দিলাম। গট ইট, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে। বললাম “আচ্ছা
যা হওয়ার হয়েছে এবার তো আমাকে মাফ করে দাও, কতবার সরি বলছি জানো?
মনে মনে বলেছি দুই হাজার সাতশো ছয় বার, সরাসরি কতবার বলেছি তা তো নিজের চোখেই দেখলে, আচ্ছা তুমি কি
আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবা বলো??
চেহারার ধরণ একটু বদলালো মনে হলো।
কঠোর থেকে নমনীয়। করুন চোখে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলছে না।
আমি আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম এবার।
বললাম “তুমি যদি আমাকে এখন মাফ না কর আমি এই ছাদ থেকে লাফ দিলাম” ও নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।
আমার বুকে ঝাপটে পড়লো যেন। বুকে মুখ লুকিয়েই বলল “কেন এমন করো বলো তো?
আমি কি কষ্ট পাই না নাকি?” আমার মাথায় আবারো দুষ্টুমি চাপলো।
বললাম
“আমার কাছে তোমার কষ্ট কমানোর একটা আইডিয়া আছে, শুনবা? বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে বলল “কি?” আমি একটু কাশি
দিয়ে বললাম “না মানে ভাবছি আরেকটা বিয়ে করবো, তাহলে তোমার কষ্ট অর্ধেকটাই কমে যাবে? কেমন আইডিয়া টা?
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল “লাফ দে তুই ছাদ থেকে, একদম আমার পিছু পিছু আসবিনা”
ধুর কি করলাম রাগ তো ভেঙ্গে গেছিলো আবারো রাগিয়ে দিলাম? যাই রাগ ভাঙ্গাতে হবে…